সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা টাকার পরিমাণ গত এক বছরে কমেছে শতকরা ৭ ভাগ৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ২০১ কোটি টাকার বেশি অর্থ সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিরা জমা করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সাল শেষে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের ৬০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক থেকে কমে ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়েছে৷ সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনে তা দেখা গেছে৷
বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ২০১ কোটি টাকার বেশি অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিরা জমা করেছেন৷ এতে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে জমার পরিমাণ কমেছে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা৷
বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন অন্তত ৫০০ কোটি টাকা হতে হয়৷ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা এখন জমা আছে, তা অন্তত ১০টি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান৷
সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয় বা টাকার উৎসও তারা জানতে চায় না৷ এই গোপনীয়তার নীতির কারণে সারা বিশ্বের ধনী ব্যক্তিরা সুইস ব্যাংকে টাকা রাখেন৷
তবে কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা আছে, তার একটি ধারণা প্রতিবছর এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়৷ দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে এসএনবি ওই তথ্য প্রকাশ করে৷ তবে সেখানে গ্রাহকের বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না৷
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ দেশ
বিভিন্ন দেশের ‘আন্তর্জাতিক ডলার’ বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত মাসিক ম্যাগাজিন ‘গ্লোবাল ফাইন্যান্স’৷ এক্ষেত্রে তারা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য ব্যবহার করেছে৷
ছবি: Imago Images/D. Delimont
১০. ডেনমার্ক
পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ৫৮ হাজার ৯৩২ ডলার, গত বছর যা ছিল ৬২ হাজার ৩৭১ ডলার। ডেনমার্কের সবচেয়ে বড় র্যাঙ্কিং হলো, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের শীর্ষে রয়েছে ডেনমার্ক।
ছবি: picture alliance
৯. হংকং
এটি সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ, চীনের এ বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলটি মূল ভূখণ্ড এবং এশিয়ার শীর্ষ আর্থিক কেন্দ্রের প্রবেশদ্বার। পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ৫৯ হাজার ৫২০ ডলার। স্বল্প কর, উত্তরাধিকার শুল্ক বিহীন, আমদানি বা রপ্তানির ওপর কোনো শুল্ক না থাকা হংকংয়ের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য।
ছবি: Charlene Flores/Zuma/imago images
৮. ব্রুনেই দারুসসালাম
পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ৬২ হাজার ৩৭১ ডলার। ১ হাজার ৭৮৮টি কক্ষ, ২৫৭টি বাথরুম, ৫ হাজার অতিথির সংকুলান হবে এমন একটি হলরুম, পোলো খেলার জন্য ২০০ ঘোড়ার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আস্তাবল—এই হচ্ছে দেশটির সুলতান হাসসান-আল বলখিয়াহর থাকার প্রাসাদের ছোট এক বিবরণ। তেলসহ বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে দেশটিতে।
ছবি: Imago Images/D. Delimont
৭. যুক্তরাষ্ট্র
২০২০ সালে করোনার কারণে কঠিন সময় পার করলেও ধনী দেশের তালিকায় এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। পিপিপিতে মাথাপিছু আয় ৬৩ হাজার ৪১৬ ডলার। ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ অনুসারে মার্চ ২০২০ থেকে এপ্রিল ২০২১–এর মধ্যে আমেরিকার ৭১৯ বিলিয়নিয়ারের সমষ্টিগত সম্পদের পরিমাণ ১ দশমিক ৬২ ট্রিলিয়ন ডলার। বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ।
ছবি: J. Scott Applewhite/AP/dpa/picture alliance
৬. নরওয়ে
পিপিপিতে মাথাপিছু আয় ৬৫ হাজার ৮০০। ১৯৬০ সালে এখানে তেল আবিষ্কার হয়। যত দিন পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছিল, তত দিন দেশটির সমৃদ্ধি কেবলই বেড়েছে। তবে ২০২০ সালের জ্বালানি তেলের দামের ব্যাপক দরপতন হয়। সেই সঙ্গে ছিল মহামারির তাণ্ডব। সব মিলিয়ে গত বছর নরওয়ের অর্থনীতি আড়াই শতাংশ সংকুচিত হয়।
পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ৭২ হাজার ৮৭৪ কোটি ডলার। গত বছর পিপিপি ডলারে দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ৬৭ হাজার ৬০০ ডলার। সুইজারল্যান্ড মানেই কেবল ঘড়ি, সাদা চকলেট, সুইস চাকু বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়। পর্যটন তো আছেই, ভারী শিল্পের জন্যও বিখ্যাত দেশটি।
ছবি: Getty Images/Ironman/J. Pollex
৪. কাতার
গত বছর গ্লোবাল ফিন্যান্সের তালিকায় শীর্ষে ছিল কাতার। ২০ বছর ধরেই তারা শীর্ষ ধনী দেশের অবস্থান ধরে রেখেছিল। তবে এবার দেশটির অবস্থান চলে এসেছে চতুর্থে। গত বছর তেলের দামের যে তীব্র পতন হয়েছিল, তার প্রভাব পড়তে দেখা গেছে দেশটির অর্থনীতিতে। পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ৯৩ হাজার ৫০৮ ডলার।
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Al-Zayyat
৩. আয়ারল্যান্ড
পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ৯৪ হাজার ৩৯২ ডলার। গত বছর পিপিপিতে মাথাপিছু জিডিপি ছিল ৮৭ হাজার ডলার।
ছবি: picture-alliance/Design Pics/P. Zoeller
২. সিঙ্গাপুর
গত বছর চতুর্থ অবস্থানে ছিল দেশটি। এ বছরে মে পর্যন্ত অবস্থান দ্বিতীয়। পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ৯৭ হাজার ৫৭ ডলার। গত বছরের চেয়ে আয় কমেছে, তবে অবস্থান বেড়েছে। গত বছর পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৭০০ ডলার। এশিয়ার অন্যতম করের স্বর্গরাজ্য বা ট্যাক্স হ্যাভেনের দেশ।
ছবি: Imago/imagebroker
১. লুক্সেমবার্গ
ধনী দেশ হিসেবে গত বছর দেশটির অবস্থান ছিল তৃতীয়। এবার দেশটির অবস্থান শীর্ষে। পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয়ও গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। এ বছর এ আয় হলো ১ লাখ ১৮ হাজার ডলার, গত বছর যা ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ডলার। লুক্সেমবার্গ হলো ইউরোপের আরেক ট্যাক্স হ্যাভেন বা করস্বর্গ।
ছবি: Ahmad Shahhosseinpour
বাংলাদেশের অবস্থান
১৯১টি দেশের মধ্যে ১৪৩তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ৷ জিডিপি-পিপিপি ৫ হাজার ২৮ ডলার৷ ভারত ও পাকিস্তানের পেছনে অবস্থান করছে দেশটি৷ ১২৪তম অবস্থানে আছে ভারত (৮৩৭৮ ডলার) এবং পাকিস্তান ১৩৮তম অবস্থানে (৫৮৭২ ডলার)৷
ছবি: DW/S. Hossain
11 ছবি1 | 11
দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা জমা রয়েছে, তার বেশিরভাগটাই অবৈধভাবে অর্জিত৷ বিদেশি ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে কয়েক মাস আগে একটি রিট আবেদন হয়েছে হাই কোর্টে৷
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের কতজনের কত টাকা আছে সেই তালিকা চেয়েছে সরকারের কাছে৷ পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে৷
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রথমবার দশ কোটি সুইস ফ্রাঙ্ক ছাড়িয়ে যায় ২০০৬ সালে, যেটি ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছর৷ নয় কোটি ৭২ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক থেকে বেড়ে ওই বছর জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ কোটি ৪৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক৷ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম বছর ২০০৭ সালে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়৷
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১১ সালে জমার পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ২৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক, তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ৬৬ কোটি ১৯ লাখে৷
তবে ২০১৭ সালে তা কমে ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্কে নেমে এলেও ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের বছরে তা বেড়ে ৫১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঙ্কে দাঁড়ায়৷
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতীয়দের সুইস ব্যাংকে জমানো অর্থের পরিমাণে এবার বড় উল্লম্ফন ঘটেছে৷ ৮৯ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক থেকে বেড়ে ২.৫৫ বিলিয়ন হয়েছে৷ পাকিস্তানিদের জমা অর্থের পরিমাণ ৩৫ কোটি ৯৬ লাখ থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৬৪ কোটি ২২ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক৷
সুইজারল্যান্ডের ২৪৩টি ব্যাংকের যে হিসাব দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে, তাতে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জমা অর্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৩৭৭ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক৷ দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জমার পরিমাণ ১৫২ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক৷ তালিকায় এর পরে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ফ্রান্স, হংকং, জার্মানি, সিঙ্গাপুর ও লুক্সেমবুর্গ৷