1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের বিপুল ‘সঞ্চয়’ বৃদ্ধি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ জুন ২০২২

সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ মাত্র এক বছরে রেকর্ড শতকরা ৫৫ ভাগ বেড়ে গেছে৷ এমন বৃদ্ধির কারণ কী? এই অর্থ কি আইনগতভাবে ফেরত আনা সম্ভব?

ছবি: Reuters/R. Sprich

ব্যাংকার এবং অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সামনে নির্বাচন, এটা সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ বেড়ে যাওয়ার একটা কারণ৷ তবে সার্বিকভাবে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার বেড়ে যাওয়াই মূল কারণ৷ সরকার চেষ্টা করলে এবং সদিচ্ছা থাকলে আইনগতভাবেই এখন এসব অনুসন্ধান ও ফেরত আনা সম্ভব৷

সুইস ব্যাংকে কত টাকা

২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের মোট অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আট হাজার ২৭৬ কোটি টাকা (এক ফ্রাঁ= ৯৫ টাকা)৷ ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা পাঁচ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা৷ এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে দুই হাজার ৯২৮ কোটি টাকা৷ অর্থাৎ এক বছরে রেকর্ড শতকরা ৫৫ ভাগ বেড়েছে৷ এটা এ পর্যন্ত এক বছরে সর্বোচ্চ৷ সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক এসএনবি-র বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে৷

সুইস ব্যাংকে ২০০২ সালে বাংলাদেশিদের আমানত ছিল মাত্র তিন কোটি ১০ লাখ ফ্রাঁ৷ দুই দশতে তা বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ৷

কেন বাড়ছে?

বাংলাদেশিদের অর্থ কেন বাড়ছে? যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যাংকার মো. নুরুল আমিন বলেন, প্রতি জাতীয় নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে যায়৷ তখন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণও বেড়ে যায়৷ নির্বাচনের আগের বছরগুলোর হিসাব দেখলে তা স্পষ্ট হবে৷ তবে এবার অবিশ্বাস্য রকম বেড়ে গেছে৷ তার কথা, ‘‘নির্বাচন ছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দুর্নীতির পরিমাণ যখন বেড়ে যায়, তখন সুইস ব্যাংকেও বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়৷ আবার অনেকে দেশে অনিরাপদ মনে করে, প্রাসীরাও টাকা সেখানে রাখতে পারে আর আমাদের ব্যাংকগুলোর সাথেও সুইস ব্যাংকের কিছু লেনদেন হয়৷ কিন্তু এবার যে পরিমাণে হয়েছে, তা উদ্বেগের বিষয়৷’’

প্রত্যেক জাতীয় নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে যায়: মো. নুরুল আমিন

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘‘দেশে আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি এবং আর্থিক অনিয়মে আগের চেয়ে বেশি জড়িয়ে পড়েছেন৷ তাই টাকা পাচারও বেড়ে গেছে৷ সেই তুলনায় সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা সামান্যই৷ এখন টাকা পাচারের আরো অনেক দেশ আছে৷ গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) গতকাল (বৃহস্পতিবার) বলেছে, ছয় বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে৷ সুইস ব্যাংকে আছে মাত্র আট হাজার কোটি টাকা, যা এক বিলিয়ন ডলারের মতো৷ তাহলে অনেক বেশি পুঁজি অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে৷’’

তার কথা, ‘‘সুইস ব্যাংকের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, মালয়েশিয়া, অষ্ট্রেলিয়ায় চলে যাচ্ছে৷ এটা অনেক বেশি উদ্বেগের৷ দুর্নীতিবাজ আমলা, ব্যাসায়ী ও রাজনীতিবিদরা সেখানে টাকা পাঠাচ্ছে, বাড়ি-ঘর করছেন, সম্পদ তৈরি করছেন, স্ত্রী-সন্তানদের সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছে৷ তারাও চলে যাবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘শুধু একজন আজিজ খানের কাছেই সিংগাপুরে এক বিলিয়ন ডলার চলে গেছে৷’’

আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মে আগের চেয়ে বেশি জড়িয়ে পড়েছেন, তাই টাকা পাচারও বেড়ে গেছে: ড. মইনুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

টাকা ফেরত আনা

বাংলাদেশে এরশাদ সরকারের পতনের পর সুইস ব্যাংকে তার (এরশাদ) টাকা ফেরত আনার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল৷ এই কাজে ফায়ার ফক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বও দেয়া হয়৷ কিন্তু সেই টাকা ফেরতের কোনো খবর আর পাওয়া যায়নি৷ তবে পরবর্তীতে সিঙ্গাপুর থেকে টাকা ফেরত আনার উদাহরণ আছে৷ সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন সুইস ব্যাংকও চাপের মুখে আছে৷ আর চাপের কারণেই ২০১৪ সাল থেকে সে কোনো দেশের নাগরিকদের কত অর্থ আছে, তার পরিমাণ প্রকাশ করছে৷ তাকে মামলাও মোববেলা করতে হচ্ছে৷ সুইস ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন এখনো গ্রাহকের গোপনীয়তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও অপরাধে জড়িত গ্রাহকের তথ্য দিচ্ছে৷ ২০১৪ সালে কমন রিপোর্টিং ষ্ট্যান্ডার্ড (সিআরএস) গড়ে তোলে ১০০টি দেশ৷ তার আওতায় সদস্য দেশগুলো তার নাগরিকদের সব তথ্য সুইস ব্যাংক থেকে পায়৷ ২০১৭ সাল থেকে তারা তথ্য দিচ্ছে৷ ভারত, পাকিস্তান ও এমনকি মালদ্বীপও ওই প্রক্রিয়ায় স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ করেনি৷

বাংলাদেশ ২০১৪ সালে একটি উদ্যোগ নেয়৷ ওই বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সুইজারল্যান্ডের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে সমঝোতা চুক্তি করার জন্য চিঠি দেয়৷ আর ২০১৩ সালে বিএফআইইউ এডমন্ট গ্রুপের সদস্যপদ পায়৷ এডমন্ট গ্রুপ হলো সব দেশের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটগুলোর একটি জোট৷ এই ফোরাম অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন নিয়ে কাজ করে৷

এখন পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার সুযোগ বেড়েছে, তবে তা সময় ও সদিচ্ছার বিষয়: আবু হেনা রাজি হাসান

This browser does not support the audio element.

বিএফআইইউ-র সাবেক প্রধান আবু হেনা রাজি হাসান জানান, ‘‘এডমন্ট গ্রুপের সদস্য হিসেবে বিশ্বের ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স গ্রুপগুলো তথ্য আদান-প্রদান করে৷ আবার বিভিন্ন দেশে তথ্য চাইলে তারা সাড়া দেয়৷ কিন্তু সেটা তাদের আইনের মধ্যে থেকে৷ এটা নিয়ে সারা বিশ্বে কাজ করছে ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স৷ তাদের চাপে এখন সুইস ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংকই অবস্থান পরিবর্তন করছে৷ তথ্য দেয়৷ আগে তো মুখ বন্ধ ছিল৷’’

তিনি বলেন, ‘‘তবে তথ্য নিতে হলে তাদের অপরাধের তথ্য-প্রমাণ দিতে হয়৷ আবার এডমন্ট গ্রুপের নিয়ম অনুয়ায়ী ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মাধ্যমে তথ্য আনলে তা প্রকাশ করা যায় না৷ গোপন রেখে তার ওপর অনুসন্ধান করা যায়৷ আর ক্রিমিনাল ম্যাটার হলে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্সের আওতায় করা করা যায়৷’’

তার কথা, ‘‘এখন পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা, বিদেশের ব্যাংকে বাংলাদেশের টাকা নিয়ে কাজ করার সুযোগ বেড়েছে, তবে তা সময় ও সদিচ্ছার বিষয়৷’’

মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘‘এখন সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তার নীতির কড়াকড়ি কমে এসেছে৷ আগে তো তারা কিছুই প্রকাশ করতো না৷ এখন কোন দেশের নাগরিকদের কত টাকা আছে তা প্রকাশ করে৷ তাদের নাম প্রকাশ করে না৷ এখন অনেক দেশ নানা চুক্তির অধীনে নাগরিকদের নামসহ তথ্যও পাচ্ছে৷ আমরাও চেষ্টা করলে পেতে পারি৷ আমরা আন্তর্জাতিক ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স জোট এডমন্ট গ্রুপের সদস্য৷ এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের সদস্য৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তথ্য পেতে পারে৷’’

অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন বলে দেখিনি৷ তিনি নিজেই তো পুঁজি পাচারকারী৷ ওনার লন্ডনে বাড়ি আছে৷ তিনি কীভাবে লন্ডনে পুঁজি নিয়ে গেলেন, ওখানে বাড়ি করলেন?’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ