1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

'সুগারকোটেড ঝকমকে দুনিয়ার সিনেমা বানাতে পারবো না'

শময়িতা চক্রবর্তী
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এই প্রথম এক ভারতীয় ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের ওরিজন্তি বিভাগে সেরা পরিচালকের সম্মান পেলেন। শহুরে বাংলা নয়, পুরুলিয়ার অনুপর্ণা রায় তার মেঠো বাংলাকেই বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চান।

অনুপর্ণা রায় 'সংস অফ ফরগটেন ট্রিজ'-এর জন্য এই সম্মান পেলেন।
অনুপর্ণা রায় প্রথম ভারতীয় যিনি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের ওরিজন্তি বিভাগে সেরা পরিচালকের সম্মান পেলেন।ছবি: Stefano Costantino TTL/Avalon.red/IMAGO

অনুপর্ণা রায় কোনো ফিল্ম স্কুলে যাননি। সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনো করেছেন। শহরের চাকচিক্য নয়, পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার মেয়ে অনুপর্ণাকে আকর্ষণ করে  গ্রামের আঞ্চলিক মেঠো উচ্চারণ। তার প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি, 'সংস অফ ফরগটেন ট্রিজ'-এর জন্য ৮২ তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবেওরিজন্তি বিভাগে সেরা পরিচালকের সম্মান পেয়ে সবে মুম্বই ফিরেছেন তিনি। তিনিই প্রথম ভারতীয় পরিচালক যিনি এই সম্মান পেলেন। ফিরেই ডিডাব্লিউকে শোনালেন কেন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণের উপরে তার অগাধ আস্থা।   

কবে ফিরলেন দেশে?

সোমবার, মুম্বই ফিরেছি। কলকাতা ফেরার কথা ভাবছি। বিএফআই লন্ডনে আমাদের সিনেমা একটা খুব বড় অ্যাওয়ার্ডের জন্য নমিনেটেড হয়েছে। ফলে ৮ অক্টোবরের মধ্যে আমাকে আবার লন্ডন যেতে হবে। 

পুজোয় চেষ্টা করবো এখানে থাকার। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না। মা-বাবার সঙ্গে কথা হচ্ছে। ফেস্টিভ্যালের সময়েও সমানে কথা হয়েছে।

এই প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি বানালেন। 'সংস অফ ফরগটেন ট্রিজ' বানাতে কতদিন লেগেছে?

স্ক্রিপ্টিং থেকে শুরু করে প্রায় দুই বছর লেগেছে। শুটিং করতে প্রায় ৫০ দিন লেগেছে।

আপনি সিনেমা বানানোর কথা ভাবলেন কেন? আপনি কি ফিল্ম স্কুলে পড়াশোনা করেছেন?

ঋত্বিক ঘটক আমার অনুপ্রেরণা। তাঁকে দেখেই সিনেমা বানাতে চেয়েছি। আমি কোনো ফিল্ম স্কুলে যাইনি। সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছি কারণ ওটাই ভালো লাগতো। ক্লাস টুয়েলভে যখন পড়ি তখন থেকে সিনেমা বানাতে চেয়েছি। তখন স্ক্রিপ্ট লিখতাম। পরিচালনা করার আগে এটাই প্রথম মাথায় এসেছিল। তারপর আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম, যারা লেখেন তারা পরিচালনাও করতে পারেন। কারণ এটা তাদেরই গল্প। তারাই তো পারবেন। বন্ধুরা খুব সাহায্য করেছে। বলেছে, তুই পারবি।

উৎসব শেষ হওয়ার পরে সোমবার দেশে ফিরেছেন অনুপর্ণা রায়। কলকাতায় আসার পরিকল্পনা করছেন। ছবি: Alberto Terenghi/Pool Even/ZUMA Press/IMAGO

আপনার প্রথম শর্ট ফিল্ম, 'রান টু দ্য রিভার', কলকাতায় বসেই বানানো। মুম্বই গেলেন কেন? সিনেমা বানানোর তাগিদে?

বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে ভরসা নেই, এমন নয়। একেবারেই এমন নয়। আমি আসলে রিজিওনাল ডায়লেক্টে সিনেমা বানাতে চাই। তাতেই আমি আমার প্রথম সিনেমা বানিয়েছি। এই দুটো বাংলা একেবারেই আলাদা। একটা হচ্ছে এলিট বাংলা আর আরেকটা হচ্ছে আঞ্চলিক বাংলা, যে বাংলায় আমি কথা বলি। আমি সেই ভাষাতে একটা সিনেমা বানিয়েছিলাম। তার পরে আমি মুম্বই আসার সিদ্ধান্ত নিই। তার কারণ, আমার মাথায় এই নতুন গল্পটা ছিল। এই গল্পটা কিন্তু হিন্দিতেই আমার মাথাতে এসেছিল। তার সূত্রে, এবং একটা চাকরি পাওয়ার সূত্রে আমি মুম্বই আসি। আমি কলকাতাতে চাকরি পেলে কলকাতাতেই থেকে যেতাম। এমন নয় যে আমি কোনো একটা শহরের প্রতি অনুগত। আমি একজন কর্পোরেট মাইগ্রেন্টের মতো কলকাতা ছেড়ে মুম্বই আসি।

তারপর দেখলাম যে এখন তো আমি দু'বছর কলকাতা ফিরেই যেতে পারবো না। তখন ভাবলাম, এখানেই সিনেমাটা বানানো যেতে পারে। মুম্বই এমনিতেই শহর হিসেবে গাদাগাদি করে থাকা ফ্ল্যাটবাড়ির একটা ছবি তুলে ধরে। মুম্বইতে একটা ইন্টিমিডেটিং জিওগ্রাফি আছে। ক্যাফেতে কমসে কম ১৫ জন খুব পাশাপাশি গা ঘেঁসে বসে সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়ে কথা বলে। কেন? কারণ জায়গা নেই। জায়গার অপ্রতুলতার মতো জিনিসগুলো আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছে।

আমি মুম্বইএর আন্ধেরিতে একটা ভাড়া বাড়ি পাই। আমি আর আমার এক বন্ধু সেই টু-বিএইচকে ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিলাম। ওই ফ্ল্যাটটার স্ট্রাকচারটা খুব সুন্দর। আমরা ছবিটা ওখানেই বানিয়েছি। ফলে আমি যেখানে থাকতাম সেখানেই আমার ছবির শুটিং হয়েছে।

এর আগে শর্ট ফিল্ম বানানোর সময় অনেক প্রতিকূলতা দেখেছেন। সে সবই স্বাধীন ছবি বানানোর প্রতিকূলতা। বন্ধুরা সাহায্য করেছিলেন সেই সময়। এবারে এই ছবি বানাতে কী একই রকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে? 

আসলে কী, প্রতিটা ছবির একটা নিজস্ব লড়াই থাকে। এটাই আমি অনুভব করলাম। প্রথম ছবিতে আমি যে লড়াইটা লড়েছিলাম, আমি ভেবেছিলাম দ্বিতীয় সিনেমাতে সেই স্ট্রাগলটা হবে না। সত্যই তাই। প্রথম ছবি 'রান টু দ্য রিভার' থেকে আমি অনেক কিছু শিখে গেছিলাম। আমার অনেক ভুল আমি আর আমার দ্বিতীয় ছবিতে রিপিট করিনি। কিন্তু এই সিনেমাটার আবার আলাদা সমস্যা ছিল। মুম্বইতে ছবির শুটিং করার কোনো অনুমতি ছিল না আমাদের। তাছাড়া আমি গেরিলা শ্যুট করেছি, কারণ আমি ওটাই চেয়েছি। সাধারণ মানুষের সাধারণ অনুভূতিগুলোকে সিনেমায় ধরতে আমার ভালো লাগে। যেন তারা না জানতে পারে যে ক্যামেরা তাদের দিকে তাক করা আছে। আমাদের সিনেমায় এমন অনেক দৃশ্য আছে। আমি তো ক্যাফে ভাড়া নিতে পারিনি। পারলেও হয়তো করতাম না। ওটা আমার প্রসেস না। আমি চাই আমার চরিত্রদের জামায় মাইক লুকিয়ে ভিড়ের মধ্যে হেঁটে যেতে বলবো। ওদের বলবো, তোমরা ভুলে যাও ক্যামেরা কোথায় আছে। ওরা জানবে না ক্যামেরা কোথায় আছে। এইটা আমাদের পরিকল্পনা। আর এগুলোই চ্যালেঞ্জের। রাস্তাঘাটে ক্যামেরা হাতে নেমে যাওয়ার একটা রিস্ক থাকে। এটা মুম্বই। ক্যামেরা দেখলেই ধরপাকড় হয়। ওরা ধরে নেয়, ক্যামেরা মানেই 'ওয়ানাবি' ফিল্মমেকার। এইগুলো চ্যালেঞ্জের ছিল। এছাড়া সমস্যা ছিল সরঞ্জামের। ভালো সরঞ্জাম কোথায়ে পেতাম? আমার প্রযোজকেরা খুব সাহায্য করেছেন।

স্বাধীন ছবি বানানোর জন্য কলকাতা, মুম্বই, বা সামগ্রিকভাবে ভারতের পরিকাঠামো কতটা অনুকূল?

স্বাধীন ছবি বানানো সহজ নয়। কিন্তু আমি যে ছবি বানাতে চেয়েছি, তা একমাত্র স্বাধীনভাবেই বানানো সম্ভব। আমি তৃতীয় বিশ্বেরই সিনেমা বানাতে চাই। যেরকম অর্থনৈতিক পরিবেশে আমি বড় হয়েছি, তার থেকে বেরিয়ে, সুগারকোটেড ঝকমকে দুনিয়ার সিনেমা আমি কোনোদিনই বানাতে পারবো না। হ্যাঁ, আমি ভালো চরিত্র লিখতে পারবো। তা করার জন্যও আমাকে অনেক পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ফলে আমি যা চাই, তা আমাকে স্বাধীন সিনেমাই দিতে পারে। আবার অন্যদিকে, স্বাধীন সিনেমা বানালে প্রয়োজনীয় অর্থসহ অন্যান্য জিনিস জোগাড় করা কঠিন। সব সময় টাকার চিন্তা করতে হয়, কী করে শেষ পর্যন্ত কাজ হবে তার চিন্তা করতে হয়, কোন মানুষের সঙ্গে পরিচয় থাকলে সিনেমার একটু সুবিধা হবে, সারাক্ষণ এসব ঘুরতে থাকে মাথায়।  

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ