সুচিত্রা সেনের বাড়ি দখলমুক্ত
১৭ জুলাই ২০১৪বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িটি বুঝে নেবে জেলা প্রশাসন৷ বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত-নিয়ন্ত্রিত ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টের দখলে ছিল৷ উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়৷ গত ৪ মে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাড়িটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়৷ পাবনা জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তারা বড়িটি ছেড়ে দিয়েছে৷
পাবনার সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মৌলবাদী জামায়াত চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটি দখল করে ছিল৷ পাবনা জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বাড়িটির নিয়ন্ত্রণভার জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবে৷
পাবনার সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. রামদুলাল ভৌমিক বলেন, ‘‘আমরা খুশি যে আমাদের ৫ বছরের আন্দোলনে বাড়িটি উদ্ধার করে সরকারের দখলে আনা সম্ভব হয়েছে৷ এখন আরেকটি বড় প্রক্রিয়া হচ্ছে ওই বাড়িতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা তৈরি করা৷'' ইতিমধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি৷ রামদুলাল ভৌমিক জানান, পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের এই বাড়িতেই কেটেছে মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের শৈশব ও কৈশোর৷
আর পাবনার একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘‘আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের সফলতায় সুচিত্রার বাড়িটি উদ্ধার হওয়ায় পাবনার সব মানুষ খুশি৷''
স্মৃতির আয়নায়
পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি৷ সেখানে তিনি বাবা-মা ও ভাইবোনের সঙ্গে শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন৷ নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রার বিয়ে হয়৷ এরপর স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় চলে যান তিনি৷
সুচিত্রা সেনের বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনা পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন৷ ১৯৫১ সালে তিনি অবসরে যান৷ ১৯৬০ সালে বাড়িটি জেলা প্রশাসনের কাছে ভাড়া দিয়ে পরিবার নিয়ে কলকাতায় চলে যান করুণাময় দাশগুপ্ত৷ তখন জেলা প্রশাসন বাড়িটিকে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার বানায়৷ এরপর আর সুচিত্রা সেনের পরিবারের কেউ পাবনায় ফিরে আসেননি৷
গত ১৭ জানুয়ারি কোলকাতায় ৮৩ বছর বয়সে মারা যান সুচিত্রা সেন৷ অবশ্য এর আগেই ১৯৭৮ সালে আকস্মিকভাবেই অভিনয় জীবনের ইতি টেনে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান তিনি৷
জামায়াত নেতাদের দখল ও উদ্ধার আন্দোলন
১৯৮৭ সালে পাবনার সেসময়ের জেলা প্রশাসক সৈয়দুর রহমান সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটিকে অর্পিত সম্পত্তি দেখিয়ে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টকে ইজারা দেন৷ এই ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহান এবং সেক্রেটারি হলেন জেলা জামায়াতের আইন বিষয়ক সম্পাদক আবিদ হাসান৷
পরবর্তী সময়ে ইজারার টাকা পরিশোধ না করায় ১৯৯৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় ইজারা বাতিল করে৷ এরপর ট্রাস্টের নেতারা বকেয়া পরিশোধ করে ১৯৯৫ সালের ১৫ আগস্ট ইজারা নবায়ন করান৷
পাবনাবাসী বাড়িটি দখলমুক্ত করে সেখানে সুচিত্রা সংগ্রহশালা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে ২০০৯ সালে পাবনা জেলা প্রশাসন বাড়িটির ইজারা বাতিল করে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টকে দখল ছাড়ার নির্দেশ দেয়৷ কিন্তু জামায়াত নেতারা দখল না ছেড়ে উচ্চ আদালতে যান৷ আদালত তাঁদের পক্ষে স্থিতাবস্থা'র আদেশ দেন৷
২০১১ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মঞ্জিল মোরসেদ বাড়িটি দখলমুক্ত করতে রিট করলে হাই কোর্ট বাড়িটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন৷ এরপর দখলকারীরা লিভ টু আপিল করেন৷ গত ৪ মে উচ্চ আদালত লিভ টু আপিল বাতিল করে বাড়িটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ বহাল রাখেন৷ গত ১০ জুলাই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে বুধবার সকালে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাড়িটিতে হাজির হয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন৷