অং সান সুচি-র বিরুদ্ধে প্রথম মামলার রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়েছে৷ আরো সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য এক সপ্তাহ সময় নিয়েছে মিয়ানমারের আদালত৷
বিজ্ঞাপন
গত ১ ফেব্রুয়ারি সুচির নেতৃত্বাধীন সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী৷ তারপর সুচি ও তার মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ নোবেলজয়ী নেত্রী সুচি সেই থেকে কারাগারে৷
আটক করার কয়েকদিন পর অবৈধ ওয়াকিটকি সঙ্গে রাখা এবং ২০২০ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় করোনাবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয় সুচির বিরুদ্ধে৷ তারপর একে একে যোগ করা হয় নতুন নতুন অভিযোগ৷ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, নির্বাচনে কারচুপি, অবৈধ স্বর্ণ এবং অর্থ (ছয় লাখ ডলার) গ্রহণসহ বেশ কিছু অভিযোগে মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে৷ মামলাগুলোয় দোষী সাব্যস্ত হলে বাকি জীবন কারাগারেই কাটাতে হতে পারে সুচিকে৷
মঙ্গলবার একটি দুর্নীতির মামলার রায় হওয়ার কথা ছিল৷ তবে আদালত আরো সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য রায় ঘোষণার তারিখ আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়েছে৷
আবার সেনা অভ্যুত্থান, আবার বন্দি সু চি
মিয়ানমারে আবার সেনা অভ্যুত্থান। ফের বন্দি হলেন আং সান সু চি। এর আগে সেনার হাতে ১৫ বছর গৃহবন্দি ছিলেন তিনি।
ছবি: Athit Perawongmetha/REUTERS
সেনা অভ্যুত্থান ও সুচি
মিয়ানমার বা বার্মা স্বাধীনতা পায় ১৯৪৮ সালে। তারপর তিনবার নির্বাচন হয়েছে সেদেশে। কিন্তু ১৯৬২ সালে সেনা অভ্যুত্থান হয়। সেনা-শাসন চলে ২০১১ সাল পর্যন্ত। আর সেনা-শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন সুচি। তিনি গৃহবন্দি ছিলেন ১৫ বছর।
ছবি: REUTERS
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই
অং সান সুচির বাবা মিয়ানমারের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। পরে নিহত হন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডে পড়া শেষ করে দেশে ফেরেন সুচি। ১৯৮৮ সালে দেশের সেনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু সুচির। ১৯৯০ সালে তাঁর দল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ভোটও পায়। কিন্তু সরকার নির্বাচনকে মান্যতা দেয়নি।
ছবি: Franck Robichon/REUTERS
সুচি গৃহবন্দি
১৯৮৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ১৫ বছর গৃহবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন সুচি। দেখা করতে পারেননি স্বামী এবং দুই পুত্রের সঙ্গে। কিন্তু গৃহবন্দি অবস্থাতেই গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।
ছবি: Reuters
নোবেল পুরস্কার
সুচির আন্দোলন গোটা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দেয়। ১৯৯১ সালে তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়। তাঁকে নিয়ে এক ফরাসি পরিচালক ছবি তৈরি করেছেন। আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মান এবং পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
ছবি: Reuters
নির্বাচন এবং জননেত্রী
২০১২ সালের নির্বাচনে অংশ নেন সুচি। জয়লাভ করেন। সেনা সরকার ক্রমশ গণতান্ত্রিক কাঠামো স্বীকার করতে শুরু করে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে সুচি মিয়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধান নিযুক্ত হন।
ছবি: Reuters
রোহিঙ্গা এবং অন্য সুচি
তাল কাটে এক বছরের মধ্যেই। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশের সেনাবাহিনী যখন অত্যাচার চালাতে শুরু করে, সুচি তাতে বাধা দেননি। রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। কিন্তু সুচি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
ছবি: DW/A. Islam
আন্তর্জাতিক চাপ
রোহিঙ্গা ইস্যুতে গোটা বিশ্ব সুচির উপর চাপ দিতে শুরু করে। বেশ কিছু পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়া হয়। নোবেল কমিটিও নোটিস জারি করে। কিন্তু সুচি নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে সুচি।
ছবি: Getty Images/AFP/ANP/K. van Weel
কারচুপির নির্বাচন
গত বছর নভেম্বর মাসে মিয়ানমারে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে সুচির দল ফের ক্ষমতায় আসে। কিন্তু তাঁর দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছে।
ছবি: Aung Shine Oo/AP Photo/picture alliance
সেনার সঙ্গে দূরত্ব
সেনার সঙ্গে সুচির দূরত্ব ক্রমশই বাড়ছিল। দেশে যে সেনা ফের অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে, সেই সন্দেহও প্রকাশ করছিলেন কেউ কেউ।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Htusan
সুচি আটক
রোববার রাতে আচমকাই সেনা সুচিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করা হয়েছে দেশের একাধিক মন্ত্রী এবং বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের। সেনা তাদের অজানা জায়গায় নিয়ে গেছে।
ছবি: picture alliance/AP Photo/P. Dejong
সেনাশাসনের ঘোষণা
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান মিং অং হ্লেইং সেনা টেলিভিশনে ঘোষণা করেছেন, নির্বাচনে কারচুপির জন্য সুচিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আপাতত আগামী এক বছরের জন্য দেশের দায়িত্ব নেবে সেনাবাহিনী।
ছবি: Soe Zeya Tun/REUTERS
দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা
রোববার থেকে গোটা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সেনা। সরকারি টেলিভিশনও ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না। সুচির গ্রেফতারির খবর প্রথম জানিয়েছিলেন সরকারের মুখপাত্র। তাঁর সঙ্গেও আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
ছবি: Thet Aung/AFP
12 ছবি1 | 12
১ ফেব্রুয়ারির পর আটক হওয়া অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা শুরু করেছে মিয়ানমারের আদালত৷ চলতি মাসে সাবেক মুখ্য মন্ত্রী থান নাইংকে ৭৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ সুচির আরেক রাজনৈতিক সহযোদ্ধা উইন হ্তাইনকে দেয়া হয়েছে ২০ বছরের কারাদণ্ড৷
অং সান সুচি ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে ফেব্রুয়ারি থেকেই বিক্ষোভ চলছে মিয়ানমার৷ স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে এ পর্যন্ত অন্তত ১২০০ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে৷