গেল দুই বছরে সুতার দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ৷ এতে খরচ বেড়েছে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারীদের৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রেতারা বাড়তি এ দাম পরিশোধ না করায় বিপদে পড়েছে বাংলাদেশসহ এশিয়ার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো৷
বিজ্ঞাপন
করোনা মহামারির ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে আবারো চাপের মুখে পোশাক খাত৷ ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে দাম বেড়েছে কাঁচামালের৷ এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন উদ্যোক্তারা৷
আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২০ সালে এক পাউন্ড কাঁচা তুলার দাম ছিল ৬৪ সেন্ট৷ এখন সেই দাম দ্বিগুণেরও বেশি (১.৩ মার্কিন ডলার)৷ এতে বাংলাদেশ, চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানের মুখে পড়েছে৷ লোকসান সামলাতে না পেরে বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে ছোট ছোট কারখানাগুলো৷ অনেক প্রস্তুতকারক সুতার বদলে কমদামে সিনথেটিক ব্যবহার করছে৷
শিশুশ্রমের উপর ভিত্তি করে টিকে আছে যেসব শিল্প
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও বলছে, বিশ্বে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি ২১ কোটি ৮০ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে৷ ডয়চে ভেলে এমন কয়েকটি শিল্পের কথা তুলে ধরছে, যেগুলোর সাথে শিশুশ্রম সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ouoba
কফি
আইএলও-এর তথ্য অনুযায়ী, কয়েকটি দেশে কৃষি ক্ষেত্রে শিশুদের কাজ করাটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বেশিরভাগক্ষেত্রেই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয় তাদের৷ এই যেমন কলোম্বিয়া, তানজানিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, ডোমিনিকান রিপাবলিক, হন্ডুরাস, পানামা, এল সালভাদর, গিনি এবং আইভরি কোস্টে কফির বীজ সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হয় শিশুদের৷
ছবি: dpa
তুলা
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই তুলা সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হয় শিশুদের৷ তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে সেসব দেশ, যেখানে অর্থনীতি তুলা শিল্পের উপর নির্ভরশীল৷ যেমন আইভরি কোস্ট, যেখানে ৩০ লাখ মানুষ এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল৷ ‘কটন ক্যাম্পেইন’ নামের একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানেও তুলা শিল্পে শিশুদের জোর করে কাজে লাগানো হয়৷
ছবি: Issouf Sanogo/AFP/Getty Images
ইটভাটা
মার্কিন শ্রম অধিদপ্তর এমন ১৫টি দেশের তালিকা তৈরি করেছে, যেখানে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ইটের ভাটায় শিশুদের কাজে লাগানো হয়৷ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চীন, ইকুয়েডর, উত্তর কোরিয়া এবং পেরু রয়েছে এই তালিকায়৷
এই শিল্পে শিশুশ্রমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পরিচিত দু’টি দেশ হলো কলোম্বিয়া এবং বাংলাদেশ৷ কিন্তু বিশ্বের প্রায় সবদেশেই এ খাতে শিশুদের ব্যবহার করা হয়৷ এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে তুরস্কের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে জুতা কারখানায় সিরিয়ার শিশু শরণার্থীরা কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
চিনি শিল্প
গুয়াতেমালা, ফিলিপাইন্স, কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে আখ শিল্পে শিশুদের কাজে লাগানো হয়৷ আইএলও দেখেছে ফিলিপাইন্সে চিনি তৈরির কারখানায় সাত বছর শিশুদের কাজে লাগানো হচ্ছে৷
ছবি: dpa
তামাক
আইএলও বলছে, তামাক শিল্প শিশুদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর কর্মক্ষেত্র৷ সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে প্রচণ্ড গরমে, বিষাক্ত পদার্থ নিয়ে কাজ করতে হয় শিশুদের৷ বেশিরভাগ তামাক কারখানায় শিশুরা কমপক্ষে দিনে ১০ ঘণ্টা করে কাজ করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Khanna
সোনার খনি
আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশগুলোতে খনিতে, বিশেষ করে স্বর্ণ খনিতে শিশুদের কাজ করাটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার৷ খনিতে বিস্ফোরণে শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে৷ এছাড়া খনির আশেপাশে বিশুদ্ধ পানি না থাকায় পাতলা পায়খানা, ম্যালেরিয়া, মেনিনজাইটিস এবং যক্ষা রোগের ঝুঁকি রয়েছে এসব শিশুদের৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ouoba
7 ছবি1 | 7
‘‘আমরা কারখানাগুলো পুরোদমেই চালাচ্ছি৷ কিন্তু তার জন্য কতটা খরচ বহন করতে হচ্ছে আমাদের? লাভের মুখ দেখাই কঠিন হয়ে পড়েছে,'' বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন৷ আন্তর্জাতিক ব্রান্ড এইচএন্ডএম ও গ্যাপের জন্য পোশাক তৈরি করেন তিনি৷
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সিংহভাগ ক্রেতা ইউরোপ৷ এই ব্লকে দেশে তৈরি গার্মেন্টস পণ্যের ৬০ ভাগ রপ্তানি হয়৷ কিন্তু রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, বাড়তি খরচ ক্রেতারা কোনভাবেই নিতে চায় না৷