সুদানে গণতন্ত্রপন্থিদের আন্দোলন ক্রমশ বাড়ছে। তারই মধ্যে আল জাজিরার ব্যুরো চিফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।
বিজ্ঞাপন
রোববার কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সরকারিভাবে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সুদানে তাদের ব্যুরো চিফকে গ্রেপ্তার করেছে সেদেশের সেনা সরকার। এর আগে তার বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছিল। কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে অবশ্য সেনা সরকার কিছু জানায়নি। আল জাজিরাও সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। তবে মনে করা হচ্ছে, গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলার জন্যই গ্রেপ্তার হয়েছেন ওই সাংবাদিক।
সাংবাদিকের নাম আল মুসল্লামি আল কাব্বাশি। রোববার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। তবে পরিবারের আর কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
সুদানের রাস্তায় বিক্ষোভ, সেনার গুলি
সোমবার সুদানের ক্ষমতা দখল করেছিল সেনা। তারপর থেকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন সাধারণ মানুষ। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে সেনার গুলি।
ছবি: AFP/Getty Images
সেনার গুলি, মৃত অন্তত সাত
সুদানের রাস্তায় প্রতিবাদ করছেন সাধারণ মানুষ। সেনার বিরুদ্ধে সরব মানুষ। সেনার পাল্টা গুলি। অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ১৪০। হাসপাতাল সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, আহতের সংখ্যা বাড়ছে।
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
রাস্তাই একমাত্র রাস্তা
হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। গুলির চালিয়েও তাদের প্রতিবাদ বন্ধ করা যায়নি। যেভাবে সোমবার সেনা ক্ষমতা দখল করেছে, সাধারণ মানুষ তার প্রতিবাদ করছেন। পুরনো সরকার ফেরানোর দাবি করছেন।
ছবি: Ashraf Idris/AP Photo/picture alliance
মধ্যবর্তী সরকার
সুদানে এতদিন অন্তর্বর্তী সরকারই শাসন করছিল। দেশ পরিচালনায় সামরিক ও রাজনৈতিক দলের নিয়োগ দেয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছিল৷ যার প্রধান ছিলেন আব্দাল্লা হ্যামডক। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন তিনি। সোমবার সেনা তাকে গ্রেপ্তার করে গোপন ডেরায় নিয়ে যায়।
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
সেনার অভ্যুত্থান
সোমবার সকালে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চালায় সেনা। সভরেন কাউন্সিলের প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থান হয়। এরপরেই দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
ছবি: Mahmoud Hjaj /AA/picture alliance
গ্রেপ্তার মন্ত্রীরা
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও দেশের অধিকাংশ মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সকলকেই অজানা ডেরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুরহান জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্যই এই অভ্যুত্থান হয়েছে।
ছবি: Rasd Sudan Network/AA/picture alliance
২০১৯ সালের অভ্যুত্থান
তিন দশক ধরে সুদানের শাসন ক্ষমতা ছিল ওমর আল-বশিরের হাতে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এরপরেই সামরিক এবং রাজনৈতিক দলের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। ২০২৩ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নতুন নির্বাচিত সরকার গঠনের কথা ছিল।
ছবি: Getty Images/AFP/E. Hamid
বুরহানের দাবি
বুরহান জানিয়েছেন, আগামী দুই বছর সামরিক শাসন জারি থাকবে। তবে ২০২৩ সালের নির্বাচন হবে। সেনাই সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
সাধারণ মানুষের বক্তব্য
সাধারণ মানুষ বলছেন, এর ফলে সুদানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি নষ্ট হয়ে গেল। সেনা নতুন করে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিল দেশকে।
ছবি: Nureldin Abdallah/REUTERS
বিশ্বের নিন্দা
অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে সোমবার রাতেই বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, সুদানের ঘটনা অত্যন্ত চিন্তার এবং দুঃখজনক। দুই বছর আগে রীতিমতো বিপ্লবের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক শক্তি একনায়ক শাসককে ক্ষমতাচ্যূত করেছিল। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছিল। পুরো প্রক্রিয়াটি নষ্ট করে দেওয়া হলো।
ছবি: ASHRAF SHAZLY/AFP via Getty Images
অনুদান বন্ধ
অ্যামেরিকা এবং জাতিসংঘ সুদানের নতুন শাসককে অনুদান দেবে না বলে হুমকি দিয়েছে। সুদানের অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ। অনাহারে আছেন বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি অনুদান বন্ধ হলে আরো ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হবে।
ছবি: ASHRAF SHAZLY/AFP via Getty Images
10 ছবি1 | 10
মাসখানেক আগে সুদানে সেনা অভ্যুত্থান হয়। শাসন ক্ষমতা দখল করেন আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান। বেশ কিছু মন্ত্রী এবং নাগরিক সমাজের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পরে জাতিসংঘের চাপে চার মন্ত্রীকে ছেড়েও দেওয়া হয়।
সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই সুদানে নাগিরক আন্দোলন শুরু হয়েছে। নাগরিক সমাজের একটি বড় অংশ গণতন্ত্রের জন্য রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সুদানের বেশ কিছু গণমাধ্যমও তা সমর্থন করছে। গত শনি ও রোববার রাজধানী-সহ একাধিক জায়গায় বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। অভিযোগ, নিরস্ত্র মানুষের বিক্ষোভ বন্ধ করতে তাদের উপর গুলি চালিয়েছে সেনা এবং পুলিশ। গণতন্ত্রপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন জানিয়েছে, রাজধানীর ঘটনায় অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বহু ব্যক্তি গুলির ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নাগরিক সমাজের একাংশের বক্তব্য, আল জাজিরার ব্যুরো চিফ গণতন্ত্রের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন বলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা হচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল।
জাতিসংঘ প্রথম থেকেই সেনা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। একাধিক বিষয়ে তাদের উপর নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়েছে। সাংবাদিককে গ্রেপ্তার নিয়ে জাতিসংঘ কোনো কথা বলে কি না, সেটাই এখন দেখার।