একই সঙ্গে অমুসলিমদের জন্য মদ্যপানে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিয়েছে দেশটি, নিষিদ্ধ করা হয়েছে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ৷ চার দশক ধরে কট্টর ইসলামি আইনে ইসলামত্যাগের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড৷
বিজ্ঞাপন
দেশটির বিচারমন্ত্রী নাসরেদ্দীন আব্দুলবারি জানিয়েছেন, শিগগিরই এই আইন দেশটিতে কার্যকর হবে৷
তিন দশকের শাসন শেষের বছরখানেক আগে তীব্র গণবিক্ষোভের মুখে পতন ঘটে ইসলামপন্থি স্বৈরশাসক ওমর আল-বশিরের৷ এরপর থেকে দেশটির নানা আইন ও বিচারব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে৷
তবে অমুসলিমদের মদ্যপানের অনুমতি দেয়া হলেও শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে৷ তারা প্রকাশ্যে মদ পান করতে পারবেন না এবং জনগণের শান্তি বিঘ্নিত হয় এমন কিছু করতে পারবেন না৷
১৯৮৩ সালে সুদানে ইসলামি আইন চালু করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জাফর নিমেইরি৷ রাজধানী খার্তুমের পাশে নীল নদের জলে মদের বোতল ছুঁড়ে ফেলেন তিনি৷ ইসলামে মদ্যপান নিষিদ্ধ৷ কিন্তু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সুদানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীও বাস করেন৷
সংস্কার চলছে
বিচারমন্ত্রী জানিয়েছেন,ধর্মত্যাগকে এতদিন অপরাধ হিসেবে দেখা হলেও সে আইনে পরিবর্তন আসছে৷ একই সঙ্গে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদকেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে আইনে৷ ইউনিসেফের ২০১৪ সালের এক প্রতিবেদন বলছে, সুদানে ৮৫ শতাংশেরও বেশি নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়৷
এখন থেকে সন্তানদের নিয়ে কোথাও ভ্রমণ করতে হলে নারীদের আর পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্যের অনুমতি নিতে হবে না৷
বিচারমন্ত্রী আব্দুলবারি বলেন, ‘‘কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপকে ‘বিধর্মী' বা ‘অবিশ্বাসী’ বলার অধিকার কারো নেই৷ এর ফলে সমাজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়৷ ওমর আল-বশিরের ক্ষমতাচ্যূতির পর সুদানে বর্তমানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে৷’’
আন্দোলনকারী ও সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে গঠন করা এ সরকার শুরু থেকেই বেশ কিছু সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে৷
তিন বছরের জন্য গ্রহণ করা সংবিধানে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ‘ইসলাম’ কথাটিও বাদ দেয়া হয়েছে৷ এ মাসের শুরুতে জনগণের কাছে আরো ক্ষমতা দেয়ার দাবিতে আবার রাজপথে নামেন হাজার হাজার আন্দোলনকারী৷ এরপর আরো বড় বড় সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দেশটির সরকার৷
এডিকে/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
২০১৯ সালের জুলাইর ছবিঘর দেখুন...
সুদানের নারী বিক্ষোভকারীরা
বিক্ষোভের মুখে সম্প্রতি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির৷ বিক্ষোভে অনেক নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
খাদিজা সালেহ
বশিরবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিতে ছয় বছর পর মার্চ মাসে বিদেশ থেকে দেশে ফেরেন তিনি৷ ‘‘আমার দেশের ভালো ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ স্থান ছেড়ে আমি দেশে এসেছি,’’ বলেন ৪১ বছর বয়সি সালেহ৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
নাহিদ গাব্রালা
১৯৮৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন বশির৷ এপ্রিলে আরেক অভ্যুত্থানের কারণে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন৷ ডিসেম্বরে বশিরবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল৷ এখনও তা চলছে৷ এখনকার বিক্ষোভের কারণ সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সাধারণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা৷ এই অবস্থায় গত জুনে বিক্ষোভরত গাব্রালাকে প্রহার করা হয়, এমনকি ধর্ষণেরও হুমকি দেয়া হয়৷ নিজের মেয়ের জন্য একটি ভালো দেশ পাবার আশায় লড়াই চালিয়ে যেতে চান তিনি৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
হাদিয়া হাসাবাল্লাহ
জুনের ৩ তারিখে গাব্রালাসহ অনেক নারীদের উপর হামলা করেছিল নিরাপত্তা বাহিনী৷ সেই সময় আহত হওয়া নারীদের দেখাশোনা করা এনজিওতে কাজ করেন হাসাবাল্লাহ৷ ঐদিন অনেক নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ তবে ‘‘কলঙ্কের ভয়ে সুদানের কোনো নারী ধর্ষিত হওয়ার কথা বলবে না,’’ বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
মাহি আবা-ইয়াজিদ
বশিরের আমলে মেয়েরা প্যান্ট পরতে পারতেন না৷ তাই জুন ৩- এর বিক্ষোভে ট্রাউজার পরে হাজির হয়েছিলেন আবা-ইয়াজিদ৷ তিনিও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহারের শিকার হন৷ ৩৫ বছর বয়িস আবা-ইয়াজিদ বলেন, ‘‘বিক্ষোভে যাওয়ার চেয়েও তাঁর পরনের পোশাকের প্রভাব বেশি ছিল৷’’
ছবি: Reuters/U. Bektas
দুহা মোহমেদ
‘‘আমি হেডস্কার্ফ পরতে চাই না, কিন্তু এটা আমার ইচ্ছা নয়৷ আমি যা ইচ্ছা পরার অধিকার চাই,’’ বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণ সম্পর্ক জানাতে গিয়ে বলেন ২৩ বছর বয়সি শিক্ষার্থী মোহমেদ৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
নাগদা মনসুর
ডিসেম্বরে বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ৭৫ দিন কারাগারে ছিলেন তিনি৷ ৩৯ বছর বয়সি মনসুর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসতে চান না, কারণ দারফুর যুদ্ধে তাদের ভূমিকা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট নন৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
মানাল ফারাহ
৪৯ বছর বয়সি ফারাহর ২২ বছর বয়সি ছেলে জুন ৩ এর বিক্ষোভের সময় নিহত হন৷ ‘‘যখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শুরু করে তখন সে প্রশ্ন করেছিল, সুদানে কেন এত দুর্নীতি৷ সে বলতো, একটা পরিবর্তন দরকার, একটা নতুন সুদান দরকার... আমি আমার সন্তানের স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে, এটা দেখতে চাই,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
আলা সালাহ
৮ এপ্রিল একটি গাড়ির উপর দাঁড়িয়ে সাদা পোশাক পরিহিত সালাহ সরকারবিরোধী বক্তব্য রাখছিলেন৷ সেই সময় একজন আলোকচিত্রীর তোলা ছবি (যেটি দেখতে পাচ্ছেন) আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ পরিচিতি পায়৷ ফলে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী আলা৷ তাঁর সেই ছবি সুদানের ‘লেডি লিবার্টি’ কিংবা ‘ওমেন ইন হোয়াইট’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে৷