সুদানে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন প্রাক্তন গোয়েন্দা অফিসাররা৷ দেশের স্বৈরাচারী শাসন থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের পথে এটাই সব থেকে বড় বিদ্রোহ৷ অন্তর্বর্তী সরকার তার মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ব্যবস্থা পরিবর্তনের মধ্যেই বিদ্রোহ৷ প্রাক্তন গোয়েন্দা অফিসারদের৷ আগের স্বৈরাচারী আমলে যাঁদের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম৷ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তাদের আর বহাল রাখা হয়নি৷ বিনিময়ে তাদের যে টাকা দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে ক্ষোভ৷ যার জেরে সশস্ত্র বিদ্রোহ৷
মঙ্গলবার গুলির শব্দে সচকিত হয়ে যান সুদানের শহর খার্তুমের লোকেরা৷ তারপর বোঝা যায় দেশের প্রাক্তন গোয়েন্দাদের একাংশ বিদ্রোহ করেছে, আর তাদের মোকাবিলা করছে সরকারি বাহিনী৷ সুদানের জেনারেল ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাক্তন গোয়েন্দা অফিসাররা তাদের প্যাকেজ নিয়ে ক্ষুব্ধ৷ প্রাক্তন স্বৈরাচারী শাসক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের অপসারণের পর তাদেরও ছুটি করে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু আলোচনার পর জাতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সার্ভিস বা এনআইএসএসের বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ করে দিয়েছেন৷
সুদানের নারী বিক্ষোভকারীরা
বিক্ষোভের মুখে সম্প্রতি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির৷ বিক্ষোভে অনেক নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
খাদিজা সালেহ
বশিরবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিতে ছয় বছর পর মার্চ মাসে বিদেশ থেকে দেশে ফেরেন তিনি৷ ‘‘আমার দেশের ভালো ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ স্থান ছেড়ে আমি দেশে এসেছি,’’ বলেন ৪১ বছর বয়সি সালেহ৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
নাহিদ গাব্রালা
১৯৮৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন বশির৷ এপ্রিলে আরেক অভ্যুত্থানের কারণে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন৷ ডিসেম্বরে বশিরবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল৷ এখনও তা চলছে৷ এখনকার বিক্ষোভের কারণ সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সাধারণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা৷ এই অবস্থায় গত জুনে বিক্ষোভরত গাব্রালাকে প্রহার করা হয়, এমনকি ধর্ষণেরও হুমকি দেয়া হয়৷ নিজের মেয়ের জন্য একটি ভালো দেশ পাবার আশায় লড়াই চালিয়ে যেতে চান তিনি৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
হাদিয়া হাসাবাল্লাহ
জুনের ৩ তারিখে গাব্রালাসহ অনেক নারীদের উপর হামলা করেছিল নিরাপত্তা বাহিনী৷ সেই সময় আহত হওয়া নারীদের দেখাশোনা করা এনজিওতে কাজ করেন হাসাবাল্লাহ৷ ঐদিন অনেক নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ তবে ‘‘কলঙ্কের ভয়ে সুদানের কোনো নারী ধর্ষিত হওয়ার কথা বলবে না,’’ বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
মাহি আবা-ইয়াজিদ
বশিরের আমলে মেয়েরা প্যান্ট পরতে পারতেন না৷ তাই জুন ৩- এর বিক্ষোভে ট্রাউজার পরে হাজির হয়েছিলেন আবা-ইয়াজিদ৷ তিনিও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহারের শিকার হন৷ ৩৫ বছর বয়িস আবা-ইয়াজিদ বলেন, ‘‘বিক্ষোভে যাওয়ার চেয়েও তাঁর পরনের পোশাকের প্রভাব বেশি ছিল৷’’
ছবি: Reuters/U. Bektas
দুহা মোহমেদ
‘‘আমি হেডস্কার্ফ পরতে চাই না, কিন্তু এটা আমার ইচ্ছা নয়৷ আমি যা ইচ্ছা পরার অধিকার চাই,’’ বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণ সম্পর্ক জানাতে গিয়ে বলেন ২৩ বছর বয়সি শিক্ষার্থী মোহমেদ৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
নাগদা মনসুর
ডিসেম্বরে বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ৭৫ দিন কারাগারে ছিলেন তিনি৷ ৩৯ বছর বয়সি মনসুর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসতে চান না, কারণ দারফুর যুদ্ধে তাদের ভূমিকা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট নন৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
মানাল ফারাহ
৪৯ বছর বয়সি ফারাহর ২২ বছর বয়সি ছেলে জুন ৩ এর বিক্ষোভের সময় নিহত হন৷ ‘‘যখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শুরু করে তখন সে প্রশ্ন করেছিল, সুদানে কেন এত দুর্নীতি৷ সে বলতো, একটা পরিবর্তন দরকার, একটা নতুন সুদান দরকার... আমি আমার সন্তানের স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে, এটা দেখতে চাই,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
আলা সালাহ
৮ এপ্রিল একটি গাড়ির উপর দাঁড়িয়ে সাদা পোশাক পরিহিত সালাহ সরকারবিরোধী বক্তব্য রাখছিলেন৷ সেই সময় একজন আলোকচিত্রীর তোলা ছবি (যেটি দেখতে পাচ্ছেন) আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ পরিচিতি পায়৷ ফলে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী আলা৷ তাঁর সেই ছবি সুদানের ‘লেডি লিবার্টি’ কিংবা ‘ওমেন ইন হোয়াইট’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP
8 ছবি1 | 8
সরকারের দাবি, সংঘর্ষের ফলে কেউ মারা যাননি৷ কেবল পাঁচজন আহত হয়েছেন৷ তবে আল বাশির ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর তাঁর সমর্থক ও অন্তর্বর্তী সরকারের বাহিনীর মধ্যে এটাই ছিল সব চেয়ে বড় সংঘাতের ঘটনা৷ গত অগাস্টে আল বাশিরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর এখন সামরিক ও অসামরিক লোকেদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারচলছে৷ তিন বছরের মধ্যে তারা ভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷
শান্তি চুক্তি হলেও ঘরে ফিরছেন না তাঁরা
দক্ষিণ সুদানের সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সম্প্রতি একটি শান্তি চুক্তি সই হয়েছে৷ তবুও ঘরে ফেরার সাহস পাচ্ছেন না দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ছেড়ে যাওয়া বাসিন্দারা৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
নতুন দেশ
২০১১ সালে সুদান থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন একটি দেশ হিসেবে দক্ষিণ সুদানের যাত্রা শুরু হয়৷ কিন্তু মাত্র দুই বছর পরই দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও তখনকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাচারের মধ্যে বিবাদের পর গৃহযুদ্ধ শুরু হয়৷
ছবি: Reuters
শান্তিচুক্তি
সম্প্রতি সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি সই হয়েছে৷ গৃহযুদ্ধে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/M. Hjaj
তবে ভয় কাটেনি
দক্ষিণ সুদানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মালাকাল৷ গৃহযুদ্ধের কারণে সেখানকার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ ঘর ছেড়ে শহরের কাছে স্থাপিত জাতিসংঘের শিবিরে বাস করছেন৷ শান্তিচুক্তি হলেও তারা এখনো বাড়ি ফেরার সাহস পাচ্ছেন না৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
মৃত্যুর ভয়
জোসেফিন আদিমিস নামের এক নারী তাঁর পরিবারের আট সদস্যের সঙ্গে জাতিসংঘের ঐ শিবিরে থাকেন৷ তিনি বলছেন, চুক্তি হলেও তিনি এখনো ফিরতে চান না, কারণ, তাঁর আশংকা কেউ তাঁর বাড়ি দখল করে আছে৷ ফলে বাড়িতে গেলে তারা তাঁকে মেরে ফেলতে পারে৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
মালাকালে যুদ্ধ
গৃহযুদ্ধের সময় এলাকাটি একেকবার এক পক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছিল৷ ফলে শহরটির প্রায় পুরোটা ধ্বংস হয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Lynch
বসবাসের অনুপযুক্ত
কয়েক বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে শহরের অবকাঠামো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে৷ যেমন, স্কুলের এই শ্রেণিকক্ষটি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
ব্যস্ততা নেই
মালাকাল একসময় ব্যস্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল৷ সেখান থেকে সুদানে মালপত্র রপ্তানি করা হতো৷ কিন্তু যুদ্ধ সেই ব্যস্ততা কেড়ে নিয়েছে৷ এখন জাতিসংঘের শিবিরের কাছে ব্যস্ত বাজার গড়ে উঠেছে৷ ফলে নীল নদের মাছ মালাকালে না গিয়ে জাতিসংঘের বাজারেই যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উৎসাহ
দেশটির আপার নীল অঞ্চলের তথ্যমন্ত্রী ঘরছাড়া মানুষদের তাঁদের বাড়িতে ফিরে যেতে উৎসাহ দিচ্ছেন৷ তিনি তাঁদের বলছেন, মালাকালে এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে৷ ফলে সেখানকার সবকিছু ঠিকঠাক চলছে বলে দাবি করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
8 ছবি1 | 8
সরকারের মুখপাত্র ফৈসল মোহাম্মদ সালেহ জানিয়েছেন, ''সরকারেরকাছ থেকে প্রাপ্য অর্থ তাদের মনঃপুত হয়নি বলেই তারা এই পথ নিয়েছিল৷'' আর আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদেন ডাগালোর সাফ কথা, ''আমরা কোনও ধরনের বিদ্রোহ বা বেআইনি পরিবর্তন বরদাস্ত করব না৷ পরিবর্তন যদি করতে হয়, সেটা সুদানের লোক করবেন৷ এই বিক্ষুব্ধ গোয়েন্দা অফিসারদের কাছ থেকে আগেই অস্ত্র নিয়ে নেওয়া উচিত ছিল৷''