সুদানে সম্প্রতি দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় একশ জন মারা গেছেন। তারপরই হাউসা গোষ্ঠী সুদান-জুড়ে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
সুদানের বিভিন্ন শহরে মঙ্গলবার হাজার হাজার হাউসা আন্দোলনকারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালেন। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। খার্তুমে সবচেয়ে বেশি কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে পুলিশ।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত সপ্তাহে হাউসা ও বেরটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষে ৯৭ জন মারা গেছেন, ঘরছাড়া ১৭ হাজার তিনশ মানুষ।
জমি নিয়ে বিরোধ?
দুই গোষ্ঠীর মধ্যে জমিদখলের লড়াই চলছিল। তার জেরেই এই সংঘর্ষ বলে মনে করা হচ্ছে।
সুদানে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে গুলি, মৃত সাত
সুদানে এখন সেনাবিরোধী বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সেই বিক্ষোভ বন্ধ করতে গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।
ছবি: AFP/Getty Images
সুদানে সেনাশাসন
গতবছর অক্টোবর থেকে সুদানে সেনাশাসন চলছে। তারপর শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে। সেই বিক্ষোভের জেরে আব্দাল্লা হ্যামডককে আবার প্রধানমন্ত্রী করে সেনা।
ছবি: AFP/Getty Images
হ্যামডকের ইস্তফা
হ্যামডক গত ৩ জানুয়ারি ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছিলেন, সেনা ও সরকারের মধ্যে বিরোধ লেগে আছে। রাজনৈতিক দলগুলি এক হতে পারছে না। তিনি চেষ্টা করেও কিছু করতে পারছেন না। তাই ইস্তফা দিচ্ছেন।
ছবি: AFP
শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ
তারপর থেকে আবার সেনাশাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রাজধানী খার্তুমে প্রচুর মানুষ বিক্ষোভে সামিল হচ্ছেন। দেশের অন্যত্রও বিক্ষোভ হচ্ছে।
ছবি: AFP/Getty Images
বিক্ষোভে সামিল মেয়েরাও
সেনাবিরোধী এই বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন নারী ও বাচ্চারা। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ চলছে।
ছবি: AFP/Getty Images
কড়া ব্যবস্থা
সেনাশাসকরা বিক্ষোভ বরদাস্ত করতে রাজি নয়। তারা কড়া হাতে বিক্ষোভ মোকাবিলা করতে চাইছে।
ছবি: Ebrahim Hamid/AFP/Getty Images
বিক্ষোভে গুলি, মৃত ৭
সোমবার বিক্ষোভে গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। সেন্ট্রাল কমিটি অফ সুদানিজ ডক্টরস জানিয়েছে, একাধিক জায়গায় গুলি চলে। অন্ততপক্ষে সাতজন মারা গেছেন।
ছবি: AFP/Getty Images
জাতিসংঘের আবেদন
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আবেদন জানিয়েছে। সেনাশাসকদের তারা বলেছে, সুদানে যেন মানবাধিকার রক্ষা করা হয়। মতপ্রকাশের অধিকার ও বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার মানুষের আছে। সেটা যেন মাথায় রাখেন শাসকরা।
কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভ দেখলেই লাঠি, গ্যাস, গুলি দিয়ে তার মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। এখনো পর্যন্ত তারা আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করেনি।
ছবি: Mahmoud Hjaj/Anadolu Agency/picture alliance
8 ছবি1 | 8
বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবার দাবি করেছেন, হাউসাদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ব্লু নাইল প্রভিন্সে এই সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু এখান থেকে পালিয়ে অনেকে অন্য অঞ্চলে চলে গেছেন। ফলে সেই সব এলাকাতেও উত্তেজনা বেড়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক গুরুত্বপূর্ণ এক হাউসা নেতা সংবাদসংস্থা এএফপি-কে বলেছেন, একজন কৃষকের মৃত্যুকে ঘিরে বিরোধের সূত্রপাত। তারপর বারটিরা জমির তত্ত্বাবধান করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপও মানেনি। কিন্তু স্থানীয় এক বারটি নেতা বলেছেন, হাউসারা জমি নিয়ে সিদ্ধান্ত-ভঙ্গ করেছে। তার জেরেই সহিংসতা হয়েছে।
সুদানের নারী বিক্ষোভকারীরা
বিক্ষোভের মুখে সম্প্রতি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির৷ বিক্ষোভে অনেক নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
খাদিজা সালেহ
বশিরবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিতে ছয় বছর পর মার্চ মাসে বিদেশ থেকে দেশে ফেরেন তিনি৷ ‘‘আমার দেশের ভালো ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ স্থান ছেড়ে আমি দেশে এসেছি,’’ বলেন ৪১ বছর বয়সি সালেহ৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
নাহিদ গাব্রালা
১৯৮৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন বশির৷ এপ্রিলে আরেক অভ্যুত্থানের কারণে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন৷ ডিসেম্বরে বশিরবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল৷ এখনও তা চলছে৷ এখনকার বিক্ষোভের কারণ সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সাধারণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা৷ এই অবস্থায় গত জুনে বিক্ষোভরত গাব্রালাকে প্রহার করা হয়, এমনকি ধর্ষণেরও হুমকি দেয়া হয়৷ নিজের মেয়ের জন্য একটি ভালো দেশ পাবার আশায় লড়াই চালিয়ে যেতে চান তিনি৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
হাদিয়া হাসাবাল্লাহ
জুনের ৩ তারিখে গাব্রালাসহ অনেক নারীদের উপর হামলা করেছিল নিরাপত্তা বাহিনী৷ সেই সময় আহত হওয়া নারীদের দেখাশোনা করা এনজিওতে কাজ করেন হাসাবাল্লাহ৷ ঐদিন অনেক নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ তবে ‘‘কলঙ্কের ভয়ে সুদানের কোনো নারী ধর্ষিত হওয়ার কথা বলবে না,’’ বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
মাহি আবা-ইয়াজিদ
বশিরের আমলে মেয়েরা প্যান্ট পরতে পারতেন না৷ তাই জুন ৩- এর বিক্ষোভে ট্রাউজার পরে হাজির হয়েছিলেন আবা-ইয়াজিদ৷ তিনিও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহারের শিকার হন৷ ৩৫ বছর বয়িস আবা-ইয়াজিদ বলেন, ‘‘বিক্ষোভে যাওয়ার চেয়েও তাঁর পরনের পোশাকের প্রভাব বেশি ছিল৷’’
ছবি: Reuters/U. Bektas
দুহা মোহমেদ
‘‘আমি হেডস্কার্ফ পরতে চাই না, কিন্তু এটা আমার ইচ্ছা নয়৷ আমি যা ইচ্ছা পরার অধিকার চাই,’’ বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণ সম্পর্ক জানাতে গিয়ে বলেন ২৩ বছর বয়সি শিক্ষার্থী মোহমেদ৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
নাগদা মনসুর
ডিসেম্বরে বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ৭৫ দিন কারাগারে ছিলেন তিনি৷ ৩৯ বছর বয়সি মনসুর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসতে চান না, কারণ দারফুর যুদ্ধে তাদের ভূমিকা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট নন৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
মানাল ফারাহ
৪৯ বছর বয়সি ফারাহর ২২ বছর বয়সি ছেলে জুন ৩ এর বিক্ষোভের সময় নিহত হন৷ ‘‘যখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শুরু করে তখন সে প্রশ্ন করেছিল, সুদানে কেন এত দুর্নীতি৷ সে বলতো, একটা পরিবর্তন দরকার, একটা নতুন সুদান দরকার... আমি আমার সন্তানের স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে, এটা দেখতে চাই,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
আলা সালাহ
৮ এপ্রিল একটি গাড়ির উপর দাঁড়িয়ে সাদা পোশাক পরিহিত সালাহ সরকারবিরোধী বক্তব্য রাখছিলেন৷ সেই সময় একজন আলোকচিত্রীর তোলা ছবি (যেটি দেখতে পাচ্ছেন) আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ পরিচিতি পায়৷ ফলে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী আলা৷ তাঁর সেই ছবি সুদানের ‘লেডি লিবার্টি’ কিংবা ‘ওমেন ইন হোয়াইট’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP
8 ছবি1 | 8
সুদানের অবস্থা
অনেক বিশ্লেষকের মতে, গত অক্টোবরে সেনা প্রধান আব্দেল ফতাহ আল-বুরহান ক্ষমতাদখল করে নেয়ার পর থেকে জমি, পশুচারণ ক্ষেত্র, জল ও পশু নিয়ে জাতিগত দাঙ্গা বাড়ছে।
এমনিতেই সুদানেআর্থিক সংকট চলছে। তারপর বুরহান ক্ষমতা দখল করার পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। তারপর থেকে প্রতিবাদ হচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষ কড়াহাতে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। গত এপ্রিলে দারফুরে সংঘর্ষে দুইশর বেশি মানুষ মারা গেছেন।