গত দুই বছর ধরে সুদানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে আছে আরএসএফ।
দারফুরের পশ্চিমে দুর্ভিক্ষপীড়িত এল-ফাশের শহরটি আধাসামরিকবাহিনীর হাতে চলে যায়। তার দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই বিবৃতি প্রকাশ করে তারা।ছবি: AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অ্যামেরিকা এবং আরব দেশগুলের পরামর্শ মেনে মানবিক সংঘাতবিরতিতে রাজি হয়েছে সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফ। বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতিতে এ কথা জানায় তারা।
গত দুই বছর ধরে সুদানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে আছে আরএসএফ। এর আগেও একাধিক সংঘাতবিরতিতে তারা রাজি হয়েছে। তবে কোনোটাই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়নি।
নতুন বিবৃতিতে আরএসএফ জানায়, "সুদানের সাধারণ মানুষের স্বার্থে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের কোয়াড দেশগুলির প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তি মানবে।" অ্যামেরিকা, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব এই কোয়াডের অন্তর্গত।
সুদানে মানবিক সংকট
সুদানে একবছর ধরে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে একটি আধা-সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ চলছে৷ এতে মারাত্মক সংকটে পড়েছে সেদেশের মানুষ৷
ছবি: Gueipeur Denis Sassou/AFP
দ্বন্দ্ব
২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির এবং ২০২১ সালে বেসামরিক সরকার উৎখাতে একসঙ্গে কাজ করা দুটি সামরিক বাহিনী গত একবছর ধরে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত আছে৷ এর মধ্যে একটি জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন বাহিনী, যেটিকে মূলত দেশটির মূল সামরিক বাহিনী হিসেবে ধরা হয়৷ অন্যটি মোহামেদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বাধীন আধা-সামরিক বাহিনী ‘ব়্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ আরএসএফ৷
ছবি: ohamed Khidir/Xinhua/picture alliance
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা
সুদানের জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি৷ এর মধ্যে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানিয়েছে ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ করা সংস্থা আইপিসি৷ এর মধ্যে প্রায় ৪৯ লাখ মানুষ জরুরি স্তরের ক্ষুধায় ভুগছেন৷ এই স্তরটি দুর্ভিক্ষের চেয়ে এক স্তর নীচে৷
ছবি: Mohamed Khidir/Xinhua/picture alliance
সবচেয়ে অসহায় যারা
নারী ও মেয়েরা সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় আছে, কারণ তারা সাধারণত পরিবারের সবার খাওয়ার পর খান৷ ফলে তারা আরও কম খাবার পান৷
ছবি: JOK SOLOMUN/REUTERS
গৃহহীনের সংখ্যা
এক বছর আগে সংঘাত শুরু হওয়ার পর ৮৬ লাখের বেশি মানুষকে তাদের ঘর ছেড়ে পালাতে হয়েছে৷ দারফুরসহ অন্যান্য সংকটের কারণে আরও প্রায় ৩০ লাখ মানুষ গৃহহীন অবস্থায় আছে৷
ছবি: LUIS TATO/AFP
প্রতিবেশী দেশে আশ্রয়
নিরাপদ থাকতে ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ২০ লাখের বেশি মানুষ প্রতিবেশী দেশ মিশর, চাড ও দক্ষিণ সুদানে পালিয়ে গেছেন৷ অল্প কিছু মানুষ ইথিওপিয়া ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকেও চলে গেছেন৷
ছবি: Marie-Helena Laurent/WFP/AP/picture alliance
সংকটে স্বাস্থ্যসেবা
এক কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষের জরুরি স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন৷ কিন্তু সংঘাতপূর্ণ এলাকার ৭০ শতাংশের বেশি স্বাস্থ্য অবকাঠামো বন্ধ বা আংশিক খোলা আছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে৷
ছবি: DW
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা
যুদ্ধের কারণে প্রায় দুই কোটি শিশুর শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, প্রায় এক কোটি শিশু গত একবছরে যুদ্ধ হচ্ছে এমন এলাকায় বাস করেছে৷
ছবি: ASHRAF SHAZLY/AFP
সহায়তা ও প্রাপ্তি
চলতি বছর সুদানের জন্য ২.৭ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছে ত্রাণ সংস্থাগুলো৷ এখন পর্যন্ত ছয় শতাংশের কম সহায়তা পাওয়া গেছে৷ এদিকে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যাওয়া সুদানিদের জন্য ১.৪ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা৷
ছবি: Ibrahim Mohammed Ishak/REUTERS
8 ছবি1 | 8
এর আগে দারফুরের পশ্চিমে দুর্ভিক্ষপীড়িত এল-ফাশের শহরটি আধাসামরিকবাহিনীর হাতে চলে যায়। তার দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই বিবৃতি প্রকাশ করে তারা।
অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আফ্রিকা উপদেষ্টা মাসাদ বুলোস এই সপাহের গোড়ার দিকে জানান, আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস এবং সামরিক বাহিনী দুই পক্ষই তিন মাসের শান্তিচুক্তিতে রাজি হয়েছে।
আরএসএফ বিবৃতিতে দিয়ে এই চুক্তি মানলেও সামরিক বাহিনী এখনো এবিষয় কিছু জানায়নি। এর আগে সেনাপ্রধান আবদেল ফাতাহ আল-বুরহান বলেন, তার সেনারা 'প্রতিপক্ষের পরাজয়ের' জন্য অপেক্ষা করছে।
মানবিকতার সংকট
এল-ফাশেরের উপর ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে দারফুরের প্রয় অধিকাংশ এলাকা দখল করেছে আরএসএফ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, স্থানীয় হাসপাতালে প্রায় ৪৫০ মানুষকে মেরেছে আরএসএফ। এছাড়াও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষদের মারা হয়েছে এবং যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইয়েল বিশ্ববিদ্যেলয়ের প্রকাশিত একটি রিপোর্টে স্যাটেলাইট ছবিতে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর থেকে ওই অঞ্চলে অত্যাচারের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। একাধিক মানবাধিকার সংগঠন সুদানে সাধারণ্য মানুষের উপর ঘটে চলা অত্যাচার নিয়ে সরব হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ওই অঞ্চলে কাজ করা ইসলামিক রিলিফ জানিয়েছে, তাদের স্থানীয় কমিউনিটি রান্নাঘরগুলি প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। এই রান্নাঘরগুলি অঞ্চলে বহু পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেয়। ডাক্তারদের সংগঠনও তাওইলা, কুর্মা এবং গোলো অঞ্চলের আশ্রয় শিবিরগুলির খারাপ চেহারার কথা তুলে ধরেছে। এই অঞ্চলগুলিতে প্রচুর মানুষ আশ্রয় নিতে আসছেন।