সুদানে ফের শুরু হয়েছে জাতি দাঙ্গা। চরমপন্থিদের আক্রমণে মৃত ৮৩ জন। তার মধ্যে রয়েছে বহু শিশু ও নারী।
বিজ্ঞাপন
সুদানে নতুন করে সংঘর্ষ। রোববার ডারফুর অঞ্চলে চরমপন্থিদের আক্রমণে অন্তত ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ১৬০ জনের বেশি। এর মধ্যে অসংখ্য নারী এবং শিশু আছে। জাতিগত বিরোধ থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ সুদান থেকে নিরাপত্তা বাহিনী সরিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছিল। তারপরেই এই ঘটনা ঘটায় উদ্বেগে সাধারণ মানুষ।
টিগ্রে যুদ্ধে পালাচ্ছে মানুষ
টিগ্রেতে ইথিওপিয়া ও টিগ্রে পিপলস রেভলিউশনারি ফোর্স টিপিএলএফ এর লড়াইয়ের ফলে ইথিওপিয়া থেকে ৪৪ হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে সুদানে পালিয়েছে৷ ঘরছাড়া ২০ লাখ মানুষ৷
ছবি: El Tayeb Siddig/REUTERS
খাবার সংকট
দেশের ভেতরে যুদ্ধ চলছে৷ ফলে খাবার সংকটের কারণে এসব মানুষ ইথিওপিয়া থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে সুদানে৷
ছবি: Baz Ratner/REUTERS
বিচ্ছিন্ন টিগ্রে
এক মাস ধরে টিগ্রেতে কোন যানবাহন চলছে না৷ টেলি যোগাযোগ, ইন্টারনেট একেবারে বন্ধ৷ রোববার ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয় টিগ্রের হুমেরা শহরে ৭০টি কবরের সন্ধান পেয়েছে, যেগুলোর কোনটিতে একজন, আবার কোনটিতে একাধিক মৃতদেহ রয়েছে৷ প্রতিবেদনে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, টিপিএলএফ এর যোদ্ধারা এদের হত্যা করেছে৷ কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় লড়াইয়ে আহত-নিহতের সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: Baz Ratner/REUTERS
খাবার পাহারা
সুদানের কাসালা রাজ্যের একটি শরণার্থী শিবিরে ত্রাণের খাবারের বস্তাগুলো পাহারা দিচ্ছে সেনারা৷ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডাব্লিউএফপি এসব শিবিরে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে৷
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
সেটিট নদীর তীরে হাজারো মানুষ
ইথিওপিয়া থেকে পালিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নদী পার হয়ে আসছে সুদানে৷
ছবি: El Tayeb Siddig/REUTERS
গৃহহীন ২০ লাখ
ট্রিগ্রেতে লড়াইয়ের কারণে গৃহহীন হয়েছেন ২০ লাখ মানুষ৷ সুদানের আল কাদারিফ রাজ্যের একটি শরণার্থী শিবিরে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছেন অনেক মানুষ৷
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
সম্বলহীন যাত্রা
এই শরণার্থী সুদানে যেতে সাঁতরে সেটিট নদী পার হচ্ছে৷ উঁচু করে রাখা হাতে গায়ের জামাটা ছাড়া আর কিছু নেই৷
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
টিপিএলএফের শাসন
উত্তর ইথিওপিয়ার ইরিত্রিয়া ও সুদান ঘেঁষা এলাকায় এতদিন টিপিএলএফের শাসন চলতো৷ এই এলাকায় সুদান ও ইরিত্রিয়ার প্রভাব ছিলো বেশি৷
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
টিপিএলএফকে কোণঠাসা
শান্তিতে নোবেল জয়ী ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ আর সেজন্যই টিপিএলএফকে কোণঠাসা করার পরিকল্পনা করেন তিনি৷ টিগ্রেতে ৬০ লাখ মানুষের বাস৷
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
এক মাস ধরে যুদ্ধ
টিগ্রেতে ইথিওপিয়া ও টিগ্রে পিপলস রেভলিউশনারি ফোর্স টিপিএলএফ এর লড়াইয় চলছে এক মাস ধরে৷ নভেম্বরের ৪ তারিখে শুরু হয় এই লড়াই৷ টিগ্রের লড়াইয়ে তাদের জয় হয়েছে বলে শনিবার দাবি করেছে সরকার৷ জানিয়েছে, রাজধানী মেকেলে এখন সেনার দখলে৷
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
9 ছবি1 | 9
সুদানের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক শরণার্থী শিবির আছে। জাতিগত দাঙ্গায় বিধ্বস্ত সাধার মানুষ আশ্রয় হারিয়ে এই ক্যাম্পগুলিতে এসে থাকেন। প্রশাসন জানিয়েছে, শনিবার ডারফুর অঞ্চলে তেমনই একটি ক্যাম্পে দুই ব্যক্তির মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। তাঁদের জাতিগত পরিচয় আলাদা ছিল। সাময়িক হাতাহাতির পর সংঘর্ষ আরো বাড়ে। এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তারপরেই বিষয়টি নিয়ে চরম উত্তেজনা শুরু হয়। মৃত ব্যক্তির পরিবার প্রথমে ভিন্ন জাতির গ্রামে আক্রমণ চালায়। তার সুযোগ নেয় চরমপন্থিরাও। গ্রামের পর গ্রামে আক্রমণ চালাতে শুরু করে তারা। নারী, শিশু কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি।
ঘটনার কথা প্রচার পেতেই আরো বেশ কিছু ক্যাম্পেও সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রশাসনে জানিয়েছে, রোববার মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ১৬০ জন। সোমবার আহতের সংখ্যা আরো বেড়েছে। মৃত এবং আহতদের মধ্যে বেশ কিছু নারী এবং শিশু আছে।
এ দিকে কিছুদিন আগেই সুদানে একনায়ক সরকারের পতন হয়েছে। নতুন সরকারকে গণতান্ত্রিক বলে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। তাদের নেতৃত্বে সুদানে ১৩ বছরের জাতিদাঙ্গা বন্ধ হবে বলে জানানো হয়েছিল। বস্তুত, নতুন সরকার নির্বাচিত হওয়ার পরেই সুদান থেকে নিরাপত্তরক্ষী সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। তারপরেই এই ঘটনা।
সুদানের সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশের বক্তব্য, নিরাপত্তা বাহিনী চলে গেলে চরমপন্থিদের তাণ্ডব আরো বাড়বে। এমনিতেই বহু মানুষ সব হারিয়ে শরণার্থী শিবিরে থাকেন। সেখানেও চরমপন্থিরা আক্রমণ চালাতে শুরু করেছে। ফলে পরিস্থিতির কোনোই উন্নতি হয়নি।