সুদানের রাজধানী খার্তুমের নিকটবর্তী ওমদুরমান শহরে একটি সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ৪৬ জন মারা গেছেন।
খার্তুমের পাশে ওমদুরমানের একটি আবাসিক এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয় [ফাইল ছবি: ২ নভেম্বর, ২০২৪]ছবি: Amaury Falt-Brown/AFP
বিজ্ঞাপন
নিহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন৷ মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
বুধবার বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর রাজধানী খার্তুম থেকে ওমদুরমানে বয়ে যাওয়া নদীর উপর বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির সেনাবাহিনী বিগত দুই বছর ধরে সুদানে অভ্যন্তরীণ সংঘাত চলছে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ খোঁজার প্রচেষ্টা এখনো চলমান আছে।"
সামরিক বাহিনীর এক সূত্র আন্তনোভ এয়ারক্রাফটটি কারিগরি ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে খার্তুম সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার মেজর জেনারেল বাহরও রয়েছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের সশস্ত্র দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছে সেনাপ্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আল বুরহানের সাবেক সহকারী মোহামেদ হামাদান ডাগলো।
সুদানে চলমান এই সংঘাতে অন্তত দেড় লাখ নাগরিক নিহত হয়েছে। রাজধানী খার্তুমসহ দেশটির অনেক শহর পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পাশাপশি এক কোটিরও বেশি নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীল দারফুর অঞ্চলে জাতিগত নিধনেরও বেশ কিছু তথ্য জানা গেছে।
সুদানে মানবিক সংকট
সুদানে একবছর ধরে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে একটি আধা-সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ চলছে৷ এতে মারাত্মক সংকটে পড়েছে সেদেশের মানুষ৷
ছবি: Gueipeur Denis Sassou/AFP
দ্বন্দ্ব
২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির এবং ২০২১ সালে বেসামরিক সরকার উৎখাতে একসঙ্গে কাজ করা দুটি সামরিক বাহিনী গত একবছর ধরে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত আছে৷ এর মধ্যে একটি জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন বাহিনী, যেটিকে মূলত দেশটির মূল সামরিক বাহিনী হিসেবে ধরা হয়৷ অন্যটি মোহামেদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বাধীন আধা-সামরিক বাহিনী ‘ব়্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ আরএসএফ৷
ছবি: ohamed Khidir/Xinhua/picture alliance
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা
সুদানের জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি৷ এর মধ্যে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানিয়েছে ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ করা সংস্থা আইপিসি৷ এর মধ্যে প্রায় ৪৯ লাখ মানুষ জরুরি স্তরের ক্ষুধায় ভুগছেন৷ এই স্তরটি দুর্ভিক্ষের চেয়ে এক স্তর নীচে৷
ছবি: Mohamed Khidir/Xinhua/picture alliance
সবচেয়ে অসহায় যারা
নারী ও মেয়েরা সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় আছে, কারণ তারা সাধারণত পরিবারের সবার খাওয়ার পর খান৷ ফলে তারা আরও কম খাবার পান৷
ছবি: JOK SOLOMUN/REUTERS
গৃহহীনের সংখ্যা
এক বছর আগে সংঘাত শুরু হওয়ার পর ৮৬ লাখের বেশি মানুষকে তাদের ঘর ছেড়ে পালাতে হয়েছে৷ দারফুরসহ অন্যান্য সংকটের কারণে আরও প্রায় ৩০ লাখ মানুষ গৃহহীন অবস্থায় আছে৷
ছবি: LUIS TATO/AFP
প্রতিবেশী দেশে আশ্রয়
নিরাপদ থাকতে ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ২০ লাখের বেশি মানুষ প্রতিবেশী দেশ মিশর, চাড ও দক্ষিণ সুদানে পালিয়ে গেছেন৷ অল্প কিছু মানুষ ইথিওপিয়া ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকেও চলে গেছেন৷
ছবি: Marie-Helena Laurent/WFP/AP/picture alliance
সংকটে স্বাস্থ্যসেবা
এক কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষের জরুরি স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন৷ কিন্তু সংঘাতপূর্ণ এলাকার ৭০ শতাংশের বেশি স্বাস্থ্য অবকাঠামো বন্ধ বা আংশিক খোলা আছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে৷
ছবি: DW
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা
যুদ্ধের কারণে প্রায় দুই কোটি শিশুর শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, প্রায় এক কোটি শিশু গত একবছরে যুদ্ধ হচ্ছে এমন এলাকায় বাস করেছে৷
ছবি: ASHRAF SHAZLY/AFP
সহায়তা ও প্রাপ্তি
চলতি বছর সুদানের জন্য ২.৭ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছে ত্রাণ সংস্থাগুলো৷ এখন পর্যন্ত ছয় শতাংশের কম সহায়তা পাওয়া গেছে৷ এদিকে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যাওয়া সুদানিদের জন্য ১.৪ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা৷