1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুন্দরবনের ‘অক্সিজেন ম্যান’

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৬ আগস্ট ২০২১

সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছেন স্থানীয় যুবক সৌমিত্র মণ্ডল৷ দু'চাকার সাইকেলে একটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর বসিয়ে নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন রোগীর বাড়ি৷ তাঁকেই মানুষ এখন 'অক্সিজেন ম্যান’ নামে চেনে৷ 

Soumitra Mondal  West Bengal Oxygen man
ছবি: Payel Samanta/DW

সমস্যাসঙ্কুল সুন্দরবন৷ এমনিতেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য কোনো পরিষেবাই এখানে পর্যাপ্ত নয়৷ ছোট ছোট অনেকগুলি দ্বীপের মধ্যে একটিতে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে৷ নদী পার করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটাই কষ্টকর৷ এই সুন্দরবনের গোসাবার সত্যনারায়ণপুরে গৌরাঙ্গ মণ্ডলের বাড়ির সকলের করোনা হয়েছিল৷ এমন সঙ্কটের মুহূর্তে গৌরাঙ্গর মায়ের অক্সিজেন প্রয়োজন হয়৷ বাড়ির অন্যরা কোভিড আক্রান্ত, আইসোলেশনে৷ সে সময়ই অক্সিজেন ম্যানের আবির্ভাব৷ অসুস্থ বৃদ্ধাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেন তিনি৷ পাশাপাশি বাকিদের করোনা পরীক্ষা করানো থেকে পথ্যের জোগান, সবটাই তিনি সামলান৷ গৌরাঙ্গ বলেন, ‘‘অক্সিজেন ম্যান না থাকলে আমার পরিবারটাই ভেসে যেত! তিন মাস আমরা বাড়িতে বন্দি ছিলাম৷ আমার মাকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচান৷ উনি এসে দেখভাল করতেন আমাদের৷’’

কে এই অক্সিজেন ম্যান ?

করোনা পরিস্থিতিতে অক্সিজেন সঙ্কটের ছবি দেখা গিয়েছিল সুন্দরবনের দ্বীপে দ্বীপে৷ দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে একটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর হাতে পেয়েছিলেন গোসাবার বালি দ্বীপের বাসিন্দা সৌমিত্র মণ্ডল৷ তারপর সেই যন্ত্রকে বয়ে বেড়িয়েছেন দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে৷ এই দ্বীপগুলিতে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বেশি৷ কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাঁকে পুরো গ্রামীণ চিকিৎসা পদ্ধতির উপরে নির্ভর করতে হয়৷ প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় অক্সিজেনের যেমন অভাব এখানে, তেমনই খালি সিলিন্ডার রিফিলিং করে অতি দুর্গম স্থানে পৌঁছে যাওয়া এককথায় অসম্ভব৷ এই অসম্ভব কাজই একনাগাড়ে করে চলেছেন সৌমিত্র৷

সৌমিত্র মন্ডল

This browser does not support the audio element.

এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে পৌঁছনোর মাধ্যম নৌকা৷ তার মধ্যেই নিজের সাইকেল তুলে নেন তিনি৷ এভাবেই সেই দ্বিতীয় লকডাউনের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত ফোন পেলেই নিজের সাইকেলের পেছনে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর চাপিয়ে নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন রোগীর বাড়ি৷ ইতিমধ্যে গোসাবা ব্লককে কন্টেনমেন্ট জোন বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ করোনার তৃতীয় ঢেউ সুন্দরবনের গোসাবার বুকে হাজির হয়েছে৷ ফের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে গোসাবায়৷ বুধবার থেকেই টানা তিনদিন গোসাবা, ছোট মোল্লাখালি, সাতজেলিয়া এলাকায় বাজার বন্ধ থাকবে৷ ফলে এই লকডাউন পরিস্থিতিতেও সৌমিত্র অক্সিজেন নিয়ে ছুটে চলেছেন এলাকায় এলাকায়৷ অক্সিজেন কনসেনট্রেটর এভাবে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে অসুবিধা হয় না? বছর ২৯-এর হাসিখুশি সৌমিত্র বলেন, ‘‘এখানে দিন বা রাতে নদী পার হওয়াটা সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ প্রশাসন থেকে বিনামূল্যে নদী পার হওয়ার জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছে৷’’

সাহসী সমাজসেবী

সৌমিত্র নিজে উচ্চ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত৷ কোভিডকালে কোমর্বিডিটির তোয়াক্কা না করেই গোসাবার নয়টি দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে দিনে-রাতে প্রায় ৩০ জনেরও বেশি কোভিড রোগীকে অক্সিজেন জুগিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ ফলে নিজেও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ আবার সুস্থ হয়ে ফের নানা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন৷ এলাকার বিডিও বা ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক সৌরভ মিত্র বলেন, ‘‘সৌমিত্র যে কাজটা করছেন সেটা অনুপ্রেরণা দেয়৷ তাকে দেখে এই ধরনের কাজে আরো কিছু মানুষ এগিয়ে এলে সত্যিই এই দ্বীপাঞ্চলে অক্সিজেনের অভাব অনেকটাই মিটে যাবে!’’

গৌরাঙ্গ মন্ডল

This browser does not support the audio element.

সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার শিশুরা যাতে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য বিনা পারিশ্রমিকে তিনটে নদী পেরিয়ে সাইকেলে আড়াই ঘণ্টার পথ পার করে সেখানে পড়াতে যান৷ তাছাড়া দুঃস্থ পড়ুয়াদের বইপত্র জোগাড় করেন৷ স্কুল-কলেজেও তাদের ভর্তির ব্যবস্থা করেন৷ সৌমিত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমি মাধ্যম মাত্র৷ নানা সংগঠন বা ব্যক্তির কাছ থেকে যে টাকা পাই, সেটাই এ সব কাজে ব্যয় করি৷ আমার নিজের কোনো সংগঠন নেই৷’’

ছোট থেকেই সমাজসেবা মূলক কাজে তিনি জড়িয়ে৷ অক্সিজেন পৌঁছানোর গুরুদায়িত্ব যেমন নিয়েছেন, তেমনি গোসাবার বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দাদের রক্তে শর্করার মাত্রা, প্রেসার পরীক্ষা করেন৷ অনলাইনে চিকিৎসকদের দেওয়া পরামর্শ মেনে বিনামূল্যে ঔষধ পৌঁছে দিয়েছেন শতাধিক মানুষকে৷ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ভোটের সময় ব্লকের নির্বাচনী আইকন করা হয়েছিল সৌমিত্রকে৷ 

ভবিষ্যত পরিকল্পনা

একটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর দিয়েই অক্সিজেন ম্যানের লক্ষ্য পূরণ হয়ে যায়নি৷ গোসাবার মত প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় যাতে অক্সিজেনের সঙ্কট না ঘটে, তার পরিকল্পনা করছেন তিনি৷ শুভানুধ্যায়ীরা তাকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে দিয়েছেন৷ কুমিরমারী, সাতজেলিয়া, কচুখালির মতো প্রত্যন্ত দ্বীপগুলিতে গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছে এই সিলিন্ডারগুলি আপাতত রাখা আছে, যাতে অক্সিজেন ম্যান গিয়ে পৌঁছানো অবধি অসুস্থ রোগীর অক্সিজেনের সাপোর্ট থাকে৷ এ ভাবেই ক্রমশ পরিধি বাড়ছে সৌমিত্রর, প্রাণবায়ু পাচ্ছে প্রত্যন্ত জনপদ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ