1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সুন্দরবনের প্রতি সরকারের কোনো ভালোবাসা নেই’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১১ আগস্ট ২০১৭

সুন্দরবনকে নষ্ট করতে একের পর এক কর্মকাণ্ড হাতে নিচ্ছে সরকার৷ সাধারণ মানুষ তো বটেই, বিশেষজ্ঞরাও বলছেন যে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো সুন্দরবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে৷ কিন্তু কারুর কথাতেই কর্ণপাত করছে না সরকার৷

ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman

সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুন্দরবনের প্রতি সরকারের কোনো ভালোবাসা নেই৷ থাকলে, কোনোভাবেই কোনো দেশের গণতান্ত্রিক সরকার এই ধরনের একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটজ এভাবে ধ্বংস করে দিতে পারত না৷ ঐ এলাকায় আগে থেকেই ১৮০টি শিল্প কল-কারখানা ছিল৷ এখন নতুন করে আরো ৩২০টি শিল্প কারখানাকে অনুমোদন দেয়া হলো৷ আরো ১৫০ জনকে দেয়া হলো শিল্প প্লট৷ এছাড়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করার ব্যাপারে তো সরকার অটল রয়েছেই৷ এমনটা যদি হয় তারপরও কি সুন্দরবন বাঁচবে?’’

‘‘এমনটা যদি হয় তারপরও কি সুন্দরবন বাঁচবে?’’

This browser does not support the audio element.

সর্বশেষ গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় পরিবেশ কমিটির চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ সেই সভাতেই সুন্দরবন ঘেঁষে ৩২০টি শিল্পকারখানাকে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ কমিটি৷ অথচ সম্প্রতি ইউনেস্কোও বলেছে, কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) ছাড়া এখানে ভারী শিল্প ও স্থাপনা করা যাবে না৷

জানা গেছে, আগে থেকেই ঐ এলাকায় ১৮৬টি শিল্প কল-কারখানা ছিল৷ পরিবেশ বিষয়ক দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি এ সব কারখানাকে বৈধ করে অনুমোদন দিতে বলেছে৷ পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) মৌজার সীমানা চিহ্নিত করে ২০১৫ সালে গেজেট প্রকাশের পর, পরিবেশ অধিদপ্তর সেখানে ১১৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক ছাড়পত্র দিয়েছিল৷ কমিটি সেগুলোও নবায়ন করে দিতে বলেছে৷

ঐ বৈঠকের পর পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘‘ইউনেস্কো যেহেতু রামপালের ব্যাপারে তাদের আপত্তি তুলে নিয়েছে, সেহেতু অন্যান্য শিল্পকারখানার ব্যাপারেও তাদের কোনো আপত্তি নেই বলে আমরা মনে করছি৷ এছাড়া যারা সুন্দরবনের পাশে শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছে, তারা পরিবেশ রক্ষায় যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে৷ সামনে যারা কারখানা করবে, তাদেরও পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য শর্ত দেবো৷ সুন্দরবনের ক্ষতি করে কিছু হবে না৷’’

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে চারটি সুপারিশ করা হয়েছিল৷ জাতীয় পরিবেশ কমিটি সব কটিই মেনে নিয়েছে৷ মংলাসহ ইসিএ এলাকায় সিমেন্ট, তামাক, তেল পরিশোধন, ইটভাটার মতো লাল শ্রেণিভুক্ত যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে৷ তবে এগুলোতে কঠোর দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা যেমন সার্বক্ষণিক বর্জ্য, পানি ও বাতাস পরিশোধনযন্ত্র (ইটিপি, ডাব্লিউডাব্লিউটিপি ও এটিপি) করতে বলা হয়েছে৷ ছাড়পত্র নবায়নের জন্য পরিবেশগত নানা সুরার শর্ত রাখা হয়েছে৷ এছাড়া কমলা ‘খ’ ও কমলা ‘ক’ শ্রেণির বিদ্যমান কারখানাগুলোর জন্যও একই ধরনের সুরা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে৷

‘‘এই সরকারের কাছে দেশের সুন্দরবন ও পরিবেশ নিরাপদ নয়’’

This browser does not support the audio element.

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার যেটা করছে সেটা নিয়ে কী বলব? সরকার পরিবেশ ও সুন্দরবন রক্ষায় করা নিজের আইন নিজেরাই ভঙ্গ করছে৷ একই সঙ্গে তারা দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর কাছে সুন্দরবন রক্ষার যেসব অঙ্গীকার করেছে, তারও বরখেলাপ করছে৷ এ সব আইন ভাঙার অনুমোদন যেভাবে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দেওয়া হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যে এই সরকারের কাছে দেশের সুন্দরবন ও পরিবেশ নিরাপদ নয়৷ প্রথমত তারা ইউনেস্কোর রিপোর্ট ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে আর এখন সেসবের কিছুই মানছে না৷’’

জানা গেছে, নতুন করে আরও ১৬টি শিল্প কারখানাকে অনুমোদন দিতে বলেছে জাতীয় পরিবেশ কমিটি৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে আটটি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বোতলজাত করার কারখানা বা এলপিজি প্ল্যান্ট, যা মারাত্মক দূষণকারী বা লাল তালিকাভুক্ত হিসেবে বিবেচিত৷ বাকি আটটি শিল্প বড় ও মাঝারি আকৃতির৷ এদেরও পরিবেশ ছাড়পত্র দিতে বলেছে জাতীয় কমিটি৷ বলা হয়েছে, বিশ্ব ঐতিহ্য বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবনকে সংরক্ষণের জন্য কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই এলাকায় বৃহদাকার শিল্প প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা নির্মাণ না করার জন্য জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) থেকে সুপারিশ করা হয়েছে৷ অথচ এরপরও দেয়া হলো এ সমস্ত অনুমোদন৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ