কোনো দেশের ‘ব্র্যান্ডিং' কেমন হওয়া উচিত, তা এক কথায় বলা প্রায় অসম্ভব৷ বাঘের বিলুপ্তি মেনে নেয়া তার চেয়েও বেশি কঠিন৷ সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর থাকবে না – এ আশঙ্কাকে উৎসাহ দিয়ে কি বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হতে পারে?
বিজ্ঞাপন
জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি লেখায় কি সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্বের সংকট মেনে নেয়ার বার্তাই দেয়া হলো? এমন বার্তায় আমার ভীষণ আপত্তি৷ ব্র্যান্ডিং কখনোই দেশ বা জাতির ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতি, প্রকৃতি, প্রকৃতির অহংকারকে পেছনের দরজায় ফেলে এগিয়ে চলার স্বপ্ন হতে পারে না৷
তেমন হলে বিমান নিখোঁজ আর ‘দুর্ঘটনার' মতো এত বড় দুটো ঘটনার পর মালয়েশিয়া নিশ্চয়ই নিজেদের ব্র্যান্ডিং থেকে তড়িঘড়ি করে ‘ট্রুলি এশিয়া' ঝেড়ে ফেলে সেই জায়গায় অন্য কোনো বিশেষণ খুঁজে নিতো৷ তা না করে মালয়েশিয়া তো এখনো বলছে, ‘ভিজিট মালয়েশিয়া'৷ একটা-দুটো অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারণে পর্যটন খাতকে অবহেলা করে আরো বড় বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়নি৷ মালয়েশিয়া বরং সবাইকে বলছে, ‘সেলিব্রেটিং ফিফটি ইয়ার্স অফ নেশনহুড', এই শুভক্ষণে তোমরা কাছে এসো৷ বোর্নিও দ্বীপের সারাওয়াক রাজ্যে পর্যটকদের ভিড় যাতে একটুও না কমে সেদিকেও মালয়েশিয়ার কড়া নজর৷ তাই সারাওয়াক-এর বিজ্ঞাপনে এক সময় ছিল ‘হিডেন প্যারাডাইস অফ বোর্নিও', এখন আহ্বান আরো চিত্তাকর্ষক, বলা হচ্ছে, ‘মালয়েশিয়া: মাই সেকেন্ড হোম, মোর দ্যান আ প্যারাডাইস'৷
বিলুপ্তির পথে বাঘ
২৯শে জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস৷ মূলত বিশ্বের অন্যতম রাজকীয় এই প্রাণীর উপর সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পালন করা হয় এই দিবস৷ বর্তমানে গোটা বিশ্বের বাঘের সংখ্যা মাত্র ৩,২০০টি৷ তাদের রক্ষায় কী করা হচ্ছে, জানুন এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: dapd
নাটকীয় হারে কমছে
২৯শে জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস৷ মূলত বিশ্বের অন্যতম রাজকীয় এই প্রাণীটি রক্ষায় উদযাপন করা হচ্ছে এই দিবস৷ গত শতকে গোটা বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ছিল এক লাখ৷ আর বর্তমানে জঙ্গলে বাঘের এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩,২০০তে৷ এভাবে কমতে থাকলে আগামী দশ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে বাঘ৷
ছবি: AP
পৌরাণিক কাহিনিতে বাঘ
মানুষের কাছে অন্যতম সম্মানিত প্রাণী হিসেবে বাঘের কথা বিভিন্ন সংস্কৃতির পুরাণে রয়েছে৷ চীনের রাশিচক্রে উল্লিখিত ১২টি প্রাণীর একটি বাঘ৷ এই প্রাণীকে বনের রক্ষক এবং ক্ষমতা, শক্তি ও সৌন্দর্য্যের প্রতীক মনে করা হয়৷ চীনে পরবর্তী বাঘের বছর ২০২২ সাল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উপপ্রজাতিগুলোও হুমকির মুখে
উনিশ শতক অবধি বাঘের নয়টি উপপ্রজাতির দেখা মিলেছিল গোটা বিশ্বে৷ বর্তমানে, ইন্দো-চায়না, মালয়, রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং আমুর বাঘ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে৷ আর সুমাত্রান এবং দক্ষিণ চীনের বাঘের অবস্থা আরো সঙ্গিন৷ বালি দ্বীপ, জাভা এবং কাস্পিয়ান অঞ্চলের বাঘ গত ৮০ বছরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ বাঘের বিভিন্ন উপপ্রজাতির মধ্যে আকার, রং এবং লোমের আচ্ছাদনে পার্থক্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে
ঐতিহাসিকভাবে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, তুরস্ক, রাশিয়ার পূর্ব উপকূল, চীন এবং সার্বিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছে বাঘের আবাসভূমি৷ কিন্তু বর্তমানে বাঘের আবাসের ৯৭ শতাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে৷ মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড – যেমন বাসস্থান সম্প্রসারণ, চাষাবাদ এবং রাস্তা নির্মাণের মতো কারণে বাঘের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে৷ থাকার জায়গার সংকটের কারণে সহজেই শিকারিদের ফাঁদে ধরা পড়ছে বাঘ৷
ছবি: AP
অবৈধ বাণিজ্য
গত এক হাজারেরও বেশি সময় ধরে চীন এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রথাগত ঔষধ তৈরিতে বাঘের শরীরের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হচ্ছে৷ মূলত বাত এবং চর্ম রোগেই চিকিৎসায় এসব ব্যবহার করা হয়৷ ১৯৮৭ সাল থেকে অবশ্য বাঘের দেহের বিভিন্ন অংশ বিক্রি আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ৷ তবে এখনো কালোবাজারে বাঘের চাহিদা অনেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খামারে বাঘ
জঙ্গলে খুব অল্প কিছু বাঘ টিকে থাকলেও বিভিন্ন খামার এবং চীন ও এশিয়ার বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় বর্তমানে বন্দি আছে পাঁচ হাজারের মতো বাঘ৷ পরিবেশ বিষয়ক অনুসন্ধানী এজেন্সি গত ফেব্রুয়ারি মাসে জানিয়েছে, খামারে পালন করা বাঘের চামড়া এবং হাড় ব্যবহার করে বিলাসী আসবাব এবং ওয়াইন তৈরি করা হয়৷ এ কারণে জঙ্গলে মুক্ত পরিবেশে থাকা বাঘও শিকার করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিনোদনে বাঘ
সেই সতেরো শতক থেকে সার্কাসে ব্যবহার হচ্ছে বাঘ৷ প্রাণিবাদিরা সার্কাসে বাঘের এ ধরনের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন৷ বিশেষ করে বাঘকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পদ্ধতি, ক্রমাগত ভ্রমণ এবং অপ্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা৷ ব্রিটিশ সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে সার্কাসে বনের প্রাণী ব্যবহারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মানুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
ভূমি দখল নিয়ে বাঘ এবং মানুষের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে জঙ্গলের বাঘ আরো হুমকির মুখে পড়ছে৷ জঙ্গলের পরিধি কমায় খাদ্যের সন্ধানে বাঘ লোকালয়ে হাজির হচ্ছে, হামলা চালাচ্ছে বিভিন্ন গবাদি পশুর উপর৷ ছবিতে একটি বাঘিনীর মরদেহ পরীক্ষা করছেন ভারতের বন কর্মকর্তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংরক্ষণের প্রচেষ্টা
২০১০ সালের নভেম্বরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে বাঘ আছে বাংলাদেশ সহ এমন ১৩টি দেশ ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে৷ এজন্য বাঘ শিকার বন্ধ এবং বাঘের আবাসস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ ছবিতে শুল্ক বিভাগের হাতে আটক বাঘের চামড়া দেখানো হচ্ছে৷
ছবি: AP
চিড়িয়াখানায় অথবা জঙ্গলে, নাকি দু’টোতেই?
এমনকি স্বনামধন্য চিড়িয়াখানাতেও বাঘের প্রজনন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে৷ এক্ষেত্রে চিড়িয়াখানাগুলোর মন্তব্য হচ্ছে, তারা গবেষণা এবং জীনগতভাবে বৈচিত্র্যময় বাঘের বংশ বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে৷ তবে ‘‘বর্ন ফ্রি’’ এর মতো সংগঠনগুলো চায়, বাঘ রক্ষায় জঙ্গলেই আরো উদ্যোগ নেওয়া হোক৷
ছবি: dapd
10 ছবি1 | 10
দুর্ঘটনার জায়গায় থাকে দুর্ঘটনা, ব্র্যান্ডিংয়ের জায়গায় ব্র্যান্ডিং৷ কিন্তু বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ বিরুপাক্ষ পাল লিখলেন, ‘‘আমাদের দেশের প্রতীক হিসেবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ব্যবহার নাকি খুব ক্লিশে হয়ে গেছে৷'' তাঁর মতে, সুন্দরবনে যখন বাঘের সংখ্যা কমছে, তখনও বাংলাদেশকে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেশ' হিসেবে খেলাধুলা, বাণিজ্য বা পর্যটন শিল্পের প্রচারে তুলে ধরা নাকি মোটেই ঠিক হচ্ছে না৷
মালয়েশিয়া বা অন্যান্য দেশের দৃষ্টান্ত কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত বা পর্যবেক্ষণকে সমর্থন করে না৷ মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এখন লেজে-গোবরে অবস্থা, তা সত্ত্বেও মালয়েশিয়া পর্যটনকে উৎসাহিতই করছে৷ পাশাপাশি বিমান কর্তৃপক্ষকে আগের অবস্থায় ফেরানোর চেষ্টাও নিশ্চয়ই করা হচ্ছে৷ কাজে আন্তরিকতা আর ভাবনায় প্রজ্ঞা থাকলে সব সরকার তা-ই করে৷
সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার কমেছে৷ মালয়েশিয়ার বিমান দুর্ঘটনার মতো এটাও অনাকাঙ্খিত সত্যি৷ বাঘ আর যাতে না কমে, বাঘের সংখ্যা যাতে আবার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় সেই দিকেই সবার নজর দেয়া উচিত৷ ধীরে ধীরে প্রচারের বাইরে নিয়ে গিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে আরো বিলুপ্তির ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়া মোটেই কাম্য নয়৷ বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ‘ভাইব্রেন্ট বাংলাদেশ' হতেই পারে৷ তবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে অবহেলা দিয়ে নয়৷ আমরা যদি বাংলার বাঘকেও ছুতোনাতায় অবজ্ঞা-অবহেলা করি তাহলে বাংলাদেশ মনে হয় কল্পনাতেও আর ‘ভাইব্রেন্ট' থাকবে না৷ সুন্দরবনের বাঘ রক্ষা করতে না পারলে ‘ভাইব্রেন্ট বাংলাদেশ' শব্দজোড় থেকে ‘ভাইব্রেন্ট' শব্দটি হয়ত লজ্জায় ছুটে পালাতে চাইবে৷
সুন্দরবনের বাঘকে প্রচারের বাইরে ঠেলে দেয়া বিলুপ্তির পথ সুগম করারই নামান্তর৷ তেমনটি না হওয়া তবু মন্দের ভালো৷
বর্ষায় আরো সুন্দরী সুন্দরবন
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’ বা শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন৷ এই বনের প্রধান গাছটির নাম সুন্দরী৷ আর তার থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ৷ ঋতুতে ঋতুতে এ বনের চরিত্র বদলায়৷ তবে সুন্দরবন সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বর্ষাকালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দিলাম মেপে’
বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সুন্দরবনে বর্ষা আসে মে মাসে আর সেই বর্ষাকাল চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত৷ অবশ্য জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত এখানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়৷ সুন্দরবন অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৬৪০-২০০০ মিমি৷ তবে বনের পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
দিনে দু’বার জোয়ার-ভাটা
প্রতিদিন দু’বার করে জোয়ার-ভাটা হয় সুন্দরবনে, যা কিনা বাংলাদেশ ও ভারত – প্রতিবেশী এই দুই দেশের বিশাল উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত৷ এখানে সবচেয়ে বড় জোয়ার হয় পূর্ণিমা ও অমাবস্যায়৷ তবে বর্ষাকালে জোয়ারের উচ্চতা থাকে সবচেয়ে বেশি৷ এ সময় বনের বেশিরভাগ অংশই প্লাবিত হয়, ডুবে যায় সবকিছু৷
ছবি: DW/M. Mamun
খাবারের সন্ধানে হরিণসাবক
জোয়ারের পানিতে সুন্দরবন প্লাবিত হলে হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীরা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গাগুলোয় আশ্রয় নেয়৷ এরপর জোয়ারের পানি নেমে গেলে খাবারের সন্ধানে নেমে পড়ে তারা৷ আর ঠিক সেই মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন বহু পর্যটক – বন্যপ্রাণী দেখবেন বলে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্ষার জন্য বিশেষ ‘প্যাকেজ’
বর্ষায় সুন্দরবনে পর্যটকের আনাগোনা বেশ কম৷ এ বনে পর্যটনের মৌসুম মূলত নভেম্বর থেকে মার্চ৷ তবে বর্ষার সুন্দরবনকে দেখতে কিছু কিছু ভ্রমণপিয়াসী মানুষ এখানে আসেন বটে৷ আর সেই সব পর্যটকদের চাহিদার কারণেই সম্প্রতি দু-একটি বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা বর্ষাকালে সুন্দরবন ভ্রমণের ব্যবস্থা করছে, দিচ্ছে বিশেষ ‘প্যাকেজ’৷
ছবি: DW/M. Mamun
তারপরেও পরিত্যক্ত বহু এলাকা
বর্ষা মৌসুমে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের একটি পর্যটক ট্রেল৷ এ সময়ে পর্যটকের যাতায়াত না থাকায় এই হাঁটা পথের ওপরে জমা হয়েছে বিভিন্ন গাছের ফল৷ আসলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য হলেও, বেশ কিছু ফল গাছও আছে সুন্দরবনে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুন্দরী বন সুন্দরবন
জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ভেসে আসে এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী গাছের ফল৷ ভেসে যায় আশেপাশের কোনো এলাকায়৷ তবে সুন্দরী গাছের বন সুন্দরবনে এমন একটা দৃশ্যের দেখা পাওয়া যায় কেবলমাত্র বর্ষাকালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
জঙ্গলের বিস্তার, সুন্দরেরও
জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা সুন্দরী ফলের অংশ বিশেষ ভাটার সময় জঙ্গলে থেকে যায়৷ তারপর সেখান থেকেই অঙ্কুর গজায়, গাছ হয়, ফুল ফোটে, ফল দরে৷ এভাবেই বিস্তার ঘটে সুন্দরী গাছ এবং তার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনের৷ প্রকৃতির এ নিয়মেই বেড়ে উঠেছে সুন্দরবনের বেশিরভাগ বনাঞ্চল৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুন্দরবনের বানর
সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা বানর৷ ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় এই বনে বেড়াতে গেলে তাই এদের চোখে পড়বেই৷ কখনও একা একা, আবার কখনও দঙ্গল বেধে ঘুরে বেড়ায় এরা৷ তবে বৃষ্টির সময় এদের গাছের ডালেই আশ্রয় নিতে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
চলে লুকোচুরির খেলা...
বর্ষাকালে সুন্দরবনে চলে রোদ আর বৃষ্টির লুকোচুরি৷ ঝকঝকে রোদের মধ্যে হঠাৎ করেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যায় এখানে৷ গাড় হয়ে ওঠে নদীর জল, বনের সবুজে পড়ে ছায়া৷ কখনো কখনো মেঘের ভেতর থেকেই সূর্য উঁকি মারে, অসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা হয় বনজুড়ে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘লাল-নীল-সবুজের মেলা বসেছে’
কখনও আবার তুমুল বৃষ্টিপাতের মধ্যে হঠাৎ করেই ঝকঝকে নীলাকাশ দেখা যায় সুন্দরবনে৷ বৃষ্টিধৌত বনে সূর্যের আলো তখন ভিন্ন পরিবেশের সৃষ্টি করে৷ ঝলমল করে ওঠে নদী, বনের গাছ৷ বৃষ্টি একটু ধরলে আস্তে আস্তে নদীর ধারে চড়তে আসে বানর, হরিণ, এমনকি বাঘ মামাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্ষার এক ভিন্ন চিত্র
সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া বন্যপ্রাণী অভয়রাণ্যে বৃষ্টিস্নাত এক ‘গ্রেটার ইয়োলোনেইপ’ বা বড় হলদেসিঁথি কাঠঠোকরা৷ নানা রকম পাখির নিরাপদ আবাসস্থল এই সুন্দরবন৷ প্রায় ৪০০ প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি রয়েছে সুন্দরী গাছের এ বনে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুন্দরবনের সুন্দরী হাঁস
সুন্দরবনের কটকা বনাঞ্চলের বড় কটকার খালে চোখে পড়ে ‘মাস্কড ফিনফুট’ বা সুন্দরী হাঁস৷ এর আরেক নাম কালোমুখ প্যারা পাখি৷ বাংলাদেশের সুন্দরবন ও মিয়ানমারে এ হাঁসের বিচরণ সবচেয়ে বেশি৷ সারা পৃথিবীতে বর্তমানে এ পাখির সংখ্যা এক হাজারেরও কম৷ লাজুক স্বভাবের সুন্দরী হাঁসের বৃহত্তম আবাসস্থলও সুন্দরবন৷
ছবি: DW/M. Mamun
জেলেদের জীবন
সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী জয়মনি জেলে পল্লীর পাশে পশুর নদীতে চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করছেন জেলেরা৷ সুন্দরবনের পাশে গড়ে ওঠা ভ্রাম্যমাণ এ জেলে পল্লীর জেলেরা সুন্দরবন ও তার আশেপাশে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের পর...
সুন্দরবনের শেলা নদীতে চলছে তেলবাহী ট্যাংকার ও মালবাহী জাহাজ৷ গত ডিসেম্বরে প্রায় ৫৮ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে জাহাজ ডুবির পরও এ রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়নি৷ এছাড়া সাম্প্রতিক বাঘশুমারিতে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার কারণ হিসেবেও এই নৌ-রুটটিকে দায়ী করা হচ্ছে৷