শোনা যায়, মার্জার জাতীয় প্রাণীরা নাকি পানিতে নামতে পছন্দ করে না৷ সুন্দরবনে বাস করে জলে না নেমে উপায় নেই৷ তবে রয়েল বেঙ্গল টাইগার যে সাঁতার দিয়ে গাজি নদীর খরস্রোত পার হবার ক্ষমতা রাখে, সেটা জানতেন কি?
বিজ্ঞাপন
সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টের পিরখালিতে যাত্রী বোঝাই স্টিমার সবে নোঙর তুলে ‘বদর, বদর' বলে যাত্রা শুরু করছে৷ হঠাৎ দেখা গেল প্রায় মাঝনদীতে একটানা সাঁতরে চলেছেন ব্যাঘ্রপুঙ্গব, নদী পার হচ্ছেন৷
যাত্রী বা টুরিস্টদের আনন্দটা কল্পনীয়৷ তারই মধ্যে অভিভাবক গোত্রীয় কোনো ভদ্রলোক ছোটদের সাবধান থাকতে বলার পাশাপাশি একজনকে ভিডিও করতে বলছেন৷ এদিকে একদল উৎসাহী দর্শক আর ওদিকে গাজি নদীর খরস্রোতের সঙ্গে যুজছে সুন্দরবনের বাঘ৷
এ নদী যে সে নদী নয়, সেও তেমন যে সে বাঘ নয়৷ তার সাঁতার দেখলেই বোঝা যায় যে, সে এই স্রোত চেনে৷ শুধু স্রোত নয়, সে এই নদী চেনে, জানে, ওপারে ঠিক কোথায় গিয়ে ভেসে উঠতে হবে, পাড়ের ঠিক কোন জায়গায়৷
স্টিমারের ওপর মানুষের কলকাকলি, ডাকাডাকি, সাবধানতা আর খবরদারি – আরো ঘোলা জলে ঐ মারাত্মক স্রোত ঠেলে সুন্দরবনের বাঘের এই নদী পার হওয়া: একটার সঙ্গে আরেকটার যেন কোনো সম্পর্ক নেই৷ ওপারে গাছেরা বালি, বাতাস আর নোনাজলের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীর্ণ সৈনিকের মতো দাঁড়িয়ে আছে৷ তারই ফাঁকে গিয়ে উঠবে এই সুন্দরবনের বাঘ৷
গাজি নদীতে কি কুমীর আছে? জিগ্যেস করছিলেন এক সহকর্মী৷ আমি আর জানব কী করে! তবে জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ বলে একটা কথা আছে না? নাকি জলে বাঘ, ডাঙায় কুমির?
ওরা বাঘের ‘বন্ধু’, মানুষেরও বন্ধু
সুন্দরবনে বাঘ কমছে আশঙ্কাজনক হারে৷ বাঘ যাতে বিলুপ্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে এক দল মানুষ৷ তাঁরা ‘বাঘের বন্ধু’, আবার মানুষেরও বন্ধু৷ তাঁদের নিয়েই এই ছবিঘর...৷
ছবি: Golakhali ETRT
বাঘ কমছে
সুন্দরবন এক সময় ছিল রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ‘অভয়ারণ্য’৷ কিন্তু এখন আর নেই৷ আশেপাশে যত জনবসতি বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে বাঘ৷ ২০১৫ সালের এক শুমারি অনুযায়ী, সু্ন্দরবনে মাত্র একশটির মতো রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Fabi
বাঘের শত্রু
কেন বাঘ এত দ্রুত কমে যাচ্ছে? কারণ জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষ৷ বাঘ শিকারি তো আছেই, এর বাইরে সুন্দরবনের আশেপাশের লোকালয়ের মানুষের আক্রমণেও অনেক বাঘের প্রাণ যায়৷ সুন্দরবনে অন্যান্য প্রাণী কমে যাওয়ার ফলে মাঝে মাঝে বাঘ খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসে৷ গৃহৃপালিত পশু, এমনকি কখনো কখনো মানুষের ওপরও হামলা চালায় তারা৷ এ কারণে দেখা মাত্রই মানুষও সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়ে বাঘ হত্যা করে৷
মানুষের হাত থেকে বাঘ এবং বাঘের কবল থেকে মানুষকে বাঁচাতে ২০০৭ সাল থেকে কাজ করে আসছে ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম’ (ভিটিআরটি)৷ প্রথমে সুন্দরবনের কাছের একটি গ্রামে কাজ শুরু করেছিল ছোট্ট একটি দল৷ কাজ মূলত বাঘ সম্পর্কে জনসচতেনতা বাড়ানো এবং সবাইকে বাঘের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো৷ ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষও আগ্রহী হয়ে উঠছে৷ এখন মোট ৪৯টি ভিটিআরটি টিম রায়েছে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায়৷
ছবি: Golakhali ETRT
সবাই স্বেচ্ছসেবী
ভিটিআরটি-র পক্ষ থেকে মাহবুব আলম জানালেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে বাঘ রক্ষার স্বেচ্ছাসেবামূলক এ প্রয়াস তাঁরা অব্যাহত রাখবেন৷ মাহবুবুর আলমের আরেক পরিচয়, তিনি ‘বাঘ প্রজেক্ট’-এর সমন্বয়কারী৷ ‘বাঘ প্রজেক্ট’ বাংলাদেশভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘ওয়াইল্ড টিম’ এবং ইউএসএআইড-এর একটি যৌথ উদ্যোগ৷ প্রকল্পটি ২০১৪ সাল থেকে কাজ শুরু করেছে৷ ২০১৮ সাল পর্যন্ত চলবে তাদের কাজ৷