বন্দর, রেল যোগাযোগ,বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষাসহ অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চাইছে ভারত৷ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পেও ভারত বাংলাদেশের সহযোগী৷ তবে ভারতের বিশেষজ্ঞও বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দু-দেশেরই ক্ষতি করবে৷
বিজ্ঞাপন
১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ইতিমধ্যে কয়েকটির কাজ শুরুও হয়ে গেছে৷
ইরানের ছাবাহার বন্দর নির্মাণ চুক্তি সই হবার পর বাংলাদেশেও একটি সমুদ্র বন্দর তৈরির পরিকল্পনা করছে ভারত৷ ঢাকার সঙ্গে এ বিষয়ে জোর কথাবার্তা চলছে৷ আশা করা যায়, শীঘ্রই সবুজ সংকেত পাওয়া যাবে৷ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে একটি বন্দর ও অন্যান্য পরিকাঠামো প্রকল্প গড়ে তুলতে চায় ভারত৷ মিয়ানমারেও অনরূপ একটি বন্দর তৈরি নিয়েও ভাবনা চিন্তা চলছে৷ বাংলাদেশের মংলা এবং মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দরে ভারতীয় বিনিয়োগ নিয়েও কথাবার্তা চলছে অনেকদিন ধরেই, বলেছেন মোদী সরকারের জাহাজ চলাচল মন্ত্রী নিতিন গডকড়ি৷
ভারতের সিদ্ধান্তে সমস্যায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মানুষ যেন গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয় সেজন্য ভারত থেকে বাংলাদেশ গরু পাচার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
সীমান্তরক্ষীদের নতুন দায়িত্ব
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২,২১৬ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারা দেয়ায় নিয়োজিত প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় সৈন্যকে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ সেটা হলো, ভারতীয় গরু যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশে পৌঁছতে না পারে৷ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএসএফ সদস্যদের এই নির্দেশ দেন যেন ‘বাংলাদেশের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয়’৷
ছবি: Str/AFP/Getty Images
গরু পবিত্র
হিন্দুদের কাছে গরু একটি পবিত্র প্রাণী৷ তাই ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করতে চায়৷ রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাসেবক সংঘ আরএসএস এর পশ্চিমবঙ্গের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘গরু জবাই কিংবা চোরাই পথে চালান, আর হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করা বা হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা একই কথা৷’’
ছবি: Shaikh Azizur Rahman.
চার যুগের ইতিহাস
ভারত থেকে চোরাই পথে আসা গরুই এতদিন বাংলাদেশের মানুষের মাংসের প্রধান উৎস ছিল৷ গত চার দশক ধরে সেটা হয়ে আসছে৷ এর সঙ্গে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য জড়িয়ে আছে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman.
দাম বেড়ে গেছে
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গরুর মাংস রপ্তানিকারক বেঙ্গল মিট এর সৈয়দ হাসান হাবিব গত জুলাই মাসে রয়টার্সকে জানান, ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তাঁর কোম্পানির মাংস রপ্তানি প্রায় ৭৫ শতাংশ কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Asia News Network/Jofelle P. Tesorio
চাকরি হারিয়েছে প্রায় ৪,০০০
বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট শাহীন আহমেদ জানিয়েছেন, জুন পর্যন্ত চামড়া শিল্পে কর্মরত প্রায় চার হাজার কর্মীর চাকরি গেছে৷ আর ১৯০টি ট্যানারির মধ্যে ৩০টি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
ভারতীয় গরুর মাংস ভালো
বেঙ্গল মিট এর সৈয়দ হাসান হাবিব বলেন, তিনি এখন নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে মাংস আমদানির চিন্তা করছেন৷ কিন্তু ভারতীয় মাংস ও চামড়ার মান ভালো বলে জানান তিনি৷ উল্লেখ্য, ভারত গরুর মাংসের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক৷
ছবি: AFP/Getty Images
ভারতের সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন মাংসের জন্য বাংলাদেশকে নতুন উৎস খুঁজে বের করতে হবে কেননা ভারত তার সিদ্ধান্তে অটল থাকবে৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
7 ছবি1 | 7
ইরানের ছাবাহার বন্দরে ভারতের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বিপুল, কারণ, বন্দরের কাছেই গড়ে উঠছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল৷ সেখানে খুব সস্তায় গ্যাস পাওয়া যাবে বলে ভারতের নালকো কোম্পানি সেখানে ইউরিয়া সার কারখানা তৈরি করবে৷ বাংলাদেশেও সস্তায় গ্যাস পাওয়া যেতে পারে৷ সেক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক কলকারখানা গড়ে তোলার বিরাট সম্ভাবনা দেখা দেবে৷ গডকড়ি জানান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সড়কপথে বছরে ৬০ কোটি টন পণ্য যাতায়াত করে৷ সেটা জলপথে নিয়ে গেলে আরো বেশি সুবিধা হবে নানা দিক থেকে৷
কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, এটা বাস্তবায়িত হলে কলকাতা-হলদিয়া বন্দরের লাভ হবে বেশি৷ বিগত বছরগুলিতে ভারত নামমাত্র সুদে বাংলাদেশকে মোট প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার ঋণ দেয়৷ ১৬টি প্রকল্পে সেই টাকা ব্যয় করা হচ্ছে৷ কেনা হয়েছে ৪২৬টি উন্নত মানের বাস, কেনা হয়েছে ব্রডগেজ লাইনে চলার উপযোগী তেলবাহী ট্যাঙ্কার, তৈরি হয়েছে দুটি রেল সেতু৷
তবে গোল বেঁধেছে বাংলাদেশের খুলনা জেলায় সুন্দরবন এলাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে৷ ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে দেখা দিয়েছে পরিবেশগত বাধা৷ থমকে রয়েছে এর নির্মাণকার্য৷ সুন্দরবনের সংবেদনশীল প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপন্ন হবে বলে সোচ্চার হয়ে উঠেছে দুই বাংলার পরিবেশবিদ, নাগরিক সমাজ৷ ইউনেস্কো সুন্দরবনকে হেরিটেজ স্থান বলে ঘোষণা করেছে৷ এমনকি বাংলাদেশের হাইকোর্ট পর্যন্ত সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না৷
রামসার কনভেনশনের নির্দেশিকায় সুন্দবনের জলাভূমি সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে৷ ঢাকা সেই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ৷ সুন্দরবনের জৈব বৈচিত্র্য এবং ম্যানগ্রোভ চলতি ভাষায় যাকে বলা হয় ‘বাদাবন', তা ধ্বংস হলে বিপন্ন হয়ে পড়বে স্থানীয় লোকজনদের জীবন ও জীবিকা, কারণ, বাংলাদেশের বৃহত্তম কয়লা-ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বছরে দরকার হবে ৪৭ লাখ টন কয়লা৷ সেই কয়লা নিয়ে যেতে হবে সড়ক পথে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে ট্রাকে করে৷ বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে বাতাসে মিশবে ছাই, কয়লাগুঁড়ো, নির্গত হবে সালফার ডায়ক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস৷ কাজেই এর বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভের যুক্তিসংগত কারণ আছে৷ যদিও বাংলাদেশ সরকারের মতে, উচ্চ-প্রযুক্তির দরুণ পরিবেশ দূষণের মাত্রা হবে খুবই নগণ্য৷
তাঁরা এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক
৬৮ বছর পর বাংলাদেশের কিছু জায়গা সত্যি সত্যি বাংলাদেশের হলো৷ ভারতের ভেতরের কিছু জায়গাও হয়েছে ‘ভারত’৷ প্রায় সাত দশক রাষ্ট্র পরিচয়হীন থাকা ছিটমহলবাসীদের অবশেষে নাগরিক হয়ে ওঠার আনন্দ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/S. Islam
উড়ল পতাকা
২০১৫ সালের ১ আগস্টের প্রারম্ভেই ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের মানচিত্রের অংশ হয়ে গেল৷ দিনটিকে উৎসবের আনন্দে উদযাপন করা হয়৷ বাংলাদেশের অংশে ওড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আর ভারতে ওড়ানো হয় ভারতীয় পতাকা৷ ছবিতে কুড়িগ্রামের দাশিয়ারছরা উপজেলায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়াচ্ছেন উপজেলার নির্বাহি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দীন আহমেদ (মাথায় সাদা টুপি)৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
স্মরণীয় মুহূর্ত
জাতীয় পতাকা ওড়ানোর পর শুরু হয় অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা৷ কুড়িগ্রামের দাশিয়াছরার এ নারী জীবনে এই প্রথম উপলব্ধি করলেন স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিক হওয়ার আনন্দ৷ মোমবাতি জ্বালিয়ে উদযাপন করা মুহূর্তটি নিশ্চয়ই তাঁর জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আগুনের পরশ
বাংলাদেশের পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নিলফামারী – এই চার জেলায় ভারতের ১৭ হাজার ১৬০ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতে বাংলাদেশের ৭ হাজার ১১০ একর আয়তনের ৫১টি ছিটমহলের ৫১ হাজার ৫৪৯ মানুষ এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক৷ দাশিয়াছরায় আগুন জ্বালিয়ে মুহূর্তটি উদযাপন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/S. Islam
পঞ্চগড়ে উৎসব
৬৮ বছরের অবর্ণনীয় কষ্ট থেকে মুক্তির মুহূর্তে পঞ্চগড়ের ছিটমহলবাসীরাও হাতে তুলে নিয়েছিলেন প্রজ্বলিত মোমবাতি৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/S. Islam
বাড়ল নাগরিক
বাংলাদেশ ও ভারতের অংশের ১৬২টি ছিটমহলের ৫১ হাজার ৫৪৯ জন অধিবাসীর মধ্যে এতদিন ৩৭ হাজার ৩৩৪ জন ‘ভারতীয়’ বাংলাদেশের ছিটমহলগুলোতে এবং ১৪ হাজার ২১৫ জন ‘বাংলাদেশি’ ভারতের ছিটমহলগুলোতে বাস করেছেন৷ এ পর্যন্ত ৯৭৯ জন ভারতে চলে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে৷ তারপরও বাংলাদেশের আয়তন এবং জনসংখ্যা বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/S. Islam
‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ এবং একটি প্রশ্ন
সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন নিঃসন্দেহে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন৷ তারপরও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পুরোপুরি ‘শান্তিময়’ হবে এমন নিশ্চয়তা কি আছে? ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে সীমান্তে নিরীহ মানুষ হত্যা কি থামবে? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে...৷
ছবি: Getty Images/G. Crouch
6 ছবি1 | 6
ভারতের পরিবেশবিদ অধ্যাপক এস.হাজরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুন্দরবনের মতো স্পর্শকাতর অঞ্চলে এই কেন্দ্র স্থাপন স্রেফ বাংলাদেশের জন্যই নয়, ভারতের জন্যও ক্ষতিকর৷ সুন্দরবন দুই বাংলার সম্পদ৷ তবে বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সৌরবিদ্যুত, বায়ুবিদ্যুত, সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা থেকে বিদ্যুৎ কিংবা বায়োগ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উত্পাদন সহজেই কম খরচে করা যেতে পারে৷
এপার বাংলা ওপার বাংলার মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও এবার ভারতে তৈরি রেল ইঞ্জিন, কামরা চলবে বাংলাদেশে৷ এতে লাভ হবে দুদেশেরই৷ ইঞ্জিন ও কামরা একই প্রযুক্তির হলে দ্রুত যাত্রি ও মাল পরিবহনে সুবিধা হবে৷ সময় ও অর্থ দুই বাঁচবে দুদেশেরই, মনে করেন ভারতের রেলের কর্তাব্যক্তিরা৷
৭০ টি আধুনিক রেল কামরা এবং ২০টি ইঞ্জিন পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে৷ এগুলি তৈরি হয়েছে বারানসী কারখানায়৷ মোটকথা, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে ঢাকা-দিল্লির মৈত্রীর করমর্দন বিভিন্ন ঐতিহাসিক কারণে কখনও শিথিল হবার নয়৷ সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব যদি পারস্পরিক আস্থা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা অটুট থাকে৷