1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুন্দরবনে বিপর্যয়: মরছে জলজ প্রাণী, জেলেরা বেকার

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

বাংলাদেশে সুন্দরবনের শেলা নদীতে অয়েল ট্যাংকার ডোবার এক সপ্তাহের মাথায় সার্বিক বিপর্যয়ের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ পাখি, ডলফিন, ভোঁদর এবং কাঁকড়াসহ জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে৷ কর্মহীন হয়ে পড়ছেন শত শত জেলে৷

Bangladesch Tankerunglück bedroht weltgrößten Mangrovenwald
ছবি: STR/AFP/Getty Images

শেলা নদীতে মরে ভেসে ওঠা ডলফিনের ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর তা নিয়ে এখন চলছে বিস্তর আলোচনা৷ এছাড়া থিকথিকে কাদায় আটকে যাওয়া পাখির মরণাপন্ন অবস্থা মানুষকে আহত করছে৷ মরে যাচ্ছে কাঁকড়া৷ বিপাকে পড়েছে ভোঁদড়৷ গাছ-পলার মূল-কাণ্ড জেকে ধরেছে তেলের আস্তরণ৷ অথচ পরিবেশ ও বন এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাটানির কারণে পরিবেশ ও প্রাণীবৈচিত্র রক্ষায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না৷ তেল অপসারণের কাজ এখনও চলছে দেশি ‘ফোম' পদ্ধতিতে৷

এ সবের মধ্যে জীবিকা হারিয়ে পথে বসেছেন সুন্দরবন অঞ্চলের শত শত জেলে৷ খুলনার সাংবাদিক রাকিব উদ্দিন পান্নু সরেজমিন ঘুরে ডয়চে ভেলেকে জানান, পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকার জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না৷ ঐ এলাকার এক হাজারেরও বেশি জেলে এখন বেকার৷ অনেক জেলে পরিবারের এ মুহূর্তে অনাহারে দিন কাটছে৷ মংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি, জয়মনিরঘোল, চরের খাল, বাশতলা, বৈদ্ধমারী এবং কাটাখালী গ্রামের জেলেদের একই অবস্থা বলে জানান তিনি৷

রকিব উদ্দিন পান্নু যেসব জেলেদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের একজন চরের খাল গ্রামের বাসিন্দা জেলে মুজিবুর রহমান৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘সুন্দরবনের শেলা নদীতে বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা এবং সাদা মাছ শিকার করে আমার সংসার চলে৷ গত মঙ্গলবার দুপুরের পর এ নদীতে তেল ভেসে আসতে শুরু করে৷ তখন শেলা নদীতে কয়েক'শ জেলে মাছ ধরছিলাম৷ তেল দেখে আমরা নদী থেকে জাল তুলে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি৷ এরপর আমরা আর নদীতে মাছ ধরতে যাইনি৷ সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘নেটজাল পেতে আমি বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা সংগ্রহ করি৷ তেল জালে আটকে গেলে আমার ভীষণ ক্ষতি হবে৷ জাল কিনতে আমার প্রায় পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে৷ তাই আমরা নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি৷''

চিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সফিকুল ইসলাম রাসেল বলেন, ‘‘এই ইউনিয়নে তিন থেকে চার হাজার পরিবার সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল৷ মাছ ধরতে না পারায় বেশ কিছু পরিবার তেল তোলার কাজে যোগ দিয়েছে৷ সেই তেল বিক্রি করেই কিছু রোজগার করছেন৷ যাঁরা তেল তুলতে পারছেন না, তাঁরা বেকার হয়ে বসে আছেন৷''

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমির হোসাইন চৌধুরী ডয়চে ভেলের কাছে অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আগামী অমাবশ্যায় জোয়ারের আগে এ সমস্যা কেটে যাবে এবং জেলেরা আবার নদীতে মাছ ধরতে পারবে৷''

সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেলের ট্যাংকার ডোবার পর মৃত যে ডলফিনের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেটা খুঁজতে নদীতে চেষ্টা চালাচ্ছে বন বিভাগ৷ বিদেশি পর্যটকদের একটি লঞ্চ থেকে শুক্রবার, অর্থাত্‍ দুর্ঘটনার তিন দিন পর মৃত ডলফিনটির ছবি তোলা হয়৷

লঞ্চটি যে পর্যটন সংস্থার, সেই বেঙ্গল টুর্স-এর কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন বলেন, ‘‘শুক্রবার বিদেশি পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার সময় শেলা নদীর তাম্বুলবুনিয়া এলাকায় আমরা একটি মৃত ডলফিন ভাসতে দেখি৷''

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা তাম্বুলবুনিয়া এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে খুঁজেও কোনো ডলফিনের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি৷ পাওয়া গেলে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করা হবে৷'' তবে এরই মধ্যে সুন্দরবন এলাকা থেকে ইরাবতী ডলফিন বিদায় নিয়েছে৷ তাদের আর নদীতে দেখা যাচ্ছে না৷

এদিকে সুন্দরবনের শেলা নদীতে ট্যাংকারডুবির ঘটনায় আঘাতকারী জাহাজ ‘এমটি টোটাল'-এর মাস্টারসহ চারজনকে সোমবার আটক করা হয়েছে৷ তাঁদের দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লক্ষণখোলা এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে নৌ-যানসহ আটক করে পুলিশ৷ অভিযোগ রয়েছে, এমটি টোটাল-এর ধাক্কাতেই ডুবে যায় তেলবাহী জাহাজ ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭'৷

বন্দর থানার ওসি নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ডুবে যাওয়া ট্যাংকারের শ্রমিক এবং নদীতে থাকা জেলেদের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে এমটি টোটালকে শনাক্ত করা হয়েছে৷ তাদেরকে মংলা থানায় নিয়ে যাওয়া হবে৷''

গত মঙ্গলবার ভোরে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শেলা নদীর মৃগামারী এলাকায় ট্যাংকারটি ডুবে যায়৷ ট্যাংকারটিতে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস তেল ছিল৷ ডুবে যাওয়া ট্যাংকার থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবন এলাকার নদী-খালসহ বিস্তীর্ণ এলাকায়৷ জোয়ারের সঙ্গে এই ছড়িয়ে পড়েছে খুলনা নগরী সংলগ্ন রূপসা নদীতেও৷

এই পরিস্থিতিতে বন ও পরিবশে মন্ত্রণালয় সুন্দরবন এলাকায় জলযান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধের প্রস্তাব দিলেও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এর বিরোধিতা করছে৷ তাই সুন্দরবন রক্ষায় সোমবার হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে৷ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এখলাছ উদ্দিন ভুইয়া হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন৷

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল হাসানের দ্বৈত বেঞ্চে শুনানি করে পরবর্তী শুনানির জন্য ৫ই জানুয়ারি তারিখ ধার্য করা হয়৷

রিটে বিবাদী করা হয়েছে – পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিপিং করপোরেশনের চেয়ারম্যান, বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ, এসপি খুলনা ও বাগেরহাট৷

রিটকারী আইনজীবী এখলাছ উদ্দিন ভুইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত ৭ই ডিসেম্বর সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেলের জাহাজ ডুবে যায়৷ ওই জাহাজের তেলে সুন্দরবনের পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে৷ এর ফলে জীববৈচিত্রসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে৷ সুন্দরবন রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়েছি আদালতের কাছে৷'’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ