প্রথমেই বলে রাখা ভালো, পুরুষদের সৌন্দর্য নিয়েও প্রতিযোগিতা রয়েছে, যদিও এ নিয়ে মাতামাতি তেমন নেই বলে জানাজানিটাও তেমন না৷ নারীর টানটান শরীর, লাস্যময়ী হাঁটা, শরীরের মাপ – এসবই দারুণ আকর্ষণীয়ভাবে প্রচার পায় গণমাধ্যমে৷
বিজ্ঞাপন
ফলে সাধারণ মানুষের মনস্তত্বে এর একটা সচেতন প্রভাব পড়ে৷
নারী যেমন এর সাথে মিলিয়ে নিজের অজান্তেই নিজেকে নম্বর দিতে থাকেন, পুরূষের মনস্তত্বেও নারীর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী হয়ে পড়ে শরীরকেন্দ্রিক৷ সামগ্রিকভাবে এর প্রভাব পড়ে মানুষ হিসেবে নারীর মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও৷
সেরা সুন্দরী হয়েও মুকুট হারিয়েছেন যাঁরা
বিভিন্ন সময়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় জেতা সেরার মুকুট ফিরিয়ে দিতে হয়েছে কোনো কোনো সুন্দরীকে৷ সম্প্রতি বাংলাদেশেও এমনটি ঘটেছে৷
ছবি: Sazzad Hossain
ভেনেসা উইলিয়ামস, মিস অ্যামেরিকা, ১৯৮৪
১৯৮৩ সালে প্রথম আফ্রিকান অ্যামেরিকান হিসেবে ‘মিস অ্যামেরিকা’ হয়েছিলেন৷ কয়েকমাস পর ‘পেন্টহাউস’ ম্যাগাজিনে তাঁর (বামে) য়েকটি অননুমোদিত নগ্ন ছবি ছাপা হলে বিতর্ক তৈরি হয়৷ এরপর তাঁর মুকুট ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: AP
অক্সানা ফেডোরোভা, মিস ইউনিভার্স ২০০২
রুশ এই সুন্দরী মিস ইউনিভার্স হিসেবে কয়েকমাস দায়িত্ব পালন করেন৷ একসময় তিনি গর্ভবতী বলে গুজব ছড়ায়৷ কিন্তু অক্সানা সেই গুজব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন৷ পরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘দ্য হাওয়ার্ড স্ট্যার্ন শো’ নামে এক টিভি অনুষ্ঠানে বারবার তাঁকে যৌনতা বিষয়ক প্রশ্ন করা হলে তিনি বিরক্ত হন৷ এমন প্রশ্ন যে করা হবে, সে ব্যাপারে তাঁকে আগে সতর্ক না করায় সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb/S. Chirikov
ক্যারি প্রিজিন, মিস ইউএসএ ২০০৯
অনলাইনে তাঁর আংশিক নগ্ন ছবি প্রকাশ হওয়ায় চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে প্রিজিনের মুকুট কেড়ে নেয়া হয়েছিল৷
এক সাংবাদিকের সঙ্গে রূঢ় ও উদ্ধত আচরণের অভিযোগে প্রতিযোগিতার আয়োজক কর্তৃপক্ষ ক্যারিডের মুকুট ছিনিয়ে নেয়৷ ক্যারিডে পরে ঐ সাংবাদিকের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে টেলিভিশনে প্রচারিত ঐ সাক্ষাৎকারের সময় তাঁর মন এমনিতেই বিক্ষুদ্ধ ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Lorca
ইতির এসেন, মিস তুর্কি ২০১৭
খেতাব জেতার পরের দিনই তা কেড়ে নেয়া হয়৷ কারণ, তখন জুলাই মাসে করা এসেনের একটি টুইট কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে৷ তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টার এক বছর পূর্তিকে ঘিরে ঐ টুইটটি করেছিলেন এসেন৷ তিনি ঐ ঘটনায় নিহতদের প্রতি সম্মান জানিয়েছিলেন৷ ‘‘জুলাই ১৫ শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে আজ সকালে আমার পিরিয়ড হয়েছে৷ শহিদদের রক্তের সম্মানে আজ নিজে রক্তাক্ত হয়ে আমি দিনটি উদযাপন করছি,’’ এই ছিল এসেনের টুইট৷
ছবি: picture alliance/abaca/E. Yorulmaz
জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল, বাংলাদেশ
বিয়ের তথ্য গোপন করার অভিযোগে ‘মিস বাংলাদেশ’-এর মুকুট জয়ের কয়েকদিন পরই সেটি হারান এভ্রিল৷ জানা যায়, ১৬ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেছিলেন৷ তিন মাস পর তার সমাপ্তি ঘটে৷ বাংলাদেশের আইনে বাল্যবিবাহকে বিয়ে হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া না হলেও মিস ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তথ্য গোপন করেছেন এভ্রিল৷ তাই এভ্রিলকে বাদ পড়তে হয়েছে৷ তার জায়গায় জেসিয়া ইসলাম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন৷
ছবি: Sazzad Hossain
মিস গ্র্যান্ড মিয়ানমার ২০১৭, সোই আইন সি
কয়েকটি নিয়ম ভঙ্গ করায় তিনি মিস গ্র্যান্ড মিয়ানমার ২০১৭-এর মুকুট হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ৷ তবে সোই আইন সি-র ফেসবুকে প্রকাশ করা একটি ভিডিও আসল কারণ বলে গুজব উঠেছে৷ ঐ ভিডিওতে নিহত মানুষের ছবি দেখা যাচ্ছে৷ রোহিঙ্গা মুসলিমরা এর জন্য দায়ী বলে আইন সি-কে ভিডিওতে বলতে শোনা গেছে৷ অবশ্য আয়োজক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভিডিওর কারণে মুকুট কেড়ে নেয়ার খবরটি সত্য নয়৷
ছবি: facebook/shweedwards
7 ছবি1 | 7
নিম্নবিত্তের জীবন, মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, উচ্চবিত্তের নিঃসঙ্গতা- সবক্ষেত্রেই নারীর জীবনে বাড়তি জটিলতা তৈরি করে সৌন্দর্যের এ কাঠামোগত ধারণা৷ নারীবাদী মতামত তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সৌন্দর্যের কাঠামোগত ধারণার বিপক্ষে৷
তবে ভিন্নভাবেও এ নিয়ে ভাবা যায়৷ বিকাশ কিংবা বিকৃতি যা-ই বলে থাকি না কেন, সামগ্রিক বিচারে মানুষের গভীরটাকে তল্লাসি করলে হয়তো দেখা মিলবে, মানুষের সৃষ্টিশীলতা ও নিজেকে প্রকাশের আকুলতা৷
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মুক্ত সংস্কৃতির অবাধ বিচরণ মানুষের জীবনযাপন, মূল্যবোধ, আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের ধারণায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে৷ আর সেখানটাতেই লাগে মূল বিপত্তি৷ পুঁজিবাদ ও পুরুষতন্ত্র একে অপরের উপর ভর দিয়ে টিকে থাকা দুই দোসরের কাছে অনেক ক্ষেত্রেই হার মানে নারীর মেধা, স্বাধীন মানুষের স্বীকৃতি ও নিজের মতো করে বাঁচার আকাঙ্খা৷ আর তাই পুরুষতন্ত্রকে ব্যবহার করেই এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চাওয়াটাও অনেক ক্ষেত্রে কৌশলগত পদক্ষেপ ভাবেন অনেক নারী৷ উদাহরণ মিলবে হলিউড বলিউডের দিকে নজর রাখলেই৷ অনেক তারকাই কাজের পাশাপাশি এখানকার ফাঁকগুলোকে ধরিয়ে দিয়ে কাজের ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সমতা আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যার ফলে নিঃসন্দেহে পরবর্তী প্রজন্মের লড়াইয়ের ময়দান আরো দৃঢ় হবে৷
প্রত্যেকটা মানুষের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই তাঁর নিজস্ব৷ নারীর ক্ষেত্রে এ লড়াই প্রকৃতিগতভাবেই পুরুষের চেয়ে কঠিন৷ পুরুষতন্ত্রপোষণকারী পুঁজিবাদ এ লড়াইকে করে তুলেছে কঠিনতর৷ যদিও ব্যক্তিগতভাবে সুবিধাভোগী, অথচ কৌশলগত লড়াই জারি রাখা নারীরা অনেকক্ষেত্রেই সমালোচিত হচ্ছেন, তবু নারীর পক্ষে ব্যক্তিগত বিশ্বাসের দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখারই এক লড়াই৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷