ফিলিপাইন্সে এরই মধ্যে ২৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ ফিলিপাইন্সে ধ্বংসযজ্ঞ শেষে এবার সুপার টাইফুন মাংখুট আঘাত হেনেছে চীনে৷ হংকং ও ম্যাকাওয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দুর্যোগ৷
ছবি: Reuters/J. Lee
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে এগোতে গিয়ে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে মাংখুট৷ কিন্তু সতর্কতা হিসেবে হংকং কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ বিপদসংকেত ১০ জারি করে রেখেছে৷
ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক জেমস রস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, হংকংয়ের ওপর দিয়ে ‘তীব্র বেগে বাতাস, প্রচণ্ড বৃষ্টি এবং ঝড় বয়ে যাচ্ছে৷ নিচু এলাকাগুলোতে ঝড়ের প্রভাবে বন্যা দেখা দিয়েছে, বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে, বাড়িঘরের দরজা-জানালা ভেঙে পড়ছে বলেও জানিয়েছেন রস৷
কয়েক বছরের মধ্যে ভয়াবহ
রস জানান, গত ১৫ বছরের মধ্যে এটি তাঁর দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ টাইফুন৷
এদিকে, ম্যাকাওয়ে ৪২টি ক্যানো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ গত বছর টাইফুন হাতোর আঘাতে নয় জনের মৃত্যু হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ম্যাকাও কর্তৃপক্ষকে৷
চীনের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকা থেকেও লাখ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷
শনিবার ফিলিপাইন্সের উত্তরে লুজোন দ্বীপ লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে সুপার টাইফুন মাংখুট৷ অন্তত ২৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ এখনো বিভিন্ন স্থান বন্যাকবলিত, হচ্ছে ভূমিধস৷ কর্তৃপক্ষ বলছে, বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনাই ঘটেছে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের কারণে৷
দেশটির দুর্যোগ মোকাবেলা দলের সমন্বয়ক ফ্রান্সিস টলেনটিনো ডিজেডএমএম রেডিওকে জানিয়েছেন, ‘‘টাইফুনের পরপরই অনেকে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেন, তখনই ভূমিধসের ঘটনা ঘটে৷'' এই ঝড়ে ৫৭ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলেও জানান তিনি৷
দেশটির প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে রোববার আক্রান্ত এলাকার সবশেষ অবস্থা হেলিকপ্টারে পর্যবেক্ষণ করেছেন৷
শনিবার রাজধানী ম্যানিলা থেকে ৩৮২ কিলোমিটার উত্তরে বাগাও শহরে ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে মাংখুট৷
ফিলিপাইন্সে বছরে গড়ে ২০টি টাইফুন আঘাত হানে৷ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশ মনে করা হয় ফিলিপাইন্সকে৷ ২০১৩ সালে টাইফুন হাইয়ানের আঘাতে ৭৩০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল৷
যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড় ফ্লোরেন্সের আঘাত
এদিকে শুক্রবার নর্থ ক্যারোলাইনায় আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ফ্লোরেন্স৷ কিন্তু এরই মধ্যে তা কেড়ে নিয়েছে অন্তত ১৩ জনের প্রাণ৷
তীব্রতা কমে এলেও প্রবল বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে৷ কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়েছে, বন্যা আরো বাড়তে পারে৷ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র সাউথ ক্যারোলাইনার দিকে সরে গেলেও একাংশ এখনো রয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনার ওপর৷ ফলে দুই রাজ্যেই বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের৷
মহাশূন্য থেকে দেখা প্রাকৃতিক বিপর্যয়
স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবীটা কেমন দেখায়? ভূপৃষ্ঠে কী ঘটছে, তার কতটুকু জানতে পারে তারা? স্যাটেলাইট থেকে তোলা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ছবি দেখলে তার একটা আন্দাজ পাওয়া যায়৷
ছবি: NASA
আগ্নেয়গিরির যখন ঘুম ভাঙে
আগ্নেয়গিরিরা যতদিনই নিদ্রমগ্ন থাকুক না কেন, তাদের ঘুম ভাঙলে আর রক্ষা নেই! ২০০৯ সালে রাশিয়ার কুরিল দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত সারিকেভ আগ্নেয়গিরিটি যখন বিস্ফোরিত হয়, তখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস ঠিক তার উপর দিয়ে যাচ্ছিল৷ মহাকাশচারীরা মেঘের ফাঁক দিয়ে আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের ছবি তোলার সুযোগ পান৷ আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে শুরু করে বাষ্প, প্রায় সব কিছুই মহাকাশ থেকে দেখা যায়৷
ছবি: NASA
পড়ে থাকে বালুচর
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এসা-র প্রোবা-৫ পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইটটি ভূপৃষ্ঠে কোনো বিশেষ এলাকার ছবি তোলে দিনের পর দিন, যা থেকে পরিবেশগত পরিবর্তনের একটা চিত্র ধরা পড়ে৷ ওপরের ছবিগুলো তোলা হয়েছিল (বাম থেকে ডান) ২০১৪ সালের এপ্রিল, ২০১৫ সালের জুলাই ও ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে৷ ছবিগুলি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, বলিভিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ পুপো কিভাবে ধীরে ধীরে উধাও হচ্ছে৷
ছবি: ESA/Belspo
আগুন নিয়ে খেলা
প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অরণ্যে দাবানল মানুষ ও পরিবেশের বিপুল ক্ষতি করে৷ মানুষই অধিকাংশ সময়ে এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী৷ ইন্দোনেশিয়াতে চাষিরা ক্রান্তিমণ্ডলীয় ‘পিট’ রেইনফরেস্টে আগুন লাগানোর ফলে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়৷ বোর্নিও আর সুমাত্রা দ্বীপের আগুন স্যাটেলাইটের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে৷ সেই আগুনের ধোঁয়ার কারণে ইন্দোনেশিয়ার বহু মানুষ বায়ুদূষণ সম্পর্কে সচেতন হন৷
ছবি: NASA/J. Schmaltz
বানভাসি জার্মানি
২০১৩ সালে মধ্য ইউরোপে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, তা-তে এ অঞ্চলের মুখ্য নদীগুলিতে বন্যা নামে৷ স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এলবে নদী কিভাবে কুল ছাপিয়েছে৷
ছবি: NASA/J. Allen
ঘূর্ণিঝড়
হারিকেন অথবা সাইক্লোন; প্রচণ্ড বাতাসের গতি, বিপুল বৃষ্টিপাত, সাগরে বান; এ ধরনের ঝড়ের গতিবেগ, গতিপথ ও অগ্রগতির উপর চোখ রাখার জন্য চাই মহাশূন্য থেকে সংগৃহীত তথ্য৷ মেক্সিকোর উপকূলে ২৫শে নভেম্বর, ২০১৫ তারিখে তোলা স্যান্ড্রা ঘূর্ণিঝড়ের ছবি৷
ছবি: NASA/J. Schmaltz
হিমবাহের বরফ গলছে
জলবায়ু পরিবর্তনের উপর নজর রাখতে স্যাটেলাইটের দরকার, বিশেষ করে হিমবাহের বরফ গলার পরিমাপ বুঝতে৷ মহাশূন্য থেকে তোলা ছবি থেকে বিজ্ঞানীরা দেখাতে পেরেছেন যে, সারা বিশ্বে একাধিক হিমবাহের বরফ কমে গিয়েছে – অপরদিকে সাগরের জল বেড়েছে৷ ২০০২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে আর্জেন্টিনার পাটাগোনিয়ো অঞ্চলের উপশালা হিমবাহ কিভাবে ধীরে ধীরে সরে গিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস থেকে তোলা এই সব ছবি তার প্রমাণ৷
ছবি: NASA
বালির ঝড়
অথবা ধুলোর ঝড়, হাবুব কিংবা সিমুম৷ ছবিটি তোলা হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, স্যাটেলাইট থেকে৷ মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের ধুলোবালির ঝড় দিনকে রাত করে দেয়৷ স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য ভূপৃষ্ঠে গ্রাউন্ড স্টেশনের সেন্সরগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়৷
ছবি: NASA/J. Schmaltz
‘নগ্ন শিখর’
ক্যালিফর্নিয়ার মাউন্ট শাস্টা পাহাড়ের চূড়ায় যে পর্যাপ্ত বরফ নেই, এই পরিস্থিতি বর্ণনা করার জন্য নাসা ঐ দু’টি শব্দ ব্যবহার করেছে৷ মাউন্ট শাস্টা এই অঞ্চলে পানীয় জলের একটি প্রধান উৎস৷ শুধু ক্যালিফর্নিয়াতেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকেও এই ধরনের ‘বাদামি পাহাড়ের’ ছবি পাওয়া গিয়েছে, যদিও অদূর অতীতে তাদের তুষারাবৃত শ্বেতশুভ্র মূর্তি স্মৃতিতে আজও অম্লান৷