প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে ট্রাম্প শিবিরের তৎপরতা এবার সুপ্রিম কোর্টেও নাকচ হয়ে গেল৷ সংসদেও বিদায়ী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার রাশ আলগা হয়ে পড়ছে৷ ইলেকটোরাল কলেজ বাইডেনকে স্বীকৃতি দেবার পথে চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল লাগাতার চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ একাধিক রাজ্যের আদালত তাঁর আবেদন নাকচ করে দিয়েছে৷ এবার সুপ্রিম কোর্টও ট্রাম্পের যুক্তি খারিজ করে পেনসিলভেনিয়া রাজ্যে ভোটের ফলাফল মেনে নিল৷ এমনকি ট্রাম্প নিযুক্ত তিন জন রক্ষণশীল বিচারপতিও সেই রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেননি৷ আদালত রায়ের কোনো ব্যাখ্যাও দেয় নি৷ সেইসঙ্গে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কে না জড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ ফলে রিপাবলিকান দলের নেতৃত্বে টেক্সাস রাজ্য প্রশাসনের আবেদনও খারিজ হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷
৩রা নভেম্বরের নির্বাচনের এক মাস পরেও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রিপাবলিকাল দলের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে ভোটারদের রায় মেনে নেন নি৷ অথচ একের পর এক রাজ্য চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে জো বাইডেনের ক্ষমতাগ্রহণের পথ আরও সুগম করে দিচ্ছে৷ একমাত্র উইসকনসিন এখনো সেই সার্টিফিকেট প্রকাশ করে নি৷ পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল জশ শাপিরো এক টুইট বার্তায় আইনি চ্যালেঞ্র ‘সার্কাস’ বন্ধ করে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবার ডাক দিয়েছেন৷
মঙ্গলবার নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও এক ধাপ এগিয়ে ‘সেফ হারবার’ পর্যায়ের মুখ দেখলো৷ ফলে রাজ্য স্তরের ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বাইডেনের জন্য নিশ্চিত হয়ে পড়লো৷ এমনকি মার্কিন কংগ্রেসও এবার আর সেই সব রাজ্যের ভোটের ফলাফল অগ্রাহ্য করতে পারবে না৷
এদিকে ক্ষমতার উপর ট্রাম্পের রাশ আলগা হতে শুরু করেছে৷ সংসদের নিম্ন কক্ষ বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে উপেক্ষা করে মঙ্গলবার প্রতিরক্ষা নীতি সংক্রান্ত বিল পাস করেছে৷ ডেমোক্র্যাটিক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় রিপাবলিকান দলও বাধা দিতে পারে নি৷ প্রায় ৭৩,১০০ কোটি ডলারের এই ব্যয়ভার রুখতে ট্রাম্প ভেটো প্রয়োগের হুমকি দিলেও তাতে কোনো কাজ হয় নি৷ প্রস্তাবের পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে তাঁর সেই ক্ষমতাও কাজে লাগবে না৷
সব কিছু ঠিকমতো এগোলে আগামী ১৪ই ডিসেম্বর ইলেকটোরাল কলেজ আনুষ্ঠানিকভাবে জো বাইডেনকে দেশের আগামী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নেবে৷ তারপর ৬ই জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেস সেই সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি দেবে৷ ট্রাম্প শিবির অবশ্য সে সব উপেক্ষা করে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবার ঘোষণা করেছে৷ তবে কংগ্রেসের স্বীকৃতির পর নির্বাচনের ফলাফল না মানার কোনো পথই খোলা থাকবে না৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি, এপি)
জো বাইডেনের জীবনের গল্প
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জীবনের গল্প দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Kevin Lamarque/Reuters
জন্ম ও পরিবার
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর স্ক্র্যানটন পেনসিলভ্যানিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র বা আজকের ‘জো বাইডেন’৷ জীবনের প্রথমভাগ বাইডেন কাটান দাদা-দাদির সাথে৷ পরিবারে আর্থিক অনটন থাকলেও বাইডেন স্কুলজীবনে তুখোড় ফুটবল, বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন, যা পরে বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে৷ জানা যায়, ছোটবেলায় বাইডেন কথা বলতে গেলে তোতলাতেন, যা কবিতা আবৃত্তি করার মাধ্যমে পরে নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি৷
ছবি: Handout Joseph Biden/AFP
তারুণ্য
প্রথমে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করতে বাইডেন পাড়ি দেন নিউ ইয়র্কের সাইরাক্যুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানেই তাঁর পরিচয় নেলিয়া হান্টারের সাথে৷ ১৯৬৬ সালে নেলিয়া ও বাইডেন বিয়ে করেন৷
ছবি: Keystone/dpa/picture-alliance
রাজনীতিতে পদার্পণ
১৯৭২ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়েসে ডেলাওয়ারে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান সেনেটর কেলেব বগসের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়েন বাইডেন৷ অর্থাভাব, রাজনীতির ময়দানে অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও পারিবারিক সহায়তা ও মাঠপর্যায়ে প্রচার চালিয়ে গবসকে পরাজিত করেন বাইডেন৷ সেখান থেকেই ডেমোক্র্যাট হিসাবে তাঁর উত্থানের সূত্রপাত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone
পারিবারিক বিপর্যয়
সেনেটর নির্বাচিত হবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাইডেনের জীবনে আসে বিপর্যয়৷ একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নেলিয়া ও কন্যা নাওমির মৃত্যু হয়৷ মারাত্মকভাবে জখম হন তাঁর দুই পুত্রও৷ এই বিপর্যয়ের কারণে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু দলের জোরাজুরিতে হাসপাতালেই সেনেটর পদে শপথগ্রহণ করেন বাইডেন৷ পরে ১৯৭৭ সালে জিল জেকবসকে বিয়ে করেন বাইডেন৷ তাঁদের একটি কন্যা রয়েছে, নাম অ্যাশলি৷
ছবি: Kevin Larkin/AFP/Getty Images
রাজনীতির চেয়ে পরিবারকে প্রাধান্য
বাইডেনের পারিবারিক জীবনে আবার বিপর্যয় আসে ২০১৫ সালে৷ ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ব্রেন টিউমারজনিত জটিলতায় তিনি তাঁর পুত্র জোসেফকে হারান৷ পরের বছর ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে লড়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরিবারকে সময় দিতে নির্বাচন থেকে সরে আসেন বাইডেন৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
তবুও উত্তরণ
এর আগে ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে অংশগ্রহণ করলেও প্রাইমারি নির্বাচনের আগেই নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন৷ কিন্তু সেনেটর হিসাবে কাজ করে যান তিনি৷ ২০০৮ সালেও প্রথমে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তিনি৷ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসাবে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম’ প্রদান করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
রাজনীতির শুরু থেকেই বাইডেন ক্রেতা সুরক্ষা ও পরিবেশবিষয়ক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন৷ ২০১০ সালের ‘পেশেন্ট প্রোটেকশান অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার’ আইনের বাস্তবায়নে তাঁর ভূমিকার কথা বারবার আলোচিত হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সাল থেকেই আইনি কড়াকড়ি বাড়ানো ও সাজার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে তাঁর অবস্থান তিনি স্পষ্ট করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর দলের নীতির সাথে পুরোপুরি খাপ খায়নি৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
বাইডেনকে ঘিরে বিতর্ক
১৯৮৮ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় বাইডেনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নিল কিনকের বক্তব্য চুরির অভিযোগ ওঠে৷ এছাড়া অ্যামেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ণভিত্তিক বিভেদপন্থিদের সাথে সুর মিলিয়ে আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে সমালোচিত হন বাইডেন৷ ২০১২ সালেও সমকামী জুটিদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলে বাইডেন শিরোনামে উঠে আসেন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP/picture alliance
যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
২০২০ সালের মার্চ মাসে টারা রিড অভিযোগ আনেন যে ১৯৯৩ সালে জো বাইডেন তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন৷ সেনেটর থাকাকালীন বাইডেনের অফিসে সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন রিড৷ ১৯৯৩ সালে বিষয়টি আলোচিত হবার পর নতুন করে এবছর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সেটি আলোচনায় উঠে আসে৷ এই অভিযোগ বাইডেন উড়িয়ে দিলেও আরো কয়েকজন নারী বাইডেনের বিরুদ্ধে অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ এনেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
বাইডেনের যত নাম
গণমাধ্যমে বাইডেনের নামের সাথে জুড়েছে নানা ধরনের বিশেষণ৷ জীবনের গোড়ার দিকের অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে কখনো তাঁর নাম হয়েছে ‘মিডল ক্লাস জো’৷ ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় বয়সের কারণে ডনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে তাচ্ছিল্য করে বলেন ‘স্লো জো’ ও ‘স্লিপি জো’৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন জো বাইডেন৷ তার পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচারে নামেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ টুইটার-ইন্সটাগ্রামে পাশে দাঁড়ান সেলেব্রেটিরাও৷ নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিজয়ী হন তিনি৷ বাইডেনের নির্বাচনসঙ্গী কমলা হ্যারিস দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম আফ্রিকান-অ্যামেরিকান ও প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন৷