1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ষণ মামলার আসামির জামিনের নেপথ্যে কী?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২২ মার্চ ২০১৯

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক বিএনপি সমর্থককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার আসামি, আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের জামিন নিয়ে তোলপাড় চলছে৷ প্রশ্ন উঠেছে, জামিন অযোগ্য ধারায় ধর্ষণ মামলার এই আসামির জামিন পাওয়ার রহস্য কী?

ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma

রুহুল আমিনকে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ জামিন দেয় ১৮ মার্চ৷ তবে জামিনের ঘটনাটি জানাজানি হয় বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ)৷ জামিন বাতিলের জন্য যখন আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা হয় তখন৷ অবশ্য রুহুল আমিন জামিন পেলেও এখনো মুক্তি পাননি৷ রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, তার জামিন বাতিল হবে৷ তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়– জামিন অযোগ্য একটি ধারায় রুহুল আমীনের জামিন হলো কিভাবে? রুহুল আমিন যে সুবর্ণচরের সেই আলোচিত ধর্ষণ মামলার মূল হোতা, তা কি রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জানতে না? তিনি কি জামিনের বিরোধিতা করেছিলেন?

অভিযোগ, গত ৩০ ডিসেম্বর সুবর্ণচরের পাংখার বাজার ১৪ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ‘নির্দেশ’ অমান্য করে ধানের শীষে  ভোট দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন ওই নারীর ওপর ক্ষুব্ধ হন৷ তাঁকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়৷ এরপর ভোটের দিন দিবাগত গভীর বাড়িতে প্রবেশ করে রাতে স্বামী ও সন্তানদের বেঁধে রেখে তাদের সামনেই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়৷ এই ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়৷ ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী সুবর্ণচর থানায় রুহুল আমিনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার এজাহার দিলেও তখন এজাহার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীনসহ চারজনের নাম বাদ দিয়ে এজাহার রেকর্ড করে থানা৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাপক চাপ আর প্রতিবাদের মুখে পুলিশ ২ জানুয়ারি রুহুল আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে৷

তথ্য গোপন করেছিলেন আইনজীবী?

সেই রুহুল আমিনকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্টের মামুনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ৷ ওই বেঞ্চে রুহুল আমিনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আশেক-ই-রসুল৷ আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) বিশ্বজিৎ রায়৷ রহুল আমিনকে কোন গ্রাউন্ডে আদালত জামিন দিলেন জানতে চাইলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এজাহারে রুহুল আমিনের নাম ছিল না৷ তার নাম এসেছে পুলিশ ফরোয়ার্ডিংয়ে৷ আদালত এইসব দেখে-শুনে জামিন মঞ্জুর করেছেন৷ তবে ২২ ধারায় একটি জবানবন্দি ছিল, যেখানে রহুল আমীনকে ধর্ষণের মূল নির্দেশদাতা বলা হয়েছে৷ কিন্তু জামিন আবেদনের সঙ্গে ওই জবানবন্দিটি দেয়া হয়নি, গোপন করা হয়েছে৷’’ জামিনের বিরোধিতা করেছিলেন কিনা জানতে চাই তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমি জামিনের বিরোধিতা করেছি৷’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘এই রুহুল আমিন যে সুবর্ণচরের আলোচিত ধর্ষণ মামলার আসামি, তা আমি জানতাম না৷ তার জামিন পাওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক৷’’

এই রুহুল আমিন যে সুবর্ণচরের আলোচিত ধর্ষণ মামলার আসামি, তা আমি জানতাম না: বিশ্বজিৎ রায়

This browser does not support the audio element.

বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘‘আমার জানা মতে রুহল আমিন জামিন পেলেও সে এখনো কারাগার থেকে ছাড়া পায়নি৷ আমরা আপিল আদালতে তার জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করেছি৷ আশা করছি, ২৫ মার্চ চেম্বার জজের আদালতে শুনানি হবে৷ আমাদের আশা, তার জামিন বাতিল হবে এবং সে মুক্তি পাবে না৷’’

রুহুল আমিনের আইনজীবী আবেদনে যে তথ্য গোপন করেছেন, তা আইনজীবী হিসেবে অনৈতিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা তাঁর অনভিজ্ঞতার ফল হতে পারে৷’’

যেভাবে জামিনের খবর প্রকাশ হয়:

রুহুল আমিনের জামিনের খবরটি গোপনই ছিল৷ কিন্তু তার এলাকায় খবরটি পৌঁছে যায়৷ সুবর্ণচরে বসে ১৯ মার্চই খবর পান ধর্ষণেরশিকার নারী ও তাঁর স্বামী৷ খবর পেয়ে ওই রাতেই তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় রওয়ানা হন৷ পরদিন ২০ মার্চ ঢাকায় তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে রহুল জামিনের খবর জানাজানি হয়ে যায়৷ ২১ মার্চ তার জামিন বাতিলের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ৷ তবে এর মধ্যে জামিন আদেশের কপি বের করে তা নোয়াখালী কারাগারে পৌঁছাতে পারেননি রুহুল আমিনের আইনজীবী৷ ফলে তিনি জামিন পেলেওে মুক্তি পাননি৷ ধর্ষণের শিকার নারী ও তাঁর স্বামী ২১ মার্চ আবার গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন৷ ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকায় আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করেছি৷ আমরা হাইকোর্টেও গিয়েছি৷ আমাদের বলা হয়েছে, তার জামিন বাতিল হবে৷ সে বের হতে পারবে না৷ আমাদের সঙ্গে সরকারের লোকজনও কথা বলেছেন৷ ডিসি, এসপি ফোন করেছেন৷ তারা আমাদের চিন্তা না করতে বলেছেন৷’’

আমাদের সঙ্গে সরকারের লোকজনও কথা বলেছেন: স্বামী

This browser does not support the audio element.

হুমকি

ধর্ষণের শিকার নারীর পরিবার হুমকির মুখে আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ ধর্ষিতার স্বামী জানান, ‘‘জামিনের খবর শুনে ওইদিন ঢাকা যাওয়ার পথে আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে আটক করারা চেষ্টা করে রহুল আমিনের লোকজন৷ ১০-১২ জন লোক, যাদের কয়েকজনকে চিনতে পেরেছি, আমাদের সোনাপুর বাসস্ট্যান্ডে আটকের চেষ্টা করে৷ তাদের উদ্দেশ্য ছিল আমরা যাতে ঢাকা যেতে না পারি৷ পরে আমরা পালিয়ে অন্য বাসে ঢাকা যাই৷ অমি বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি৷ জিডি করব৷ এছাড়া আমাদের আরো নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে৷’’ এর সঙ্গে রুহুল আমিনের লোক হানিফ চেয়ারম্যানও জড়িত বলে দাবি করেন তিনি৷

থানা যা করেছিল:

তিনি আরো বলেন, ‘‘ধর্ষণের পর আমি রুহুল আমিনসহ মোট ১৩  জনের বিরুদ্ধে থানায় এজার দিয়েছিলাম৷ কিন্তু রহুল আমিনসহ ৪ জনের নাম বাদ দিয়ে ৯ জনের কিরুদ্ধে মামলা নেয় পুলিশ৷ আমি তা জানতেও পারিনি৷ পুলিশ স্খানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ চেয়ারম্যানের পরামর্শ মতো রুহুল আমিনের নাম বাদ দেয়৷’’ পরে মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে রহুল আমিনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ এরপর একজন সাক্ষীর জবানবন্দিতে তাকে ধর্ষণের হুকুমদাতা হিসেবে দেখিয়ে আদালতে  প্রতিবেদন দেয় পুলিশ৷ মামলাটির তদন্ত এখনো চলছে৷ আর তদন্ত করছে সিআইডি৷ জানা গেছে, চার্জশিট দেয়ার আগে রহুল আমিনের নাম আর এজাহারে যুক্ত করার সুযোগ নেই৷ এই ঘটনায় তখন সুবর্ণচর থানার তখনকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীনকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয়৷

জামিন পাওয়ার পেছনে তিনটি সাম্ভাব্য কারণ: নূর খান

This browser does not support the audio element.

নেপথ্যে কী?

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান রুহুল আমিনের জামিন পাওয়ার পেছনে তিনটি সাম্ভাব্য কারণকে চিহ্নিত করেন৷ ১. পুলিশ প্রতিবেদনে দুর্বলতা ২. রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কার্যকরভাবে জামিনের বিরোধিতা না করা এবং ৩. রাজনৈতিক বা সরকারের চাপ৷

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই মামলার শুরুতে রহুল আমিনকে আসামি করা হয়নি৷ পরে আসামি করা হয়৷ এখানে এই মামলার দুর্বলতা আছে৷ কিন্তু জামিন শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের ডিএজি যদি বিষয়টিকে আদালতে স্পষ্ট করতেন বা স্পষ্ট করে তুলে ধরতেন তাহলে হয়তো সে জামিন পেতো না৷ আইনের ফাঁক-ফোঁকড়ের সুযোগ নিতে পারতো না৷ আমার ধারণা, ডিএজি তাঁর কাজটি সঠিকভাবে করেননি৷ আর ডিএজি যেহেতু কাজটি করেননি, তাই সরকার বা রাজনৈতিক চাপের বিষয়টি অনুমান করা যায়৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘পুলিশ প্রতিবেদন ও তদন্তের দুর্বলতা, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দুর্বল অবস্থানের কথা আমরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছি৷ আর এসব কারণে বহু অপরাধী জামিন বা ছাড়া পেয়ে যায়৷ ফলে বিচার-ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ