বইমেলার একটা দৃশ্য দিয়ে শুরু করি৷ স্টলের সামনে প্রচণ্ড ভিড়৷ বই কেনার জন্য লোকজনের হুড়োহুড়ি৷ পুলিশ সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে৷ বাংলাদেশের মানুষকে লাইনে আনার কাজটা সহজ নয়, সবাই জানে৷
বিজ্ঞাপন
পুলিশকে যেতে হলো লাঠিচার্জের পথে৷ সেই লাঠিচার্জ দেখতে দেখতে মনটা একটু খারাপ হয়েছিল, ‘‘এভাবে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বই কেনাটা থামিয়ে দিচ্ছে!'' কিন্তু বই কেনা থামলো কোথায়, উল্টো বরং বিপুল উদ্যমে মানুষ আরও ঝাঁপাচ্ছে৷ লাঠির বাড়ি খেয়ে মাটিতে ছিটকে পড়ছে আবার উঠে দাঁড়িয়ে বই হাতে নিয়ে লাইনে দাঁড়াচ্ছে৷ প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নেবে৷ সেই লেখকের নাম? ঠিক ধরেছেন – হুমায়ূন আহমেদ!
বিষণ্ণ মনটাতে হঠাৎ একটা চিন্তা ঝিলিক দিলো৷ আচ্ছা, এই ছবি দেখলে পৃথিবীর মানুষ ভাববে এই দেশটা কী সংস্কৃতিমুখী! বই কেনার জন্য মার খায়!
যে ছবি দিয়ে পুরো দুনিয়াকে দেখানো যায় যে বাংলাদেশিরা বইয়ের জন্য পাগল সেই দেশের আসল অবস্থা কিন্তু সে রকম নয়৷ বছরের বেশিরভাগ সময় প্রকাশকরা মুখ গোমড়া করে থাকেন৷ একদিন ভর দুপুরে ঢাকার ব্যস্ত মার্কেটের বইয়ের দোকানে গিয়ে কর্মচারীদের তিনজনকেই ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছি৷ পুরো বিষয়টা একটা চক্রের মতো৷ বইমেলায় বই বিক্রি হয় বলে বাকি সময় কেউ আর বইয়ের খোঁজখবর রাখে না৷ মানুষের কাছে বই যে শুধু বইমেলার সময় কেনার জিনিস৷ আবার মানুষ বইমেলার সময় বই কিনে বলে প্রকাশকরা বইও বের করেন শুধু বইমেলাতে৷ প্রতি বছর বইমেলা এলে এই নিয়ে একটা হাহাকার শোনা যায়৷ গণ্য-মান্য, প্রাজ্ঞ-বিজ্ঞ লোকজন সেমিনারে ঝড় ছুটিয়ে দেন, ‘‘মেলাকেন্দ্রিক প্রকাশনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷'' নিজেও যে একটা সময় এর সঙ্গে তাল মেলাইনি, এমন নয়৷ কিন্তু এখন ভেবে দেখলে মাঝেমধ্যে একটা বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই৷ মনে হয়, বইমেলা একদিক থেকে চিন্তা করলে একটা সমস্যা, কিন্তু আরেক দিক থেকে চিন্তা করলে তো দারুণ সুবিধার৷
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬
ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা৷ ইতিমধ্যেই বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যান পরিণত হয়েছে লেখক, প্রকাশক আর পাঠকের মিলনমেলায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
প্রাণ ফিরে পেয়েছে বইমেলা
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রবেশ করতে বইপ্রেমীদের দীর্ঘ সারি৷ পর পর দুই বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতায় কিছুটা ম্লান হওয়া এই বইমেলায় এ বছর প্রাণ ফিরে পেয়েছে ইতিমধ্যেই৷ অমর একুশে গ্রন্থমেলার সাধারণ সময়সূচি প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত৷ তবে ছুটির দিনগুলোয় মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়৷ আর ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এই গ্রন্থমেলা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
নানা সাজে নতুন নতুন বই
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্থাপিত একটা বোর্ডে নতুন বইয়ের প্রচ্ছদ দেখছেন দর্শনাথীর্রা৷ মেলায় প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে নতুন নতুন বই৷ ১৬তম দিন পর্যন্ত মেলা উপলক্ষ্যে প্রকাশিত হয়েছে ৪৬০টি কবিতা, ২৯৯টি উপন্যাস, ২৯৬টি গল্পের বইসহ অগুন্তি বই৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বেড়েছে বইয়ের পরিধি, ব্যাপ্তি
অন্যবারের তুলনায় এবার একুশে বইমেলার পরিধি বেড়েছে৷ বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ছয় হাজার বর্গফুটের ১৫টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়েছে এ বছর৷ একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১১১টি ইউনিট; সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪০টি ইউনিট এবং সব মিলিয়ে মোট ৪০২টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৬৫১টি ইউনিট বরাদ্দ করা হয়েছে৷ এছাড়া সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের অংশটিকে ভাগ করা হয়েছে ১৫টি চত্বরে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বইয়ের জোয়াড়ে ভাসছে সবাই
শুরু থেকেই এ বছরের বইমেলায় দর্শনাথীর সমাগম ভালো৷ তবে সাধারণভাবে ছুটির দিনগুলোতেই দর্শক সমাগম সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে একুশে গ্রন্থমেলায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা
গত বছর মেলা প্রাঙ্গনের অদূরে খুন হয়েছিলেন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়৷ তাই এ বছর বইমেলায় নেয়া হয়েছে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা৷ বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের প্রবেশ পথে মহিলা ও পুরুষদের জন্য বসানো হয়েছে পৃথক ‘সিকিউরিটি চেক’-এর ব্যবস্থা৷ টিএসসি থেকে শুরু করে মেলার ভেতর ও বাইরে বসানো হয়েছে দুই শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা৷ এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বইমেলা মানেই তারুণ্য
বরাবরের মতোই বইমেলায় তরুণদের উপস্থিতিই বেশি৷ বন্ধু, বান্ধবী, এমনকি জোড়ায় জোড়ায় ঘুরছে তরুণ-তরুণীরা৷ তবে মেলায় শুধু ঘোরাঘুরি আর আড্ডাই নয়, তরুণরা বই কিনছেনও প্রচুর৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বেঁচে আছেন হুমায়ূন আহমেদ
বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ গত হয়েছেন কয়েক বছর৷ কিন্তু এখনো জনপ্রিয়তার তুঙ্গে আছেন তিনি৷ মেলার সোহরাওয়ার্দি উদ্যান প্রাঙ্গণে অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নের সামনে তাই সবসময়ই ভিড় লেগে আছে৷
একুশে বইমেলায় গতবছর থেকে সবচেয়ে সুন্দর স্টল কিংবা প্যাভিলয়নের জন্য দেয়া হচ্ছে শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার৷ বইমেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে তাই সাধ্যমতো নান্দনিকতার ছোঁয়া দিতে চেষ্টা করছেন প্রকাশকরা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
গুলতেকিন খানের কবিতা...
বইমেলার সোহরাওয়ার্দি উদ্যান অংশে প্রকাশনা সংস্থা তাম্রলিপির প্যাভিলিয়ন৷ এখান থেকেই প্রকাশিত হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের প্রাক্তন স্ত্রী গুলতেকিন খানের কবিতার বই ‘আজো, কেউ হাঁটে অবিরাম’৷ এটি তাঁর প্রথম বই৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
শোক পরিণত হয়েছে শক্তিতে
জাগৃতি প্রকাশনীর স্টলে ফয়সাল আরেফিন দীপনের প্রতিকৃতির সামনে তাঁর স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি৷ স্বামী হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে তিনি আকড়ে ধরেছেন জাগৃতিকে৷ নানান ঘাত-প্রতিঘাত পার করেও জাগৃতি থেকে এ বছর প্রকাশিত হয়েছে দশটির বেশি বই৷ এছাড়া আরো দশটি বই আছে প্রকাশের অপেক্ষায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বইমেলায় ব্যানারে জাগৃতির স্টল
বই প্রকাশের কারণেই ধমীর্য় উগ্রপন্থিদের চাপাতির কোপে নিহন হন প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন৷ তবে জাগৃতির স্টল ছাড়া পুরো মেলা প্রাঙ্গণে তাঁর কোনো স্মৃতি স্থান পায়নি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
শুদ্ধস্বরের সেই স্টলটা...
মেলার সোহরাওয়ার্দি উদ্যান অংশে প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের স্টল৷ লেখক অভিজিৎ রায়ের ‘সমকামিতা: একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্বিক অনুসন্ধান’ বইটি গতবছর বের হয় এই প্রকাশনা সংস্থা থকে৷ অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের বছর না ঘুরতেই গতবছরের শেষের দিকে উগ্রবাদীদের হামলার শিকার হন শুদ্ধস্বরের মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুল৷ তবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি৷ চিকিত্সা শেষে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে পাড়ি দেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
শুদ্ধস্বরের নতুন বই নেই
টুটুলের প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বর থেকে এ বছর নতুন কোনো বই প্রকাশিত হয়নি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
ব-দ্বীপের স্টল বন্ধ
ধমীর্য় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বইমেলার ব-দ্বীপ প্রকাশনার স্টলটি এ বছর বন্ধ করে দেয় পুলিশ৷ এ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘ইসলাম বিতর্ক' বইটিতে মহানবী (সা) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য আছে, এই অভিযোগে পুলিশ উক্ত প্রকাশনীর প্রকাশকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে৷ বইটির সবগুলো কপিও জব্দ করে নেয়া হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
অটোগ্রাফ প্লিজ!
অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে ভক্তদের অটোগ্রাফ দিচ্ছেন জনপ্রিয় লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল৷ হুমায়ূন আহমেদের পরে তাঁর জনপ্রিয়তাই পাঠকদের কাছে সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য...
বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাঠকদের জন্য স্টল নিয়ে বসেছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা সংস্থা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার
বইমেলা থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করছে বই এবং একুশে বইমেলা বিষয়ক নানা অনুষ্ঠান৷ নতুন বইয়ের খবর, লেখক-প্রকাশকদের সাক্ষাত্কারসহ নানান বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে এ সব অনুষ্ঠানে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
শিশু প্রহর
বইমেলায় শিশুদের জন্যও রয়েছে নানা আয়োজন৷ শুক্র ও শনিবার মেলা শুরু হচ্ছে বেলা ১১টায়৷ এই দু’দিন থাকছে ‘শিশু প্রহর’ নামে শিশুদের জন্য আলাদ সময়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মেলার সঙ্গে সংস্কৃতির মেলবন্ধন
বইমেলা উপলক্ষ্য বাংলা একাডেমি মঞ্চ ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের উম্মুক্ত মঞ্চে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে প্রতিদিন সন্ধ্যায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
20 ছবি1 | 20
একটু ব্যাখ্যা করি৷
এখন দেশের মোট বইয়ের শতকরা ৯০ ভাগ কিংবা তারও বেশি প্রকাশিত হয় বইমেলাকে কেন্দ্র করে৷ মেলার ডেডলাইন ধরতে গিয়ে বাঁধাই, প্রুফ ইত্যাদি কাজে তাড়াহুড়ো থাকে৷ বইয়ের মান অনেক ক্ষেত্রেই থেকে যায় প্রশ্নবিদ্ধ৷ তাছাড়া একসঙ্গে কয়েক হাজার বই বের হয় বলে পাঠকদেরও খাবি খেতে হয় সঠিক বই খুঁজতে গিয়ে৷
এ সবই সমস্যার কথা৷ কিন্তু ধরা যাক, বাংলাদেশে বইমেলা বলে কিছু হয় না, তাহলে কী হতো! প্রথম কথা, বইয়ের প্রকাশ অনেক কমে যেত৷ এখন মেলা উপলক্ষ্যে যে একটা উৎসব হয়, তাতে শরিক হওয়ার জন্যও বই প্রকাশের একটা উৎসাহ তৈরি হয়৷ প্রকাশকদের ক্ষেত্রেও কথা সত্য৷ মেলা হচ্ছে, প্রকাশকদেরও বেশি বই-ভালো বই প্রকাশ করে অন্যদের হারিয়ে দেয়ার একটা তাগিদ থাকে৷ মেলা না হলে এর কিছুই বোধ হয় হতো না৷ আর প্রচার-প্রসার-উৎসব সব কিছু মিলিয়ে মেলা আমাদের সামাজিক জীবনে এমন একটা আলোড়ন তৈরি করে যে বইমেলায় যাওয়াটাকে একটা দায়িত্ব মনে করে শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা৷ বাচ্চাদের চাহিদাও আছে৷ মেলা না হলে সেই তাগিদটুকু থাকত না আর তখন যে এরা যে বছরের অন্য সময় ঘুরে ঘুরে বই কিনতেন এমন গ্যারান্টিও দেয়া যায় না৷
অন্য যেসব ক্ষেত্রে এমন মেলার ব্যবস্থা নেই, যেমন গানের সিডি, সেই ক্ষেত্রে পুরো বছরই সিডি বের হয়, কেনার সুযোগ থাকে, কিন্তু কেউ তেমন একটা কেনে না৷ এখন ই-যুগে সিডির দরকার নেই বলেই বিক্রি হয় না – অনেকে বলবেন, জানি৷ কিন্তু কেন যেন মনে হয়, সেখানেও যদি একটা মেলা থাকত, তাহলে ঠিক বইমেলার মতো একটা অবস্থা তৈরি হতো৷ ঐ একটা সময় গানটা চলত৷ নতুন কী গান বের হলো না হলো এই খোঁজ হতো৷ মিডিয়াও মনযোগ দিতো৷ বই ‘মেলাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে' বলে যে হাহাকার হয়, তার সঙ্গে পুরো একমত তাই বোধহয় হওয়া যায় না৷
হুমায়ূন আহমেদের কিছু দুর্লভ ছবি
বাংলাদেশের প্রথিতযশা লেখক ও কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জীবনের কিছু দুর্লভ ছবি পাবেন এই ছবিঘরে৷ ছবিগুলো আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের ভাগনি শবনম হায়দার শর্মি৷
ছবি: privat
গুলতেকিন যখন সঙ্গী
প্রথম স্ত্রী গুলতেকিনের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ৷ উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর নাতনি ছিলেন গুলতেকিন৷ প্রেম করার কয়েক বছর পর ১৯৭৩ সালে দুজন বিয়ে করেছিলেন৷ এরপর ২০০৩ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়৷
ছবি: privat
বাবা-মার সঙ্গে
বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ৷ হুমায়ূনের বয়স যখন ২৩ বছর তখন ১৯৭১ সালের ৫মে পিরোজপুরের তৎকালীন এসডিপিও ফয়জুর রহমান আহমেদ পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হন৷
ছবি: privat
মায়ের সঙ্গে সব ভাইবোন
মা আয়েশা ফয়েজের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ ও তাঁর পাঁচ ভাইবোন৷
ছবি: privat
সম্প্রসারিত পরিবার
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে মা, বোন ও দুলাভাই সহ অন্যরা
ছবি: privat
ভাইবোনের সঙ্গে
বোন সুফিয়া হায়দার, যাঁকে হুমায়ূন আহমেদ অনেক বইতে শেফু নামে উল্লেখ করেছেন, এবং ছোট ভাই আহসান হাবীবের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ৷
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর শর্মি ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘‘ঈদের সময় বড় মামা যার বয়স যত তার দ্বিগুন সেলামি দিত, মানে আমার বয়স যদি ছয় হতো তাহলে আমি পেতাম ১২ টাকা সেলামি!’’
ছবি: privat
বিয়েতে পালকি
শর্মির বিয়ের সময় নুহাশ পল্লিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ৷ সেসময় পালকির ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি৷
ছবি: privat
নুহাশ পল্লী
নুহাশ পল্লীর অনুষ্ঠানে শর্মির স্বামী আদনান সাদেকের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ৷
ছবি: privat
শুভেচ্ছাপত্র
বিয়ে উপলক্ষ্যে ভাগনি শর্মিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে হুমায়ূন আহমেদের লেখা চিঠি৷
ছবি: privat
এখন জার্মানিতে
ছোট্ট সেই শর্মি এখন অনেক বড় হয়ে গেছেন৷ শর্মির নিজেরই এখন তিনটি মেয়ে রয়েছে৷ স্বামী, সন্তান নিয়ে থাকেন জার্মানির স্টুটগার্টে শহরে৷
ছবি: Adnan Sadeque
11 ছবি1 | 11
শুরুতে হুমায়ূন আহমেদের বই কেনার লাইনের কথা বলছিলাম৷ এটা কাউকে বলে দেয়ার দরকার নেই, বইমেলা নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকেই আসলে হুমায়ূনমেলা হয়ে গিয়েছিল৷ এমনই প্রভাব ছিল তাঁর যে, যাঁরা মেলায় যেতেন, তাঁদের শতকরা ৮০ ভাগের প্রথম লক্ষ্যই থাকত হুমায়ূন আহমেদের একটা বই কেনা, তারপর বাকিটা দেখা যাবে৷ তাঁর অকাল প্রয়াণের পর তাই মেলার ভাগ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল৷ মেলা তবু চলছে, বইপত্র বিক্রিও হচ্ছে, কিন্তু একটা ভাটার টান আছে৷
বছর দুয়েক আগে ফেব্রুয়ারিতে মেলায় যাওয়ার পথে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা৷ মেলায় যাচ্ছি শুনে আফসোসের মতো উচ্চারণ, ‘‘এখন আর মেলায় যাই না৷''
জানতাম হুমায়ূন আহমেদের খুব ভক্ত৷ বললাম, ‘‘হুমায়ূন আহমেদ নেই বলে...?''
‘‘ওগুলো পরে কোনো একসময় কিনে নেব৷ মেলায় গিয়ে ঠ্যালাঠ্যালির দরকারটা কী?''
শেষ কথাটা মাথায় চেপে রইল৷ যেদিন বের হবে সেদিনই কিনতে হবে – এ রকম পাঠক বাংলাদেশে একজনই তৈরি করেছিলেন৷ হুমায়ূন আহমেদ৷ ফলে মেলায় যেতে একদল মানুষ বাধ্য ছিল৷ আর মেলায় গেলে তখন হুমায়ূন আহমেদ শেষ করে অন্য বইও কিনত৷ এখন হুমায়ূন নেই বলে মেলায় যাওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই৷ আর তাই ‘‘অন্য বই পরে কোনো একসময় কেনা যাবে'' ধরে নিয়ে অনেকেই উদাস হয়ে বসে থাকেন৷ খুব সম্ভবত সেই পরের সময়টা আর আসেই না৷ হুমায়ূনের অনুপস্থিতির শূন্যতা মেলাকে এভাবেই ভোগাচ্ছে৷
বিক্রির বাইরে আরেকটা হুমায়ূনী প্রভাবের কথা বলি৷ এটাও একটা গল্প থেকে পাওয়া শিক্ষা৷ এক প্রকাশক একবার আফসোস করে বলছিলেন, ‘‘আমাদের তথাকথিত বড় লেখকরা হুমায়ূন আহমেদের এত নিন্দা-মন্দ করে অথচ এরা জানেও না হুমায়ূন তাদের কী উপকার করছেন৷''
‘‘কীরকম উপকার?'' একটু চমকে গিয়ে জানতে চাই৷
‘‘ধরো যে বছর আমি হুমায়ূনের বই পাই নিশ্চিতভাবে অনেক লাখ টাকার ব্যবসা৷ সে বছর আমি কয়েকটা প্রবন্ধের বই, গবেষণার বইয়ের মতো চাহিদা নেই এরকম লেখকদের বইও বের করতে পারি৷ অথচ এই এরাই হুমায়ূন আহমেদকে পারলে গিলে খায়৷''
হুমায়ূনের এই প্রভাবটাও বই প্রকাশে পড়ছে৷ এখনও তার কিছু অপ্রকাশিত বই, সমগ্র ইত্যাদির টান আছে বলে খুব বড় আকারে ধাক্কাটা টের পাওয়া যাচ্ছে না৷ কয়েক বছর পর ধাক্কাটা বড় হলে কী হয় সেটা দেখার বিষয়৷''
বইমেলা এলে আরেকটা বিষয় নিয়ে ধুন্দুমার আলোচনা হয়৷ জনপ্রিয় বা বাজারি লেখক৷ বিজ্ঞাপন দিয়ে এরা বইয়ের দুনিয়া শেষ করে দিচ্ছেন – এরকম অভিযোগ৷ অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগটা সত্য৷ বই বিক্রির জন্য কারো কারো নির্লজ্জ তৎপরতা লজ্জা পাওয়ার মতোই, কিন্তু আমি বরং অন্য আরেকটা ব্যাপার নিয়ে কৌতূহল বোধ করি৷ সারা বছর পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিনে এক ধরণের লেখকদের লেখা ছাপা হয়৷ তাঁরা ভালো লেখক, প্রতিষ্ঠিত কবি-সাহিত্যিক৷ কিন্তু বইমেলার সময় তাঁদেরকে ছাপিয়ে বিক্রির তালিকায় উঠে যান আরেক দল লেখক৷ সস্তা-বাজার-বিজ্ঞাপন-অলেখক ইত্যাদি বলে যতই নাক সিঁটকান, একটু ভেবে দেখলে এটাও কি অবাক করার ব্যাপার নয় যে যাদের গল্প-কবিতা সারা বছর লোকে পত্রিকায় দেখে, তাদের প্রতি মানুষ আগ্রহ বোধ করে না?
সারা বছর যাদের লেখা পড়ে, কয়েক দিনের বিজ্ঞাপনের তোড়ে তাদের কথা ভুলে যাবে! আরও মজার ব্যাপার এই জনপ্রিয়দের বেশিরভাগই মানুষের মন জয় করেছেন অন্য কিছু লিখে৷ পত্রিকায় কলাম কিংবা রিপোর্ট৷ জাফর ইকবাল দেশে ফেরার পর তার জনপ্রিয়তা এক লাফে আকাশ ছুঁয়েছে, যেখানে তাঁর পত্রিকার কলামের বড় একটা অবদান৷ আনিসুল হক বা সুমন্ত আসলামরা পত্রিকায় স্যাটায়ার লিখে জনপ্রিয় হয়েছেন এবং পরে সেই জনপ্রিয়তাকে তাঁরা উপন্যাস বা বই লেখার দিকে টেনে এনেছেন৷ এর অর্থ কি এটাও দাঁড়ায় না যে, যারা গল্প-উপন্যাস সারা বছর লিখেন, তাঁদের লেখা ঠিক মানুষ পর্যন্ত পৌঁছায় না?
সস্তা-বাজার-বিজ্ঞাপন এই জিগিরের পাশাপাশি বেশিরভাগ মানুষের সঙ্গে মূল ধারার সাহিত্যিকদের এই যোগাযোগের ঘাটতিটা নিয়েও বোধহয় আমাদের ভাবা উচিত৷ সাহিত্য, গল্প, কবিতা তো মানুষের জন্য৷ মানুষ থেকে দূরে সরে গিয়ে মহৎ সৃষ্টি দিয়ে কী-ই বা লাভ!
আর তাই মনে হয়, বইমেলা, বই, সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে কেমন যেন একটা ধাঁধাঁর চক্রে আটকে আছি আমরা৷ চক্রটা ভাঙা দরকার৷