1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুবিধা দেওয়ার পরেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ আগস্ট ২০২২

গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ ঋণখেলাপিদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ৷ আগস্টে পাওয়া হিসেবে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বেড়ে গেছে৷

চলতি আগস্ট মাসে খেলাপি ঋণের সর্বশেষ যে পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া গেছে তাতে তা সওয়া লাখ কোটি টাকা ছড়িয়ে গেছে
চলতি আগস্ট মাসে খেলাপি ঋণের সর্বশেষ যে পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া গেছে তাতে তা সওয়া লাখ কোটি টাকা ছড়িয়ে গেছেছবি: DW

বিশ্লেষকরা বলছেন রাজনৈতিক কারণে খেলাপি ঋণ আদায়ে আদায় হচ্ছেনা৷ এতে অর্থনীতির বড় ক্ষতি৷

চলতি আগস্ট মাসে খেলাপি ঋণের সর্বশেষ যে পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া গেছে তাতে তা সওয়া লাখ কোটি টাকা ছড়িয়ে গেছে৷ গত ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিলো এক লাখ তিন হাজার কোটি টাকা৷ সর্বশেষ হিসেবে জুন মাসে তার পরিমাণ হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা৷

যেভাবে বাড়ছে:
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলছে, চলতি ২০২২ সালের জুন মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা৷ এটি মোট বিতরণ করা ঋণের আট দশমিক ৯৬ শতাংশ৷ যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ৷

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাই মাসে ঋণখেলাপিদের জন্য বড় ধরনের ছাড় দেয়৷ ঋণের শতকরা আড়াই থেকে চার শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া হয়৷ এর আগে এটা ছিল শতকরা ১০ শতাংশ৷

বাংলাদেশ ব্যাংক করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্ষতিতে পড়া অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ঋণ পুনঃতফসিলে এই ছাড় দেয়৷ আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার যুক্তি দেখায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কিন্তু বাস্তবে ফল হচ্ছে উল্টো৷ খেলাপি ঋণ আরো বাড়ছে৷

চলতি বছরের ৩১ শে মার্চ শেষে দেশে মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা৷ সর্বশেষে তিন মাসে (মার্চ থেকে জুন) ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা৷ আর বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চে) বেড়েছিল ১০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা৷ আর গত এক বছরে ২০২১ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা৷ ২০২১ সালের জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা৷ অন্যদিকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ তিন হাজার ২৭৩ কোটি টাকা৷ সর্বশেষ ছয় মাসে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা৷

খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক, দায় অল্প কয়েকজনের

This browser does not support the audio element.


এই হিসাবেও ফাঁকি

খেলাপি ঋণের এই হিসাবের মধ্যেও ফাঁকি আছে৷ কারণ এখানে পুনঃতফসিল করা ঋণের হিসাব দেখানো হয়না৷ ওই ঋণ অবলোপ করা হয়৷ পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘খেলাপি ঋণের যে হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক দেয় আইএমএফের হিসেবে তার পরিমাণ বস্তবে দ্বিগুণের কম নয়৷ কারণ পুনঃতফসিল করা ঋণ রেগুলার ঋণ হিসেবে দেখানো হয় ৷ আসলে ওই টাকা আর কখনো ফেরত পাওয়া যাবেনা৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘‘ ঋণখেলাপি হতেই পারে৷ কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আলাদা৷ এখানে নিয়ম নীতি না মেনে রাজনৈতিক প্রভাবে ঋণ দেয়া হয়৷ আর সেই ঋণ যারা নেন তারা আর ফেরত দেন না৷ আমরা খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক দেখলেও এর দায় কিন্তু অল্প কয়েকজনের৷ ব্যাংকিং খাত তাদের নিয়ন্ত্রণে৷ তারা এই খাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন৷ ফলে প্রকৃত যারা বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন৷ অর্থনীতি সংকটে পড়ছে৷''

মূল ঋণ নিয়েছে অল্প কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান: আহসান মনসুর

This browser does not support the audio element.

খেলাপি ঋণ কি কমবে?

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘যে খেলাপি ঋণের  কথা বাংলাদেশ ব্যাংক বলে, যাদের কথা বলে তাদের একটা বড় অংশ বোকাসোকা৷ তারা হয়তো যৌক্তিক কারণেই খেলাপি হয়েছেন৷ তাদের ঋণের পরিমাণও অল্প৷ কিন্তু মূল ঋণ নিয়েছে অল্প কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান৷ তাদের আইনের নানা সুবিধা দিয়ে ঋণখেলাপি হিসেবে দেখানো হয়না৷ তারা যে টাকা নিয়েছেন তা ফেরতও পাওয়া যাবেনা৷''
ফলে এখন ব্যাংকে টাকার সংকট৷ আর্থিক খাত ছোট হয়ে যাচ্ছে৷ জিডিপির অনুপাতে ব্যাংকে যে টাকা থাকা দরকার তা নেই৷ ফলে যাদের প্রকৃতই প্রয়োজন তারা ঋণ পাচ্ছেন না বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ৷ তার কথায়, ‘‘রাজনৈতি বিবেচনায় যারা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন তাদের ধরা সম্ভব নয়৷ সরকার যে নীতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের যে পলিসি তাতে খেলাপি ঋণ বাড়তেই থাকবে৷''

এই দুই জন অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ঋণখেলাপিদের নতুন সুবিধা দেয়ায় ঋণ আদায় হবেনা৷ বরং তারা ঋণখেলাপির তালিকা থেকে নিজেদের নাম কাটিয়ে ওই টাকা না দেয়ার নতুন পথ খুঁজে পাবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ