সুর মানেই প্রাণের স্পন্দন৷ এবং সুরই পারে ভাষার সীমানা পেরোতে৷ মানুষের বাজানো সুর যে শুধু মানুষকেই উদ্বেলিত করে, তা নয়, প্রাণীরাও অনুভূতির দিক দিয়ে কোনো অংশেই কম নয়৷
বিজ্ঞাপন
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এমন দুটি উদাহরণ৷ প্রথম অংশে দেখা যায় এক বিশেষ ধরনের বাঁশির সাথে সুর মেলাচ্ছে দুটি ডলফিন৷ রীতিমতো স্কেল ও তাল মিলিয়ে গান গাচ্ছে তারা৷
পরের অংশের মূল চরিত্র দুটি হাতি৷ বেহালার সুরে শুঁড় নেড়ে নেড়ে তালে তালে মাথা দোলাতে দেখা যায় হাতি দুটিকে৷
অবশ্য এই দুই ঘটনা কোথায় ঘটেছে এবং যাঁরা বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন, তাঁরা কারা, সে বিষয়ে ভিডিওতে কিছু উল্লেখ করা হয়নি৷ কিন্তু ভিডিওর এই ডলফিন ও হাতিরা হয়ে গেছে অনলাইন তারকা৷
এনটিডিলাইফ নামের এক ফেসবুক পেজ থেকে ১০ মাস আগে আপলোড করা ভিডিওটি এরই মধ্যে দেখেছেন প্রায় দেড় কোটি মানুষ৷ ১১ হাজার কমেন্টে বেশিরভাগ মানুষ বাদকদের সুরের প্রশংসা এবং প্রাণীদের তা উপভোগের কথা বলছেন৷
তবে কেউ আবার এ নিয়ে আনন্দ না পেতে সতর্ক করছেন৷ তাঁদের মতে, এইসব প্রাণীকে বন্য জীবন থেকে ধরে এনে পোষ মানানোও এক ধরনের বর্বরতা৷
এডিকে/এসিবি
সংগীত সুস্থ হতে সাহায্য করে
সংগীত মানুষকে আনন্দ দেয় – সেকথা কম-বেশি সকলেই জানি৷ তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে একসাথে সংগীতচর্চা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে রোগীকে সুস্থ করতেও ভূমিকা রাখে৷ আরো পাবেন এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: Hochschule für Musik Karlsruhe
সংগীতের আসর
গান শোনার সময় ‘মোটিভেশন হরমোন’ ডোপামিন এবং ‘সুখ হরমোন’ এন্ড্রোফিন’ মস্তিষ্কে একত্রিত হয়৷ গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো সংগীতদল যখন কোরাসে গান গায়, তখন সেই গান উপভোগ করার সময় এক ধরণের বিশেষ অনুভূতি হয়৷ এই অনুভূতি মানুষকে নিরাপত্তা দেয় এবং মনোযোগও বাড়ায়৷ ফলে ‘ইমিউন সিস্টেম’ আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে৷
ছবি: B. Maas
‘ইমিউনথেরাপি’ হিসেবে গান গাওয়া
বেশ কয়েকটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, কোনো সংগীতদলে গান গাওয়ার পর রোগী অনেক ভালো বোধ করেন৷ শুধু তাই নয়, সংগীত শ্বাস-প্রশ্বাসের নালীকে উজ্জীবিত করে ‘স্ট্রেস’ কমায় এবং তার পাশাপাশি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ‘ইমিউন সিস্টেম’-কেও বাড়িয়ে দেয়৷
ছবি: DW/A. Slanjankic
গান গেয়ে ভালো থাকা
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষক দল বয়স্ক মানুষদের, যাঁরা গায়কদলে গান করেন এবং যাঁরা গান করেন না – তাঁদের নিয়ে একটি সমীক্ষা চালান৷ সমীক্ষা চলাকালীন সখের গায়কদের কম ঔষুধের প্রয়োজন হয় এবং ডাক্তারের কাছেও কম যেতে হয়৷ অথচ যাঁরা গায়কদলের সাথে জড়িত ছিলেন না, তাঁদের অনেক বেশিবার চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে৷
ছবি: picture alliance / dpa
পিয়ানো
‘‘স্ট্রোক হবার পর অনেকেরই আঙুলের খানিকটা অংশ অবশ হয়ে যায়৷ কিন্তু তাঁরা যদি পিয়ানো বাজান, তাহলে আস্তে আস্তে একটি একটি করে আঙুলে শক্তি ফরে আসতে পারে৷ অবশ্য এর জন্য আগে থেকেই পিয়ানো বাজানো জানতে বা শিখতে হবে না৷’’ এ কথা বলেন, জার্মানির হ্যানোভার শহরের মেডিকেল কলেজের সংগীত মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ডা. একার্ট আল্টেনম্যুলার৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
ইচ্ছাশক্তি বেড়ে যায়
পিয়ানো বাজানোর সময় প্রতিবারই হাতের আঙুলে তার প্রতিফলন ঘটে৷ বাজানোর সময় আঙুলের নড়াচড়া এবং শব্দধ্বনি রোগীর অনুভূতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ এর কারণে রোগীর ‘মোটিভেশন’ বা ইচ্ছাশক্তি বেড়ে যায় এবং স্ট্রোকে ভীত হয়ে যাওয়ার ভাব কেটে যেয়ে৷ শুধু তাই নয়, সংগীত বা গানের মধ্যে বেঁচে থাকার আনন্দও খুঁজে পান রোগীরা৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
হাঁপানি রোগ
সংগীত ‘ক্রনিক’ ব্যথা, ভয়, অশান্তি – এ সব কমিয়ে মন ভালো করে দেয়৷ যাঁরা বুড়ো বয়সে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন, তাঁরা সমাজ থেকে কিছুটা দূরে সড়ে যান৷ অথচ সংগীতের মাধ্যমে ‘ডিমেনশিয়া’-র রোগীদের কাছে যাওয়া যায়, করা যায় বন্ধুত্ব৷ এছাড়া স্যাক্সোফোন বা বাঁশি বাজানোর মধ্য দিয়ে শ্বাসনালীর পেশি শক্ত হয় ও ফুসফুসের কাজ বেড়ে যাওয়ায় ‘অ্যাজমা’ রোগীরাও উপকৃত হতে পারেন৷