‘গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বারবার বিচ্যুত হয়েছি’
সমীর কুমার দে ঢাকা
৩০ ডিসেম্বর ২০২১
বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বছর৷ তবে এই বছরটি ছিল একেবারেই ভিন্ন৷ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে চলছে নানা হিসাব মেলানোর কাজ৷ এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের অর্জন, ব্যর্থতা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ৷
বিজ্ঞাপন
প্রাপ্তি অনেক, কিন্তু অপ্রাপ্তি কী? কোথায় কোথায় এখনও উন্নতি দরকার? সেসব নিয়েই ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন অধ্যাপক ড. রওনক জাহান৷
ডয়চে ভেলে : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে দেশ৷ এই ৫০ বছরে বাংলাদেশের বড় অর্জন কী?
অধ্যাপক ড. রওনক জাহান : প্রথমত, আমরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে অনেক অর্জন করেছি৷ আমরা যখন স্বাধীন হয়েছিলাম, তখন আমাদের দুঃশ্চিন্তা ছিল আমাদের তো কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নেই, তাহলে এত কোটি মানুষকে আমরা কিভাবে খাওয়াবো? তখন তো আমাদের তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হয়েছিল৷ আমরা কিন্তু ধাপে ধাপে উন্নতি করেছি৷ অর্থনৈতিক সূচক যদি আমরা দেখি, আমাদের যে পরিমাণ মানুষ গরীব ছিল, তার চেয়ে আমরা অনেকটাই কমাতে পেরেছি, জিডিপিও অনেক বাড়াতে পেরেছি৷ স্বাস্থ্য, শিক্ষাখাতেও আমাদের উন্নতি হয়েছে৷ তখন আমাদের গড় আয়ু ছিল ৫০ বছরের কম, এখন সেটা ৭০ বছরের বেশি৷ আমাদের জন্য আনন্দের খবর হচ্ছে, স্বাধীনতার সময় আমরা অর্থনৈতিক ও সমাজিক সব সূচকেই পাকিস্তানের চেয়ে পিছনে ছিলাম৷ এখন প্রায় সব সূচকেই আমরা তাদের ছাড়িয়ে গেছি৷ সব মিলিয়ে আমি বলব, ৫০ বছর উদযাপনে আমাদের অনেক কিছুই আছে৷
এই ৫০ বছরে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কী?
সব থেকে বড় ব্যর্থতা যেটা বলব, সুশাসনে আমরা কখনোই আগাতে পারছি না৷ এর সঙ্গে আমি বলব, স্বাধীনতার শুরুতেই আমরা গণতান্ত্রিক দেশ শুরু করেছিলাম৷ সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে আমরা বারবার বাইরে পড়ে যাচ্ছি৷ অর্থনৈতিক ও সমাজিক ক্ষেত্রে যেমন আমরা ক্রমান্বয়ে উন্নতি করেছি, কিন্তু সুশাসন ও গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বারে বারে পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছি এবং আমরা পিছিয়ে পড়ছি৷ এই দু'টো ক্ষেত্রে আমাদের বিপরীত যাত্রা৷
‘আমি চাইব, মানবিক ও সহনশীল একটি সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক’
দেশের উন্নয়নের সঙ্গে জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন কতটা হয়েছে?
উন্নয়নের সুফল অনেক সময় জনগোষ্ঠীর সবার জন্য সমান হয় না৷ আমরা যে সমস্ত পরিসংখ্যান বলছি, যেমন মাথাপিছু আয়, এটা কিন্তু গড় হিসাব৷ এর সঙ্গে যদি আমরা দেখি ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য, সেটা কিন্তু ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে৷ সবারই ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু যারা অনেক ধনী তারা আরও বেশি ধনী হয়েছে৷ বাংলাদেশ তো একটা ছোট দেশ৷ আমাদের যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেটার জন্য যারা শ্রমিক বা অভিবাসী তারা খুব কষ্ট করে আয় করছেন৷ তারা অনেক শোষণ বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন৷ আমরা যে দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে বেরিয়ে আসছি, সেখানে এই গার্মেন্টস শ্রমিক বা বিদেশ থেকে যারা টাকা পাঠাচ্ছেন তাদের একটা বড় অবদান রয়েছে৷ আমরা যদি দেখি, গার্মেন্টস সেক্টরে আমাদের পরে শুরু করে ভিয়েতনাম এগিয়ে গেছে৷ কম্বোডিয়াও এগিয়ে যাচ্ছে৷ ওদের শ্রমিকেরা কিন্তু আমাদের শ্রমিকদের থেকে বেশি বেতন পাচ্ছে৷ বিদেশে যারা বড়লোক তারা তো আর টাকা পাঠাচ্ছে না৷ কিন্তু যারা টাকা পাঠাচ্ছে তারা গরিব, কিন্তু তারা দেশে ও বিদেশে নানা হয়রানির শিকার হন৷
৫০ বছরে রাজনীতির গতিপথ কি বদলেছে?
স্বাধীনতার উত্তরকালে রাজনীতিতে একটা মূল্যবোধ ছিল, চেতনা ছিল যে আমরা একটা গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক দেশ হবো৷ তখন যারা রাজনীতি করতেন তারা অনেক সংগ্রাম করে এসেছেন৷ ৫০ বছর পর এসে আমরা দেখছি, অধিকার বা মূল্যবোধের জন্য যে রাজনীতি সেটা না করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি করা হচ্ছে এবং ক্ষমতায় গিয়ে তারা টাকা পয়সা বানাচ্ছেন৷ আগে গ্রামের কিংবা শহরের সাধারণ মধ্যবিত্তেরা রাজনীতি করতেন এখন খুব বড়লোক, ব্যবসায়ি বা অবসরপ্রাপ্ত আমলা বা সামরিক কর্মকর্তারা যাদের অনেক টাকা পয়সা আছে তারা রাজনীতি করছেন৷ এখনকার রাজনীতির সঙ্গে টাকা পয়সা অনেকটা জড়িয়ে গেছে৷
নির্বাচনই কি গণতন্ত্র উন্নয়নের একমাত্র পরিমাপক?
নির্বাচন একটা পরিমাপক৷ নির্বাচন ছাড়া কিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার বদল সম্ভব? এর বাইরেও বাকস্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ আইনের শাসন এবং আইনের প্রয়োগ সবার জন্য সমান হওয়া উচিৎ৷ পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ যেসব সূচক দিয়ে গণতন্ত্রকে মাপা হয় তারা কোনোটাতেই আমরা ক্রমাগত উন্নতি করতে পারছি না৷ একটু উন্নতি কখনও হলেও পরক্ষণেই আবার পড়ে যাচ্ছে৷
নির্বাচন সুষ্ঠু হলেই কি মানুষের বাক-স্বাধীনতা বেড়ে যায়?
নির্বাচনটা কেন রাখা হয়েছে? ক্ষমতার বদল যেন শাস্তিপূর্ণ উপায়ে হয় এবং সবাই মেনে নেয়৷ সেটার জন্য তো আর কোন উপায় নেই৷ এই কারণে গণতান্ত্রিক দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ ভোটে যারা জিতবে তারা দেশ শাসন করবে৷ যে কোন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে বাক স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সংবিধানে বাক স্বাধীনতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে৷ বাংলাদেশের সংবিধানেও এটা আছে৷
বৈশ্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা কি খুব বেশি নিচের দিকে?
বৈশ্বিক বিবেচনায় আমাদের থেকে উপরেও অনেক দেশ আছে, নিচেও অনেক দেশ আছে৷ আমরা এখন দেখছি, পৃথিবীর অনেক জায়গায় বাকস্বাধীনতা অনেক সংকটে পড়েছে৷ শুধু যে সরকারের চাপে সংকটে পড়েছে তা নয়, সামাজিক মাধ্যমেও অনেক সময় ভুয়া তথ্য দেওয়া হচ্ছে৷ সরকারের বাইরেও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি হুমকি ধামকি দেন৷ ফলে এখন বাক স্বাধীনতা অনেক রকম থ্রেটের মধ্যে পড়েছে৷ উপরে কে, নিচে কে সেটা না দেখে আমাদের আকাঙ্খা একটু উঁচু মাত্রায় রাখতে হবে৷ আমাদের অর্থনীতি উন্নত দেশের মতো হবে, এটা তো একটা আকাঙ্খার অংশ৷ তেমনি আমাদের দেশের মানুষের আকাঙ্খা থাকবে, আমরা স্বাধীনভাবে, মুক্তভাবে কথা বলতে পারব৷
উন্নয়ন আর গণতন্ত্র কি একসঙ্গে এগুতে পারে?
অবশ্যই পারে৷ এটা নিয়ে ৫০ এর দশক থেকে নানা ধরনের কথাবার্তা হয়েছে৷ এটা কখনোই প্রমাণ করা যায়নি যে, উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র একটা বাধা৷ অবশ্যই অনেক অগণতান্ত্রিক দেশেও উন্নয়ন হয়েছে, আবার অনেক গণতান্ত্রিক দেশেও উন্নয়ন হয়েছে৷ কিন্তু মানুষ উন্নয়নও চায়, গণতন্ত্রও চায়৷ একটার জন্য আরেকটা হবে না, তা নয়৷ এদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই৷ বৈজ্ঞানিক কোন গবেষণায়ও সেটা পাওয়া যায়নি৷
সামনের দিনে বাংলাদেশকে আপনি কিভাবে দেখতে চান?
আমাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন হোক৷ আমি আমার দেশকে অবশ্যই গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখতে চাইব৷ বিশেষ করে আমি চাইব, মানবিক ও সহনশীল একটি সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক৷
২০২১ সাল: যে কারণে মনে রাখবেন
নানা কারণেই ২০২১ সাল জায়গা করে নিবে মহাকালে৷ বাংলাদেশসহ বিশ্ব আলাদা করে মনে রাখবে বছরটিকে৷ এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে ছবিঘরে৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Zuma/picture alliance
অক্সিজেন সংকট
২০২১ সালের শুরুর প্রান্তিকেই করোনার নতুন ধরন ডেলটার প্রকোপে ভয়াবহ সংকটে পড়ে ভারত৷ অক্সিজেনের জন্য মানুষের হাহাকার, হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম পরিস্থিতি গোটা বিশ্বকে নাড়া দেয়৷ মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত দুই লাখের বেশি মানুষ দেশটিতে প্রাণ হারান৷ পরবর্তীতে অক্সিজেন সংকট ও চিকিৎসা বিপর্যয় দেখা দেয় লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতেও৷
ছবি: Naveen Sharma/ZUMAPRESS/picture alliance
সবার জন্য কোভিড টিকা
২০২০ সালের শেষ দিকে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়৷ শুরুতে অগ্রাধিকারপ্রাপ্তদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও ২০২১ এর প্রথম প্রান্তিকেই সবার জন্য টিকা দেয়া শুরু করে দেশগুলো৷ আর বছরের শেষ প্রান্তিকে এসে শুরু হয় তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার প্রদান৷ বাংলাদেশ ২৭ জানুয়ারি প্রথম করোনার টিকাদান শুরু করে৷ ডিসেম্বরের শেষে শুরু হয় বুস্টারও৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Zuma/picture alliance
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার
২০২০ সালের বেশিরভাগটাই কেটেছে লকডাউনে৷ ২০২১ সালে এসে ঘুরতে শুরু করে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা৷ বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ সালের চার দশমিক সাত শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি কাটিয়ে বিদায়ী বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতি পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ উর্ধমুখী হবে৷ আইএমএফ এর হিসাবে চলতি অর্থবছরে ৬.৬% প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বাংলাদেশ৷
ছবি: picture alliance / ASSOCIATED PRESS
স্টেডিয়ামে দর্শক
প্রায় দেড় বছর পর স্টেডিয়ামে দর্শকদের সামনে খেলাধুলার আসর শুরু হয় ২০২১ সালে৷ জুনে ওয়েম্বলিতে ইউরো ২০২০ এর ফাইনাল উপভোগ করেন ষাট হাজার দর্শক৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজিত হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ৷ এক বছর অপেক্ষার পর টোকিওতে বসে অলিম্পিকের আসর৷
ছবি: Laurence Griffiths/REUTERS
ক্যাপিটলে রায়ট
৬ জানুয়ারি৷ যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের জয়ের অনুমোদনের প্রস্তুতি চলছিল কংগ্রেসে৷ তার আগেই ক্যাপিটল হিলে ট্রামপন্থিদের অভূতপূর্ব হামলার ঘটনাটি ঘটে৷ একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন সেই রায়টে প্রাণ হারান৷ অভিশংসনের মুখোমুখি হন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Brent Stirton/Getty Images
সরকার বদল
ট্রাম্প অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জো বাইডেন৷ ১৬ বছরের শাসনভার ছেড়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ সেপ্টেম্বরের চ্যান্সেলর নির্বাচনের পর দেশটিত গঠিত হয় নতুন জোট সরকার৷ ম্যার্কেলের স্থলাভিষিক্ত হন সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ বছরের শেষদিকে ৩৫ বছরের বামপন্থি গাব্রিয়েল বরিস চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
বিশ্ব রাজনীতি
ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল চলতি বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা৷ মে মাসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের হামাসের মধ্যে চলে ১১ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ৷ আগস্টে আফগানিস্তান থেকে সবশেষ সেনা গুটিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো৷ ২০০১ সালের পর আবারো ক্ষমতা দখলে নেয় তালেবানরা৷ অক্টোবরে সুদানের প্রধানমন্ত্রীকে বন্দি করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
পরিবেশ বিপর্যয় ও কপ ২৬
২০২১ সালে অস্বাভাবিক দাবানলে পুড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, তুরস্ক৷ অভূতপূর্ব বন্যা দেখা দিয়েছে চীন, জার্মানিতে৷ এমন বাস্তবতায় স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হয় জাতিসংঘের ২৬তম জলবায়ু সম্মেলন৷ সেখানে কার্বন নির্গমন দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে সম্মত হয় সব দেশ৷ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তি৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP POOL
বাংলাদেশের ৫০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের অর্ধশত বছর পূর্তি ছিল ২০২১-এ৷ মার্চে ঢাকায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে অংশ নেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা৷ মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে তখন ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে৷ পরে হেফাজতে ইসলামকে দায়ী করে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের গ্রপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷
ছবি: Mahmud Hossain Opu/AP Photo/picture alliance
এলডিসি থেকে উত্তরণ
চলতি বছর বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ৷ এর মধ্য দিয়ে তিনটি শর্তের সবকটি পূরণ করে ২০২৬ সালে এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হবে বাংলাদেশ৷
ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS
আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ কান চলচ্চিত্র উৎসবের আঁ সার্তে রিগা ক্যাটাগরিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিদায়ী বছরে৷ বাংলাদেশ থেকে কোনো চলচ্চিত্র কানের মূল মঞ্চে জায়গা করে নেয়ার এটি প্রথম ঘটনা৷ ২০২১ সালের র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী৷ যুক্তরাষ্ট্রের নাসার স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের একটি দল৷
ছবি: Zbaer Ahmed/DW
সাম্প্রদায়িক হামলা
কুমিল্লায় দুর্গাপূজার একটি মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে৷ ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় আটটি মন্দিরে হামলার পর ২৩ জেলায় শতাধিক মন্দির ভাঙচুর হয় ও চারজন মারা যান৷ ১৭ অক্টোবর রংপুরের পীরগঞ্জে তিনটি গ্রামে হামলাকারীদের দেয়া আগুনে পুড়ে যায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি৷ মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার অভিযোগে ইকবাল হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
ছবি: bdnews24.com
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
১২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানবাধিকারের লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (ব়্যাব) ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়৷ ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় পুলিশের বর্তমান প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে৷ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ঢাকা৷ মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
পানিতে পুড়ে মৃত্যু
২৪ ডিসেম্বর ঝালকাঠিতে সুগন্ধা নদীতে যাত্রীবাহী একটি লঞ্চে বিস্ফোরণের পর ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে৷ হাজারো যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন৷ মধ্যরাতের অগ্নিকাণ্ডে নদীতেই পুড়ে মারা যান অন্তত ৪০ জন৷ তাদের অনেকেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ছুটি কাটাতে রওনা হয়েছিলেন৷ বাংলাদেশে বছরের শেষটা ছিল এমনই মৃত্যুর বিষাদে৷
ছবি: AFP
যাদের হারালাম
২০২১ সালে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন বাংলাদেশের কবরী, ওয়াসিম, এটিএম শামসুজ্জামান, ফকির আলমগীর, ড ইনামুল হক, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, মওদুদ আহমেদ, রাবেয়া খাতুন ও হাসান আজিজুল হক৷ বুদ্ধদেব গুহ, শঙ্খ ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, দিলীপ কুমার, মিলখা সিংয়ের মতো গুণীজনদের হারিয়েছে ভারত৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাংবাদিক ল্যারি কিং, প্রিন্স ফিলিপ ও সম্প্রতি ডেসমন্ড টুটুর মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছে বিশ্ব৷
ছবি: AP/picture alliance
নতুন ধাক্কা ওমিক্রন
২০২১ সালকে খুব একটা স্বস্তিতে বিদায় জানাতে পারছে না বিশ্ব৷ বছরের শুরুর অর্ধেক বিশ্বকে বিপর্যস্ত করেছে ডেলটা, শেষটা হচ্ছে ওমিক্রনে৷ করোনার নতুন এই ধরন ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, আরোপ করা হচ্ছে লকডাউন৷ তার মধ্যে বেড়ে চলছে জনরোষও৷