‘দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলাম ও গণতন্ত্র’
১২ অক্টোবর ২০১২সম্প্রতি ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো মঞ্চে ইসলাম ধর্মের মহানবীর অবমাননার অভিযোগ ও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসলামি বিশ্বের অংশবিশেষ৷ এমনই এক প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ফ্রান্সের এক্স-অঁ-প্রোভঁস'এ আয়োজিত ‘দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলাম ও গণতন্ত্র' শীর্ষক আলোচনাচক্রে অংশগ্রহণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ৷
ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক আহমেদ সামগ্রিকভাবে মুসলিম সমাজে সহনশীলতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন৷ তাঁর মতে, যে কোনো দেশে ও সমাজে কিছু চরমপন্থী সব সময়েই থাকে৷ তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্ক ও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, তারা কেন এত দাপট দেখাবার সুযোগ পায়? এর পেছনে সহনশীলতার একটা ভূমিকা থাকে৷ ‘‘এখানে আমি মনে করি, বিভিন্ন রাষ্ট্র এই সহনশীলতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিনিয়োগ করতে বড় আকারে ব্যর্থ হয়েছে৷ কোনো ছবি ছাপালে নিন্দা করা যেতে পারে, কিন্তু নিন্দা করতে গিয়ে মানুষ মেরে ফেলা, ভাঙচুর করা কোনো ধর্মের অংশ হতে পারে না'' বলেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ৷
হাতে গোনা চরমপন্থীদের দৌরাত্ম্যের মাঝে মুসলিম সমাজের ‘সাইলেন্ট মেজরিটি' বা বৃহত্তর সমাজের নীরবতার সমালোচনা বার বার শোনা যায়৷ অধ্যাপক আহমেদ বিষয়টির বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বললেন, প্রথমত হিংসার মুখে সাধারণ মানুষ সামনে আসতে চায় না৷ অন্যদিকে মুসলিম সমাজ – বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সমাজে ইসলামি শিক্ষা বা জ্ঞান চর্চার বড় রকমের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে৷ এই অবস্থায় বিতর্কের সময় সমাজের বড় অংশ কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল – তা বুঝতে পারছে না৷ তখন তারা সংখ্যালঘু উগ্রপন্থীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েন বলে মনে করেন অধ্যাপক আহমেদ৷ তাঁর মতে, ইসলামি ও আরব সভ্যতার মধ্যে সহনশীলতার যে শিক্ষা আছে, সেগুলি আরও তুলে ধরা দরকার৷
আরব বসন্তের পর মিশর, টিউনিশিয়া ইত্যাদি দেশে গণতান্ত্রিক সরকার কাজ শুরু করেছে৷ সেখানে গণতন্ত্র, ইসলাম ও সহনশীলতার বিকাশ কতটা দেখা যাচ্ছে? অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করিয়ে দেন যে, আদি গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে আরব ও ইসলামি সভ্যতার বিশাল অবদান ছিল৷ তাঁর ভাষায় ‘‘আজ আমরা যাকে সুশীল সমাজ বলি, যাকে আরবি ভাষায় ‘জামা-ই-মাদানি' বলে, তা আসলে আরব ও ইসলামি সভ্যতারই একটি অবদান৷'' এতকাল আরব বিশ্বে রাষ্ট্রের স্বৈরাচারী কাঠামোয় তার বিকাশ ঘটতে পারে নি৷ রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ফলে সেখানে এখন সুশীল সমাজের বিকাশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ কিন্তু ইসলামি ব্রাদারহুডের মতো দল যদি তাদের পূর্বসূরি হোসনি মুবারক বা বেন আলির মতো সুশীল সমাজকে কোণঠাসা করে ফেলে, তাহলে স্বাভাবিক কারণে গণতন্ত্র ব্যাহত হবে এবং স্থিতিশীলতা আসবে না৷ সঠিক দিশায় চললে আরব বসন্ত সার্থক হতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ৷
সাক্ষাৎকার: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ