1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সুষ্ঠু' বলা পর্যবেক্ষকেরই নির্বাচন নিয়ে ঘোর সন্দেহ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৩ জানুয়ারি ২০১৯

জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পর ‘সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন'-এর প্রতিনিধি বলেছিলেন, ‘‘নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু হয়েছে৷'' অথচ রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সংস্থার সভাপতি বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি৷

Bangladesch Dhaka Wahlen
ছবি: DW/A. Islam

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতী'র নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাঁরা তো নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা নিজেরাই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন৷ নির্বাচনের পর তাঁরা যে মন্তব্য করেছিলেন, তাতে তো দেশের মানুষ বিস্মিত হয়েছেন৷ একটা ভোটের পরপরই এমন মন্তব্য করা যায় না৷ তাঁরা যদি বলতেন তাঁরা যে ক'টি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন, সেখানে খারাপ কিছু দেখেননি৷ তাহলেও একটা কথা ছিল৷ কিন্তু তাঁরা সার্বিক নির্বাচন নিয়েই মন্তব্য করে ফেললেন৷ দেখেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কিছু পদ্ধতি আছে৷ তাঁরা আসলে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন? মাত্র ৯টি কেন্দ্রে গিয়ে এমন মন্তব্য করা যায় না৷ আর একেক সময় একেক কথা বললে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই মানুষ প্রশ্ন তুলবে৷ তাঁরা আসলে সেই পথেই গেছেন৷''

সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের হয়ে বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলেন ক্যানাডার নাগরিক তানিয়া ফস্টার৷ ভোটের পরের দিন গণভবনে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সেই অনুষ্ঠানে তানিয়া বলেছিলেন, ‘‘নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক হয়েছে৷ আমার মনে হয়, ক্যানাডায়ও এভাবেই নির্বাচন হয়৷''

সম্প্রতি রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন তানিয়া ফস্টার৷ সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা কেবল ঢাকার নয়টি ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলাম, তারপরও আমাদের প্রতিবেদন যে এতটা গুরুত্ব পাবে, তা বুঝতে পারিনি৷ আমরা অপক্ষাকৃত প্রতিকূল এলাকাগুলোয় যাইনি৷ আমার মনে হচ্ছে, সবকিছু আমি একটু বেশি সরলভাবে নিয়েছিলাম৷''

‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কি খেলো জিনিস যে, যা খুশি বলে ফেললাম’: ড. বদিউল আলম মজুমদার

This browser does not support the audio element.

সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যোগাযোগ আছে বলেও অভিযোগ উঠেছে৷ সংগঠনটির উপদেষ্টা কমিটিতে আছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দুই জন সংসদ সদস্য৷ এছাড়া নাম ও লোগোতে মিল থাকলেও দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক-এর সঙ্গে সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের কোনো সম্পর্কই নেই৷ এমন প্রশ্নের জবাবে তানিয়া রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের যোগসূত্র রয়েছে বা সংগঠনটি যে সার্কের কেউ নয়, তা তিনি জানতেন না৷''  সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন'-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাঁরা তখন যে বালখিল্য বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেটা তো সবাই দেখেছে৷ আসলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কিছু নীতিমালা থাকে৷ তাঁরা সেগুলো মেনে কাজ করলে নির্বাচনের পরপরই এমন মন্তব্য করতে পারতেন না৷ কিছু মূল্যবোধও তাঁদের থাকার কথা৷ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কি খেলো জিনিস যে, যা খুশি বলে ফেললাম? তাঁদের নিয়ে আগে থেকেই প্রশ্ন ছিল৷ এখন তাঁরাই সেটা প্রমাণ করে দিলো৷ তাঁরা কিভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হয়, সেটাই তো প্রশ্ন৷ তাদের আগের মন্তব্য যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, এখনকার মন্তব্যও গ্রহণযোগ্য নয়৷''

সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুস সালামও রয়টার্সকে বলেছেন, ভোটার ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে (নির্বাচনের পরে) তিনি শুনেছেন,  ‘‘আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরেছেন, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন৷'' তিনি বলেছেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে নতুন ভোট হওয়া উচিত৷ এখন আমি সবকিছু জানতে পেরেছি এবং বলতে পারি, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি৷''

‘একেক সময় একেক কথা বললে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে’:শারমিন মুরশিদ

This browser does not support the audio element.

তবে সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আবেদ আলীর দাবি, সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো যোগসূত্র নেই৷ অনুমোদনের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁরা সার্কের কাছে আবেদন করেছেন৷ যদিও সার্কের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁরা এই সংগঠন বা আবেদ আলীর নাম শোনেননি৷তিনি আরো জানান, সার্ক এই সংগঠনকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্কও নেই৷

সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন ক্যানাডা, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে কয়েকজন পর্যবেক নিয়ে আসে৷ ওই দলেই ছিলেন তানিয়া ফস্টার৷ আবেদ আলী বলছেন, কোনো সংগঠনের পক্ষে নির্বাচনের সব কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ সম্ভব নয়৷ সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের যোগসূত্রও নেই বলে দাবি করেন তিনি৷ তবে নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নাজির মিয়া রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘আমরা সহিংস ঘটনার কথা শুনেছি, তবে স্বচক্ষে এমন কিছু দেখিনি৷ কাজেই অন্য কোথাও যা ঘটেছে, তা নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারি না৷'' কলকাতার আইনজীবী গৌতম ঘোষের দাবি, এমন ভালো নির্বাচন তিনি এর আগে দেখেননি৷

‘ক্যানাডার একটা মেয়ে কী বলল সেটাই এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল’: ড. তোফায়েল আহমেদ

This browser does not support the audio element.

নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নির্বাচনের দু সপ্তাহ পর নতুন বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেখেন, সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রীলংকার নাগরিক পরিচয় দিয়ে যিনি কথা বললেন, তাঁকে দেখে তো কখনোই মনে হয়নি তিনি শ্রীলংকার নাগরিক৷ ক্যানাডার একটা মেয়ে কী বলল সেটাই এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল! তাঁরা যা খুশি তাই বলে দিল এটা তো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ হতে পারে না৷ তবে একটা ভালো দিক হলো, তাঁরা যদি ভুল বুঝতে পেরে এখন আগের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং সত্য কথা বলে, তাহলে সেটাও খারাপ না৷ কেউ যদি নিজের ভুল নিজেই বুঝতে পারে আমি সেটাকে ভালোভাবেই দেখি৷ এটা নিয়ে বলার কিছু নেই৷''

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না,এটাই তার প্রমাণ৷ তারা তো বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে ঘোষণাই দিয়েছে দেরিতে৷ তাছাড়া নির্বাচনের দিনক্ষণ এমন সময় ফেলেছে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কেউ যাতে না আসতে পারে৷ কারণ, বড়দিনের পরপরই ফেলা হয়েছে ভোটের দিন৷ আর যারাই বা আসতে চেয়েছিল, তাদের ভিসা দেওয়া হয়নি৷পাশাপাশি তারা যাদের নিজেদের মনে করে এনেছে, তারাই শুধু এসেছে৷ এই যে প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে, তারা তো কোনো অবজারভারই না৷ তারা সরকারের হয়ে এসেছিল৷ তাদের পক্ষে বলে গেছে৷ যখন সারা বিশ্বই দেখেছে এখানে ভোটের নামে তামাশা হয়েছে, তখন তাদের পক্ষ হয়ে যারা এসেছিলেন, তারা ঘুরে যাচ্ছেন৷ এটা তারই প্রমাণ৷’’ 

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

প্রসঙ্গত,  কয়েকদিন আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করে৷ অনিয়মের ধরনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৫০টির মধ্যে ৪১টি আসনে জাল ভোট; ৪২টি আসনে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকা; ৩৩টি আসনে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল; ২১টি আসনে আগ্রহী ভোটারদের হুমকি দিয়ে তাড়ানো বা কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা; ৩০টি আসনে বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মেরে জাল ভোট; ২৬টি আসনে ভোটারদের জোর করে নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা; ২০টিতে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখা; ২২টিতে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া; ২৯টিতে প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়া ইত্যাদি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ