হামলায় আরো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নাদিয়া
৯ এপ্রিল ২০১৩![April 7, 2013 - Dhaka, Bangladesh - Bangladeshi women shout slogans during the rally as several Bangladeshi women's groups came out in protest against Hifazat-e Islam in the capital of Dhaka on Sunday. Hifazat-e Islam activists assaulted a woman journalist during their march on Saturday. According to newspaper reports Ekushey Television reporter Nadia Sharmin was among four journalists who came under attack while covering the radical Islamist group's rally held in the Motijhil area of Dhaka on Staurday](https://static.dw.com/image/16727879_800.webp)
এ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে গত ৬ এপ্রিল যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যে৷ কিন্তু শুরুতেই একুশে টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাদিয়া শারমিনের বক্তব্য থেকে উঠে এসেছে দুটি প্রশ্ন – এমন পরিস্থিতিতে যাঁদের কাছ থেকে সাহসী, দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করা হয়ে থাকে, তাঁরা কি সেই আশা পূরণের ন্যূনতম চেষ্টাও সেদিন করেছেন? আর যাঁদের কাছ থেকে সেরকম কিছু আশা করা ভুল মনে হয়, তাঁদের সবাই কি নাদিয়াকে যারা স্রেফ নারী হয়ে পুরুষের ভিড়ে যাওয়ার অপরাধে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করেছে, বারবার রাস্তায় ফেলে কিল-ঘুষি-লাথি মেরে পৈশাচিকতার দৃষ্টান্ত রেখেছে, ‘জামায়াতের পক্ষের লোক' হিসেবে মোটামুটি চিহ্নিত প্রত্যেকটি লোকই কি তাদের সহায়তা করেছেন? দুটো প্রশ্নের উত্তরই, ‘না'৷ অবাক হলেন নিশ্চয়ই!
সব সাংবাদিক সেদিন হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি৷ পারলে নাদিয়া শারমিন এবং আরো কয়েকজন সাংবাদিককে সেদিন হামলার শিকার হতে হতো না৷ ‘সাংবাদিকরা গনজাগরণ মঞ্চের দালাল ' এ কথা বলে উসকানি দেয়া হয়েছে প্রকাশ্যেই৷ সেই অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর, বিশেষ করে পুলিশের৷ সেই পুলিশ সেদিন পাশ থেকে নাদিয়া শারমিনকে পরামর্শ দিয়েছেন, ‘‘আপা, মাথায় কাপড় দিয়ে পালিয়ে যান৷''
সেটা অনেক পরের ঘটনা৷ নাদিয়া শারমিন তার অনেক আগে থেকেই দিনে-দুপুরে হিংস্র আচরণ শুরু করা কিছু মানুষের কবল থেকে প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য চাইছেন সবার কাছে৷ গাড়িতে উঠছেন, সেই গাড়ির ওপরও শুরু হলো হামলা৷ নামিয়ে বলা হলো, মোটর সাইকেলে উঠে সরে পড়তে, যিনি বলছেন তিনি কথায় কথায় হাত থেকে মোবাইল ফোনটি নিয়ে হারিয়ে গেলেন ভিড়ে৷ এমন অসহায় ছোটাছুটির মাঝেও নাদিয়া পাশে পেয়েছিলেন কয়েকজন সহমর্মীকে৷ তাঁদের কয়েকজন সাধারণ মানুষ৷ বাকিরা দিগন্ত টেলিভিশনের সাংবাদিক৷ যৌক্তিক কিছু কারণেই ‘জামায়াতের চ্যানেল' বলে পরিচিত দিগন্তকে বর্জন করা উচিত মনে করেন মুক্তিযু্দ্ধের পক্ষের অধিকাংশ মানুষ৷ কিন্তু এ সাক্ষাৎকারে নাদিয়া শারমিন নিজে বলেছেন, ‘‘আমাকে বাঁচাতে গিয়ে ওরা (দিগন্ত টেলিভিশনের সংবাদ কর্মীরা) যথেষ্ট মার খেয়েছে৷'' সাংবাদিক যখন চাকরির লিখিত-অলিখিত, বলা-না বলা নিয়মের শত বেড়াজাল সরিয়ে শুধু ‘মানুষ' হয়ে দাঁড়ান, বিপন্নের কাছে তখন বোধহয় সেই মনুষ্যত্বই সবচেয়ে বড় কথা৷
হেফাজতে ইসলাম এবং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীরের কাছে সেই মনুষ্যত্ব খুঁজতে গিয়ে নাদিয়া শারমিন যেন কিছুটা হতাশ৷ ঘটনার পর হেফাজতের ‘ক্ষমা চাওয়া' প্রসঙ্গ তুলতেই মনে করিয়ে দিলেন, আনুষ্ঠানিক ‘দুঃখ প্রকাশ' করলেও ইসলাম রক্ষার কথা কাগজ-কলম আর মুখে বললেও তাদের সমাবেশেই মানুষ এবং মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হতে দেখেও হেফাজত প্রকৃত অর্থে ক্ষমা চায়নি৷ বরং সমস্ত দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছে৷ তাই শারীরিকভাবে আহত এবং মানসিকভাবে আপাত বিপর্যস্ত তরুণ সাংবাদিক বললেন, ‘‘ দুঃখ প্রকাশ আসলে কতখানি দুঃখ প্রকাশ আমি জানিনা৷ দুঃখ প্রকাশ আমি তখনই মানবো যখন তাঁদের ওখানে কোনো মেয়ে গিয়ে নিরাপদে কাজ করে আসতে পারবে৷''
যে সমাবেশে অবর্ণনীয় লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, যে সমাবেশ থেকে গনজাগরণ মঞ্চের দিকে ছুটে গিয়েছিল উন্মত্ত কিছু মানুষ, যে সমাবেশে যোগ দেয়া মিছিল থেকে মহাখালীতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমাবেশে হামলা ও ভাঙচুর চালানোর ঘটনা কারো অজানা নয়, সেই সমাবেশকে ‘শান্তিপূর্ণ' আখ্যা দিয়ে আয়োজক হেফাজতে ইসলামকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ এ প্রসঙ্গে নাদিয়া শারমিনের মন্তব্য খুব মনে রাখার মতো, ‘‘বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে যাঁরা মানুষ বলে পরিচিত, তাঁরা যে চোখে দেখেন এ বিষয়টিকে আমিও সেই চোখেই দেখছি৷''
ডয়চে ভেলেকে দেয়া এ সাক্ষাৎকারে আশার কথাও শুনিয়েছেন নাদিয়া শারমিন৷ ব্যথায় হাঁটতে পারছেন না, ঘাড় নাড়া এখনো অসম্ভব, মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা – এ অবস্থাতেও জানিয়েছেন সেরে ওঠার পর হেফাজতে ইসলাম আবার কোনো সমাবেশ করলে সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করতে তিনি অবশ্যই যাবেন!
সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন