রোহিঙ্গা মুসলিমদের জাতিগত নিধন বন্ধ করতে খুব কম উদ্যোগ নেয়ার অভিযোগে মিয়ানমারের অং সান সু চি-কে দেয়া সম্মানজনক একটি অ্যাওয়ার্ড বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের হলোকস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম৷
বিজ্ঞাপন
ছয় বছর আগে ‘তাঁর সাহসী নেতৃত্ব এবং নিপীড়ন বন্ধে ও বার্মার জনগণের স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষায় তাঁর ব্যক্তিগত ত্যাগের জন্য’ সু চি-কে ‘এলি ভিজেল অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয়েছিল৷ এলি ভিজেল হচ্ছেন ইহুদিদের বিরুদ্ধে নাৎসিদের চালানো গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি, যিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করে গেছেন৷ এজন্য ১৯৮৬ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারও পান৷
অ্যাওয়ার্ড বাতিলের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়েসু চি-কে দেয়া এক চিঠিতে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘‘২০১৬ ও ২০১৭ সালে যখন রোহিঙ্গাদের উপর সামরিক হামলা চলছিল, তখন আমরাসহ অনেকে, যাঁরা মানবাধিকার রক্ষায় আপনার কাজের প্রশংসা করেছিলাম, তাঁরা আশা করেছিলাম যে, আপনি সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠুরতা বন্ধে এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশে কিছু একটা করবেন৷’’
কিন্তু তার পরিবর্তে সু চি'র দল জাতিসংঘের তদন্ত দলকে সহায়তা করতে অস্বীকৃত জানায় এবং রোহিঙ্গাবিরোধী কথাবার্তায় যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছে হলোকস্ট মিউজিয়াম৷ এমনকি সু চি'র দল রোহিঙ্গাদের গণহত্যা ও বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও বাধা দিয়েছে বলে জানিয়েছে মিউজিয়াম৷
গত নভেম্বরে হলোকস্ট মিউজিয়াম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কাজ করা সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের সঙ্গে মিলে রোহিঙ্গাদের উপর ‘ব্যাপক ও নিয়মিত হামলা’ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল৷
এর আগে আরও কয়েকটি সংস্থা সু চি-কে দেয়া অ্যাওয়ার্ড ও সম্মাননা বাতিল করেছে৷ তবে সেসব বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু এবার ওয়াশিংটনের মিয়ানমার দূতাবাস হলোকস্ট মিউজিয়ামের সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে৷ তারা বলছে, যারা রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ, তারাই মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করেছে৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷