অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকার জানিয়েছে, তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘ মিশনকে ভিসা দেবে না৷ অথচ দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের মতো অপরাধের অভিযোগ রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি মিয়ানমারের পররাষ্ট্র বিষয়ক সচিব কেয়াও জেয়া সংসদকে বলেছেন, তারা যদি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনে কাউকে পাঠাতে চায়, তাহলে তাদেরকে সেই অনুমতি প্রদানের কোনো কারণ নেই৷ বিশ্বজুড়ে আমাদের মিশনকে এই ধরনের নির্দেশনা দেয়া আছে৷
জাতিসংঘ গত মার্চে এই তদন্তের উদ্যোগ নেয়ার পরই মিয়ানমার সরকার বলেছিল যে, তারা এই উদ্যোগকে সহায়তা করবে না৷ এমনকি আন্তর্জাতিক তদন্তের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন নোবেলজয়ী অং সান সু চি নিজেও৷ তিনি বলেছেন, এই উদ্যোগ বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা বাড়িয়ে দিতে পারে৷
রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর শত বছর ধরে মিয়ানমারের জাতিগত নিপীড়নের বিস্তর প্রমাণ রয়েছে৷ দশকের পর দশক ধরে সেখানকার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসাবে আখ্যা দিয়ে আসছে, যা তাদেরকে রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছে৷
স্থানীয় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মানুষ যেমন তাদের নিপীড়নে অংশ নিচ্ছে, তেমনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজনও আক্রমণ-হত্যায় অংশ নিচ্ছেন বলে খবর আসছে৷
ভুলে যাওয়া শরণার্থীরা: বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা
গত অক্টোবরে মিয়ানমারে দমনপীড়ন শুরুর পর ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন৷ মুসলিমপ্রধান দেশটিতে বর্তমানে পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করছেন৷ কুতুপালংয়ের মতো জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে তাদের অনেকের বাস৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
মিয়ানমার থেকে পালানো
মিয়ানমারে গত অক্টোবরে নয় পুলিশ হত্যার অভিযোগ ওঠে এক রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে৷ তারপর থেকে সেদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর আবারো দমনপীড়ন শুরু হয়৷ ফলে সত্তর হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ তারা যেসব ক্যাম্পে বসবাস করেন সেগুলোর একটি এই কুতুপালং৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
স্বনির্ভরতা দরকার
কুতুপালং ক্যাম্পের শরণার্থীরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপদ আছে বটে, তবে জীবন সেখানে মোটেই সহজ নয়৷ সেখানে সত্যিকারের কোনো অবকাঠামো নেই, সবই শরণার্থীদের গড়া অস্থায়ী আবাস৷ তারা নিজেদের দেশ ছেড়ে এসেছেন, কেননা, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং অসংখ্য মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ করেছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
শিশুদের খেলা নয়
আশ্রয়শিবিরটির অধিকাংশ এলাকায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই৷ কয়েক হাজার শরণার্থী শিশুর খেলোধুলারও কোন ব্যবস্থা নেই৷ ক্যাম্পের লেক থেকে মাটি সংগ্রহ করছে এই শিশুটি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
কুঁড়েঘরে বসবাস
কাদা মাটি এবং সহজলভ্য অন্যান্য উপাদান দিয়ে ঘর তৈরি করে বাস করেন শরণার্থীরা, যাতে মাথার উপরে অন্তত ছাদ থাকে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস
সেই ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সেদেশে রোহিঙ্গারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷ তাদেরকে নাগরিকত্ব এবং ভোট দেয়ার অধিকার দিচ্ছে না সরকার৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
বাংলাদেশেও বৈষম্যের শিকার?
বাংলাদেশেও বৈষম্যে শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা৷ ক্যাম্পে আর জায়গা নেই- বলে বাংলাদেশে জলপথে আশ্রয় নিতে আসা অসংখ্য রোহিঙ্গাকে তাদের নৌকাসহ ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে সীমান্তরক্ষীরা৷ পাশাপাশি কক্সবাজার ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের একটি দুর্গম দ্বীপে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার৷ স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দ্বীপটি বর্ষাকালে অধিকাংশ সময় পানির নীচে তলিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
নির্জন দ্বীপে সরিয়ে নেয়া
ঠ্যাঙ্গার চর বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর মোহনায় কয়েকবছর আগে জেগে ওঠা এক দ্বীপ৷ শুধুমাত্র নৌকায় করে সেখানে যাওয়া যায় এবং চরটিতে অতীতে একাধিকবার জলদস্যু হানা দিয়েছে৷ এক উন্নয়নকর্মী সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে দ্বীপটিতে কর্মসংস্থানেরও তেমন কোনো সুযোগ নেই৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী স্বীকার করেছেন যে, ঠ্যাঙ্গার চরকে বসবাসের উপযোগী করতে আরো অনেক কাজ করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘দ্বীপটিতে উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার পর রোহিঙ্গাদের সেখানে সরিয়ে নেয়া হবে৷’’ তবে সরকার অতীতে এরকম প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি৷ কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের তেমন কোন উন্নয়ন সাধন করা হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
ইতিহাস থেকে মোছার চেষ্টা
নিরাপদ আবাসভূমি না থাকায় রোহিঙ্গাদে ভবিষ্যত ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে৷ অন্যদিকে, মিয়ানমার তাদের অতীত মুছে ফেলতে কাজ করছে৷ দেশটির সংস্কৃতি এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতিহাস বিষয়ক পাঠ্যবই প্রকাশের পরিকল্পনা করেছে যেখানে রোহিঙ্গাদের কথা একেবারেই উল্লেখ থাকবে না৷ গত ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়টি দাবি করেছে, মিয়ানমারের ইতিহাসে কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে কখনো রোহিঙ্গা নামে আখ্যায়িত করা হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/T. Chowdhury
9 ছবি1 | 9
এ অবস্থায় সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে গত মার্চে জাতিসংঘ যে প্রস্তাব আনে, তা থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখেছে মিয়ানমারের বৃহৎ দুই প্রতিবেশী ভারত এবং চীন৷
অন্যদিকে মিয়ানমার বলছে, তারাই এ ঘটনার তদন্ত করবে৷ সেখানে অন্যায় কিছু ঘটে থাকলে, সে জন্য তাদের তদন্তই যথেষ্ট৷
কেয়াও জেয়া বলেন, যেখানে অভ্যন্তরীণ কাঠামো ভেঙে পড়েনি, সেখানে কেন এ ধরনের অনাহুত চাপ দেয়া হচ্ছে?
গত বছর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের একটি দল গত বছর রাখাইন রাজ্যে সীমান্ত পুলিশের উপর হামলা করে৷ যাতে ন'জন পুলিশ নিহত হয়৷ এরপর সর্বশেষ এই সংঘাত শুরু হয়৷ সরকারি বাহিনী কঠোরভাবে অভিযান শুরু করে৷
রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে বলে গত ফেব্রুয়ারিতে দেয়া এক প্রতিবেদনে উঠে আসে৷ যার মধ্যে গণহত্যা এবং গণধর্ষণের মতো ঘটনাও রয়েছে৷
মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা বর্তমানে প্রায় বন্দি জীবন কাটাচ্ছে৷ তাঁরা ঠিকমতো চলাফেরা এবং জীবিকা নির্বাহও করতে পারেন না৷ কারণ তাঁদের কাছে পরিচয়পত্র নেই৷ এ কারণে দিনে দিনে সেখানে তাদের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে৷
রোহিঙ্গাদের ‘যুদ্ধের’ যেন শেষ নেই
ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রবেশের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ অনেক বাংলাদেশিও আছেন তাঁদের মাঝে৷ থাইল্যান্ডে গিয়ে কবরেও ঠাঁই হয়েছে অনেকের! আজকের ছবিঘরটি তাঁদের নিয়েই৷
ছবি: Reuters/R: Bintang
আটকে পড়া
গত ১০ মে চারটি নৌযানে করে ইন্দোনেশিয়ার আচে প্রদেশে প্রবেশ করে ৬০০ রোহিঙ্গা৷ একই সময়ে লাংকাওইতে প্রবেশ করে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা৷ সমুদ্র থেকে স্থলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ তাঁদের ঘিরে ফেলে৷ ভাগ্যান্বেষণে দেশ ছাড়া মানুষগুলো এখনো মুক্ত নয়৷
ছবি: Reuters/R. Bintang
ক্লান্ত
মানবপাচারকারীরা তাঁদের ছেড়ে যাওয়াতে সমুদ্রবক্ষে বিপদেই পড়েছিলেন রোহিঙ্গারা৷ আনুমানিক সপ্তাহ খানেক সমুদ্রপথে ঘুরে অবশেষে ভীষণ ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত অবস্থায় তাঁরা ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছান৷ দীর্ঘ অর্ধাহার, অনাহারে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে৷ তাঁদের চিকিৎসা চলছে৷
ছবি: Reuters/R: Bintang
ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা
প্রতিবছর এভাবেই মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে শত শত রোহিঙ্গা৷ মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশিও থাকেন সব সময়৷ ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী তোলায় অনেক নৌযান ডুবে যায় সাগরে, সলিলসমাধি হয় অনেকের৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম তিন মাসে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছেড়েছেন অন্তত ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি৷
ছবি: Asiapics
ওদের কোনো দেশ নেই!
বৌদ্ধপ্রধান দেশ মিয়ানমারে ৮ লক্ষের মতো রোহিঙ্গা মুসলমানের বাস৷ তবে সংখ্যাটা দ্রুতই কমছে৷ বৌদ্ধদের সঙ্গে দাঙ্গার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই৷ মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকারই করে না৷ তাদের মতে, রোহিঙ্গারা ‘বাংলাদেশি অভিবাসী’৷ আবার বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে ঐতিহাসিক কারণেই তাঁদের মিয়ানমার থেকে আগত বহিরাগতের মর্যাদা দেয় বাংলাদেশ৷
ছবি: Reuters/R: Bintang
আধুনিক দাস-বাণিজ্য
মানবপাচারকারীদের কাছে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ ছাড়া রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিরা যেন ক্রীতদাস৷ মাত্র ২০০ ডলারের বিনিময়ে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলে নৌযানে তুললেও যাত্রীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়৷ খেতে না দেয়া, ছোট্ট জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য করা, শারীরিক নির্যাতন – বলতে গেলে সব ধরণের অত্যাচারই চলে তাঁদের ওপর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Yulinnas
থাইল্যান্ড নিয়ে আতঙ্ক
রোহিঙ্গারা থাইল্যান্ডেও যান৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ২০১২ সালে আড়াই লাখ মানুষ অবৈধভাবে থাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছেন৷ অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য থাইল্যান্ড অবশ্য একেবারেই নিরাপদ ঠিকানা নয়৷ মানবপাচারকারীরা সে দেশে নিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে৷ মুক্তিপণ না দিলে মেরেও ফেলা হয়৷ সম্প্রতি মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে বেশ কিছু গণকবরের সন্ধান পেয়েছে থাই সরকার৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
পরিত্যক্ত
থাইল্যান্ড সরকারের অভিযান শুরুর পর অনেক রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিকে গভীর জঙ্গলে ফেলে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়৷ মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছের জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে এ পর্যন্ত অন্তত শ’ খানেক অভিবাসন প্রত্যাশীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে থাই কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: AFP/Getty Images/Str
7 ছবি1 | 7
ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর থেকেই রোহিঙ্গাদের উপর বার্মিজ সরকার চেপে বসেছিল৷ তবে তখন নিপীড়ন থাকলেও অনেক অধিকারও ভোগ করতো৷
১৯৭৮ সালে সরকারি বাহিনীর অভিযানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে৷ পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে এলে, এদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কথা বলা শুরু হয়৷ তখন মিয়ানমার সরকার ভেতরে ভেতরে নতুন নাগরিক আইন তৈরিতে হাত দেয়, যা ১৯৮২ সালে পাস হয়৷
সেই আইনের মাধ্যমেই কেড়ে নেয়া হয় এই জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব৷ সেখানে বলা হয়, ১৮২৩ সালের পূর্বে যাঁরা মিয়ানমারে বসতি স্থাপন করেছেন, কেবল তাঁরাই সেখানকার নাগরিক হবে৷ অর্থাৎ নাগরিক হিসাবে যে নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর নাম রয়েছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের নাম নেই৷
কোন গোষ্ঠী নাগরিকত্ব পাবে – তা নির্ধারণের এখতিয়ার দেয়া হয় এই আইনের অধীনে গঠিত কাউন্সিলকে৷
সামরিক সরকারের আমলে জাতিগত নিপীড়নের শিকার এই গোষ্ঠী গণতান্ত্রিক আমলে কিছুটা ভালো অবস্থায় থাকবে – এমন আশা অনেকেই করেছিলেন৷
সু চির নেতৃত্বাধীন দল ক্ষমতার আশার পরও সেই আশা মিইয়ে যেতে থাকে৷ এর মাঝেই অনেকে আশা করেছিলেন, একদিন দেশটিতে বদলাবে সংবিধান৷ যাতে কমবে সামরিক খবরদারি, এই পথ ধরে একদিন বদলাবে নাগরিকত্ব আইনও৷
তবে এ বছরের প্রথম দিকে দেশটির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী এবং ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির অন্যতম উপদেষ্টা ইউ কো কি প্রকাশ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন৷ তিনি সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে কাজ করছিলেন৷
বার্মিজ মুসলিম কো কি রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন বলে মনে করা হতো৷ তাঁর মৃত্যুর ফলে ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির মধ্যে রোহিঙ্গাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত আসা আরো কঠিন হয়ে গেল বলে অনেকেই মনে করছেন৷
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন৷ অনেক গর্ভবতী মা বাংলাদেশে এসে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
স্বামীর খবর জানেন না তিনি
রামিদা বেগমের স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী৷ এরপর তাঁদের বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ তার সপ্তাহখানেক পর পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান তিনি৷ ফলে স্বামীর খবর এখন জানেন না রামিদা৷ ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে যখন ছবিটি তোলা হয় তখন তাঁর কন্যার বয়স ছিল ১০ দিন৷ তখনও মেয়ের কোনো নাম দেয়া হয়নি রামিদার৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
এই শিশুর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে
স্বামীকে মিয়ানমারের সেনারা হত্যা করায় বাবামা-র সঙ্গে বাংলাদেশে চলে যান ১৮ বছরের নূর কায়েস৷ কোলে তাঁর ২৬ দিনের সন্তান, যার এখনও কোনো নাম দেননি তিনি৷ ছবিটি ৯ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
সাত দিনের মেয়ে
ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে যখন ছবিটি তোলা হয় তখন আসমত আরার মেয়ের বয়স ছিল মাত্র সাত দিন৷ মাসখানেক আগে তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান৷ বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার আগে তাঁর শ্বশুরকেও হত্যা করা হয়৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
সন্তানদের বাঁচাতে বাংলাদেশে
একমাস বয়সি ছেলে সন্তানের সঙ্গে রাজুমা বেগম৷ যখন বাংলাদেশে আসছিলেন তখন গর্ভবতী ছিলেন তিনি৷ সঙ্গে ১১ মাসের আরেকটি সন্তানও ছিল৷ ‘‘আমি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি কারণ মিয়ানমারের ভয়ের মধ্যে ছিলাম৷ আমার সন্তানদের বাঁচাতে চেয়েছি আমি’’, রয়টার্সকে বলেন বেগম৷ ছবিটি ১২ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
দেশে ফিরতে আগ্রহী সানোয়ারা
৯ ফেব্রুয়ারি তোলা এই ছবিতে ২৫ দিনের কন্যা কোলে ২০ বছর বয়সি মা সানোয়ারা বেগমকে দেখা যাচ্ছে৷ প্রায় আড়াই মাস আগে স্বামীর সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন তিনি৷ এখন আছেন কক্সবাজারের কুতুপালাং আশ্রয়কেন্দ্রে৷ মিয়ানমারের পরিস্থিতি ভাল হলে নিজ ঘরে আবারও ফিরে যেতে চান সানোয়ারা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে
ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে তোলা এই ছবিতে মারিজানকে তাঁর ২৫ দিন বয়সি কন্যা সন্তান সহ দেখা যাচ্ছে৷ পাশে তাঁর ছেলে৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় মাসখানেক আগে তাঁরা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
কন্যার জ্বর
দু’মাস বয়সি মেয়ের জ্বর কিন্তু মা আরাফা বেগম জানেন না ক্লিনিক কোথায়৷ আড়াই মাস আগে স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে আসেনি তিনি৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বাচ্চা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না
মিনারা বেগমের এক মাস বয়সি সন্তান পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না, কারণ তার মা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পান না৷ ফলে স্বাস্থ্যকর না হলেও স্থানীয় বাজার থেকে গুঁড়া দুধ কিনে খাওয়াতে হচ্ছে তাকে৷ ছবিটি ১০ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
এলোপাথাড়ি গুলি
১৬ দিনের সন্তান কোলে মা আমিনা৷ ‘‘মাস দেড়েক আগে মিয়ামারের সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে৷ আমি কোনোরকমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে বেঁচেছি৷ তারা আমার চাচা আর ছোটভাইকে ধরে নিয়ে গেছে৷ তারা বেঁচে আছে কিনা জানিনা’’, ৮ ফেব্রুয়ারি রয়টার্সকে কথাগুলো বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বয়স মাত্র একদিন
ফাতেমার সন্তানের বয়স মাত্র একদিন৷ ছবিটি ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে তোলা৷ মিয়ানমারে তাদের ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় মাস দুয়েক আগে স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন৷ এখন তাঁর স্বামী দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন৷