মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য সমালোচিত অং সান সু চির পুরস্কার প্রত্যাহার করবে না নোবেল কমিটি৷
বিজ্ঞাপন
নরওয়ের নোবেল ইন্সটিটিউটের পরিচালক উলাভ নিউলিস্তা বুধবার বলেছেন, ‘‘নোবেল কমিটির কাছে শান্তি পুরস্কার প্রত্যাহারের কোনো প্রশ্নই নেই৷ নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিধান তা অনুমোদন করে না৷''
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯১ সালে এনএলডি নেতা সু চিকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়৷ সে সময় কারাবন্দি থাকায় সু চি এই পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন ২১ বছর পর৷
পাঁচ দশকের বেশি সময়ের সেনা শাসনের পর মিয়ানমারে ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে সু চির দল৷ সাংবিধানিক বাধার মুখে প্রেসিডেন্ট হতে না পেরে স্টেট কাউন্সিলর পদ নিয়ে তিনিই কার্যত দেশটির সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷
যা যা হারালেন সুচি
রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধে কোনো ভূমিকা না রাখার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সুচি৷ ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে অবদানের জন্য পাওয়া স্বীকৃতিও হারাচ্ছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Khin Maung Win
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের খেতাব
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিকে দেওয়া সর্বোচ্চ খেতাব ‘অ্যাম্বাসেডর অব কনশেন্স’ প্রত্যাহার করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Marquez
এলি উইজেল অ্যাওয়ার্ড
যুক্তরাষ্ট্রের হলোকস্ট মেমোরিয়াল মিউজয়াম মানবাধিকারের বিষয়ে অবদানের জন্য ২০১২ সালে সুচি’কে এ পুরস্কার দিয়েছিল৷ কিন্তু রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধে নোবেল বিজয়ী এ নেত্রী কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেনি দাবি করে পদকটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Ye Aung Thu
ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড
নিজ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করে যাওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড শহর কর্তৃপক্ষ ১৯৯৭ সালে সুচি’কে ‘ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড’ সম্মাননা প্রদান করে৷ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরুর পর এ সম্মাননা ফিরিয়ে নেয়া হয়৷ কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা এমন কাউকে এ সম্মানে ভূষিত করতে চান না যিনি মানবাধিকার লংঘনের সময় ‘চোখ বন্ধ’ করে রাখে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Aung Shine Oo
ফ্রিডম অব গ্লাসগো অ্যাওয়ার্ড
রোহিঙ্গা নির্যাতন বিষয়ে নিস্ক্রিয় ভূমিকার জন্য ফ্রিডম অব গ্লাসগো অ্যাওয়ার্ডও হারিয়েছেন সুচি৷ স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এক চিঠিতে মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানালে পালটা প্রতিক্রিয়া দেখান সুচি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/W. Maye-E
অক্সফোর্ডের কক্ষ থেকে বিতাড়িত
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জুনিয়র কমন রুম’ টাইটেল থেকে মুছে ফেলা হয়েছে সুচির নাম৷ রোহিঙ্গা বিষয়ে সুচির কোনো ভূমিকা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র-ছাত্রীরা সুচির নাম মুছে ফেলার পক্ষে ভোট দেয়৷
ছবি: picture-alliance /dpa/L. Bo Bo
ইউনিসন অ্যাওয়ার্ড
রোহিঙ্গা নির্যাতন বিষয়ে নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে হারানো পদকগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো ইউনিসন অ্যাওয়ার্ড৷ যুক্তরাজ্যের সর্ববৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিসন সুচিকে তাঁর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অবদান রাখার জন্য এ পদকটি দিয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Thu
এডিনবার্গ অ্যাওয়ার্ড
স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ শহর কর্তৃপক্ষ সুচিকে ২০০৫ সালে দেয়া এডিনবার্গ অ্যাওয়ার্ডটি বাতিল করে দেয়ার চিন্তা করছে৷ রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে গত নভেম্বরে এডিনবার্গ শহর কর্তৃপক্ষ সুচিকে চিঠি লেখে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর দেননি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এ নেত্রী৷ চলতি সপ্তাহেই অ্যাওয়ার্ডটি প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Reuters/Soe Zeya Tun
নোবেল বাতিলের আহ্বান
রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে নিশ্চুপ থাকার কারণে ১৯৯১ সালে শান্তিতে পাওয়া সুচির নোবেল পুরস্কারটি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য একটি আন্তার্জাতিক ক্যাম্পেইন হয়েছিল৷ কিন্তু নোবেল কমিটির প্রধান বলেছেন, এ পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়া সম্ভব নয়৷
ছবি: Reuters/J. Silva
8 ছবি1 | 8
গত বছর রাখাইনে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর দমনাভিযানের মুখে কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যায়৷ সংখ্যালঘু এই জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন বন্ধে ব্যর্থতা এবং নিপীড়কদের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখে পড়েন সু চি৷ তাঁর নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারেরও দাবি ওঠে৷
এদিকে রোহিঙ্গা নিপীড়নের একবছর পূর্তি উপলক্ষে ২৭ আগস্ট জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর ‘গণহত্যা' চালানোর জন্য মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়েছে৷
‘সু চির পদত্যাগ করা উচিত ছিল'
সেনাবাহিনীর দমনাভিযানের পক্ষে যুক্তি না দিয়ে সু চির পদত্যাগ করা উচিত ছিল, বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিদায়ী হাই কমিশনার জেইদ রা'আদ আল হুসেন৷
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘‘তিনি (সু চি) এমন এক পদে ছিলেন যেখান থেকে কিছু করতে পারতেন৷ তিনি চুপ থাকতে পারতেন, অথবা আরো ভালো হতো, তিনি পদত্যাগ করতে পারতেন৷''