সূর্য পৃথিবীর জীবজগতের অস্তিত্বের চাবিকাঠি৷ আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রের অনেক বৈশিষ্ট্য সত্যি বিস্ময়কর৷ বিজ্ঞানীরা একের পর এক রহস্য উন্মোচন করায় সূর্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান ধীরে ধীরে বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
আমাদের সূর্য আসলে বৈদ্যুতিক চার্জভরা গ্যাসের বিশাল এক গোলক৷ একশ'রও বেশি পৃথিবী পাশাপাশি রাখলে সূর্যের ব্যাসের সমান মাপ ছোঁয়া সম্ভব৷ সূর্যের উপরিভাগের উপর বারবার কলঙ্ক বা ছোপ দেখা যায়৷ বাকি অংশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত শীতল বলে টেলিস্কোপে দেখলে সেগুলিকে কালো মনে হয়৷ অতি বেগুনি রশ্মি সূর্যের উপর গরম প্লাজমাভরা চৌম্বক ক্ষেত্রের বিশাল বক্র রেখা স্পষ্ট করে দেয়৷
সূর্যের কেন্দ্রস্থলে হাইড্রোজেন জ্বলে হিলিয়ামে পরিণত হয়৷ সেই বিকিরণ সূর্যের উপরিভাগে আসতে এক লাখ বছরেরও বেশি সময় লাগে৷ ৬,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সেই বিকিরণ কিন্তু অপেক্ষাকৃত শীতল৷ কারণ, সূর্যের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা প্রায় ১০ লাখ ডিগ্রি! পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় এমনকি খালি চোখেও তা দেখা যায়৷
যদি সূর্য নিভে যায়
03:27
প্রায় ৪৫ কোটি বছর ধরে সূর্য আলো দিয়ে চলেছে৷ সবরকম আলোড়ন ও ক্রিয়া সত্ত্বেও সূর্য কিন্তু আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের যে কোনো সাধারণ নক্ষত্রের মতোই৷ হাইড্রোজেন জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে গেলে আমাদের সূর্য ফুলেফেঁপে তথাকথিত ‘লাল দৈত্যে’ পরিণত হবে৷ তার অনেক আগেই অবশ্য পৃথিবী মৃত গ্রহে পরিণত হবে৷
আদিকাল থেকেই মানুষ সূর্যের অসীম গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন৷ সূর্যই পৃথিবীতে উত্তাপ ও আলোর জোগান দেয়৷ সূর্য ছাড়া বৈচিত্র্যে ভরা জীবজগত সৃষ্টি হতো না৷ সে কারণে সারা বিশ্বে দেবতা হিসেবে সূর্যের পূজা করা হয় এবং বলি চড়িয়ে তাকে শান্ত রাখার চেষ্টা চালানো হয়৷
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সূর্য এক দিগন্ত থেকে অন্য দিগন্তে পৌঁছে যায়৷ সেই গতির ভিত্তিতেই দিন ও বছরের নিখুঁত হিসেব করা হয়৷ ফলে সূর্যই মানুষের মনে সময়ের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে৷ ষোড়শ শতাব্দীতে নিকোলাস কোপার্নিকাস সূর্যকেই জগতের কেন্দ্রস্থলে স্থান দিয়েছিলেন৷ ফলে আমাদের নক্ষত্র পদার্থবিদ্যার গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছিল৷ তবে স্যাটেলাইটের যুগে এসে সূর্যের প্রভাবের আসল মাত্রা বোঝা গেছে৷ সূর্য প্রতিনিয়ত বৈদ্যুতিক চার্জে ভরা কণা নিক্ষেপ করে চলেছে৷
সেই বিচ্ছুরণকে সৌর বাতাস বলা হয়৷ কণার এই স্রোত অনেক দূরে বাইরের দিকে এক সুরক্ষার বুদবুদ সৃষ্টি করে৷ সেই বর্ম আমাদের সৌরজগতকে মিল্কি ওয়ে থেকে আসা মহাজাগতিক বিকিরণ থেকে রক্ষা করে৷
কর্নেলিয়া বরমান/এসবি
২০১৮ সালের ১৪ আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...
সূর্যকে ছুঁতে চায় ওরা
সম্প্রতি ঐতিহাসিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ঘটনা ঘটিয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা৷ এবার তারা সূর্যের দিকে স্যাটেলাইট ছুঁড়েছে৷ সফলভাবে উৎক্ষেপিত হওয়া স্যাটেলাইটটি যাবে সৌরমণ্ডলে৷ ছবিঘরে দেখুন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Raoux
মানবসভ্যতার প্রথম
মানবসভ্যতা মহাকাশে পৌঁছেছে অনেক আগে৷ চাঁদে পা রেখেছে৷ কিন্তু অতি উষ্ণ সূর্যকেও একদিন ছুঁতে পারবে তা কি কেউ কল্পনা করেছে? নাসার বিজ্ঞানিরা তা কল্পনাই শুধু করেননি, তার বাস্তবতার মুখও দেখিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/NASA
বিগ সানডে
১২ আগস্ট, ২০১৮৷ রোববার৷ দিনটি ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে৷ নাসার পার্কার সোলার প্রোবের প্রথম উপগ্রহটি এদিন উড়েছে আকাশে, ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশনের ৩৭ নম্বর উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে৷ ইস্টার্ন ডে লাইট সময় ভোর ৩ টা ৩১ মিনিটে শুরু হয় উৎক্ষেপণ৷ দু’ঘন্টা পর অপারেটররা জানান যে, সঠিকভাবেই উড়ছে পার্কার সোলার প্রোব৷
ছবি: Official Stream of NASA TV
উদ্দেশ্য ‘করোনা’
সৌরমণ্ডলের একটি অংশের নাম করোনা৷ সেখানেই পৌঁছাবে পার্কার সোলার প্রোব মিশনের প্রথম স্যাটেলাইটটি৷
ছবি: Reuters/M. Brown
ইউজিন পার্কার
এই প্রথম কোনো জীবিত গবেষকের নামে স্যাটেলাইটের নামকরণ করলো নাসা৷ যার নামে নামকরণ করা হয়েছে তিনি হলেন, ১৯৫৮ সালে তাত্ত্বিকভাবে সৌরবায়ুমণ্ডলের আবিষ্কারক বিখ্যাত পদার্থবিদ ইউজিন পার্কার৷ উৎক্ষেপণের সময় গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন ইতিহাসকে৷
ছবি: picture-alliance/AP/NASA/G. Benson
কী করবে এই স্যাটেলাইট?
এই স্যাটেলাইট মহাকাশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস আরো সঠিকভাবে নির্ণয় করতে সহায়তা করবে৷ এতে মহাকাশে উড্ডয়মান অন্য স্যাটেলাইট বা মহাকাশচারীদের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঠেকানো, রেডিও কমিউনিকেশন কিংবা বিদ্যুৎ প্রবাহ নষ্ট হতে পারে এমন কোনো পরিস্থিতি আগে থেকেই জানা যাবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Raoux
প্রথমে বুধ, তারপর সূর্য
দু’মাস এই স্যাটেলাইট উড়ে অক্টোবরে পৌঁছাবে বুধের পরিবেশে৷ বুধের গ্র্যাভিটি ব্যবহার করে পরে তা উড়ে যাবে সৌরমণ্ডল করোনায়৷ সেখানে পৌঁছাবে নভেম্বরে৷ সূর্য থেকে দেড় কোটি মাইল দূরে এই করোনা৷ সূর্যের এত কাছে আগে কখনোই যেতে পারেনি কেউ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Raoux
আরো কাছে
সাত বছরের পার্কার সোলার প্রোব মিশনে আরো ছয়বার স্যাটেলাইট উড়বে সূর্যের দিকে৷ মোট ২৪টি ফ্লাইবি উড়বে সূর্যের কাছে৷ ধীরে ধীরে সূর্যের সবচেয়ে কাছে যে ফ্লাইবিটি পৌঁছাবে তা থেকে সূর্যের দূরত্ব হবে মাত্র ৩৮ লাখ মাইল৷