পরীক্ষাব্যবস্থার সমালোচনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, সৃজনশীল পদ্ধতির অকার্যকারিতা৷ এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও মনে করেন, বাংলাদেশে সৃজনশীল পদ্ধতি মেধা বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারছে না৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সৃজনশীল পদ্ধতিটা শিক্ষকরা তেমন বোঝেন না, ছাত্রদেরও বোঝাতে পারেন না৷ পরীক্ষার সময় এটা একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে এই জন্য যে, কী প্রশ্ন করবেন তা প্রশ্নকর্তা নিজেও বোঝেন না৷ ফলে তিনি নোট, গাইডবুকের উপর নির্ভর করেন৷ ফলে এই পদ্ধতিতে মেধার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, ‘‘সৃজনশীল পদ্ধতি চলবে না৷ সৃজনশীল কোনো কাজ দিচ্ছে না৷ মাল্টিপল চয়েসও ঠিক না৷'' তাঁর মতে, ‘‘বই থেকে সরাসরি প্রশ্ন থাকবে, ছেলে মেয়েরা লিখে জবাব দেবে৷এই বিষয় সম্পর্কে সে যা জানে সেটা লিখবে৷ এর মাধ্যমে তার জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যাবে৷ তার ভাষাজ্ঞানেরও পরীক্ষা হবে৷ ভাষাজ্ঞানটাও শিক্ষা ব্যবস্থার একটা জরুরি অংশ৷''
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি
ডয়চে ভেলে: উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হচ্ছে৷ এই পদ্ধতিতে কি শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যাচ্ছে?
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: না, আমরা পারছি না৷ সৃজনশীল পদ্ধতিটা শিক্ষকরাও তেমন বোঝেন না৷ ছাত্রদেরও বোঝাতে পারেন না৷ পরীক্ষার সময় এটা একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে এই জন্য যে, কী প্রশ্ন করবেন প্রশ্নকর্তা নিজেও তা বোঝেন না৷ ফলে তিনি গাইডবুক, নোট এগুলোর উপর নির্ভর করেন৷ সেখান থেকেই তিনি এই প্রশ্নের ধারণা তৈরি করেন৷ প্রশ্ন হওয়া উচিত বই থেকে, ছাত্ররা যা পড়েছে৷ সৃজনশীলের আগে ‘মাল্টিপল চয়েস' নামে একটা পদ্ধতি ছিল, সেটাও ঠিক ছিল না৷ ওখানে দেখা যেত একটা ‘টিক' দিয়েই নম্বর পেয়ে যেত৷ এর অসুবিধার দিকটা হলো, এটার জন্য তো ওভাবে ঠিকমতো পড়ানোও করতে হয় না৷ দ্বিতীয়ত হলো, কেউ বোঝে না৷ আর তৃতীয়ত হলো, ছাত্ররা নম্বর পাওয়ার উপরই জোর দেয়, কীভাবে বেশি নম্বর পাওয়া যাবে৷ বিষয়ের বাইরে গোটা বইটা যে পড়বে, বুঝবে সে ব্যাপারে কোনো আগ্রহই নেই৷ এখন ছাত্রদের লিখতে উৎসাহিত করতে হবে৷ যেটা সে বুঝল, সেটা সে সঠিকভাবে লিখতে পারে কিনা৷ তাহলে বোঝা যাবে সে জানে কিনা এবং সে নিজের বোঝাটাকে প্রকাশ করতে পারে কিনা৷ লেখার উপর জোর দিতে হবে৷ সেজন্য সৃজনশীল দরকার নেই, মাল্টিপুল চয়েসেরও দরকার নেই৷ সরাসরি প্রশ্ন হওয়া উচিত৷
এখন পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় গ্রেডিং পদ্ধতিতে৷ আগে ছিল বিভাগ৷ বর্তমান পদ্ধতিটা কি সঠিক?
না, এটার খুব প্রয়োজন ছিল বলে আমার মনে হয় না৷ আগের পদ্ধতিটা যে খারাপ ছিল তা আমার মনে হয় না৷ এখানে বোঝাও যায় না ছাত্রটার মেধাটা কেমন, অন্যদের মধ্যে তার অবস্থানটা কী৷ এগুলো খুবই বিভ্রান্তিকর৷ আগেরটায় সরাসরি নম্বর জানা যেত, কে কতটা ভালো করল বোঝা যেত, আসলে আগেরটাই ঠিক ছিল বলে আমার মনে হয়৷
‘আলোকিত মানুষ’ গড়ছে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র
‘আলোকিত মানুষ চাই’ – এ স্লোগান নিয়ে ১৯৭৮ সালে যাত্রা শুরু করেছিল বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র৷ ঢাকা কলেজের পেছনে এক ছোট্ট মিলনায়তনে মাত্র ১৫ জন্য সভ্য নিয়ে শুরু করা সেদিনের সেই ছোট্ট প্রতিষ্ঠানটি আজ বিশাল মহীরূহে রূপ নিয়েছে৷
ছবি: DW
বাংলামোটরে নতুন ভবন
ঢাকার বাংলা মোটরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের নতুন ভবন৷ নয় তলা বিশিষ্ট এ ভবনের প্রায় ৫৭,০০০ বর্গফুট জুড়ে আছে সমৃদ্ধ পাঠাগার, চিত্রশালা, মিলনায়তন, সংগীত ও চলচ্চিত্র আর্কাইভ, অতিথি কক্ষ, বই বিক্রয় কেন্দ্র ইত্যাদি৷
ছবি: DW
প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ৷ গত প্রায় ৩৫ বছর ধরে যিনি নিরন্তর কাজ করে চলছেন আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে৷
ছবি: DW
যেখানে আছে দুই লাখ বই
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ভবনের ‘কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি’৷ এর সমৃদ্ধ সংগ্রহশালায় আছে প্রায় দুই লাখ বই৷ বছরে দশ হাজারের মতো পাঠক-পাঠিকা এই গ্রন্থাগার থেকে বই পড়ার সুযোগ পান৷ শুধু পাঠাগারেই নয়, এখান থেকে বই বাড়িতে নিয়ে পড়ারও সুযোগ আছে৷
ছবি: DW
প্রকাশনায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের নানান কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম প্রকাশনা কার্যক্রম৷ এই কর্মসূচির আওতায় বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও ভাষার শ্রেষ্ঠ বইগুলো প্রকাশ করে থাকে৷
ছবি: DW
ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার
বাংলাদেশে ভালো গ্রান্থাগার ব্যবস্থার অভাববোধ থেকেই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র চালু করে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার ব্যবস্থা৷ এই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার প্রতি সপ্তাহের নির্ধারিত সময়ে শহর ও গ্রাম মিলিয়ে গড়ে ৪০টি এলাকায় গিয়ে আধঘণ্টা থেকে দু’ঘণ্টা পর্যন্ত সদস্যদের মধ্যে বই দেওয়া-নেওয়া করে৷ ১৯৯৯ সালে চালু হওয়া এই কার্যক্রম বর্তমানে বাংলাদেশের ৫৮টি জেলার ২৫০টি উপজেলার ১৯০০ লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে৷
ছবি: DW
আছেন গ্রন্থাগরিক
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিগুলোর প্রতিটিতে কজ করেন একজন করে গ্রন্থাগারিক বা লাইব্রেরিয়ান৷ পাঠকদের কাছে বই বিতরণ, পাঠ শেষে বই বুঝে নেয়সহ ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির তদারকি করেন তাঁরা৷
ছবি: DW
সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারে সাধারণ সসদ্য ও বিশেষ সদস্য হয়ে বই পড়ার সুযোগ আছে সমাজের সব শ্রেণির, সব বয়সের মানুষের৷ সদস্যরা সপ্তাহের নির্ধারিত সময়ে এলাকায় আসা লাইব্রেরি থেকে পছন্দের বইটি বাড়িতে নিয়ে পড়ার সুযোগ পান৷
ছবি: DW
গাড়িতে পছন্দের বই পড়ার সুযোগ
সপ্তাহের নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারে বসেও বই পড়ার সুযোগ আছে পাঠকদের৷ এছাড়াও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে আছে দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম, আলোর স্কুল, আলোর পাঠশালা, শ্রবণ দর্শন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বই পড়ার কর্মসূচি ইত্যাদি৷
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
এই যে নতুন পদ্ধতিগুলো আসছে, তাতে কি শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক যাচাই হচ্ছে?
না, মেধার সঠিক যাচাই হচ্ছে না৷ পাশাপাশি মেধার বিকাশে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না৷ এখন সমস্ত গুরুত্ব হচ্ছে পরীক্ষায় নম্বর পাওয়ার উপরে৷ ছাত্ররা ক্লাস রুমে ঠিকমত পড়ে কিনা, শিক্ষকরা ঠিকমত ক্লাস নিচ্ছে কিনা, সময় দিচ্ছেন কিনা, শিক্ষকদের কতটা আগ্রহ আছে, তাদের প্রশিক্ষন আছে কিনা এবং তারা মনোযোগ দিয়ে পড়াচ্ছেন কিনা এখন এইগুলো দেখা হয় না৷শিক্ষক শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রে আছেন৷ শিক্ষক নির্বাচন এখানে খুব ভ্রান্ত পথে হয়, নানান প্রভাবে হয়৷ যার ফলে অযোগ্য লোকরা এখানে আসেন৷ এই অযোগ্য লোক আসার ফলে তাদের কোনো রকম প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না৷ যদি শিক্ষক ভালো মতো না পড়ান, তাহলে পরীক্ষা দিয়ে কী হবে, কিসের পরীক্ষা হচ্ছে, ছেলে-মেয়েরা তো পড়েই নাই৷ তখন ছেলে-মেয়েরা নোট বই, গাইড বই – এগুলোর উপর নির্ভর করে, কোচিং সেন্টারে যায়, তারা মনে করে কোচিং সেন্টারে না গেলে পাশ করা যাবে না৷ শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারকে যদি ক্লাস রুমের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাহলে সেটা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত বলেই আমার মনে হয়৷
সম্প্রতি এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে তুমুল বিতর্ক হয়েছে৷ সাক্ষাৎকারে দেখা যায়, গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাদের ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবস কবে তা-ও জানে না৷ এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এটা তো খুব একটা ব্যতিক্রম বলে আমি মনে করি না৷ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার এরকমই অবস্থা৷ এখন ছেলে-মেয়েদের তো আর সেভাবে পড়ানো হচ্ছে না, জানার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হচ্ছে না৷ শুধু নম্বর পাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷ তাছাড়া সাধারণ জ্ঞানের চর্চাকেও কোনোভাবে উৎসাহিত করা হয় না৷ সাধারণ জ্ঞানটা যে ক্লাস রুমে বা ক্লাস রুমের বাইরে জানানো হবে, সেটা একেবারে করা হচ্ছে না৷ এই থেকে বোঝা যাচ্ছে সাধারণ জ্ঞানের স্তরটা নেমে গেছে৷ এরা শুধু নম্বর পাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী, অন্য কিছু জানার ব্যাপারে আগ্রহী নয়৷ অভিভাবকরাও চান, তাদের ছেলে মেয়েরা ভালো নম্বর নিয়ে আসুক৷ তারা পাঠ্যপুস্তক জানবে বা বাইরের জ্ঞান আহরণ করবে এটা অভিভাবকরা দরকারই মনে করেন না৷ তারা মনে করেন, গ্রেড কী পেল সেটাই মুখ্য৷ ভালো গ্রেড পেলে তারা মনে করেন, ছেলে-মেয়েরা ভালো করেছে৷ কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা তো পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ নয়৷ তার তো সাধারণ জ্ঞান থাকতে হবে৷ না হলে একজন মানুষকে আমরা শিক্ষিত বলব কিভাবে? কাজেই আমরা শিক্ষিত মানুষ তৈরি করতে পারছি না বলেই আমি মনে করি৷
শিক্ষার্থীদের চোখে শিক্ষকদের মর্যাদা
শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কেমন চোখে দেখেন? ঢাকার কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে সেটিই জানতে চেয়েছিলেন আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
অনন্ত সাদ
ঢাকা নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী অনন্ত সাদ একজন শিক্ষকের ছেলে৷ তাঁর মতে, ‘‘মাতা-পিতার পরেই যাঁদের স্থান তাঁরাই হলেন শিক্ষক৷ আর এটা আমরা শিখেছি পরিবার থেকেই৷ শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে যতই রাগারাগি করেন না কেন সেটা আমাদের ভালোর জন্যই করে থাকেন৷ আমার বাবাও একজন শিক্ষক এবং তিনিই আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে শিক্ষকদের সম্মান করতে হয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
কাজী ফয়সাল আরেফিন
তিনিও ঢাকার নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী৷ তিনি মনে করেন, শিক্ষকদের সম্মান সবার উপরে৷ তাই শুধু ছাত্রদের নয়, সবারই উচিত শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান করা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মোহাম্মদ নাঈম
ঢাকার নটরডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাঈম৷ তাঁর মতে, ‘‘শিক্ষক হলেন আমাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার কারিগর৷ সেই শিক্ষকদের যদি সম্মান করা না হয় তাহলে আমাদের উন্নতি সম্ভব নয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
সুজানা জাহিদ
ঢাকার আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী সুজানা জাহিদ মনে করেন, শিক্ষকরা বাবা-মায়ের মতোই৷ সুজানা জানালেন, বাবা মা-কে যতটা সম্মান করেন, ঠিক ততটাই সম্মান করেন তিনি শিক্ষকদের৷
ছবি: DW/M. Mamun
মুনিয়া
ঢাকার মতিঝিল মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনিয়া শিক্ষকদের পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবেই দেখেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সারজিমা হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষার্থী সারজিমা হোসেন তৃমার বাবা-মা দুজনই শিক্ষক৷ তাঁর মতে, ‘‘আমাদের সমাজে বর্তমানে শিক্ষকদের সম্মান অনেক কমে গেছে৷ তবে আমরা সবসময়ই শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দিয়ে থাকি৷ আরেকটা বিষয় হলো, রাজনৈতিকভাবে শিক্ষদের অনেক হেয়, অসম্মান করা হয় যেটা বন্ধ হওয়া উচিত৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
মেহনাজ জাহান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের আরেক শিক্ষার্থী মেহনাজ জাহান বলেন, ‘‘শিক্ষকরা আমাদের গুরুজন৷’’ তাঁর মতে, শিক্ষকরা একেকজন পিতা-মাতা৷ সুতরাং তাঁরা যদি কোনো ভুলও করে থাকেন সেজন্য তাঁদের কোনোভাবেই অসম্মান করা যাবে না৷ ‘‘আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে সামান্য কিছু হলেও আমরা তাঁদের কাছে শিখেছি,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ইফতেখার ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডি বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের হাত ধরে এতদূর এসেছি, তাঁরাই হলেন আমাদের শিক্ষক৷ তাই তাঁদের সম্মান সবার আগে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
মাহবুবুর রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান৷ তাঁর মতে, বাবা-মা কোনো ভুল করলে যেমন আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে যেতে পারিনা, তেমনি শিক্ষকরাও ভুল করলে তাঁদের অসম্মান করতে পারিনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
তাহমিদ ইবনে আলম
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্যের শিক্ষার্থী৷ তাঁর মতে, শিক্ষকরা হাতে ধরে সবকিছু শিক্ষা দেন, সুতরাং তাঁদের সম্মান সবার আগে৷ কোনো শিক্ষার্থীরই উচিত হবে না শিক্ষকদের অসম্মান করা৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
গত দুই বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে কিনা – এ নিয়েও বিতর্ক চলে আসছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ভর্তি পক্ষীক্ষায় মাত্র ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাশ করেছেন৷ অন্যরা পাশই করতে পারেনি৷ কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হবে মেধাক্রম অনুযায়ী৷ আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কেমন হওয়া উচিত?
বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাক্রম অনুযায়ী ভর্তি হওয়া উচিত না৷ এই মেধার উপর তো নির্ভরই করা যাচ্ছে না৷ শিক্ষার্থীরা যে সমস্ত গ্রেড নিয়ে আসছে, নম্বর নিয়ে আসছে তা তো বিশ্বাসযোগ্য না৷ বিশ্ববিদ্যালয়কে অবশ্যই ছাত্রদের বাছাই করার স্বাধীনতা দিতে হবে৷ মান অনুযায়ী ছাত্রদের ভর্তি করবে৷ সে কারণে পরীক্ষা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কোনো সুযোগই নেই বলে আমি মনে করি, কেননা, তাহলে তো নির্ভর করতে হবে ওই যান্ত্রিক নম্বরগুলোর উপরে৷ এটা তো কোনো নির্ভরযোগ্য উপায় নয়৷
শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদ তো দেখাই যাচ্ছে৷ এখান থেকে বের হওয়ার উপায় হিসেবে আপনার পরামর্শ কী?
প্রথমত দেখতে হবে যে, উপযুক্ত শিক্ষকের ব্যবস্থা আমরা করতে পারছি কিনা৷ উপযুক্ত শিক্ষক মানে, যারা যোগ্য, যাদের আগ্রহ আছে এবং যারা সময় দিতে পারেন৷ আর সেজন্য শিক্ষকদের দুটো জিনিস নিশ্চিত করতে হবে৷ একটা হলো, তাদের যথাপোযুক্ত বেতন-ভাতা দিতে হবে৷ এবং দ্বিতীয়ত, সামাজিক যে সম্মান সেটা তাদের দিতে হবে৷ শিক্ষকদের সামাজিক সম্মান তো কমে গেছে৷ এর জন্য স্কুল কলেজ বা যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে কী ঘটছে তার একটা জবাবদিহিতা থাকা উচিত৷ প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে৷ আর এই জবাবদিহিতা শুধু সরকারিভাবে করা যাবে না, সেটা সামাজিকভাবেও করতে হবে৷ সামাজিকভাবে করার উপায় হলো, যে পরিচালনা কমিটি আছে, সেই কমিটি যাতে যথাপোযুক্তভাবে গঠিত হয়৷ এতদিন এমপিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হতেন৷ এটা খুবই খারাপ একটা বিষয় ছিল৷ এটা বাদ হয়েছে, এটা ভালো৷ এখন দেখতে হবে, প্রকৃত শিক্ষানুরাগীরা ওই কমিটিতে নির্বাচিত হচ্ছেন কিনা৷ টাকার জোরে বা টাকা উপার্জনের জন্য ওই কমিটিতে যাওয়া নিরুৎসাহিত করা উচিত৷ শিক্ষানুরাগী, প্রাক্তন শিক্ষক, সমাজের যারা শিক্ষিত মানুষ তাদেরই পরিচালনা কমিটিতে আনা উচিত৷
শিশুদের নানা রকমের ক্লাসরুম
বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষাজীবন৷ সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য শিশুদের শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই৷ চলুন দেখা যাক, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রেণিকক্ষে শিশুদের কীভাবে লেখাপড়া শেখানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/landov
বেশির ভাগ দেশের শ্রেণিকক্ষে যা থাকে...
বিশ্বের প্রায় সব দেশের শ্রেণিকক্ষেই চক আর ব্ল্যাক বোর্ড থাকে৷ শিক্ষক বা শিক্ষিকা সেই ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে শিক্ষার্থীদের বোঝান৷ শিক্ষার্থীরা বেঞ্চে বসে বসে শোনে৷ তবে অনেক দেশই এই সাবেকি ব্ল্যাকবোর্ড এবং চক ছেড়ে দিয়েছে৷ আবার এমন দেশও আছে, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের মাথার ওপরে কোনো ছাদ নেই৷ মাটিতে বসেই লেখাপড়া করতে হয় তাদের৷
ছবি: AP
দক্ষিণ কোরিয়ায় ডিজিটাল বই...
দক্ষিণ কোরিয়ার স্কুলে এসে গেছে কম্পিউটার৷ ইন্টারনেট সংযোগও দেয়া হয়েছে প্রতিটি ক্লাসরুমে৷ অর্থাৎ ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের হাতে কোনো বই-খাতা থাকবে না৷ বইয়ের পরিবর্তে ‘ই-বুক’ দেয়া হবে তাদের৷ সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার৷ সবাইকে ডিজিটাল শিক্ষাদান পদ্ধতির আওতায় নিতে দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের বিনামূল্যে ‘ট্যাবলেট পিসি’ দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: AP
ঘানার শিশুদের অবস্থা
অনেক দেশের স্কুলে আবার কম্পিউটার তো দূরের কথা, ক্লাসরুমই নেই৷ আফ্রিকার দেশ ঘানার এই স্কুলটি দেখুন৷ ভবনই নেই! তাই গাছের ছায়াতেই নেয়া হচ্ছে ক্লাস৷ শিক্ষিকা পড়াচ্ছেন আর ছোটমনিরা বেঞ্চে বসে মন দিয়ে শুনছে তাঁর কথা৷
ছবি: Fotolia/Living Legend
জার্মানির অত্যাধুনিক ক্লাসরুম
জার্মানিতে কিন্তু ছোট ছোট বাচ্চারাও ক্লাসে পেন্সিল ব্যবহার করে না৷ নোট লেখার বইও নয়৷ টাচ প্যাড, স্মার্টবোর্ড, নেটবুক – এই সমস্ত আধুনিক জিনিসপত্র এ বয়সেই এসে গেছে তাদের হাতে৷
ছবি: AP
যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল
শিল্পোন্নত দেশগুলোতে শিশুদের শিক্ষা যেন বাড়তি চাপ৷ ছবির এই চার বছর বয়সি শিশুগুলোর মতো সব শিশুকেই বলতে গেলে মায়ের কোল থেকে নেমে ঢুকে পড়তে হয় স্কুলে৷ চাপ যে তখন থেকেই শুরু!
ছবি: AP
কেনিয়ার স্কুল এবং ক্লাসরুম
কেনিয়ায় শিক্ষাজীবনের প্রথম আট বছর শিক্ষার্থীদের কোনো বেতন দিতে হয় না৷ তারপরও লেখাপড়া করা সবার জন্য খুব সহজসাধ্য নয়৷ দরিদ্র পরিবারের বাবা-মায়েরা বই-খাতা, পেন্সিল, পোশাক, জুতো ইত্যাদির খরচ জোগাতে পারেন না বলে অনেক শিশুকেই লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়৷
ছবি: DW/J.Bruck
ব্রিটেনের স্কুলে ‘ইউনিফর্ম’ বাধ্যতামূলক
ইংল্যান্ডের প্রায় সব স্কুলেই শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত পোশাক পরতে হয়৷ সবাই এক রকম পোশাক পরলে শিক্ষার্থীদের চিনতে সুবিধা হয় এবং তাদের পড়াশোনাতেও মন বসে – এমন কিছু যুক্তিতেই শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট পোশাক পরার নিয়ম মানছে স্কুলগুলো৷ তবে ব্রিটেনে একটা সুবিধা আছে৷ দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ হিসেবে অনুদান দেয়া হয়৷ ফলে দরিদ্ররা চাইলেই ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
পাকিস্তিনে অবহেলিত শিক্ষাখাত
পাকিস্তানে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমিয়ে সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে৷ ফলে শিক্ষার হার আরো কমছে, কমছে স্কুলও৷ ওপরের ছবিতে একটি পার্কে লেখাপড়া করতে দেখা যাচ্ছে শিশুদের৷ পাকিস্তানে এমন দৃশ্য অপরিচিত নয়৷
ছবি: AP
দক্ষিণ সুদানে মেয়েরা বিপদে...
দক্ষিণ সুদানেও প্রায় একই অবস্থা৷ গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রীতিমতো সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে৷ সে দেশের মাত্র ১৬ ভাগ নারী এখন কোনো রকমে পড়তে এবং লিখতে পারে৷ যুদ্ধের ধ্বংসলীলা থেকে হাতে গোনা যে কয়েকটি স্কুল রক্ষা পেয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলোতে চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ নেই৷ বই-পত্রও নেই কিছু স্কুলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উন্নতিশীল ব্রাজিলেরও করুণ অবস্থা
দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে ব্রাজিলে৷ কিন্তু তাতে দরিদ্রদের ভাগ্যের খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না৷ গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে তাই খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয় শিশুদের৷
ছবি: dapd
উন্নতিশীল ব্রাজিলেরও করুণ অবস্থা
দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে ব্রাজিলে৷ কিন্তু তাতে দরিদ্রদের ভাগ্যের খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না৷ গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে তাই খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয় শিশুদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এবং বাংলাদেশ...
২০১৩ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের সময় অসংখ্য স্কুলের ক্ষতি সাধন করা হয় বাংলাদেশ৷ এ বছর দীর্ঘদিন হরতাল, অবরোধ চলায় স্কুলগুলোও অনেক দিন বন্ধ ছিল৷ এক পর্যায়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্লাস নিতে শুরু করে কিছু স্কুল৷ হরতাল-অবরোধের কারণে সপ্তাহের ৫-৬ দিন গৃহবন্দী, তারপর ছুটির দিনে স্কুলবন্দী৷ বাংলাদেশের শিশুদের অসহায়ত্ব ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/landov
12 ছবি1 | 12
এসএসসি ও এইচএসসিতে যে পরীক্ষা পদ্ধতি আছে তা কি সঠিক বলে মনে করেন?
আমার বক্তব্য হলো, এই যে সৃজনশীল পদ্ধতি এটা চলবে না৷ সৃজনশীল কোনো কাজ দিচ্ছে না৷ মাল্টিপল চয়েসও আমি পছন্দ করব না৷ আমি পছন্দ করব এমন পদ্ধতি যেখানে বই থেকে সরাসরি প্রশ্ন থাকবে, ছেলে-মেয়েরা লিখে জবাব দেবে৷ এই বিষয় সম্পর্কে সে যা জানে সেটা লিখবে৷ এর মাধ্যমে সে তার জ্ঞানের পরিচয় দেবে৷ এবং সে তার জ্ঞানকে প্রকাশ করতে পারছে কি-না সেটাও ধরা পড়বে৷ তার ভাষা জ্ঞানটাও পরীক্ষিত হবে৷ ভাষা জ্ঞানটাও শিক্ষা ব্যবস্থার একটা জরুরি অংশ বলে আমি মনে করি৷
বন্ধু, আপনি কি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে একমত? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷