শিল্পের উপাদান যদি খাদ্য হয়, তাহলে সেই শিল্প কি আর স্থায়ী হতে পারে? বেলজিয়ামের এক ‘ফুড আর্ট' শিল্পীর অভিনব সৃষ্টিও সেভাবে শুধু সোশাল মিডিয়ায় অমর থেকে যায়৷ তিনি বিখ্যাত মানুষ থেকে পশুপাখির মতো অনেক বিষয় ফুটিয়ে তোলেন৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
আলু দিয়ে তৈরি ওরাং ওটাং, সুশির মধ্যে ধনেশ পাখি, কেকের মধ্যে টিনটিন ও তার বাহনের প্রতিকৃতি অথবা ফুলকপি দিয়ে তৈরি মার্কিন পপ তারকা বিলি আইলিশ৷ ইয়োলান্ডা স্টকারমান্স এমন সব ভোজ্য শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছেন৷ কিছু সহজ উপাদান দিয়ে বাভেরিয়ার এক পরিচারিকার মূর্তি তৈরি করছেন তিনি৷ পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে ইয়োলান্ডা বলেন, ‘‘প্রথমে আলুর খোসা ছাড়াতে হবে৷ কারণ এটি দিয়ে কাজ করা খুব সহজ৷ অনেকটা কাদামাটির মতো৷ যেমন খুশি আকার সৃষ্টি করা যায়৷ উপরে রং করা যায়৷ সেটির উপর তরিতরকারি ও চিজ বসানো যায়৷’’
আলু সিদ্ধ হবার সময় কাজে লাগিয়ে তিনি শাকসবজি দিয়ে পরিচারিকার পোশাক তৈরি করেন৷ বেলজিয়ামের উত্তর-পূর্বে কুয়ের্সেল শহরে নিজের বাসায় ইয়োলান্ডা রান্না করতে ভালবাসেন৷ ফুড ডিজাইনার হিসেবে নিজের দুটি পছন্দের বিষয়ের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়ে তিনি নিজেই বিস্মিত৷ প্রথমদিকে তিনি ‘মিল প্রেপার' হিসেবে সারা সপ্তাহের রান্নার জোগাড় করতেন৷ ইন্টারনেটে আরও নজর আকর্ষণ করতে তিনি নিজের পদগুলি আরও সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিবেশন করেন৷ ইয়োলান্ডা বলেন, ‘‘সবাই আরও এমন সৃষ্টি দেখতে চেয়েছে৷ কেউ মিল প্রেপ চায় নি৷ সবাই ফুড আর্ট চাওয়ায় আমি গোটা ওয়েবসাইটই বদলে দিলাম৷’’
খাদ্য দিয়ে শিল্পকর্ম
03:47
This browser does not support the video element.
ইতোমধ্যে তিনি ওয়ার্কশপ আয়োজন ও অর্ডার নেওয়া শুরু করেছেন৷ মাখা আলু দিয়ে আপাতত তিনি মূর্তির ভিত্তি নিয়ে ব্যস্ত৷ ফুড কালার দিয়ে তিনি আলুর উপর রং করেন৷ ক্রিম চিজ দিয়ে বিয়ারের ফেনা তৈরি হয়৷ ক্যাপসিকাম ও সুকিনি দিয়ে পরিচারিকার পোশাকও প্রস্তুত৷ ইয়োলান্ডার মাথায় আইডিয়ার অভাব নেই৷ চলচ্চিত্রের চরিত্র থেকে শুরু করে বিখ্যাত মানুষ, এমনকি জীবজন্তুও তাঁর সৃষ্টির বিষয় হতে পারে৷ জার্মানির মতো ভিন দেশের সংস্কৃতি থেকেও তিনি প্রেরণা পান৷ ইয়োলান্ডা বলেন, ‘‘যখনই কিছু সৃষ্টি করি, তখনই আমার মনে নিজেকে গুটিয়ে নেবার নতুন কোনো আইডিয়া আসে৷ কারণ সারাদিন আমি এই কাজ করতে পারি না৷''
চার ঘণ্টা পর কাজ শেষ৷ বাভেরিয়ার পরিচারিকা বিয়ার পরিবেশন করতে প্রস্তুত৷ অবশ্যই খাদ্য হয়ে ওঠা পর্যন্ত সেটির অস্তিত্ব নিশ্চিত থাকে৷ অতএব সোশাল মিডিয়ার জন্য চট করে ছবি তুলে নিতে হয়৷ শেষে সেই সৃষ্টির স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়৷ কয়েক ঘণ্টার পরিশ্রমের ফসল হলেও বাভেরিয়ার পরিচারিকা নিমেষের মধ্যে দিব্যি মুখে মিলিয়ে যায়৷
ক্রিস্টোফারো/ভার্ডার/এসবি
জনপ্রিয় শিল্পীদের চুরি
গত কয়েক বছরে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে গান এবং শিল্পক্ষেত্রে। মামলা হয়েছে। ক্ষতিপূরণও দিতে হয়েছে শিল্পীদের। দেখে নেওয়া যাক তেমনই কিছু ঘটনা।
ছবি: picture alliance/dpa/J.Lo Scalzo
নিকি মিনাজ বনাম ট্রেসি চ্যাপম্যান
সম্প্রতি একটি মামলা প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে নিকি মিনাজ গায়ক এবং গান লেখক ট্রেসি চ্যাপম্যানকে চার লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। মিনাজ 'সরি' বলে একটি গান তৈরি করেছেন। যেখানে চ্যাপম্যানের 'বেবি ক্যান আই হোল্ড ইউ' গানটির কিছু অংশ ব্যবহার করেছেন। চ্যাপম্যানের কাছে ওই অংশটি ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করেছিলেন নিকি। চ্যাপম্যান রাজি হননি। এরপরেই চ্যাপম্যান মামলা করেন।
ছবি: AP Photo/picture alliance
লেড জেপেলিন বনাম স্পিরিট
রক মিউজিকের ইতিহাসে 'স্টেয়ারওয়ে টু হেভেন' অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গান। কিন্তু তা কি সত্যিই জিমি পেজ এবং রবার্ট প্লান্টের লেখা ছিল? স্পিরিট ব্যান্ডের গিটারিস্ট এবং গায়ক রান্ডি উলফ এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ২০১৪ সালে। ২০২০ সালে অবশ্য অ্যামেরিকার একটি আদালত জানিয়েছে, উলফের গান থেকে স্টেয়ারওয়ে টু হেভেনের কোনো অংশ চুরি করা হয়নি। যদিও তাতেও বিতর্ক থামেনি।
ছবি: picture-alliance/Photoshot
লানা ডেল রে বনাম রেডিওহেড বনাম দ্য হোলিস
লানা ডেলের গান 'গেট ফ্রি'য়ের সঙ্গে রেডিওহেডের গান 'ক্রিপ'এর বহু মিল। প্রায় সকলেই এ কথা স্বীকার করেন। রেডিওহেড তাই একাধিকবার দাবি করেছে, লানা ডেলের গানে তাদের ক্রেডিট দিতে হবে। কিন্তু রেডিওহেডের গানটি নিয়েও বিতর্ক আছে। বলা হয়, ১৯৭৪ সালে তৈরি হোলিসের গান 'দ্য এয়ার দ্যাট আই ব্রিদ' থেকে রেডিওহেড সুর এবং কথা চুরি করেছিল।
ছবি: Imago/PA Images/D. Lawson
স্যাম স্মিথ বনাম টম পেটি
২০১৪ সালে স্যাম স্মিথের 'স্টে উইথ মি' প্রচুরি বিতর্ক তৈরি করেছিল। শ্রোতাদের অনেকেই বলেছিলেন টম পেটির 'আই ওন্ট ব্যাক ডাউন'এর সঙ্গে স্যাম স্মিথের গানটির প্রচুর মিল। স্যাম স্মিথ গানের রয়্যালটি ভাগ করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এমন হতেই পারে।
ছবি: picture-allianc/empics/Y. Mok
রোবিন এবং উইলিয়ামস বনাম মারভিন গায়ে
রোবিন থিকে এবং ফ্যারেল উইলিয়ামসের 'ব্লার্ড লাইনস' খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু তখনই জানা যায়, গানটি মারভিন গায়ের 'গট টু গিভ ইট আপ' থেকে চুরি করা। রোবিন এবং উইলিয়ামসকে সাত মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা দিতে হয়েছিল।
দুই সেকেন্ডের সাউন্ড ২০ বছরের মামলায় পরিণত হয়েছিল। প্রযোজক মোসেস দুই সেকেন্ডের একটি সাউন্ড নিয়েছিলেন বিখ্যাত জার্মান ব্যান্ড ক্রাফটওয়ার্কের 'মেটাল আফ মেটাল' থেকে। সাবরিনার একটি গানে তিনি সেটা ব্যবহার করেছিলেন। ইউরোপীয় কোর্ট পর্যন্ত সেই মামলা গড়িয়েছিল।
ছবি: picture-alliance/dpa/RMV via ZUMA Press/Mike Tudor
শাকিরা বনাম রামন আরিয়াস ভাস কুয়েজ
শাকিরাও চুরির অপরাধ থেকে মুক্ত থাকতে পারেননি। ২০১৪ সালে অ্যামেরিকার এক আদালত জানায়, তাঁর বিখ্যাত গান 'লোকা' রামন এরিয়াসের একটি গান থেকে চুরি করা। যদিও তার আগেই শাকিরার অ্যালবাম কয়েক লাখ বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।
ছবি: Getty Images/R.Juergens
ডিলানের নোবেল বক্তৃতা
মার্কিন সাংবাদিক অ্যান্ড্রিয়া পিটজার অভিযোগ করেন, বব ডিলানের নোবেল স্পিচের প্রথম ২০ টি বাক্য চুরি করা। বিখ্যাত উপন্যাস মবি ডিকের একটি অনলাইন ইন্টারপ্রিটেশন থেকে ডিলান ওই লাইনগুলি নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।