1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সেক্স এডুকেশন বলতে ‘তারা’ কী বোঝেন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩১ মার্চ ২০১৯

বাংলাদেশে আবারো যৌন শিক্ষার (সেক্স এডুকেশন) বিরোধিতায় নেমেছে কিছু ইসলামী সংগঠন৷ তাদের কথা এই শিক্ষার দরকার নেই৷ বড় হলে এমনিতেই জানবে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সেক্স এডুকেশন বলতে তারা কী বোঝেন?

Symbolbild Sex education Aufklärung Sexualerziehung
ছবি: Colourbox

বাংলাদেশে ২০১০ সালের শিক্ষানীতি অনুয়ায়ী এখন ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে পাঠ্যপুস্তকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অন্তর্ভূক্ত হয়৷ শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নামের বইয়ে একটি চ্যাপ্টার বরাদ্দ করা হয়েছে৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ৭ম শ্রেণির বইয়ে বিষয়গুলো এভাবে রাখা হয়েছে: আমাদের জীবনে বয়ঃসন্ধি কাল, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, ভ্রান্ত ভাবনা, নিরাপদ থাকার উপায়, ঝুঁকি ও নিরাপত্তা, খাদ্য ও লজ্জার কিছু নেই ইত্যাদি৷ এছাড়া এইডস ও এইচআইভি নিয়েও আলাদা চ্যাপ্টার আছে৷

এটা পাঠ্য বইয়ে থাকলে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনে যাতে বিষয়গুলো বুঝতে পারে, সেজন্য ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন এবং কুসংস্কারমুক্ত করতে ২০১৪ সালে নেয়া হয় ‘জেনারেশন ব্রেক থ্রু‘ পাইলট প্রকল্প৷ প্রকল্পে পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল ও ঢাকা মহানগরের ৩০০টি হাইস্কুল ও ৫০টি মাদ্রাসায় এই প্রকল্প চালু করা হয়৷

‘স্কুলে শেখানো হচ্ছে যৌনকর্ম কিভাবে করতে হয়’: জয়নাল

This browser does not support the audio element.

এর আগে পাঠ্য বইয়ে যৌন শিক্ষার বিরোধিতা করা হয়েছে৷ আর এখন বিরোধিতা করা হচ্ছে এই প্রকল্পের৷

শনিবার এক বিবৃতিতে স্কুল পর্যায়ে শ্রেণিকক্ষে একসাথে ছেলে-মেয়েদের যৌন শিক্ষা বন্ধের দাবি জানিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ৷ সংগঠনের সভাপতি আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়েখে ইমামবাড়ি ও মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারের ‘জেনারেশন ব্রেকথ্রু' নামের একটি প্রকল্পের আওতায় ‘কিশোর কিশোরী কর্নার' এবং ‘জেন্ডার ইকুয়িটি মুভমেন্ট ইন স্কুলস'(জেমস) এর মাধ্যমে ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতিবিরোধী কুশিক্ষার মাধ্যমে জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পশ্চিমাদের মত লজ্জাহীন করে পশুতে পরিণত হওয়ার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে৷ অবিলম্বে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের সুকুমারবৃত্তি ও চরিত্র বিধ্বংসী স্কুল পর্যায়ের যৌনশিক্ষা বন্ধ করতে হবে৷ অন্যথায় গণমানুষকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে৷''

বিবৃতিতে তারা দাবি করেন,‘‘যৌনবিষয়ক এই শিক্ষা কিশোর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কৌতুহলী করে তুলবে এবং অবাধ যৌন মিলনে তাদের মনে ইন্ধন যোগাবে৷ আর এতে করে আমাদের পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে৷''

তাদের কথা, ‘‘যৌনবিষয়ে সচেতনতার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করি না৷ কেননা, এটা জটিল কোনো বিষয় না৷ বয়স বাড়তে বাড়তে প্রাকৃতিকভাবেই তারা এই শিক্ষা পেয়ে যায় এবং অবশিষ্ট শিক্ষা ছেলে-মেয়েরা বয়সে কিছু সিনিয়রদের কাছ থেকেও পেয়ে থাকে৷ পশ্চিমাদেরকে যৌনশিক্ষা ও অবাধ যৌনাচার পরিবার ও সমাজ ভেঙে দেয়াসহ অসংখ্য প্রাণঘাতী যৌনরোগে ডুবিয়েছে৷''

‘আমরা মূলত জেন্ডার নিয়ে কাজ করছি’: জাহাঙ্গির

This browser does not support the audio element.

তবে তাদের বিবৃতিতে তারা যৌনশিক্ষার কোনো ব্যাখ্যা বা যৌন শিক্ষা বলতে তারা কী বোঝেন তা বলেননি৷ এ নিয়ে জানতে চাইলে সংগঠনের সহ সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি৷ তবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নাল আবেদীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সেক্সএডুকেশন বলতে আমরা বোঝাচ্ছি এখন যে এখন স্কুলে শেখানো হচ্ছে যৌনকর্ম কিভাবে করতে হয়৷ মানুষের শারীরিক প্রক্রিয়া৷ কখন কী হয় না হয় এগুলো৷ আমরা মনে করি এগুলো শেখানোর দরকার নেই৷ এগুলো আমাদের ইসলামি মূল্যবোধ বিরোধী৷ আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে৷''

ব্রেক থ্রু প্রকল্পটির প্রধান হলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এই প্রকল্পের প্রধান দু'টি উদ্দেশ্য৷ একটা হলো তারা যেন জেন্ডার ইকুইটেবল (সাম্য) বিহেভ করে৷ তারা যেন সংবেদনশীল, রেসপসনিভ এবং জেন্ডার সাম্য আচরণ করতে শেখে৷ আর দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো, তারা যেন রিপ্রোডাকটিভ হেলথ (প্রজনন স্বাস্থ্য) রাইট এবং এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে পারে৷''

তিনি বলেন, ‘‘তাদের এটা বইয়ের ভাষায় জানানো হয় না৷ তাদের নানা ধরনের গেমস, ইভেন্টস-এর মাধ্যমে তাদের আত্মস্থ করার সুযোগ দেয়া হয়৷ তাদের কোনো জায়গায় কোনো প্রশ্ন থাকলে প্রশিক্ষিত শিক্ষক থাকেন, তারা জবাব দেন৷ সরাসরি কোনো আলোচনা থাকে না৷ সরাসরি কোনো এ্যাক্টিভিটিজ নেই৷''

‘আরো প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন’: আলমগীর

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘তবে কারুর কারুর মধ্যে এই সেক্স এডুকেশন নিয়ে ভুল ধারণা আছে৷ তারা সেক্সকে আমাদের প্রচলিত ধারায় চিন্তা করছেন৷ কিন্তু আমরা মূলত জেন্ডার নিয়ে কাজ করছি৷ জেন্ডার ইকুইয়িটি নিয়ে কাজ করছি৷ এই জেন্ডার বিষয়টিই তারা বোঝেন না৷ সমাজে এক ধরনের ট্যাবুর কারণে কেউ কেউ এর বিরোধিতা করছেন৷''

এদিকে বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালি হাইস্কুল ও কলেজের প্রিন্সিপাল আলমগীর হোসেন খান বলেন, ‘‘আমাদের এখানে কিশোর-কিশোরী ক্লাব আছে৷ এই ক্লাবে সপ্তাহে একনি ছুটির দিনে তাদের নিয়ে কাজ হয়৷ তাদের বয়ঃসন্ধিকাল, ইভটিজিং না করা, পারস্পরিক সম্মানবোধ এগুলো বোঝানো হয়৷ সরকারের প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা তাদের গাইড করেন৷ এর বাইরে পাঠ্যপুস্তকে যা আছে তাও ক্লাসে পড়ানো হয়৷ তবে তা পড়াতে আরো প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন৷ প্রয়োজন নারী শিক্ষক৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সামাজিক কারণে শিক্ষকদের কেউ কেউ বিষয়গুলো নিয়ে লজ্জা পান৷ ধারণা না থাকায় এরকম হচ্ছে৷ কেউ কেউ বিরোধীতাও করেন৷ তবে এই শিক্ষার প্রয়োজন আছে৷ এতে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে৷''

জেনারেশন ব্রেক থ্রু প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শেষ হয়েছে৷ ইউএনডিপির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এটি বাস্তবায়ন করা হয়৷ তবে নতুন ৫টি জেলার ২৫০টি স্কুলে আবার চালু হচ্ছে৷ ক্যানাডা সরকার অর্থায়ন করবে৷ আর সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব স্কুলে আগামী অর্থবছর থেকে চালু হবে৷ আর ২০২৩ সালের মধ্যে বাকি ৬টি বিভাগের ৫০ ভাগ স্কুলে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ