শহরের মধ্যে ফ্লেমিঙ্গো পাখি বিশ্বের খুব বেশি শহরে দেখতে পাওয়া যায় না৷ পশ্চিম ভারতের মুম্বইতে একটি ব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা চলেছে৷ সেই ব্রিজ যাবে ঠিক এই ফ্লেমিঙ্গোদের আবাসের ওপর দিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
ফ্লেমিঙ্গো পাখিরা মুম্বইতে বাসা বেঁধেছে প্রায় ২০ বছর আগে – বাসা বেঁধেছে মানে তারা যাযাবর পাখি: বছরে পাঁচমাস করে তারা দক্ষিণ মুম্বইয়ের সেবড়ি এলাকায় দিন কাটায়৷ অথচ সেবড়ির বাসিন্দারাও জানেন না যে, মুম্বই ছাড়া একমাত্র নাইরোবি আর মায়ামিতে এভাবে ফ্লেমিঙ্গোদের দেখতে পাওয়া যায়৷
ওদিকে মুম্বই বন্দরের এপাশ থেকে ওপাশ জুড়ে একটি ব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা চলেছে, মুম্বই ট্রান্স হার্বর লিংক৷ এই ব্রিজ যাবে ঠিক সেই এলাকার ওপর দিয়ে, ফ্লেমিঙ্গোরা যেখানে খাবার খোঁজে ও বাসা বাঁধে৷ বম্বে ন্যাচারাল হিস্টরি সোসাইটি নিয়মিত সেবড়িতে ফ্লেমিঙ্গো দেখার ব্যবস্থা করে থাকে৷
মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই ফ্লেমিঙ্গোরা থাকে রাজস্থানের থর মরুভূমির গ্রেটার রান অফ কচ-এ৷ এই মরশুমি নোনা জলের হৃদ বা জলাভূমি এলাকাটি পাকিস্তান সীমান্তের কাছে৷ রান-এর কাদামাটির চরগুলি বর্ষায় আধ মিটার জলে ডুবে থাকে৷ সেই জলের ওপর ভেসে থাকা কাদার ঢিবিতে ডিম পাড়ে ফ্লেমিঙ্গোরা৷ তারপর ঠান্ডা পড়লে তারা ৬০০ কিলোমিটার উড়ে যায় মুম্বইয়ের সেবড়ি বে-তে, যেখানে তিনধারে ম্যানগ্রোভ অরণ্য৷ সেবড়ি বে-ও নিয়মিত জলে ডুবে যায়৷
জলের তলার বালির চর বেশ সমতল, কাজেই জোয়ার এলে প্রতিবারই ফ্লেমিঙ্গোদের জন্য প্রচুর খাবার ভেসে আসে৷ ওদিকে উপকূলে একটা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থাকায় এখানকার পানি বেশ গরম, ফ্লেমিঙ্গোরা যা পছন্দ করে৷ ফ্লেমিঙ্গোরা সামাজিক জীব, হাজারে হাজারে দল বেঁধে থাকতে ভালোবাসে৷ খাবার সময় তারা ঠোঁট দিয়ে জলকে ছাঁকনির মতো ছেঁকে ছোট ছোট চিংড়ি, কাঁকড়া, শ্যাওলা ইত্যাদি বার করে খায়৷ শুধু এই ফ্লেমিঙ্গোদের কারণে মুম্বই ট্রান্স হার্বর লিংক সেতুটি তৈরি বন্ধ রয়েছে গত ৩০ বছর ধরে৷ নয়ত ব্রিজটার যাওয়ার কথা সেবড়ি থেকে উরান ক্রিক অবধি, ২২ কিলোমিটার দূরে, যেখানে মুম্বইয়ের ভবিষ্যৎ বিমানবন্দর তৈরি হবে৷ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সেতু তৈরির কাজ শুরু হওয়ার কথা৷ ব্রিজ তৈরি হতে লাগবে পাঁচবছর৷ তারপর সেবড়ি বে-র ৩০ হাজার ফ্লেমিঙ্গোদের মাথার ওপর দিয়ে বইবে অবিশ্রান্ত যানবাহনের স্রোত; জলে থাকবে নানা ধরনের ধাতব, রাসায়নিক পদার্থ৷ ফ্লেমিঙ্গোরা এ সব থেকে পালিয়ে অন্য কোথাও যাবে৷ মুম্বই হারাবে তার ফ্লেমিঙ্গোদের৷
দূরপাল্লার উড়ালে যাযাবর পাখি
ছোট ছোট পাখি, কিন্তু তাদের মধ্যে এমন পাখিও আছে, যারা বছরে ওড়ে ৪০,০০০ মাইল! পক্ষিজগতের এক লিন্ডবার্গ অ্যালাস্কা থেকে নিউজিল্যান্ড সাত হাজার মাইল পথ উড়ে গেছিল ন’দিনে, একবারও না থেমে, দানাপানি ছাড়াই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/McPHOTO
সুটি শিয়ারওয়াটার
এই পাখিরা বসন্তে ডিম পাড়ে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে; গরমে যায় উত্তর মেরুর কাছে খাবারের খোঁজে; আবার হেমন্তে ফকল্যান্ড আইল্যান্ডে ফিরে আসে৷ বেশি নয়, এই ধরুন ৪০ হাজার মাইল, বা ৬৪ হাজার কিলোমিটারের একটা রাউন্ড ট্রিপ – জীবনে একবার নয়, প্রতি বছর৷
ছবি: Imago/Nature Picture Library
পায়েড হুইটইটার
ছোট্ট এই পোকামাকড়খেকো পাখিটি ইউরোপের দক্ষিণপূর্ব প্রান্ত থেকে চীন অবধি যায়; শীত কাটায় ভারত আর উত্তর-পূর্ব আফ্রিকায়৷ ব্রিডিং গ্রাউন্ড, মানে ডিম পাড়ার জায়গা থেকে উইন্টারিং গ্রাউন্ড, মানে শীত কাটানোর জায়গা, আবার সেখান থেকে ফেরৎ আসতে পায়েড হুইটইটারকে উড়তে হয় বছরে মোট ১১,০০০ মাইল বা ১৭,০০০ কিলোমিটার৷
ছবি: Imago/All Canada Photos
পেক্টোরাল স্যান্ডপাইপার
এই পাখিটি উত্তর-পূর্ব এশিয়া, বা অ্যালাস্কা, কিংবা মধ্য ক্যানাডার তুন্দ্রা অঞ্চলে ডিম পাড়ে, কিন্তু শীত কাটায় দক্ষিণ অ্যামেরিকায় – এশিয়ার পাখিগুলো নাকি অস্ট্রেলিয়া এমনকি নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত যায়৷ একটু ঘোরাঘুরি হয় বৈকি, এই ধরা যাক বছরে ১৮,০০০ মাইল বা ২৮,০০০ কিলোমিটার৷ তবে নিজের এয়ারলাইন্স থাকলে আর অসুবিধা কি!
ছবি: Imago/All Canada Photos
শর্ট-টেইলড শিয়ারওয়াটার
চাচেরা ভাই ‘সুটি-’র মতো অত ঘোরাঘুরিতে বিশ্বাস করে না এই শিয়ারওয়াটার পাখি৷ অস্ট্রেলিয়ায় (দক্ষিণ গোলার্ধের) শীতে ডিম পাড়ার পর, উত্তরে আলয়শিয়ান দ্বীপপুঞ্জ আর কামস্কাটকা অবধি যায়; নামে উত্তর অ্যামেরিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর – তারপর সাগর পাড়ি দিয়ে আবার ফিরে যায় অস্ট্রেলিয়ায়৷ এভাবে প্রশান্ত মহাসাগর চক্কর দিয়ে আসতে উড়তে হয় ২৭,০০০ মাইল বা ৪৩,০০০ কিলোমিটার৷ তবে মাইলেজ জমা হয় বৈকি!
ছবি: Imago/Bluegreen Pictures
নর্দার্ন হুইটইয়ার
এই ছোট্ট পাখিটির ওজন দু’চামচ লবণের বেশি নয়৷ অথচ পাখিটি খোলা সমুদ্র, বরফ ও মরুভূমি পেরিয়ে বছরে ন’হাজার মাইল যায় ও আসে - মোট ১৮,০০০ মাইল বা ২৮,০০০ কিলোমিটার৷ নর্দার্ন হুইটইয়ার পাখিরা বসন্ত কাটায় উত্তর ও মধ্য এশিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপ, গ্রিনল্যান্ড, অ্যালাস্কা, এমনকি ক্যানাডায়৷ শীতে তারা ফেরে সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে আফ্রিকায়৷ গায়কপাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিদূর যায় ও ফেরে এই নর্দার্ন হুইটইয়ার৷
ছবি: Imago/Nature Picture Library
আর্কটিক টার্ন
এক কথায় ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন! বছরে গড়ে ৪৪,০০০ মাইল বা ৭০,০০০ কিলোমিটার ঘোরে – মানে ওড়ে! – এই আশ্চর্য পাখিটি৷ সুমেরুর কাছের গ্রিনল্যান্ড থেকে কুমেরুরওয়েডেল সি অবধি যায় এই আর্কটিক টার্ন, আবার ফেরে৷ কি করবে বেচারা: তার শোবার ঘর আর রান্নাঘরের মধ্যে দূরত্বটাই যে ওরকম৷ কোনো আর্কটিক চার্নকে জিগ্যেস করলে হয়তো বলবে, ‘ভাগ্যিস পৃথিবীটা আরো বড় ছিল না!’
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Bäsemann
বার-টেইলড গডউইট
ননস্টপ ফ্লাইটের রেকর্ড এই পাখিটির৷ অ্যালাস্কা থেকে নিউজিল্যান্ড ৭,১৪৫ মাইল বা ১১,৪৬৬ কিলোমিটার ন’দিনে ফ্লাই করেছিল এই ‘লিন্ডবার্গ’ পাখি! দানা, পানি কিংবা রেস্ট নেওয়ার জন্য একবারও না থেমে৷ এটা যে কি করে সম্ভব, তা এখনও ভেবে বার করতে পারেননি গবেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/McPHOTO
7 ছবি1 | 7
বন্ধু, আপনি কি কখনও ফ্লেমিঙ্গো পাখিদের স্বচক্ষে দেখেছেন? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷