1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সেনার ‘বিশেষ ক্ষমতা’ : আতশ কাঁচে জননিরাপত্তা, মানবাধিকার

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সেনাবাহনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার সঙ্গে তাদের জবাবদিহিতার বিষয়টিও স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷ কারণ, এই জবাবদিহিতার সঙ্গে মানবাধিকা রক্ষার বিয়টিও জড়িত৷

টহলরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা
সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে৷ ফাইল ফটোছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

সেনাবাহিনীর এই ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে৷ সারাদেশে দুই মাসের জন্য সেনাবাহিনীর কমিশন প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়ার কারণ ব্যখ্যা করেছেন জনপ্রশাসন সচিব মো. মেখলেস উর রহমান৷ বুধবার মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ যাতে আরো জনবান্ধব পরিবেশে চলাচল করতে পারে ও নিরাপদ বোধ করে, সেই জন্য সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷’’

তার কথা, ‘‘গত ৫ আগস্টের পর থেকে সব পর্যায়ের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করছে৷ সব বাহিনী একইসঙ্গে একই ছাতার নিচে কাজ করছে, এই মেসেজটার জন্যই এ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷’’

মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ এবং প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আছে, এক্ষেত্রে কোনো দ্ব্ন্দ্ব তৈরি করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা কোনো ক্যাডারের ক্ষমতা না, এটা রাষ্ট্রের ক্ষমতা৷ কোনো দ্বন্দ্ব হবে না৷ এক রাষ্ট্র এক জনগণ এক সরকার৷ জনস্বার্থে আপনি কাজ করেন, আমি কাজ করি৷ এটা ভালো ফল দেবে৷’’

কী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফৌজদারি দন্ডবিধি ১৮৯৮০-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ এবং ১৪২ ধারা অনুযায়ী সংগঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন৷ আর এটা সারাদেশের জন্য প্রযোজ্য৷

আইনের এসব ধারা অনুযায়ী, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যা যা করতে পারেন-

ধারা ৬৪: ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া এবং হেফাজতে রাখার ক্ষমতা৷

পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার এক করে তাদের দেয়া হয়েছে: মোহাম্মদ নুরুল হুদা

This browser does not support the audio element.

ধারা ৬৫: প্রেপ্তার করার ক্ষমতা বা তার উপস্থিতিতে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা, যার জন্য তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন৷

ধারা ৮৩ ও ৮৪: ওয়ারেন্ট অনুমোদন করার ক্ষমতা বা ওয়ারেন্টের অধীনে গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপসারণের আদেশ দেয়ার ক্ষমতা৷

ধারা ৯৫(২): নথিপত্র ইত্যাদির জন্য ডাক ও টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুসন্ধান এবং আটক করার ক্ষমতা৷

ধারা ১০০: ভুলভাবে বন্দি ব্যক্তিদের হাজির করার জন্য অনুসন্ধান-ওয়ারেন্ট জারি করার ক্ষমতা৷

ধারা ১০৫: সরাসরি তল্লাশি করার ক্ষমতা৷ তার (ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি) উপস্থিতিতে যে কোনো স্থানে অনুসন্ধানের জন্য তিনি সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করতে পারেন৷

ধারা ১০৭: শান্তি বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা৷

ধারা ১০৯: ভবঘুরে ও সন্দেহভাজন ব্যক্তির ভালো আচরণের জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা৷

ধারা ১১০: ভালো আচরণের জন্য নিরাপত্তা প্রয়োজনীয় ক্ষমতা৷

ধারা ১২৬: জামিনের নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা৷

ধারা ১২৭: বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার আদেশদানের ক্ষমতা৷

ধারা ১২৮: বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য বেসামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা৷

ধারা ১৩০: বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা৷

ধারা ১৩৩: স্থানীয় উপদ্রবে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা৷

ধারা ১৪২: জনসাধারণের উপদ্রবের ক্ষেত্রে অবিলম্বে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা৷

এসব ক্ষমতা ছাড়াও যে কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯-এর অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য সরকার এবং সেইসঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারের মধ্যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷

এই আইনের অধীনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার উপস্থিতিতে সংঘটিত অপরাধ বা ঘটনাস্থলে তার বা তার সামনে উন্মোচিত হওয়া অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারেন৷ অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির পর ম্যাজিস্ট্রেট সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী অপরাধীকে সাজা দিতে পারেন, তবে কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে দুই বছরের বেশি নয়৷

বিশ্লেষকরা যা বলছেন

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘‘এটা তো স্পষ্ট যে, দেশের পুলিশ বাহিনীর এখন যা অবস্থা, তা দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না৷  সেনবাহিনী মাঠে আছে৷ তাদের আরো কার্যকর করতে এই ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হয়েছে৷ এটা আইন এবং সংবিধানসম্মত৷’’

‘‘তবে প্রশ্ন হলো, তাদের জবাবদিহিতা কোন কর্তৃপক্ষের কাছে থাকবে৷ সাধারণ মানুষের  কোনো অভিযোগ থাকলে তারা তো আর সেনা প্রধানের কাছে গিয়ে অভিযোগ করবেন না৷ আর তারা তো সিভিল কাজ করবেন৷ কিন্তু প্রজ্ঞাপনে তারা কোথায় জবাবদিহি করবেন, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি৷ আর এটা মানবাধিকার রক্ষার জন্য জরুরি৷ আর তারা তো গ্রেপ্তার করবেন, ওয়ারেন্ট ইস্যু করবেন৷ তাহলে তারা আসামিদের কোথায় রাখবেন তা-ও বলা হয়নি৷ সাধারণভাবে মামলা তো থানায় হবে৷ সেই বিষয়গুলোও স্পষ্ট করা প্রয়োজন,‘‘ বলেন তিনি৷

তার মতে, ‘‘নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা আছে৷ তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারেন৷ জরিমানা ও দণ্ড দিতে পারেন৷ কিন্তু এক্ষেত্রে তারা তা করবেন বলে মনে হয় না৷ আর একই ব্যক্তির হাতে গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষমতা থাকা ঠিক না৷’’

বাংলাদেশে ৫ আগস্ট থেকেই সেনাবাহিনী মাঠে আছে৷ তারা এইড টু সিভিল পাওয়ার হিসেবে জেলা প্রশাসনের অধীনে কাজ করছেন৷ এখন তারা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযানেও অংশ নিচ্ছেন৷ কিন্তু ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার পাওয়ায় তারা স্বাধীনভাবে কাজ করবেন৷

এইক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কাজের  সমন্বয়ের বিষয়টিও স্পষ্ট নয়৷

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘‘যিনি গ্রেপ্তার ও তদন্ত করবেন, তিনি বিচারিক কাজ করবেন না৷ কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যরকম হয়েছে৷ এখানে পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার এক করে তাদের দেয়া হয়েছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের শুধু মেট্রোপলিটন এলাকায় ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার আছে৷ এর বাইরে নেই৷ তবে এখন নানা ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে৷ আনরেস্ট তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে৷ শিল্প এলাকায়ও অস্থিরতা দেখ দিচ্ছে৷ সেই বিবেচনায় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হয়েছে বলে আমার মনে হয়৷’’

বিগত সরকারের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখতে চাই না: নূর খান

This browser does not support the audio element.

মানবাধিকার

যৌথ অভিযানে সেনা ও পুলিশ হেফাজতে এ পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান৷ তাদের মধ্যে গাইবান্ধায় ১১ সেপ্টেম্বর যৌথ বাহিনীর হাতে আটক পাঁচজনের মধ্যে দুইজন মারা যান৷ তারা হলেন শফিকুল ইসলাম ও সোহরাব হোসেন৷ তারা আওয়ামী লীগের কর্মী বলে জানা গেছে৷ আর ময়মনসিংহে যৌথ অভিযানে আটকের পর মঙ্গলবার মারা গেছেন যুবদল নেতা সাইদুল ইসলাম৷

নূর খান বলেন,‘‘আমরা কোনোভাবেই বিগত সরকারের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম- এসব দেখতে চাই না৷’’

তার কথা, ‘‘সেনাবাহিনীতে ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার দেয়ার মানে হলো সিভিল প্রশাসন আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম না৷ এটা এক ধরনের নৈতিক পরাজয়৷ কিন্তু তারপরও তো পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে৷ পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে আগে ব্যবহার করা হয়েছে৷ তাদের মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে৷ আবার থানায় হামলা হয়েছে৷ অস্ত্র লুট হয়েছে৷ পুলিশ তো আর ভালো অবস্থায় নেই৷’’

আর নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর(অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই ধরনের কাজে সেনা সদস্যদের নিয়োগের আগে পর্যাপ্ত ব্রিফিং করতে হয়৷ আর্মিতে জাজ, অ্যাডভোকেট জেনারেল আছেন, তাদের উচিত হবে সেনা সদস্যদের প্রোপারলি ব্রিফ করা, যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা না ঘটে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ