দেশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়!
৭ জানুয়ারি ২০১৬মাহিদুল ইসলাম ফাহিমের কথায়, সরকার এটা করেছে যাতে ‘‘সেনাবাহিনী কোনো আওয়াজ না করে''৷
ব্যবসা-বাণিজ্য সেনাবাহিনীর কাজ নয়, কিন্তু বাংলাদেশে তাই হচ্ছে৷ অর্থাৎ সেনাবাহিনী দেশের নানা রকম ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে৷ এ সম্পর্কে আরাফাতুল ইসলামের লেখা প্রতিবেদনটি পড়ে পাঠক রায়হানের মন্তব্য, ‘‘শেখ হাসিনা শুধু তাঁর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে লোভাতুর পেশা দিয়েছেন৷''
‘‘ঢাকা শহরের অর্ধেক তো তারাই৷ ভবিষ্যতে মানুষের বউয়ের দায়িত্বও যে তারা নেবে, তা বোঝা যাচ্ছে৷ সেনাবাহিনীর বাড়াবাড়ি দেখে এই মন্তব্য পাঠক রাজদূতের৷
মো. সুমন বেশ রসিকতা করে মন্তব্য করেছেন, ‘‘কী করবে তারা, তাদের তো কোনো কাজ নেই৷ আমার হিসাবে তারা তাদের বেতনের যে টাকা নেয়, সেটার জন্য তো তাদের কিছু কাজ করতে হবে৷ সো নো টেনশন!''
পাঠক মাসুমের ভয় দেশে যেভাবে আর্মি বিস্তার লাভ করেছে, আগামীতে হয়ত দেশের শতকরা ৬০ ভাগই সেনাবাহিনীর আয়ত্বে চলে যাবে৷ তাঁর কথায়, ‘‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে এটা মোটেও কাম্য নয়৷''
আশরাফুল ইসলাম অবশ্য সেনাবাহিনীকে সমর্থন করেন৷ কাজি রাসেল আহমেদও বলছেন যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশের গর্ব৷
অন্যদিকে একেবারে উল্টোমত প্রকাশ করেছেন মো.ইব্রাহিম হোসেন ভুঁইয়া৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘একটি অবৈধ দলের কাছে নিজেদের সত্যতা, আদর্শ, দেশপ্রেম বিক্রি করে দিচ্ছে বর্তমান সেনাবাহিনী৷....আগের সেনাবাহিনীর কাছে দেশ বড় ছিল. টাকা নয়৷ আর বর্তমান সেনাবাহিনীর কাছে টাকা বড়, দেশ নয়...৷''
সুমালিয়া রেহমান এখানে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কারণ ছিল অর্থনৈতিক৷ সেনাবাহিনী ঢাকা শহর জুরে জমি দখল করছে, বিল্ডিং উঠাচ্ছে, প্রফেশনালিজম অনেক আগেই গেছে৷ আজ একজন সিপাহীরও ঢাকায় বাড়ি আছে৷''
‘‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের একটি উদারহণ দিতে গিয়ে হানিফ হোসেন লিখেছেন, ‘‘সাধারণ কৃষকের জমি দখল করে রূপগঞ্জে সেনাবাহিনী আবাসিক এলাকা তৈরি করেছে সরকারের সাহায্য৷ কৃষকরা তাদের জমির ন্যায্য মূল্য পায়নি৷''
অপু মোস্তাফিজুর রহমানের পরামর্শ – ‘‘যুদ্ধ নেই বলে আর্মির কোনো কাজ নেই৷ তাই সেনাবাহিনীকে দিয়ে দেশের বড় বড় উন্নয়ণমূলক কাজ করানো উচিত৷''
অথচ রাতুল মোহাম্মদ মনে করেন, সেনাবাহিনী দেশের উন্নতি না করে নিজের উন্নতি করছে৷
সরকারি চাকরি যারা করেন, তারা কেন ব্যবসা করবেন তা বুঝতে পারেন না ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু অমিত৷
আবদুল্লাহ আল-ফাহিমও সেনাবাহিনীকে ব্যবসা করার সমর্থন করতে পারছেন না, কারণ সেনাবাহিনীর দায়িত্ব মাতৃভূমিকে রক্ষা করা৷ তাঁর কথায়, ‘‘দেশ তো আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়৷''
এই সব ব্যবসা নিয়েই অফিসার আর ফোর্সদের ভেতরে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে বলে মনে করেন শামীম রেজা৷
ব্যবসা কি তাহলে শুধু রাজনীতিবিদরাই করবে? এই প্রশ্ন আশরাফ সারোয়ারের৷
‘‘সেনবাহিনীর যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, তা বর্তমান এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তারা পরিচালনা করেন মাত্র৷ সেখানে কাজ করেন সিভিলিয়ানরা৷ তাই আমি মনে করি, সেনাবাহিনীর সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত বা অদক্ষ হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ তাছাড়া সেনাবাহিনীর দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখারও একটা ব্যাপার আছে৷ তারা যদি এ সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে, তাহলে তো এটা খারাপ কিছু না৷ এটাকে কেন আপনি নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন? আপনারাই তো বলেন সেনাবাহিনী শুধু বসে বসে দেশের সম্পদ নষ্ট করছে৷ তাই উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করলে ক্ষতি কী?'' বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে এই মন্তব্য পাঠক প্রাণের৷
সেনাবাহিনীর ব্যবসা করা পছন্দ করেন না ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু জামালপুরের হারুন অর রশীদও৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি মোটেও সেনাবাহিনীর এ রকম ব্যবসাকে সমর্থন করি না৷ প্রত্যেকেই বাড়ি, গাড়ির মালিক হয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করবে৷ এ কারণেই তারা তাদের আদর্শকে ভুলে গিয়ে দলাদলি করতে পারে, যার প্রভাব সাধারণ জনগণের উপর পড়ে৷''
‘‘সেনাবাহিনীর বেসামরিক কাজে জড়ানো কোনো দেশের জন্য ভালো নয়৷ বেসামরিক কাজে তাদের যত জড়ানো হবে, ততই তাদের পেশাদার মনোভাব লোপ পাবে, রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণরেখা তাদের হাতে চলে যাবে৷'' এ মন্তব্য বন্ধু জহিরুল আলমের৷
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে যাওয়া সম্পর্কে আবু ওবায়েদের মতামত হচ্ছে, ‘‘ক্ষমতালোভীরা দেশের কাণ্ডারিদের মেরুদণ্ডহীন করার জন্য এমন ফাঁদ পেতেছে৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ