সিরীয় শরণার্থী সেজে এক জার্মান সেনা কর্মকর্তার সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনার কথা সামনে আসার পর জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করেছেন৷ তাঁর এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছে সামরিক বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schutt
বিজ্ঞাপন
সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে লেফটেন্যান্ট ফ্রাংকো এ. -কে গত বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর রবিবার এক জার্মান টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফন ডেয়ার লাইয়েন চরম বিরক্তি প্রকাশ করেছেন৷ তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যে কাঠামোগত ত্রুটির কথা খোলাখুলি স্বীকার করেন৷ তাছাড়া ফ্রাংকোর মতো উচ্চপদস্থ অফিসারের উগ্র দক্ষিণপন্থি ভাবধারা সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও বাহিনীর সতীর্থ ও কর্মকর্তারা হাত গুটিয়ে বসে থেকে যে ‘ভুল' সংহতির পরিচয় দিয়েছেন, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্বের দুর্বলতার কড়া সমালোচনাও করেন তিনি৷
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর জার্মানির সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘‘ফন ডেয়ার লাইয়েন যদি মনে করেন, নেতৃত্বের সমস্য আছে, তাহলে এক জনকে স্বাভাবিকভাবেই বলতে হয়: নেতৃত্বের প্রবাহ শীর্ষ থেকে নীচের দিকে যায়৷’’
আজ (বুধবার) জার্মানির বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘বিল্ড’-এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন, ‘‘জার্মান সেনাবাহিনীতে যা ঘটে তার পুরো দায়দায়িত্ব আমার৷ এসব দায়িত্বের মধ্যে আছে আফগানিস্তান থেকে ইরাক, মালিসহ অন্যান্য দেশে সেনা পাঠানো, অস্ত্র কেনাকাটা ব্যবস্থায় সংস্কার, অর্থ সংকট, সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ব়্যাংকের মধ্যে নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করা ইত্যাদি৷ এবং আমি এখন সেটিই করছি৷’’
বিল্ডকে সাক্ষাৎকার দেয়ার একদিন আগে আরেক জার্মান টিভিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের মধ্যে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন, নির্যাতনের অভিযোগগুলো তদন্তের অঙ্গীকার করেন৷ তিনি বলেন, তদন্তকাজ ‘বেদনাদায়ক’ হলেও ‘বাহিনীর ভালোর জন্য করতে হবে’৷
যুক্তরাষ্ট্র সফর স্থগিত
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর স্থগিত করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ বুধবার তাঁর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল৷ এ প্রসঙ্গে জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, লেফটেন্যান্ট ফ্রাংকো এ.-র বিষয়ে পুরো নজর দেয়াই বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফন ডেয়ার লাইয়েন তাই বুধবার যাচ্ছেন ফ্রান্সের ছোট্ট শহর ইলকিয়র্শে৷ গ্রেপ্তার হওয়া ঐ জার্মান সেনা সেখানেই কাজে নিযুক্ত ছিলেন৷ বৃহস্পতিবার বার্লিনে তদন্ত নিয়ে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷
জেডএইচ/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...
যেসব দেশে শান্তি ফেরাচ্ছে জার্মানি
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি ন্যাটোর সঙ্গে যোগ দেয়ার পর থেকে বার্লিন ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক জোটটিকে নানাভাবে সহায়তা করেছে৷ সেই ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে শান্তি ফেরাতে কাজ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
ন্যাটোতে জার্মানির ভূমিকা
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে ১৯৫৫ সালে৷ তবে ১৯৯০ সাল অবধি নিজেদের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সীমিত রেখেছিল জার্মানি৷ শান্তিরক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে ন্যাটোর হয়ে বিশ্বের কয়েকটি দেশে কাজ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
বসনিয়া: জার্মানির প্রথম ন্যাটো মিশন
১৯৯৫ সালে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনায় প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে জার্মান সেনা মোতায়েন করা হয়৷ অর্থাৎ বসনিয়া যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেদেশে শান্তি ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জার্মানরাও৷ সেই শান্তিরক্ষা মিশনে ন্যাটোর সদস্য ও সহযোগী দেশগুলোর ৬০ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/H. Delic
কসভোতে শান্তিরক্ষা
কসভোতে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনের শুরুতেই সেদেশে সাড়ে আট হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়৷ ১৯৯৯ সালে সংখ্যালঘু আলবেনীয় বিচ্ছিন্নতবাদী এবং তাদের সমর্থকদের ওপর বর্বর দমনপীড়নের দায়ে সার্বিয়ার ওপর বিমান হামলা চালায় ন্যাটো৷ এখনো প্রায় ৫৫০ জন জার্মান সেনা কসভোতে অবস্থান করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Xhemaj
এজিয়ান সাগরে টহল
২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সমর্থিত ন্যাটো মিশনের অংশ হিসেবে এজিয়ান সাগরে মোতায়েন করা হয় জার্মান যুদ্ধজাহাজ ‘বন’৷ অভিবাসী সংকট যখন চরমে, তখন অন্যান্য কাজের মধ্যে এই মিশনের অন্যতম কাজ ছিল গ্রিস এবং তুরস্কের জলসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ওপর নজর রাখা৷ জার্মানি, গ্রিস এবং তুরস্ক এ কাজে ন্যাটোর সহায়তা চেয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M.Schreiber
লিথুয়ানিয়ায় জার্মান ট্যাংক
বাল্টিক দেশগুলোতে ন্যাটোর মিশনের অংশ হিসেবে লিথুয়ানিয়ায় চলতি বছর ৪৫০ জন জার্মান সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷ অবস্থান করছে জার্মান ট্যাংকও৷ তবে জার্মানি ছাড়া ক্যানাডা, ইংল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাও রয়েছে সে অঞ্চলে৷ ‘বর্ধিত সামরিক মহড়া’-র অংশ হিসেবে প্রায় এক দশক যাবৎ ন্যাটো বাহিনী সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ লিথুয়ানিয়ায় অবস্থান করছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Kul
এক দশকের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে
আফগানিস্তানে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আইসাফ বাহিনীতে জার্মানি যোগ দেয় ২০০৩ সালে৷ সংখ্যার বিচারে দেশটিতে মোতায়েন বিদেশি সেনাদের মধ্যে জার্মানির অবস্থান তৃতীয়৷ আফগান মিশনে এখন পর্যন্ত ৫০ জন জার্মান সেনা নিহত হয়েছে৷ ২০১৫ সালে জার্মান সেনাদের মিশন শেষ হওয়া ও দায়িত্ব হস্তান্তরের পরও সহস্রাধিক জার্মান সেনা অবস্থান করছেন আফগানিস্তানে৷