1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সেনাবাহিনী ও পুলিশের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
১৮ আগস্ট ২০১৮

সামরিক বাহিনী, এবং আসাম পুলিশের বিরুদ্ধে বোড়োল্যান্ড জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের দুই সদস্যকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে৷ দু'জনই সংঘর্ষে নিহত বলে দাবি করা হলেও কেন্দ্রীয় এবং আসাম সরকারের কাছে নোটিস পাঠিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট৷

ছবি: Reuters

ভুয়া সংঘর্ষে মেরে ফেলার অভিযোগ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক এবং রাজনৈতিক জলঘোলা কম হয়নি৷ মানবাধিকার প্রশ্ন নিয়েও চাপানউতোর কম হয়নি৷ তা সে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে হোক বা জম্মু-কাশ্মীর হোক কিংবা মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে হোক৷ উপদ্রুত ঘোষিত অঞ্চলগুলিতে সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে দিয়ে রেখেছে ঢালাও ক্ষমতা৷ আর সেনা বাহিনীকে দিয়েছে আফস্পা আইনের মতো বিশেষ ক্ষমতা৷ এই আইনের বলে সেনাবাহিনী দরকার মতো যখন তখন যে কোনো ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যেতে পারে৷ তার জন্য কোনো আইন তাদের স্পর্শ করতে পারবে না৷ উপদ্রুত অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে নাকি এছাড়া উপায় নেই৷ কিছুটা কাজ যে হয়নি, তা নয়৷ বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে কিছু এলাকা ছাড়া জঙ্গি তত্পরতা হ্রাস পেয়েছে৷ এ নিয়েও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে মতভেদ আছে৷ উপদ্রুত এলাকার তকমা তুলে নিতে এখনও কেন্দ্রীয় সরকার রাজি নয়৷ এবার আসাম-মনিপুর সীমান্তবর্তী আমগুড়ি পুলিশ থানার অধীনে সিমলাগুড়ি গ্রামে জাতীয় বড়োল্যান্ড গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এনডিএফবি (এস) শাখার দুজন সদস্যকে সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনী তাঁদের গ্রামের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে মেরেছে৷

‘এই আইনে কিন্তু ভুয়া সংঘর্ষের কোনো সুযোগ থাকতে পারে না’

This browser does not support the audio element.

এই বিতর্কিত আফস্পা আইনের ঔচিত্য-অনৌচিত্য সম্পর্কে গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা সংগঠন এপিডিআর-এর জেনারেল সেক্রেটারি ধীরাজ সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কেউ যদি অপরাধ করে, শাস্তি পায়, তাহলে তাঁর বিচার পাওয়ারও অধিকার আছে৷ কাজেই তাঁরা আপিল করতে পারে আদালতে৷ এতে কোনো দোষ নেই৷ এবার যুক্তির প্রশ্ন৷ আফস্পা আইনে কি বলা আছে যে, কাউকে ভুয়া সংঘর্ষে মেরে ফেলতে পারো ? নিশ্চয় না৷ আফস্পা আইনে কোনো ঘটনা ঘটলে তার বিচার প্রক্রিয়া কী হবে সেটাই শুধু বলা আছে৷ এই আইনে সামরিক বাহিনীকে কিছু বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তাতে সাজানো সংঘর্ষের সুবিধা হয়েছে৷ যেমনটা সম্প্রতি ঘটেছে মনিপুরে৷ এই আইনে কিন্তু ভুয়া সংঘর্ষের কোনো সুযোগ থাকতে পারে না৷''

সাজানো সংঘর্ষের অভিযোগে আদালতে জনস্বার্থ মামলা প্রসঙ্গে তিনি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘আফস্পা আইনের একটা নির্দিষ্ট কাঠামো আছে, সেখান থেকে বিচার চাইতে পারে৷ তবে তাঁদের প্রমাণ করতে হবে যে, এটা ছিল ভূয়া সংঘর্ষ৷ নিশ্চয়ই তাঁরা সেটার প্রমাণ দিতে পেরেছে৷ আমরাও জানি, পশ্চিমবঙ্গের লালগড়েই ভুয়া সংঘর্ষে মারা যায় ৪৪ জন৷ আমরাও এটা নিয়ে কোর্টে যাবার কথা ভাবছি৷ আফস্পা আইন তুলে নেওয়া গণতন্ত্রের জন্য জরুরি৷ ভারতে গণতন্ত্র এখন ভঙ্গুর অবস্থায়৷ গণতন্ত্রে এটা চলতে দেওয়া যায় না৷ ভার্মা কমিশন এই আইন তুলে নেবার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷ কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং সেনা কর্তারা তা হ দিচ্ছে না৷ সেনা কর্তাদের জন্যই আফস্পা আইন রয়ে গেছে৷ আন্তর্জাতিক মঞ্চে এজন্য ভারতকে অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে৷ জঙ্গিবাদ বেড়েছে সন্দেহ নেই৷ তার মূল কারণ সামাজিক-রাজনৈতিক৷ আর্থ-সামাজিক৷ তার সঙ্গে আফস্পার কোনো সম্পর্ক নেই৷ আফস্পা বা কোনো নির্মম আইন এর সমাধান নয়৷ যদি হতো, তাহলে এতদিনে তার সমাধান হয়ে যেতো৷ সেটা তো হচ্ছে না, বরং বাড়ছে৷ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছে এর সমাধান৷ মানছি বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্র আছে, কিন্তু ভারত যে সেই ষড়যন্ত্রের উর্বর ক্ষেত্র সেটা অস্বীকার করি কী করে ?''

আসাম-মনিপুর সীমান্তে ভুয়া সংঘর্ষ সম্পর্কে এক গোপন রিপোর্ট দেন শিলংয়ের কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত পুলিশ বাহিনী (সিআরপিএফ)-এর প্রাক্তন আইজি গুজরাট ক্যাডারের আইপিএস অফিসার রজনীশ রাই৷ কিভাবে এই ভুয়া সংঘর্ষ হলো, তার বিশদ বর্ণনা দিয়ে তিনি দিল্লির সিআরপিএফ সদর দপ্তরে এবং অন্যান্য বাহিনীর প্রধানের কাছে এক গোপন রিপোর্টটি পাঠান এবং ভুয়া সংঘর্ষের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানান৷ রিপোর্টে বলা হয়, নিহত দুজনের দেহে কিভাবে অস্ত্রশস্ত্র ঢুকিয়ে রাখা হয়৷ এদের একজনের নাম লুকাস নার্জারি ওরফে এন.লাংফা অপর জন ডেভিড ইসলারি ওরফে ডায়ুড৷ এই ঘটনার সাক্ষীও আছে৷ এর ভিত্তিতে, প্রাক্তন বিদ্যুত দপ্তরের সচিব ইএএস সার্মার দায়ের করা এক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার এবং আসাম সরকারের কাছে কৈফিয়ত তলব করেছেন৷ আবেদনকারী বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আর্জি জানিয়ে নিহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেবার দাবি জানিয়েছেন৷ এর বিরুদ্ধে সেনা বাহিনীর ৩০০ অফিসার পালটা আর্জি জানিয়েছেন শীর্ষ আদালতে৷ তাঁদের বক্তব্য, জঙ্গি মোকাবিলায় তাঁরা তাঁদের কর্তব্য পালন করেছেন৷ কিন্তু এর জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন৷ সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এবং বিশেষ তদন্তকারীদল সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করতে বলার পর সেনাবাহিনী এই বক্তব্য রাখে৷ নিরপরাধ ব্যক্তিদের জঙ্গি তকমা দিয়ে মেরে ফেলা হয় এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ ব্যক্তিকে৷

এ ব্যাপারে আপনার মতামত লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ