বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে গুলি চালাচ্ছে সেনা। তা সত্ত্বেও বিক্ষোভে অনড় মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি প্রতিবাদীরা। সোমবারও বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমার সেনার একটি পেজ বন্ধ করে দিল ফেসবুক। রোববার ফেসবুকের তরফে জানানো হয়েছে, ওই পেজের মাধ্যমে সহিংসতার বার্তা ছড়ানো হচ্ছিল। সে কারণেই ওই পেজটি বন্ধ করা হয়েছে। রোববার ফের জার্মানি সেনা সরকারকে আলোচনায় বসার আবেদন জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘও সেনাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু তাতে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। শনিবারের পর রোববারেও দেশ জুড়ে প্রতিবাদীদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে পুলিশ এবং সেনা। চালানো হয়েছে গুলি। প্রতিবাদীরা জানিয়েছেন, সোমবারও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। সেনা জানিয়েছে, প্রতিবাদীরা রাস্তায় নামলে প্রাণের দায়িত্ব সেনা নেবে না।
তিন সপ্তাহ হয়ে গেছে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সেনা ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়েছে। বন্দি করা হয়েছে অং সান সু চি সহ দেশের একাধিক নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক কর্মীকে। তারই প্রতিবাদে দেশ জুড়ে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। প্রতিবাদের নেতৃত্বে যুবসমাজ। তাদের দাবি, যে প্রক্রিয়ায় সেনা বিদ্রোহ করে ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়েছে, তা গণতান্ত্রিক নয়। ফলে অবিলম্বে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মুক্তি দিতে হবে এবং পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
মিয়ানমারে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে অভিনব বিক্ষোভ
সেনা অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ পর মিয়ানমারজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চরম রূপ নিয়েছে৷ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন চিকিৎসক, শিক্ষকসহ সব স্তরের মানুষ৷ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন তারা৷
ছবি: REUTERS
চিকিৎসক আর নার্সরা প্রথম সারিতে
সেনা অভ্যুত্থানের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসক ও নার্সরা ধর্মঘটের ডাক দেন৷ অন্যদেরও এই আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তারা৷
ছবি: REUTERS
সব শ্রেণি পেশার মানুষ
অন্যদিকে, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমজীবী মানুষ ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে অংশ নেন৷ তারা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দাও’, ‘আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা’৷ শনিবার রাত থেকে দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন৷
ছবি: Ye Aung Thu/AFP/Getty Images
আন্দোলনে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সংহতি
বিক্ষোভকারীদের সাথে রাজপথে নেমেছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা৷ বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটিতে ভিক্ষুদের সংগঠন ‘সংঘ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
দেশজুড়ে বিক্ষোভ
ইয়াঙ্গুন বা মান্দালয়ের মতো বড় শহরের পাশাপাশি ছোট শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের আগুন৷ শান রাজ্যের মতো আদিবাসী অঞ্চলগুলোও বাদ যায়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
তিন আঙুলের অভিবাদন
হলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হাঙ্গার গেমস যারা দেখেছেন তারা এই প্রতীকের সাথে পরিচিত৷ থাইল্যান্ডে বিক্ষোভের সময় আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে ‘থ্রি ফিঙ্গার গ্রিটিংস’ ব্যবহার করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা৷ মিয়ানমারেও সেই একই দৃশ্যের দেখা মিললো৷
ছবি: REUTERS
বারান্দা থেকে সংহতি
যারা রাজপথে নেমে আন্দোলনে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের অনেকেই বিক্ষোভকারীদের পানি আর খাবার দিয়ে সাহায্য করছেন, বারান্দায় দাঁড়িয়েও সংহতি জানিয়েছেন অনেকে৷
ছবি: REUTERS
সু চি’র মুক্তি
১ লা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চি এবং তার দল এনএলডি’র অনেক শীর্ষ নেতাকে আটক করেছে সেনাবাহিনী৷ আন্দোলনকারীরা সবার মুক্তি দাবি করছেন৷
ছবি: Sem Van Der Wal/ANP/AFP/Getty Images
অভিনব প্রতিবাদ
বিক্ষোভ দমনে সোমবার রাতে সামরিক জান্তা ডিক্রি জারি করেছে৷ রাজধানীসহ প্রধান তিনটি শহরে পাঁচজনের বেশি মানুষের সমবেত হওয়া নিষিদ্ধ৷ রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ এই ঘোষণার পর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে অনেকে ফুল নিয়ে এগিয়ে আসেন দায়িত্বরত পুলিশের দিকে৷
ছবি: Ye Aung Thu/AFP/Getty Images
উত্তপ্ত হচ্ছে পরিস্থিতি
রাজধানী নেপিদোতে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে৷ সামরিক জান্তা বিক্ষোভকে অবৈধ ঘোষণা করেছে৷ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে রাবার বুলেট আর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ৷ বিক্ষোভকারীরা পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে৷ রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: REUTERS
সেনা সমর্থকরাও রাজপথে
বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন সেনা সমর্থকরা৷ সেনা সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি দেশজুড়ে বেশ কিছু সমাবেশের আয়োজন করেছে৷
ছবি: Thet Aung/AFP/Getty Images
৮৮’র অভ্যুত্থানের কথা স্মরণ
বর্তমান বিক্ষোভ যে রূপ নিয়েছে তা ১৯৮৮ সালের সেনা অভ্যুত্থানের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ তখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে পুরো দেশের শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ক্ষমতা হাতে নেয় সেনাবাহিনী৷ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়, আটক করা হয়েছিল অনেককে, দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন অসংখ্য আন্দোলনকর্মী ও শিক্ষার্থী৷
ছবি: ullstein bild-Heritage Images/Alain Evrard
11 ছবি1 | 11
স্বাভাবিক ভাবেই সেনা এই বক্তব্য মেনে নিতে রাজি নয়। গোটা দেশে বিক্ষোভের উপর সহিংস আক্রমণ চালাচ্ছে সেনা। কাঁদানে গ্যাস, জল কামান, লাঠির পাশাপাশি রবার বুলেট এবং সত্যিকারের গুলি ছোড়া হচ্ছে। শনিবার তেমনই এক বিক্ষোভে সেনার গুলিতে দুই প্রতিবাদীর মৃত্যু হয়। আহত হন বহু। তারপরেই রোববার দেশ জুড়ে আরো বড় বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। সোমবারও প্রতিবাদ চলবে বলে প্রতিবাদীরা জানিয়েছেন।
এ দিকে সেনার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে ভাবে প্রতিবাদীরা রাস্তায় নামছেন তা বেআইনি। অবিলম্বে বিক্ষোভকারীরা যেন ঘরে ফিরে যান। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখালে প্রাণের দায়িত্ব সেনা নেবে না। অর্থাৎ, গুলি ছোড়ার আগাম হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে সেনা। পাশাপাশি হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। লম্বা সময়ের জন্য তাঁদের জেলে রাখার হুমকিও দেওয়া হয়েছে সেনার তরফে।
রোববার জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি জারি করে ফের মিয়ানমারের সেনাকে বলেছে, সহিংসতা বন্ধ করে তারা যেন আলোচনার রাস্তায় আসে। গণতান্ত্রিক ভাবে যাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের তরফেও একই আবেদন জানানো হয়েছে। অন্য দিকে, বিশ্বের একাধিক দেশ ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের একাধিক সেনা জেনারেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গণতন্ত্র ফিরে না এলে আরো বড় পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও সেনাকে জানানো হয়েছে।