অ্যামেরিকায় বিক্ষোভ থামাতে চরম পন্থাই নিতে চান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে অটোপ্সি রিপোর্ট বলছে, কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে অ্যামেরিকা জুড়ে বিক্ষোভ থামাতে শেষ অস্ত্র ব্যবহার করতে চান ডনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রসিডেন্ট বলেছেন, ''প্রতিটি স্টেটের গভর্নরকে বলছি, আপনারা রাস্তায় বিপুল পরিমাণে ন্যাশনাল গার্ড নামান। আপনারা যদি তা না করেন, তা হলে আমি সশস্ত্র সেনা ও আইনরক্ষকদের রাস্তায় নামাতে বাধ্য হব। তাঁরা এই দাঙ্গা, লুঠতরাজ, হিংসা, সম্পত্তি নষ্ট বন্ধ করবেন।''
বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ ট্রাম্পের কাছে 'ঘরোয়া সন্ত্রাসবাদ' ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁর হুমকি, ''যাঁরা এই বিক্ষোভের পিছনে আছেন, তাঁদের কড়া শাস্তি হবে এবং দীর্ঘদিন জেল খাটতে হবে।'' ট্রাম্প যখন এই কথা বলছেন, তখনও হোয়াইট হাউসেরবাইরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটাচ্ছে।
কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা: যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি শহরে কারফিউ, চলছে বিক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেপোলিসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে ফুসে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাজধানীসহ ৪০টি শহরে চলছে কারফিউ। এর মধ্যেও থেমে নেই প্রতিবাদ বিক্ষোভ।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Cortez
৪০টি শহরে কারফিউ
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ ৪০ টি শহরে জারি করা হয়েছে কারফিউ। ১৫টি রাজ্যে মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তাবাহিনী।
ছবি: Reuters/A. McClaran
অনেক গ্রেপ্তার
রবিবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলার সময় অন্তত ৪,১০০ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এপি।
ছবি: Reuters/P.T. Fallon
যেভাবে মৃত্যু ফ্লয়েডের
জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগে টেক্সাসের হিউস্টনের বাসিন্দা জার্জ ফ্লয়েডকে গত ২৫ মে আটক করে মিনেসোটা পুলিশ। আটকের পর পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চৌভিন ফ্লয়েডের ঘাড় হাঁটু দিয়ে সড়কে চেপে ধরলে এক পর্যায়ে তিনি মারা যান।
ছবি: AFP/Facebook/Darnella Frazier
প্রধান অভিযুক্ত গ্রেপ্তার
মিনেপোলিসের পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চৌভিনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনায় তাকে মিনেপোলিসের সংশোধন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ঘটনায় জড়িত বাকি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ছবি: AFP/Facebook/Darnella Frazier
চারজন বরখাস্ত
ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রোষে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। পরে ডেরেকসহ চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Minchillo
হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভ
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বাসভবন হোয়াইট হাউজের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
ছবি: Reuters/J. Ernst
শহরে শহরে জনরোষ
নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শনি ও রবিবার হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেন। অনেক জায়গায় লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
ছবি: Reuters/K. Flynn
ভবন বিধ্বস্ত
মিনেপোলিসে গত কয়েকদিনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সহিংসতায় বেশ কিছু ভবন বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Cortez
গণমাধ্যমের উপর আক্রমণ
বিক্ষোভ চলার সময় দায়িত্বরত সাংবাদিকরা নিরাপত্তাবাহিনীর হামলার শিকার হন। শুক্রবার সিএনএন-এর সাংবাদিক ওমর জিমেন্স এবং তার সহকর্মীদের মিনেপোলিসে গ্রেপ্তার করা হয়। লাইভ চলাকালীন অনেক সাংবাদিককে হয়রানি এবং গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার রাতে লাইভের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ডয়চে ভেলের স্টেফান জিমোন্স। এসময় পুলিশ তার উদ্দেশে গুলি ছোড়ে।
ক্যানাডায় প্রতিবাদ
শনিবার ভ্যানকুভার ও টরটোন্টোতে ফ্লয়েড হত্যার বিরুদ্ধে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ-প্রতিবাদে অংশ নেন।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/A. Shivaani
জার্মানিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ
শনিবার রাজধানী বার্লিনের মার্কিন দূতাবাসের সামনে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেন।
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Soeder
11 ছবি1 | 11
একাধিক গভর্নর ট্রাম্পের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। ওয়াশিংটন ডিসির গভর্নর জে ইন্সলি বলেছেন, ''বারবার প্রমাণিত হয়েছে, ট্রাম্প শাসন করতে পারেন না। তিনি অযোগ্য। তিনি কেবল মিথ্যা বীরত্ব দেখাতে পারেন। নিজের ভীরুতা ও অযোগ্যতা ঢাকার জন্য তিনি চরম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন।''
ওরেগনের গভর্নর কেট ব্রাউন বলেছেন, ''আমি বিক্ষোভ থামাতে ন্যাশনাল গার্ড নামাবো না। রাস্তায় সেনা নামিয়ে হিংসা থামানো উচিত নয়।''
রোববার রাত থেকেই বিক্ষোভ পৌঁছে যায় হোয়াইট হাউসের সামনে। রাস্তায় কাঠ, প্লাস্টিকের ডিভাইডার, রোড সাইন নিয়ে এসে আগুন লাগানো হয়। হোয়াইট হাউসের গেটেও পাথর ও মলোটভ ককটেল ছোঁড়া হয়। অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টরা যে চার্চে যান, সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বর্ণবাদ নিয়ে হলিউডের কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র
‘গ্রিন বুক’ ২০১৯ সালে সেরা চলচ্চিত্রের অস্কার জিতে নিয়েছে৷ কিন্তু বর্ণবাদ নিয়ে এই প্রথম কোনো ছবি আলোড়ন তুললো এমন নয়৷ একই ইস্যুতে হলিউডে এর আগেও চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে এবং প্রশংসা ও পুরস্কার জিতেছে৷ ছবিঘরে দেখে নিন৷
২০১৯ সালের সেরা ছবি: গ্রিন বুক
পিটার ফ্যারেলি পরিচালিত ‘গ্রিন বুক’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ হয়েছে বাস্তব কাহিনির উপর ভিত্তি করে৷ ভিগো মোর্টেনসেন (বামে) একজন গাড়ি চালকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যিনি পিয়ানিস্ট মাহেরসালা আলীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ রাজ্যগুলোতে ঘুরে বেড়ান৷ তাঁর কাছে থাকে একটি সবুজ রঙের বই, যেখানে সেসব রেস্তোরাঁ আর মোটেলের তালিকা আছে, যেগুলো কেবল কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য৷
ছবি: picture alliance/AP/Universal/P. Perret
‘ব্ল্যাকক্ল্যান্সম্যান’ এর জন্য অস্কার
বেস্ট অ্যাডাপটেড স্ক্রিনপ্লে’র জন্য চলতি বছর অস্কার জিতেছে এই ছবিটি, যেটাতে বর্ণবাদকে উপজীব্য করা হয়েছে৷ পরিচালক স্পাইক লি সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন৷ ৭০ এর দশকে একটি গ্যাং-এর কর্মকাণ্ড তদন্ত করেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশ৷ এই ঘটনা নিয়েই সিনেমার কাহিনি গড়ে উঠেছে৷
ছবি: D. Lee/F. Features
‘ব্ল্যাক প্যান্থার’
চলতি বছরে অস্কার পাওয়া চলচ্চিত্রের মধ্যে এটি তৃতীয় ছবি, যা বর্ণবাদের সঙ্গে যুক্ত৷ ২০১৮ সালে মার্ভেলের চলচ্চিত্র ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ প্রথমবারের মতো কৃষ্ণাঙ্গ সুপারহিরোদের জনসমক্ষে এনেছে৷
ছবি: picture-alliance/Marvel Studios
‘মিসিসিপি বার্নিং’ ভেঙে দেয় সব ট্যাবু
১৯৮৮ সালে অ্যালেন পার্কারের মুভি ‘মিসিসিপি বার্নিং’-এ তিন সমাজকর্মীর অন্তর্ধানের গল্প বলা হয়েছে৷
ছবি: ORION PICTURES CORPORATION
‘ইনভিকটাস’
২০০৯ সালে ইস্টউড দ্বিতীয়বারের মতো বর্ণবাদকে তাঁর চলচ্চিত্রের বিষয় হিসেবে নির্বাচন করেন৷ ‘ইনভিকটাস’ খেলা নিয়ে একটি কাহিনি, যেখানে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় রাগবি দলের গল্প বলেছেন৷ জার্মান ভাষায় এই চলচ্চিত্রের নাম ‘শত্রুরা যেভাবে বন্ধু হলো’৷ এই চলচ্চিত্রে নেলসন ম্যান্ডেলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মর্গ্যান ফ্রিম্যান৷
ছবি: AP
‘দ্য বাটলার’
বর্ণবাদ নিয়ে শিক্ষণীয় চলচ্চিত্র এটি৷ ২০১৩ সালের এই ছবিতে ফরেস্ট হোয়াইটেকার এবং অপরাহ উইনফ্রে অভিনয় করেছেন৷ এই চলচ্চিত্রে আফ্রো-অ্যামেরিকান বাটলার ইউজেন অ্যালেন-এর গল্প বলা হয়েছে, যিনি আট জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের অধীনে কাজ করেছিলেন৷
ছবি: picture alliance/AP Images
‘টুয়েলভ ইয়ার্স আ স্লেভ’
২০১৩ সালে মুক্তি পায় চলচ্চিত্রটি এবং সে বছর সেরা ছবির অস্কার জিতে নেয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীতদাস প্রথা নিয়ে নির্মিত এটি৷ ব্রিটিশ পরিচালক স্টিভ ম্যাককুইন এই চলচ্চিত্রে দুর্দান্ত অভিনেতাদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছেন৷
ব্যারি জেনকিন্স পরিচালিত ‘মুনলাইট’ চলচ্চিত্রে আফ্রো-অ্যামেরিকান এক ব্যক্তির গল্পকে তিন অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে৷ এই ছবির সিনেমাটিক কাজ অসাধারণ৷ ফলে কোনো ধরণের মেলোড্রামা ছাড়া এই ছবির মূল উপজীব্য উপস্থাপিত হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/D. Bornfriend
‘আই অ্যাম নট ইওর নিগ্রো’
গত কয়েক দশক ধরেই বলিউডে বর্ণবাদকে ইস্যু করে চলচ্চিত্র, এমনকি তথ্যচিত্র নির্মাণ হয়েছে৷ হাইতির পরিচালক রাউল পেক ২০১৬ সালে অসাধারণ একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন যার নাম ‘‘আই অ্যাম নট ইওর নিগ্রো’৷
9 ছবি1 | 9
ট্রাম্পসেই চার্চেও গিয়েছিলেন। ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রা ফন নামেন তখন সেখানে ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ট্রাম্প যাতে সেখানে যেতে পারেন, তার জন্য পুলিশ সমানে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে ও গ্রেনেড ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
আলেকজান্দ্রা জানিয়েছেন, ''ট্রাম্প ঠিকভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারছেন না বলে প্রশাসনের অনেকে মনে করছেন। এর ফলে তাঁর জনপ্রিয়তা কমবে। তিনি নিজেকে 'ল অ্যান্ড অর্ডার' প্রেসিডেন্ট বলে দাবি করলেও লোকে অন্য কথা ভাবছে। এর ফলে তিনি দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।''
ডি ডাব্লিউ এর আরেক রিপোর্টায় কার্লা ব্লেকার জানিয়েছেন, ''বিক্ষোভকারীদের শ্লোগান ছিলো, 'বিচার না পেলে শান্তি নয়' এবং ফ্লয়েডের বলা শেষ কথা, 'আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না'।''
ফ্লয়েডের পরিবারের অনুরোধে একটি অটোপসি করেছিলেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ। তাঁর করা অটপ্সি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফ্লয়েডকে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি অটোপসি রিপোর্টও একই কথা বলেছে।
ফ্লয়েডের শেষকৃত্য হবে ৯ জুন, তাঁর শহর হিউস্টনে। সাবেক বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ফ্লয়েড মেওয়েদার তাঁর শেষকৃত্যের খরচ দিতে চেয়েছিলেন। ফ্লয়েডের পরিবার তা গ্রহণ করেছেন।
ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদে পুরো অ্যামেরিকা জুড়ে বিক্ষোভ চলছে। বেশ কয়েক দশক পরে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে পুরো অ্যামেরিকা। আর তা থামাতে পুলিশি বাড়াবাড়িও চলছে। গত দুই দিন ধরে ডিডাব্লিউর সাংবাদিকেরাসহ অন্য সংবাদ সংগ্রাহকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন।
মিনিয়াপোলিসে ডিডাব্লিউর সাংবাদিক ও ক্যামেরা অপারেটর পুলিশের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা প্রেস জ্যাকেট পরা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁদের টার্গেট করে। এই নিয়ে পরপর দুই দিন ডিডাব্লিউর সাংবাদিকরা পুলিশের হাতে আক্রান্ত হলেন।
শুধু অ্যামেরিকা নয় জার্মানি ও ব্রিটেনেও বিক্ষোভ হচ্ছে। লোকে রাস্তায় নেমে অ্যামেরিকায় বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।