সেনা প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক মোদীর, কী সিদ্ধান্ত হলো?
৩০ এপ্রিল ২০২৫
মঙ্গলবার রাতে স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান এবং চিফ অফ ডিফেন্স ফোর্সের সঙ্গে বৈঠক করলেন নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বৈঠকে সিডিএস প্রধান, তিন বাহিনীর প্রধান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ছবি: ANI
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ৭ লোককল্যাণ মার্গের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান, সেনাবাহিনীর প্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী, বিমানবাহিনীর প্রধান অমরপ্রীত সিং ও নৌবাহিনীর প্রধান দীনেশ কে ত্রিপাঠী।
পহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসবাদীদের নৃশংস আক্রমণ ও হত্যালীলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই বৈঠক শেষ হওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা করেন।
সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব গোবিন্দ মোহন সিং মঙ্গলবার তিন আধা সামরিক বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্য দুইটি কেন্দ্রীয় বাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসাররাও বৈঠকে যোগ দেন।
বুধবার সুরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি(সিসিএস), অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি(সিসিইএ), রাজনৈতিক বিষয়ে মন্ত্রিসভা কমিটি(সিসিপিএ) এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক আছে। তার আগে মঙ্গলবারের বৈঠকগুলি খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে।
কী আলোচনা হলো?
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেনা কর্তাদের বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে সরকারিভাবে কোনো কথা বলা হয়নি। তবে সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, পহেলগাম নিয়ে প্রত্যাঘাত করার পূর্ণ স্বাধীনতা প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে দিয়েছেন। কবে, কোথায়, কীভাবে প্রত্যাঘাত করা হবে তা তারাই ঠিক করবে।
কাশ্মীরে সক্রিয় প্রধান জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো
বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরে প্রধান কোন কোন জঙ্গি গোষ্ঠী সংঘাতে জড়িত? এসব গোষ্ঠীর স্থানীয় প্রভাব কেমন এবং বিশ্বব্যাপী তাদের জিহাদি সংযোগই বা কতটা?
ছবি: Saqib Majeed/ZUMAPRESS/picture alliance
দ্য় রেজিসট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)
২০১৯ সালে ভারতের সংবিধানে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়। এর পরই গড়ে ওঠে দ্য় রেজিসট্যান্স ফ্রন্ট- টিআরএফ। 'কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স' নামে সাম্প্রতিক পহেলগাম হামলার দায় স্বীকার করেছে গ্রুপটি। টিআরএফ নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন দাবি করলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা মনে করে। টিআরএফ-কে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়েছে ভারত।
ছবি: Nasir Kachroo/NurPhoto/picture alliance
লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি)
পাকিস্তান-ভিত্তিক ইসলামপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা- এলইটি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্য জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের অবসান। ২০০২ সালে পাকিস্তান নিষিদ্ধ করলেও সংগঠনটি এখনও সক্রিয়। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলাসহ ভারতে বেশ কয়েকটি হামলায় দায়ী করা হয় এলইটি-কে। এলইটি নানা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা করে এবং যোদ্ধাদের পাকিস্তান সরকারকে লক্ষ্যবস্তু করা থেকে নিষেধ করে।
ছবি: Rahat Dar/dpa/picture alliance
হিজবুল মুজাহিদীন (এইচএম)
১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হিজবুল মুজাহিদিন- এইচএম একসময় কাশ্মীরের সবচেয়ে সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠী ছিল। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই গোষ্ঠীর প্রভাব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে ২০১৬ সালে বুরহান ওয়ানি এবং ২০১৭ সালে তার উত্তরসূরি সাবজার আহমেদ ভাটসহ প্রধান কমান্ডারদের মৃত্যুর পর থেকে এর কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমে গেছে।
ছবি: picture-alliance/ dpa
জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম)
একটি হাইজ্যাক করা বিমানের ১৫৫ জিম্মিকে মুক্তির বিনিময়ে ভারতীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান উগ্র ইসলামপন্থি মাসুদ আজহার। ২০০০ সালে পাকিস্তান-ভিত্তিক সুন্নি ইসলামপন্থি জেইএম প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তান ছাড়াও জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ জইশ-কে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেছে। এর লক্ষ্য কাশ্মীরকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা। এলইটি, তালেবান এবং আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে জেইএম-এর।
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee
আল বদর
১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে হিজবুল মুজাহিদিন থেকে বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী হিসেবে গঠিত হয় আল বদর (যার অর্থ 'পূর্ণিমা')। এই সংগঠনের অনেক সদস্য আগে আফগান মিলিশিয়া কমান্ডার গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের হিজব-ই-ইসলামির সাথে কাজ করেছেন। এই গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিক জিহাদি নেটওয়ার্কের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং ভারত-পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষে লিপ্ত বলে জানা গেছে। তবে, এই তথ্যগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা কঠিন।
ছবি: NurPhoto/picture alliance
আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দ (এজিএইচ)
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দ- এজিএইচ কাশ্মীর সংঘাতে আল-কায়েদার প্রতিনিধিত্ব করে। ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার একটি শাখা হিসেবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত। শরিয়া আইনের অধীনে কাশ্মীরে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য এজিএইচ এর। এর প্রতিষ্ঠাতা জাকির মুসা ছিলেন হিজবুল মুজাহিদিনের সাবেক কমান্ডার। আদর্শগত পার্থক্যের কারণে পদত্যাগ করে বিশুদ্ধবাদী জিহাদি গোষ্ঠী হিসেবে এজিএইচ গড়ে তুলেন।
ছবি: Saqib Majeed/ZUMAPRESS/picture alliance
6 ছবি1 | 6
এনডিটিভি-র রিপোর্ট বলছে, এই প্রত্যাঘাতের জন্য যা করনীয় তার ফুল অপারেশনাল ফ্রিডম সামরিক বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সন্ত্রাসবাদের উপর ভয়ংকর আঘাত করতে চান। ভারতের সামরিক বাহিনীর উপর তার পূর্ণ আস্থা আছে।
ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্ট সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, যে কোনো ধরনের সামরিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতা তিনি সেনাকে দিয়েছেন। তারাই টার্গেট ঠিক করবে, দিনক্ষণ ঠিক করবে, কোথায় তারা আঘাত হানবে সেটাও ঠিক করবে। ভারতীয় সেনার ক্ষমতার উপর প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ আস্থা আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট বলছে, প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনীকে প্রত্যাঘাতের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন।
সংবাদসংস্থা রয়টার্স এবং এএফপিও সূত্রকে উদ্ধৃত করে একই খবর করেছে।
পাকিস্তানের মন্ত্রীর দাবি
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লা তারার বুধবার বলেছেন, তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আছে যে, ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক আক্রমণ করতে পারে।
উত্তেজনার আবহে কেমন আছে সীমান্তের শহর উরি?
04:17
This browser does not support the video element.
তিনি বলেছেন, পাকিস্তান যে কোনো ধরনের স্বচ্ছ্ব, স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে সহায়তা করতে রাজি। কিন্তু ভারত যদি কোনোরকম সামরিক অভিযান করে, তাহলে পাকিস্তানও তার যোগ্য জবাব দেবে।