জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলের একটি সেনা ক্যাম্পে নতুন নিয়োগ পাওয়া নারী সেনাদের দিয়ে অপমানজনক কাজ করানো এবং হয়রানির অভিযোগ উঠেছে৷ প্রশিক্ষণার্থীদের নগ্ন হতে এবং পোলডান্সে বাধ্য করা হয় বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ ধরনের কাজের নিন্দা জানিয়েছেন৷
জার্মানির ফ্যুলেনডর্ফের স্টাউফার ব্যারাকটি জার্মান সেনাবাহিনীর বিশেষ অপারেশনের ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে পরিচিত৷ তবে সেখানে যে জঘন্য ঘটনা ঘটেছে বলে শোনা যাচ্ছে, তার সঙ্গে সেনা প্রশিক্ষণের কোনো সম্পর্ক নেই৷
জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নারী সেনা প্রশিক্ষণার্থীদের ‘এন্ট্রেন্স এক্জাম-’এর অংশ হিসেবে অত্যন্ত অসম্মানজনক এক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷ নিকোল ই. নামের এক নারী দাবি করেছেন, তাঁর প্রশিক্ষকরা তাঁকে ব্যারাকের কমনরুমে পোলডান্সে বাধ্য করেছিলেন৷ শুধু তাই নয়, সেখানে নারী সেনাদের এমন সব কাজ করতে বলা হয় যা স্ট্রিপ ক্লাবে দেখা যায়, সেনানিবাসে নয়৷
সেনাবাহিনীতে জন্তু-জানোয়ার
১৯৪৪ সালের ৬ জুন পায়রার মাধ্যমে প্রথম মিত্রশক্তির কাছে খবর পাঠিয়েছিল ব্রিটেন৷ সেই শুরু৷ এরপর পাখি থেকে শুশুক, বাদুড় থেকে মৌমাছি – এমন নানা প্রাণী বিভিন্ন যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্বযুদ্ধে পত্রবাহক
গত কয়েক দশকে পাখি থেকে শুশুক, বাদুড় থেকে মৌমাছি – এমন নানা প্রাণী সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে৷ পায়রাদের গতি এবং দিক নির্ণয়ের ক্ষমতা অসাধারণ৷ এ কারণে দুটি বিশ্বযুদ্ধেই তাদের ব্যাপক ব্যবহার করা হয়েছে খবর আদান-প্রদানের জন্য৷ তাদের কারণে বেঁচেছে বহু মানুষের প্রাণ৷ তাই এই মহান কর্মের জন্য ‘ডিকিন মেডেল’ দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকজনকে৷ এই পুরস্কারটি কিন্তু ভিক্টোরিয়া ক্রসের সমমানের!
ছবি: Getty Images
ক্যামেরাবাহী পায়রা
পায়রাগুলো কেবল যে পত্রবাহক ছিল, তা কিন্তু নয়৷ জার্মানির জুলিয়ুস গুস্তাভ নয়ব্রোনার যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পায়রাদের গলায় ছোট্ট একটি ক্যামেরা বেঁধে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন৷ এমনকি যুক্তরাষ্ট্র পায়রার মাধ্যমে শত্রু ঘাঁটিতে বোমা হামলার পরিকল্পনা করে তৈরি করেছিল ‘প্রজেক্ট পিজন’৷
ছবি: picture-alliance/akg
মানুষের প্রাণের বন্ধু
মাটিতে পুঁতে রাখা মাইন অথবা বোমা খুঁজতে সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় কুকুর৷ ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্র ৪,০০০ যুদ্ধ কুকুর ব্যবহার করেছিল৷ এছাড়া ফাঁদ খুঁজে বের করতেও কুকুরের জুরি নেই৷
ছবি: Getty Images
বোমা ফেলা বাদুড়
৪০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বাদুড়ের গলায় বোমা বেঁধে শত্রু ঘাঁটিতে তা ফেলার পরীক্ষা করে৷ সেই থেকে বোমা ফেলতে বাদুড়ের ব্যবহার শুরু হয়৷
ছবি: imago
গুপ্তচর বিড়াল
৬০-এর দশকে ‘আকুস্টিক কিটি’ নামে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ একটি প্রকল্প হাতে নেয়৷ উদ্দেশ্য সোভিয়েত দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কথায় আড়িপাতা৷ অস্ত্রপচার করে একটি বাড়ালের দেহে একটি মাইক্রোফোন, ব্যাটারি এবং অ্যান্টেনা লাগানো হয়েছিল৷ তারপর সোভিয়েত কর্মকর্তা যে পার্কে বৈঠক করছিলেন, সেখানে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল সেই বেড়ালকে৷ ১৯৬৭ সালে অবশ্য এই প্রকল্প বাতিল করা হয়৷
ছবি: Peyman
পানির চর
১৯৬০ সাল থেকে ‘নেভি মেরিন ম্যামল’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মার্কিন সেনাবাহিনীতে সিন্ধু ঘোটক এবং শুশুককে ব্যবহার করা শুরু হয়৷ পানির তলায় শত্রুর চলাফেলার উপর নজরদারি, জাহাজ চলাচল এবং সমুদ্র তলদেশে পুতে রাখা মাইন শনাক্ত করার জন্য এদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হতো সে সময় থেকে৷
ছবি: picture-alliance/PIXSELL
মৌ-বাহিনী
কুকুরা তাদের ঘ্রাণশক্তির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত৷ কিন্তু মৌমাছির ঘ্রাণশক্তি তাদের চেয়েও শক্তিশালী৷ ক্রোয়েশিয়ার গবেষকরা পরীক্ষা করে রেখেছেন যে, বোমা বানানোর উপাদান অনেক বস্তুর সাথে মিশিয়ে দিলেও মৌমাছি ঠিকই সেটা শনাক্ত করতে পারে৷ এমনকি পাঁচ কিলোমিটার দূরে মাটিতে পুঁতে রাখা মাইনও শনাক্ত করতে পারে এরা৷
ছবি: Getty Images
প্রাণরক্ষাকারী ইঁদুর
আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত তানজানিয়ায় বেলজিয়ামের এপিওপিও সংস্থাটি বড় ইঁদুরকে ল্যান্ডমাইন শনাক্ত করার কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে৷ সেখানে ৫৭টি ইদুঁর এই কাজে নিয়োজিত, যাদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: Yasuyoshi Chiba/AFP/Getty Images
নিহতদের স্মরণ
সেনাবাহিনী বরাবরই প্রাণীদের বিশেষ দক্ষতার উপর নির্ভরশীল৷ তবে যুদ্ধের সময় বেশিরভাগ প্রাণীর অবদানই অগোচরে থেকে যায়৷ বিভিন্ন যুদ্ধে যেসব প্রাণী অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছে, তাদের স্মরণে লন্ডনের হাইড পার্কে প্রথম একটি স্থায়ী স্মারক নির্মাণ হয়, যার নাম ‘অ্যানিমেল্স ইন ওয়ার মেমোরিয়াল’৷ ২০০৪ সালে এটা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
নিকোল ই. আরো জানিয়েছেন যে, প্রশিক্ষকরা প্রশিক্ষণার্থীদের নগ্ন হয়ে নারীদের দেহতল্লাশি করতে বাধ্য করে৷ এ সময় নারীদের স্তন এবং যৌনাঙ্গ স্পর্শ করা হয় বলেও দাবি করেছেন তিনি৷ প্রশিক্ষকরা এসবের ছবিও তুলে রাখেন ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণের কাজে লাগতে পারে বলে৷
জার্মান সংসদের প্রতিরক্ষা কমিটি বুধবার প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা করেছে৷ গত জানুয়ারিতে আরেক প্রতিবেদনেও প্রশিক্ষণার্থীদের নগ্ন করে ভিডিও করার বিষয়টি উঠে এসেছিল৷ জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লায়েন স্টাউফার সেনাক্যাম্পে প্রশিক্ষক এবং সাধারণ সেনাদের এসব কাজের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ তিনি এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়ার অঙ্গীকারও করেছেন৷
জার্মান রাজনীতিবিদরাও এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন৷ তারা মনে করেন, সেনাবাহিনীতে ব়্যাগিং সংস্কৃতি পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলেও যারা অন্যের ব্যক্তিগত অধিকার এবং গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেন, তাদের দ্রুত চাকুরিচ্যুত করতে হবে৷
উল্লেখ্য, সেনা ক্যাম্পটিতে নারীদের পোলডান্সে বাধ্য করা ছাড়াও চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে একইভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা এবং তাদের শরীরে বরফশীতল পানি ছিটিয়ে দেয়ার মতো ব়্যাগিং নিয়মিতই ঘটে৷ এমন চর্চা দীর্ঘদিন ধরে চালু আছে৷
প্রতিবেদন: কার্লা ব্লাইকার/এআই
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
জার্মান সেনাবাহিনীতে যত ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি
জার্মান সেনাবাহিনীতে প্রায় প্রতিদিনই হয় যুদ্ধবিমান, না হয় হেলিকপ্টার বা অন্য কিছুর সমস্যা দেখা দেয়৷ সেসব কথাই জানা যাবে ছবিঘরে৷
ছবি: AFP/Getty Images
ইউরোফাইটার
জার্মানি সবচেয়ে আধুনিক ফাইটার জেট এটি৷ নাম ইউরোফাইটার৷ তবে নির্মাণকালীন সময়ে ত্রুটির কারণে এই জেটের উড্ডয়ন-ঘণ্টা তিন হাজার থেকে কমে অর্ধেক, অর্থাৎ দেড় হাজার হয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টর্নেডো ফাইটার ও পরিবহণ বিমান
জার্মান সেনাবাহিনী প্রায় ৪০ বছর ধরে টর্নেডো ফাইটার ব্যবহার করে আসছে৷ বর্তমানে এরকম ৮৯টি ফাইটারের মধ্যে মাত্র ৩৮টি চালু আছে৷ ট্রানজাল সি-১৬০ পরিবহণ বিমানের একই পরিণতি হয়েছে৷ ৫৭টি বিমানের মধ্যে এখন মাত্র ২৫টি ব্যবহারের যোগ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Udo Zander
ত্রুটিপূর্ণ হেলিকপ্টার
৩১টি আধুনিক টাইগার হেলিকপ্টারের মধ্যে মাত্র ১০টি এখন আকাশে উড়তে পারে৷ আর ২২টি ‘সি লিংক্স অ্যান্টি-সাবমেরিন হেলিকপ্টার’ এর মধ্যে এখন মাত্র চারটি ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় আছে৷ এনএইচ৩০ এবং সিএইচ৫৩ পরিবহণ কপ্টারেরও একই অবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Carsten Rehder
ট্যাংক
জার্মান সেনাবাহিনীতে একসময় ১৮৯টি ‘বক্সার’ ট্যাংক ছিল৷ এখন সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০-এ৷ আর ১৯৭১ সাল থেকে ব্যবহৃত হওয়া ‘মার্ডার’ এপিসি-র (আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার) সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images
সাগরে সমস্যা
২০০১ সালের ডিসেম্বরে পাঁচটি ‘কে১৩০’ করভেটে কেনার সিদ্ধান্ত নেয় জার্মান সেনাবাহিনী৷ ২০০৭ সাল থেকে সেগুলো ব্যবহারের কথা ছিল৷ কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ গিয়ার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও সফটওয়্যারের কারণে নির্ধারিত সময়ে সেগুলোর ব্যবহার শুরু করা যায়নি৷ তারপর যখন শুরু হলো, তখন পাঁচটির মধ্যে মাত্র দুটি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারযোগ্য ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর জন্য চ্যালেঞ্জ
২০১৩ সালের শেষের দিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ দায়িত্ব নেয়ার পর তাঁর জন্য প্রথন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয় এসব ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি৷ এজন্য অবশ্য সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা দায়ী৷ কারণ তাঁরাই খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য অর্থ বরাদ্দ কমিয়েছিলেন৷