সরকার যতটা নিয়ন্ত্রণ করে, নানা কারণে তার চেয়ে অনেক বেশি আত্মনিয়ন্ত্রিতই হয় বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম৷ ফেসবুক লাইভে এমনটিই বললেন বাংলাদেশের দুই শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বনে ১১তম গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে যোগ দিতে এসেছেন ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীন৷ সম্মেলনের ফাঁকে নৌবিহারে ডয়চে ভেলের ফেসবুক লাইভে তাঁরা সংবাদপত্রের সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনায় এমনটাই বলেছেন৷
ফেসবুক লাইভের সঞ্চালক ও ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের সাংবাদিক আশীষ চক্রবর্ত্তী বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় সরকারি হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা জানতে চাওয়ায় দু’জনই বাইরের সরাসরি নিয়ন্ত্রণের চেয়ে বরং সাংবাদিকদের নিজেদের ‘সেন্সরশিপ'কেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন৷
খালেদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘‘পৃথিবীতে কোনো দেশেই মিডিয়া আসলে স্বাধীন নয়৷ বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়৷ বাংলাদেশ মিডিয়াকে সরকার যতটা নিয়ন্ত্রণ করে তার চেয়ে সাংবাদিকরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রিত হয়৷ অনেকসময়ই ছোটখাটো লোভ যেমন, বিশেষ ব্যক্তির কাছাকাছি যাওয়ার লোভ, বিদেশে সফরের লোভ, সরকারের কাছাকাছি থাকার লোভ, ইত্যাদির কারণে সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রিত হয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘আরেকটি কারণ হচ্ছে অনেক মিডিয়া হয়েছে৷ বাজার সঙ্কুচিত হয়েছে৷ প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায়, কেউ কিছু করতে না পারলে দায় অন্যের ওপরে চাপানোর চেষ্টা করে৷ সরকার টুটি চেপে ধরছে – এই অভিযোগ ঠিক মেনে নিতে পারছি না৷''
আলোচনার এক পর্যায়ে ব্লগার শাম্মী হকের একটি প্রশ্নের জবাবে খালেদ বলেন, ‘‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেক বড় একটা টার্ম৷ আমরা এটাকে কীভাবে দেখি, সেটার ওপর নির্ভর করে৷ এরশাদ সরকারের সময় যেমন আমরা দেখেছি প্রেসনোট দিয়ে সংবাদ আটকে রেখেছে, সেরকম কিন্তু দেখি না আমরা৷''
‘‘বাংলাদেশের দুটি বড় পত্রিকার উদাহরণ দিয়ে অনেকে বলেন, সরকার পক্ষের সংবাদ তাদের মতো করে না ছাপানোতে তারা অনেক সময়ই অসুবিধার সম্মুখীন হয়৷ কিন্তু ওই পত্রিকাগুলোর কর্তৃপক্ষ কিন্তু কখনোই এটা বলেন না৷ আমি মনে করি, এটা প্রফেশনাল অ্যাপ্রোচ৷ পেশাগত হ্যাজার্ড থাকবেই৷ কিন্তু এর সাথে টুটি চেপে ধরার কোনও সম্পর্ক নেই৷ প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রত হওয়ার মতো কোনো প্রশ্ন করলে কিংবা ডেইলি স্টারে কোনও কার্টুন ছাপা হলেই কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবে এ অবস্থা বাংলাদেশে নেই৷''
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আটটি ছবি
তেসরা মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস৷ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বহু সাংবাদিক সংগ্রাম করেছেন৷ তাদেরই কাহিনি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্র৷
ছবি: Bild: BR/Wiedemann & Berg Film
রেজর’স এজ
২০১৬ সালে নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে ডয়চে ভেলের বব্স পুরস্কারে ভূষিত হয় এই তথ্যচিত্র৷ বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার ও লেখকরা বিশেষভাবে বিপন্ন: ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের আক্রমণে শুধুমাত্র গত পাঁচ সপ্তাহে এদের চারজন প্রাণ হারিয়েছেন৷ ‘ক্ষুরধার’ ছবিটি সেই পরিস্থিতির দিকে নজর দিচ্ছে৷
ছবি: Nastiker Dharmakatha
ফ্রেম বাই ফ্রেম
‘এক একটি ছবি’ শীর্ষক দিয়ে চারজন তরুণ আফগান ফটো জার্নালিস্ট বা সংবাদধর্মী আলোকচিত্রশিল্পীর কাহিনি বলা হয়েছে৷ ফটোগ্রাফি বহুদিন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকার পর এই সব আফগান ফটোগ্রাফার আবার ছবি দিয়ে কাহিনি সাজাতে শিখছেন৷ কাবুলের মার্কিন দূতাবাসে ছবিটি প্রদর্শিত হওয়ার পর স্থানীয় টিওএলও নিউজ সংস্থার সাতজন সাংবাদিক একটি আত্মঘাতী বোমা আক্রমণে নিহত হন৷
ছবি: Film Fprout
অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন
‘প্রেসিডেন্টের সাঙ্গপাঙ্গ’ নামের ছবিটি ওয়াটারগেট কেলেংকারি নিয়ে৷ ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার দুই সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টাইনের খোঁজখবরের ফলে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ফাঁস হয় ও প্রেসিডেন্ট নিক্সন শেষমেষ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ ছবিটি তৈরি করেন রবার্ট রেডফোর্ড৷
ছবি: Warner Bros./dapd
গুড নাইট অ্যান্ড গুড লাক
‘‘শুভরাত্রি, তোমার মঙ্গল হোক’’ শীর্ষক সাদা-কালো ছবিটিতে বেতার সাংবাদিকতার গোড়ার দিকের পরিবেশ ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ সেনেটর জোসেফ ম্যাককার্থি ১৯৫৩ সালে তাঁর ‘লাল আতঙ্ক’ অভিযানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও সেলিব্রিটি মহলে তথাকথিত কমিউনিস্টদের খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন৷ সাংবাদিক এডওয়ার্ড আর. বারোস ম্যাককার্থি আমলের সেই সব কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দিয়েছিলেন৷
ছবি: Kinowelt
পিপল ভার্সাস ল্যারি ফ্লিন্ট
যাজক জেরি ফলওয়েল প্রাপ্তবয়স্কদের ম্যাগাজিন ‘হাসলার’-এর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিলেন, তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে ১৯৯৬ সালের কথাচিত্র ‘সরকার বনাম ল্যারি ফ্লিন্ট’৷ পর্নোগ্রাফির প্রকাশক ল্যারি ফ্লিন্ট বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারের কোপে পড়েন৷
ছবি: dpa
ফর্বিডেন ভয়েসেস
জুরিখের চিত্র পরিচালক বার্বারা মিলার-এর ২০১২ সালে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘নিষিদ্ধ কণ্ঠ’ কিউবা, চীন ও ইরানের তিন ব্লগারের জীবন তুলে ধরেছে৷ ইওয়ানি সাঞ্চেজ, জেং জিনিয়াং ও ফর্নাজ সঈফি স্বদেশে স্বৈরাচারী শাসন সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত করতে চান৷ তাদের কাজ এতটা কৌতূহল সৃষ্টি করে যে, তারা নিজের জীবন বিপন্ন করে এই সব কাহিনি দেশের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Das Kollektiv
বার্মা ভিজে
বর্মা, অর্থাৎ মিয়ানমারে ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নামেন৷ সেই নাটকীয় ঘটনাবলী নিয়ে ডেনিশ চিত্রনির্মাতা আন্ডার্স ওস্টারগার্ড-এর ছবি ‘বর্মার ভিডিও জকি’৷ ভিক্ষুদের প্রতিবাদ দেশের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রূপান্তরিত হওয়ায় বিদেশি সাংবাদিকদের বর্মা থেকে বহিষ্কার করা হয় ও শুধু গোপনে ছবি তোলার পথই বাকি থাকে৷
ছবি: flickr/Steve Rhodes
দ্য স্পিগেল অ্যাফেয়ার
১৯৬২ সালে জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল’ সংবাদ পত্রিকায় পশ্চিম জার্মানির সামরিক বাহিনীর দৈন্যদশা নিয়ে একটি রচনা প্রকাশিত হয়৷ ফলে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্রানৎস ইওসেফ স্ট্রাউস ‘স্পিগেল’ পত্রিকা অফিসে পুলিশি তল্লাসির নির্দেশ দেন৷ কিছু স্পিগেল সম্পাদকদের গ্রেপ্তারও করা হয়৷ জনসাধারণ এই ঘটনাকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ বলে গণ্য করে৷ ‘স্পিগেল কেলেঙ্কারি’ টিভি ছবিটিতে সেই মুড ধরে রাখা হয়েছে৷
ছবি: Bild: BR/Wiedemann & Berg Film
8 ছবি1 | 8
সংবাদমাধ্যম দায়বদ্ধতার জায়গায় কতটা স্বচ্ছ – সঞ্চালক আশীষ চক্রবর্ত্তীর এমন এক প্রশ্নের জবাবে ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক বলেন, ‘‘ঢাকা থেকে ১৫০টি সংবাদপত্র প্রকাশ হয়৷ ৩৫টির বেশি টিভি চ্যানেল আছে৷ ৫০০-র মতো অনলাইন পোর্টাল আছে৷ এটা বলা কঠিন, তারা কোন কোন ধরনের দায়বদ্ধতা মেনে চলছে৷ আমার পত্রিকার পক্ষ থেকে বলতে পারি, আমরা যতদূর সম্ভব এটা মেনে চলি বা চেষ্টা করি৷ আমরা এথিক্যাল জার্নালিজম করতে চাই, অবজেক্টিভ জার্নালিজম করতে চাই, ডেইলি স্টারের টুটি চেপে ধরার জায়গাটি নেই, কিন্তু রেস্ট্রিকশন আছে৷ এটা গ্লোবালি আছে৷ এটা মাথায় রেখেই আমাদের আরও দায়বদ্ধ হতে হবে৷ গ্লোবালি এই চাপটা আমাদের মেনে নিতে হবে৷ আমাদের ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনে জোর দিতে হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘দায়বদ্ধতার ব্যাপারটা সম্মিলিতভাবে ভাবতে হবে৷ যেমন, এখন ফেসবুক একটি মাধ্যম মত প্রকাশের, সেখানেও কিন্তু আপনার ভাবতে হবে৷ দায়বদ্ধতার কথা মনে করে লিখতে হবে৷ একটা ‘থিন লাইন' কিন্তু আছে৷''
এসময় কয়েকটি সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম বন্ধ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলে খালেদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘‘দৈনিক দিনকাল, সংগ্রাম এবং নয়াদিগন্ত তো ভয়ঙ্করভাবেই সরকারের বিরোধিতা করে৷ কিন্তু ওদের তো বন্ধ করা হয়নি? তাদের দশভাগের একভাগ যদি আমি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকাতেই লিখি, সরকার চায় যে সেটা সেভাবে লেখা না হোক৷ এটা আসলে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনার লেখা মানুষ কতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে, সেইটার ওপর নির্ভর করে৷ কনটেন্ট না৷ আপনি যদি ওদের কনটেন্ট দেখেন তারা কিন্তু দারুণ বিরোধিতা করে৷ কিন্তু তারা আসলে ‘ইরেলেভেন্ট'৷''
বাংলাদেশের গণমাধ্যম আইন এখনো পড়ে আছে ব্রিটিশ আমলে
ব্রিটিশ আমল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংক্রান্ত যেসব আইন তৈরি হয়েছে, এবং এখনো বলবৎ আছে, তাতে কী বলা হয়েছে৷ ছবিঘরে জেনে নিন কিছু আশ্চর্য আইনের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ছাপাখানা প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন ১৯৭৩
ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল, যার কয়েকটি কিছুটা সংশোধিত আকারে আজও রয়ে গেছে৷ যেমন: ছাপাখানা প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন ১৯৭৩৷ এ আইন অনুযায়ী, যে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশের আগে জেলার ডেপুটি কমিশনারের লিখিত অনুমোদন লাগবে৷ এটি ১৮২৩ সালে ভারতের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত গর্ভনর জেনারেল জন অ্যাডামের অধ্যাদেশ৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
দণ্ডবিধি ১৮৬০
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি ‘১২৪ ক’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে, তার তিন বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানার বিধান রয়েছে৷ এটি একেবারেই মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন৷ একই আইনের ‘৫০৫ খ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়, কোনো প্রতিবেদন বা বিবৃতি যদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে তাকে ৭ বছর কারাভোগ করতে হবে৷ একইভাবে মানহানির জন্য ৪৯৯ এবং ৫০১ অনুচ্ছেদে শাস্তির বিধান রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪
বাংলাদেশের অবাধ তথ্যের প্রবাহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হল অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন বা স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৭৪৷ প্রথমটিতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা যেতে পারে এমন কোনো বিষয় কাউকে দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ দ্বিতীয় আইনে রাষ্ট্রের চোখে অনিষ্টকর কোনো তথ্য গণমাধ্যমে কেউ প্রকাশ করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ (১) অনুচ্ছেদে ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা’র কথা বলা হয়েছে৷ অথচ ৩৯(২)-এ এই স্বাধীনতা আইনের দ্বারা আরোপিত ‘যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষেই’ নিশ্চিত হবে বলা হয়েছে৷ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃংখলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে অথবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে এই বাধা-নিষেধের কথা বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jaspersen
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা
২০১৩ সালের সংশোধিত আইনে কোনো ব্যক্তি যদি ইন্টারনেটে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যার দ্বারা কারো মানহানি ঘটে, কিংবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে, বা এ ধরনের তথ্য কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে দেয়া হয়, তাহলে এটি অপরাধ এবং সেই অপরাধে ৭ থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
ছবি: Schlierner - Fotolia.com
ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা
এ আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার অতিগোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল যন্ত্র, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে সেই কাজ হবে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ৷
ছবি: Badruddoza Babu
৩২ ধারায় শাস্তি
এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে৷ কেউ যদি এই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করেন, তাহলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে৷
ছবি: Imago/IPON
তথ্য অধিকার আইন ২০০৯
এই আইনটি বাক স্বাধীনতার পক্ষে৷ বলা হয়েছে, ‘‘এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে৷’’ আরো বলা হয়েছে, ‘‘তথ্য প্রদানে বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সাংঘর্ষিক হইলে, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/Dinodia Photo Library
8 ছবি1 | 8
এ সময় এক দর্শক প্রশ্ন করেন, চাকরি বাঁচাতে সাংবাদিকদের বাক স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে হচ্ছে কিনা, বিশেষ করে মালিকপক্ষ যখন সরকার সমর্থক!
খালেদ এ প্রশ্নটির জবাবে উদাহরণ টেনে বলেন, ‘‘যত বড় বড় ত্রুটি সরকারের ‘লিক' হয়েছে সেগুলো তো গণমাধ্যমই সামনে আনছে৷ মালিকানা সরকারি দলের কিনা সেটা কোনও বিষয় না৷ কেননা, এই সরকারের আমলে অনুমোদন পেয়েছে, এমন অনেক টিভি চ্যানেলের চেয়ে আগের সরকারের আমলে অনুমোদন পেয়েছে তারাই কিন্তু বেশি এ সরকারের স্তুতি করছে বা করে৷''
ব্লগার শাম্মী হক এসময় জানতে চান মিডিয়ার মালিকের নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব খালেদ মুহিউদ্দীন উহ্য রাখছেন কিনা৷ প্রত্যুত্তরে খালেদ বলেন, ‘‘ সারা পৃথিবীর মিডিয়ার একই চরিত্র৷ ধরুন বাংলাদেশের মিডিয়া, এটা পুরুষতান্ত্রিক, এটা মুসলমানদের, আরও স্পেসিফিকেলি সুন্নি মুসলমানদের৷ কেননা, তারাই ক্ষমতায়৷ পৃথিবীর মিডিয়াগুলো তো এভাবেই চলে৷ কাজেই গুরুত্ব তো আছেই৷ কিন্তু আমি কথাটা দায়বদ্ধতার দিক থেকে বলতে চাচ্ছি৷''
দেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমে কাজ করা খালেদ আরো বলেন, ‘‘মিডিয়া কোনো লিনিয়ার ব্যবসা না৷ আমি টকশো করবো বা ডেইলি স্টারের আশফাক ভাই প্রতিবেদন ছাপবেন, আমাদের মালিকরা আমাদের মাথার উপর বসে থাকে৷ তাদের ইন্টারেস্টের বিপরীতে যখন আমরা কিছু করি, মালিকদের এতে সুখ লাগে না৷ তারা তাদের জায়গায় অসুখী৷ কিন্তু এটা তাদের মানতে হয়৷ কেননা, এটা না হলে হয় না৷ সাংবাদিকদের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজেদের একটা আলাদা অস্তিত্ব তৈরি করা৷''
খালেদ মুহিউদ্দীনের দাবি, তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, সেই ইন্ডিপেন্টেন্ট টেলিভিশন মালিকের সব নির্দেশ মেনে চলে না৷ তাঁর ভাষায়,‘‘আমার টেলিভিশন কিন্তু সালমান এফ রহমানের টেলিভিশন না, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, আমার টেলিভিশন সালমান এফ রহমানের টিভি না৷ সালমান এফ রহমানের আদর্শ চেতনা দিয়ে কিন্তু ইনডিপেন্ডেন্ট টিভি চলে না৷''
বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডেরপ্রসঙ্গে ডেইলি স্টার সম্প্রতি একরামুল হকের যে অডিও টেপটি প্রকাশ করেছে তার জন্য ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইট প্রায় ২০ ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল৷
এ বিষয়ে আশরাফুল হক বলেন, ‘‘একরামের ঘটনায় প্রকাশ হওয়া অডিও টেপটি সংবাদ সম্মেলনে তার পরিবার দিয়েছিল৷ সবাই হাতে পেলেও, একমাত্র ডেইলি স্টারই তা প্রকাশ করেছে৷ এটা কিন্তু আমাদের নিজেদের অনুসন্ধান করা প্রতিবেদন নয়৷ কেউ কেউ ভেবেছে এটা নিউজ করার উপযোগী না, অথবা এটা ভেরিফাই করা উচিত৷ আমরা ভেবেছি, প্রথমবার ভিক্টিমের পরিবার থেকে একটা রেকডের্ড পেয়েছি৷ পাওয়ার পর দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই আমরা ছেপেছি৷ ইট ওয়াজ এ হিউজ ডিসিশন৷ টুটি চেপে দেওয়ার ঘটনা নাই, কিন্তু কিছু রেস্ট্রিকটেড করার ঘটনা তো এসেছেই৷ সেল্ফ সেন্সরশিপ এসেছে৷ আমরা আগে কম এক্সারসাইজ করে আসছিলাম, সেটা এখন বেশি করছি৷ তবে হ্যাঁ, ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইট ২০ ঘণ্টা বন্ধ ছিল৷''
কর্তৃপক্ষ কি দায় স্বীকার করেছে কি না জানতে চাইলে আশরাফুল হক বলেন, ‘‘বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি এটা জানেন না৷ বিটিআরসির দুটো সেকশন আছে৷ এটা সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি উইং-এর কেউ করেছে৷ আমরা ধারণা করি, এটা সরকারের উঁচু মহলের কেউ নন৷ তারা কেবল ওই নিউজটা ব্লক করতে চাইলেও সেটার টেকনোলজি যেহেতু খুবই এক্সপেন্সিভ এবং আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত সম্ভব না, ফলে ওই কনটেন্ট বন্ধ করতে হিয়ে আমাদের সাইটই বন্ধ করে দিয়েছে৷''
আশফাকুল হক বলেন, ‘‘এটা তো একটা প্রকাশনা বন্ধের সামিল৷ তবে আমরা খুশি, কেননা গভর্নমেন্টের টপ লেভেল থেকে এটার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ হয়েছে, নইলে তো এটা বন্ধই থাকতো৷ এটা ভালো দিক৷''
এইচআই/এসিবি
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের নয়া কৌশল
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানি৷ না, এমনিতেই নয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এমন সিদ্ধান্ত৷ এই কর্তৃপক্ষ চায় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে, এক ভিন্ন উপায়ে৷
ছবি: DW
শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো
প্রথম আলো পত্রিকার প্রচার সংখ্যা পাঁচ লাখ বলে দাবি করা হয়৷ এটি বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক৷ অনলাইনেও পত্রিকাটি সমান পাঠক প্রিয়৷
ছবি: DW
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন বন্ধ
গত ১৬ই আগষ্টের পর থেকে পত্রিকাটিতে নির্দিষ্ট কিছু বিজ্ঞাপন কমে যায়৷ বিশেষ করে মোবাইল ফোন ও কহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রথম আলোতে তাদের পণ্য এবং সেবার বিজ্ঞাপন দেয়া কার্যত বন্ধ রেখেছে৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপনের তারতম্য
জুলাই মাসে প্রথম আলো গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলা লিংক, এয়ারটেল, টেলিটক, প্যাসিফিক টেলিকম এবং ইউনিলিভার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়েছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৭০০ টাকার৷ আর সেপ্টেম্বর মাসে পেয়েছে মাত্র ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন৷ রায়ান্স আর্কাইভস থেকে পাওয়া গেছে এই তথ্য৷
ছবি: DW
নয় কোটি টাকার বিজ্ঞাপন কমে গেছে
গ্রামীণ ফোনের ভাষ্য অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষে নির্দেশে বন্ধ হয়েছে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারে বিজ্ঞাপন৷ রায়ান্স আর্কাইভসের হিসেব অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে প্রথম আলো মোট বিজ্ঞাপন পায় ২৪ কোটি ৮৭ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার৷ সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলো মোট বিজ্ঞাপন পায় ১৫ কোটি ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৯০০ টাকার৷ জুলাই মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলো ৯ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন কম পেয়েছে৷
ছবি: DW
ক্ষতির মুখে ডেইলি স্টারও
বিজ্ঞাপনে ধস নেমেছে প্রথম আলোর সহযোগী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারেও৷ পত্রিকাটিতে জুলাই মাসে গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলা লিংক, এয়ারটেল, টেলিটক, প্যাসিফিক টেলিকম এবং ইউনিলিভার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়েছে মাসে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকার৷ আর সেপ্টেম্বর মাসে পেয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন৷ ডেইলি স্টার বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক৷
ছবি: DW
কাদের নির্দেশে বন্ধ হচ্ছে বিজ্ঞাপন?
ডয়চে ভেলেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে গ্রামীণ ফোন ‘কর্তৃপক্ষ’ বলতে কাদের বুঝিয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে জানায়নি৷ তবে আল-জাজিরা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে৷