এবারও একুশে বই মেলা শুরুর আগেই শুরু হয়েছে এক প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেয়া নিয়ে বিতর্ক৷ নিষিদ্ধ নয় এমন বইয়ের কারণে বাংলা একাডেমির এ অবস্থান কি যুক্তিসঙ্গত?
বিজ্ঞাপন
এমন পরিস্থিতি এড়ানোর উপায় কী? এসব বিষয়েই কথা বলেছেন গ্রন্থমেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম৷
ডয়চে ভেলে : এবার বইমেলার প্রস্তুতি কেমন?
ডা. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম : আছে৷ এখন আমাদের সব স্টল বরাদ্দ শেষ৷ প্রধানমন্ত্রী পহেলা ফেব্রুয়ারি মেলার উদ্বোধন করবেন, সেই প্রস্তুতিও প্রায় শেষ৷ এবার প্রধানমন্ত্রী সরাসরি এসে উদ্বোধন করবেন৷ এবার মেলার আঙ্গিকগত ও বিন্যাসগত পরিবর্তন এনেছি৷ মেট্টোরেলের কারণে এবার আমরা মূল গেটটা পাচ্ছি না৷ এটাকে এবার বাহির হওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে৷ আর রমনা মন্দিরে যাওয়ার মূল গেটটা প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার হবে৷ এবার ১৮২টা স্টল আর ১১টা প্যাভিলিয়ন৷ এর মধ্যে গতবছর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের দিকে যে স্টলগুলো ছিল তারা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল৷ এবার তাদের মূল জায়গায় নিয়ে এসেছি৷
মেলা যে নীতিমালার ভিত্তিতে চলে, সেটা কারা তৈরি করে?
আমাদের ৩১ সদস্য-বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি আছে৷ প্রথম মিটিংয়ে এই কমিটি নীতিমালাটা চূড়ান্ত করে ফেলে৷
প্রতি বছরই স্টল বরাদ্দ নিয়ে নানা সংকট দেখা দেয় কেন? বিষয়টিকে বিতর্কমুক্ত করা যায় না?
সেটা তো বুঝতেই পারছেন৷ এবার একটা হয়েছে আদর্শ নিয়ে৷ পেছনে যে ক্ষতিগ্রস্ত সে তো অনেক কথাই বলবে৷ যে সামনে স্টল পেয়েছে, ভালো জায়গায় পেয়েছে, সে তো কিছু বলবে না৷ এত বিশাল এলাকা, সবাইকে তো সন্তুষ্ট রাখা যাবে না৷
‘সমস্যাটা যখন হয়েছে, তখন আদর্শ শো-ডাউন করেছে’
এবারও আদর্শ প্রকাশনী স্টল বরাদ্দ নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে সেখানে বাংলা একাডেমি কি দায় এড়াতে পারে?
এটা নিয়ে আমি কোনো কথাই বলতে চাই না৷ এখন আর ওই ইস্যুটা নেই৷ উনি অনেক কথাই বলেছেন৷ বাংলা একাডেমি এককভাবে স্টল বরাদ্দ দেয় না, এখানে একটা কমিটি আছে, তারাই সিদ্ধান্ত দেয়৷ সমস্যাটা যখন হয়েছে, তখন আদর্শ শো ডাউন করেছে,অনেক কথা বলেছে৷ তখন আমি দু-একটি কথা বলতে গেছি, দেখি বিকৃত হয়ে যায়৷ তখন আমি মহাপরিচালককে বলেছি, মিটিং ডাকার জন্য৷ উনি মিটিং ডেকেছেন৷ সেখানে সম্মিলিতভাবে একটা প্রেসরিলিজ দেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি আমরা নীতিমালাটা আপলোড করেছি৷ এই দুটো দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন৷
যে বইগুলো নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, এর একটিও নতুন বই নয়৷ সবগুলো বই গতবছর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে, তখন আপনারা কিছু বলেননি কেন?
আমি যতটুকু জানি, গত বছর বইমেলা যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন তারা বইগুলো এনেছে৷ আপনারা জানেন, আগের বছর যখন মেলা শেষ হয়, সেই দিন থেকে এ বছর মেলা শুরু হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত কাউন্ট হবে৷ গত বছর মেলা শেষ হয়েছে ৭ মার্চ, আর বইগুলো সম্ভবত এসেছে ৪ মার্চ৷ যখন বইগুলো জমা হয়েছে, তখন হয়ত আমরা মূল্যায়ন করতে পারিনি৷ এবার যখন আমরা নীতিমালায় দেখলাম যে বইগুলোর মধ্যে এসব জিনিস রয়েছে, এগুলো কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আমাদের গোচরে এনেছে৷ সেই কথাটাই আমরা প্রেস রিলিজে উল্লেখ করেছি৷
আদর্শ-র বইয়ে যা আছে
আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল না দেয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে রোববার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি৷ এতে আদর্শ থেকে প্রকাশিত ফাহাম আব্দুস সালামের ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইয়ের চারটি পৃষ্ঠার কথা উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: Adarsha publication
বাংলা একাডেমির প্রেস রিলিজ
বাংলা একাডেমি বলেছে, ‘‘আদর্শের বিতর্কিত বইটির ১৫ নং পৃষ্ঠায় বাঙালি জাতিসত্তা; ১৬ নং পৃষ্ঠায় বিচার বিভাগ, মাননীয় বিচারপতিগণ, সংবিধান, জাতীয় সংসদের মাননীয় সদস্যবৃন্দ; ২০ নং পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ৭১ নং পৃষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশ্লীল, রুচিগর্হিত, কটাক্ষমূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে৷’’
ছবি: Adarsha publication
‘বাক ও ভাব-প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থি’
বাংলা একাডেমি বলেছে, ‘‘উপর্যুক্ত বক্তব্য বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত মত-প্রকাশের স্বাধীনতা, যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে বাক ও ভাব-প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থি৷’’
ছবি: bdnews24.com
সংবিধানের ৩৯(২) ধারায় যা বলা আছে
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আদর্শের বইয়ের ১৫ নং পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে
‘‘বাঙালি কখনো এলাবোরেট স্বপ্ন দেখতে পারে না- তার জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন৷ তার স্বপ্ন হলো তাৎক্ষণিকতার স্বৈরাচার - অর্ধেক তার দেখা, তার অর্ধেক তার স্বপ্ন৷ আর সেই সিকিস্বপ্নের পুরোটাই হলো ধ্বংসের ছক৷... তার (বাঙালির) কলোনিয়াল মাথার সব থেকে বড় চিহ্ন হোলো আইন-ফেটিশ৷ কলোনিয়াল মাথা মনে করে যে সব কিছুর জন্য আইন দরকার, পা. মারা এবং পা.. থেকে রক্ষা পাওয়া দুটোর জন্যেই আইনের প্রয়োজন আছে৷’’
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/ZUMA Wire/IMAGO
১৬ নং পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে
‘‘বাংলাদেশের বিচারপতিরা শক্তিমানের প্রতি পরমব্রতী; বিচার করার চেয়ে বিহিত করার দিকে তাদের ঝোঁকটা একটু বেশি৷... গর্দভদের সংবিধানে সবসময় সর্বোচ্চ সংখ্যক আইন ও সংশোধনী থাকতে হয়৷ গর্দভরা নিরাপদ হওয়ার চেয়ে নিরুপদ্রব হওয়াকে বড় পাওয়া মনে করে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
২০ নং পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে
‘‘পাকিস্তান আমলের শীর্ষ পর্যায়ের এমন কোনো অপকর্ম ছিলো না যেটা বলবৎ রাখিনি আমরা বাংলাদেশ আমলে৷ বরঞ্চ বহু ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা পাকিস্তানিদের ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হই (যেমন নির্বিচার লুটপাট ও মেরিটোক্রেসির ওপরে স্বজনপ্রীতিকে স্থান দেয়া)৷’’
ছবি: AP/picture alliance
২০ নং পৃষ্ঠায় আরও যা লেখা আছে
‘‘পরমতসহিষ্ণুতার কথা বললে আমি কেবল একটিই উদাহরণ দেবো: ৭ই মার্চ শেখ মুজিবর রহমান ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে বাড়ি ফিরতে পেরেছিলেন— বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানের সাথে ডিনার করতে পেরেছিলেন৷ আজকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কোনো নেতা কাছাকাছি কোনো আহবান করলে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে জেলে ঢোকানো হবে পল্টন ময়দান থেকেই৷’’
ছবি: Journey/M. Alam
৭১ নং পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে
‘‘আওয়ামী লীগের হয়ে এলেকশান করা এক রাজনীতিবিদ আমাকে বলেছেন যে শেখ হাসিনার চেয়ে বড় একনায়ক ভারতবর্ষের ইতিহাসে কখনো আসেনি৷ যত বড় একনায়কই হোক, অন্তত পার্টি মেন কিংবা জেনারেলদের সাথে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত দেন৷ সিনিয়র মেম্বারদের মতামত আপনি নেবেন কি না, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ কিন্তু একনায়করা অন্তত আলোচনা করেন৷ শেখ হাসিনা এ প্রয়োজনটুকুও বোধ করেন না৷ দলের মহাসচিবও জানেন না তিনি কী করবেন৷’’
‘‘শেখ হাসিনা যে শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পুরো দেশটাকে বিস্ফোরণমুখ করে ফেলেছেন এবং এর দায়ভার যে প্রায় এককভাবে তার- এই কথা কোনো সুস্থ মানুষ অস্বীকার করতে পারবেন বলে মনে হয় না৷ কিন্তু বিস্ময়করভাবে নন-রেসিডেন্ট শাহবাগী, যাদের অনেকেই খুব ভালো পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় ডিগ্রী করছেন; তারাও কোনো উচ্চবাচ্য করেন না৷ এমনকি অনেকে এখনও এই বিষয়ে হাসিনাকে সমর্থনও করেন৷’’
ছবি: PID Bangladesh government
9 ছবি1 | 9
তাহলে কি বইমেলায় যে বইগুলো আসে তার উপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ নেই বাংলা একডেমির?
৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার বই বের হয়৷ বাংলা একাডেমির ছোট্ট একটা কমিটি দিয়ে কি সবগুলো বইয়ের মূল্যায়ন করা সম্ভব? একটা উদাহরণ দেই৷ বাংলা একাডেমি থেকে যদি কোনো বই হয়, সেই বইয়ের শতভাগ দায়িত্ব বাংলা একাডেমি নেবে৷ আমরা কী করি, দুই জায়গায় রিভিউতে পাঠাই৷ যদি কিছু কনফিউজিং হয় তখন তৃতীয় ব্যক্তির কাছে পাঠাই৷ এরপর আমরা ছাপি৷ প্রকাশকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে৷ একটা কমিটি করে দিয়ে তাদের কাছে পাঠালে তখন তারা দেখতে পারে৷ কেন্দ্রীয় একটা নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত৷ সিনেমাগুলো সেন্সর করা হয়৷ কীভাবে হয়? একটা কমিটি আছে, তারা দেখে, তারপর সিনেমাটির অনুমোদন দেওয়া হয়৷ ঠিক সেইভাবে যদি একটা কমিটি থাকতো সেটাই ভালো হতো৷
বইমেলায় যে বইগুলো আসে, সেগুলো কি বাংলা একাডেমির অনুমোদন নিয়ে আনতে হয়? নাকি যে কোনো প্রকাশক স্বাধীনভাবে আনতে পারেন?
বাংলা একাডেমির নীতিমালা করে দেওয়া আছে৷ যদি কোনো বই নিয়ে কনফিউশন দেখা দেয়, তখন টাস্কফোর্স আছে, তারা দেখে৷ এটা বলতে পারেন, টাস্কফোর্স এতদিন কঠিনভাবে হয়ত এগুলো দেখেনি৷ এটা আমি মানলাম৷ টাস্কফোর্স কোনো দায়িত্বে অবহেলা করলে তাদের উপর বর্তাবে৷ এবার কিন্তু টাস্কফোর্স অন্যভাবে সাজানো হয়েছে৷ মেলার প্রথম দিন থেকেই তারা এদিকে লক্ষ্য রাখবে৷ ফলে এবার অন্য রেজাল্টও আসতে পারে৷ শিল্পকলার মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে একটা কমিটি করা হয়েছে৷ তিনি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন৷
বাকস্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
আমি কিছুই বলবো না৷ আমি মেলার সদস্য সচিব মাত্র৷ আমি তো লেখকও না৷ অন্যভাবে বললে, বাকস্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে কি হচ্ছে না সেটা মেলা পরিচালনা কমিটি, মিডিয়াসহ অন্যরা এটা দেখবে৷
আসছে ফেব্রুয়ারি, আসছে বইমেলা
মনের খোরাক ও জ্ঞানের অন্যতম বাহক বই৷ বাংলাদেশে বইকেন্দ্রিক সবচেয়ে বড় আয়োজন অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হচ্ছে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে৷ চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ ছবিঘরে দেখুন তার নানা চিত্র৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বই মানেই বাংলাবাজার
পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাওয়ার পথেই পড়বে বাংলাবাজার৷ এখানে রয়েছে শত শত বইয়ের দোকান৷ বই ছাপানো, প্রচ্ছদ, প্রুফ রিডিংসহ বইমেলার যাবতীয় প্রস্তুতি সারছেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দোকানে বইয়ের স্তুপ
বাংলাবাজারের প্রকাশনা সংস্থাগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, সেখান বইয়ের স্তুপ জমে আছে৷ বইমেলা উপলক্ষে বই ছাপানো বেড়েছে বিধায় গোডাউনের পাশাপাশি দোকানেও যতটুকু সম্ভব বই এনে রাখা হচ্ছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘পট্টি’ থেকে চাহিদা পূরণ
দেশে ডলার সংকটের কারণে দেশের বাইরে থেকে কাগজ তৈরির ‘পাল্প’ আমদানি কমে গেছে৷ এ সংকট সমাধানে কাগজের উচ্ছিষ্ট অংশ বা পট্টি থেকে ফের কাগজ তৈরি করা হচ্ছে৷ এতে অবশ্য পট্টির চাহিদা ও দাম গত তিনমাসে কমপক্ষে তিনগুণ বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘কাগজের দাম বেড়েছে’
প্রকাশনা সংস্থা শব্দ শিল্পের কর্ণধার মোঃ শরিফুর রহমান বলেন, ‘‘বইমেলার আগে আমরা যখন মোটামুটি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি, তখনি বই ছাপানোর যে মূল উপকরণ, সেই কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হলো৷ এখন অনেক প্রকাশনা সংস্থাই বই ছাপানো থেকে আকস্মিকভাবে সরে আসছেন৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
শিশুতোষ বইয়ের চাহিদা
শিশুতোষ বই ছাপানোর প্রকাশনা সংস্থা আবির বুক ডিপোর স্বত্বাধিকারী আওলাদ মিয়া বলেন, ইউটিউব বা অনলাইনভিত্তিক শিশুদের অন্যান্য বিনোদনের মাধ্যম বেড়ে যাওয়ায় এখন বাচ্চাদের শিক্ষামূলক বই কম বিক্রি হচ্ছে৷ তাছাড়া আনুষাঙ্গিক জিনিসের দাম বাড়ার কারণে বইয়ের দামও বেশি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বাড়তে পারে বইয়ের দাম
পুরান ঢাকার বাংলাবাজার ও প্যারিদাস রোডে ঘুরে একাধিক প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কাগজের দাম বাড়ায়, এবার বইমেলায় বইয়ের দামও বাড়তে পারে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
জানুয়ারি মাসের উলটো চিত্র
পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের আনমন প্রিন্টার্সের কর্মচারি মোঃ মাসুদ বলেন, ‘‘আমি প্রায় ৩২ বছর ধরে প্রিন্টিংয়ের কাজ করি৷ কিন্তু করোনার লকডাউন বাদে কোনো জানুয়ারি মাসে এতো কম কাজ হতে দেখি নাই৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব বইয়ে
ঢাকার একাধিক প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশক ও লেখক মনে করেন, এখন শিক্ষিত শ্রেণির প্রায় সবার হাতেই স্মার্টফোন থাকায় সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্লাটফর্মে তারা ব্যস্ত থাকছেন৷ এর প্রভাবে পাঠকেরা বই বিমুখ হচ্ছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
প্রভাব অন্যান্য পেশায়
বাংলাবাজারে বই পরিবহণের কাজে নিযুক্ত ভ্যানচালক মোঃ আসগর আলী বলেন, গত বছরগুলাতে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে দম নেওয়ার ফুরসত থাকতো না৷ প্রচুর কাজের চাপ থাকত৷ অথচ এবার চিত্র একেবারেই ভিন্ন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
টুকটাক অর্ডার আসছে
পুরান ঢাকার কাগজিটোলার জনতা প্রেস, আইডিয়াল প্রেসসহ একাধিক প্রকাশনা ও ছাপাখানা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের এখন যে টুকটাক কাজের অর্ডার আছে, তা দিয়ে কোনমতে চলে গেলেও কতদিন এভাবে টিকে থাকা যাবে, তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা সন্দিহান৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বইমেলা ঘিরে সমালোচনা
অমর একুশে বইমেলা শুরু হওয়ার ঠিক আগে সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা একাডেমীর একটি সিদ্ধান্তের সমালোচনা শুরু হয়েছে৷ বলা হচ্ছে, ‘আদর্শ’ প্রকাশনা সংস্থা বাংলা একাডেমীর নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ৩টি বই প্রকাশ করেছে৷ এ কারণে মেলায় তাদের স্টল বরাদ্ধ দেয়া হয়নি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বইমেলার ভেন্যুর প্রস্তুতি
অমর একুশে বইমেলার জন্য নির্ধারিত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও শাহবাগের সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বইয়ের বিভিন্ন স্টল প্রস্তুতির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
তবুও অমর একুশে বইমেলা
সময়, অন্যপ্রকাশ, কাজল, মাওলা ব্রাদার্সের মতো বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে মানুষের কাছে বইয়ের চাহিদা কমে গেছে৷ তবে তাদের আশা, বইপ্রেমীদের ভিড়ে এবারও সরব হবে বইমেলা, বইও কিনবেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
13 ছবি1 | 13
প্রকাশনার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি কতটুকু স্বাধীন? সরকারের হস্তক্ষেপই বা কতটুকু?
প্রকাশনার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি সম্পূর্ণ স্বাধীন৷ এখানে সরকারি কোনো হস্তক্ষেপ নেই৷ বাংলা একাডেমি রুচিশীল ও গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান৷ কবিতা, গল্প, উপন্যাস এগুলো বাংলা একাডেমি খুব একটা ছাপে না৷ আমরা গবেষণাকে প্রাধান্য দেই৷ আমি এখানে ১৯৯৬ সাল থেকে আছি৷ এখানে এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না, সেই কথা কিন্তু কেউ কখনো আমাদের বলেনি৷ বাংলা একাডেমি যথেষ্ট স্বাধীন৷
অনেক সময় দেখি, ধর্মীয় উষ্কানিমূলক কিছু বই মেলায় আসে৷ এটা নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে?
নতুন যারা স্টল নেয়, তাদের কিন্তু বইগুলো জমা দিতে বলা হয়৷ সেই বইগুলো কিন্তু কমিটির সবাই দেখেন, যাতে বিতর্ক না হয়৷ সে কারণে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান, যাদের কাজ সন্দেহজনক মনে হয়েছে, তাদের স্থগিত করে রাখা হয়েছে৷ আমাদের কমিটির সদস্যরা বলেছেন, যেগুলো ধর্মীয় বই সেগুলো তো ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যে মাসব্যাপী অনুষ্ঠান হয় সেখানে তো তারা যেতে পারে৷ এখানে অন্য যারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে চান, তাদের জন্য৷ এখানে তো স্পেস অনেক কম৷ সেই দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের বলা হয়েছে, সেখানকার নীতিমালার আলোকে তারা ওখানে স্টল দিতে পারে৷ আমরা এবার যথেষ্ট সতর্ক৷
আগে বইমেলায় লেখকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, লেখদের নিরাপত কতটা নিশ্চিত করা হয়েছে?
গত ১৯ জানুয়ারি আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের একটা মিটিং হয়েছে৷ বিভিন্ন বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেখানে ছিলেন৷ সেখানে কিন্তু প্রথমেই নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে এসেছে৷ বিভিন্ন বাহিনী আমাদের বলেছে- এবার কোনো থ্রেট নেই৷ তারা আমাদের বলেছেন, নীতিমালার আলোকে আপনারা কঠোর অবস্থানে থাকবেন৷ যেভাবে চলছে, সেটা দেখে মনে হচ্ছে পহেলা ফেব্রুয়ারি আমাদের সুন্দর একটা মেলার উদ্বোধন হবে৷