সেপসিস একটি রোগের নাম, যাকে রক্তদুষ্টি, রক্তদূষণ কিংবা পচনশীল ক্ষত, যে নামেই ডাকা হোক না কেন এটি বেশ জটিল একটি রোগ৷ এ থেকে মৃত্যুও হতে পারে৷ সম্প্রতি সেপসিসের সম্ভাব্য চিকিৎসায় কিছুটা সাফল্যের কথা জানান বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় এক কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ সেপসিসে আক্রান্ত হয়৷ এর মধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ রোগী মারা যায়৷ জার্মানিতে প্রতিবছর ৬০ হাজার মানুষ এই রোগে মারা যায়৷ সেপসিসে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা মাত্র ৫০ শতাংশ৷
এই রোগে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সহ অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়ে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রমণ করার চেষ্টা করে৷ বিজ্ঞানীরা রক্ত থেকে এসব ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও বিষাক্ত পদার্থ বের করতে চুম্বকের ব্যবহার নিয়ে কাজ করছেন৷ ইঁদুরের উপর করা এই পরীক্ষায় তাঁরা সফলও হয়েছেন৷ গবেষণাটি সম্প্রতি ‘নেচার মেডিসিন' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে৷
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
ইবোলা বা এবোলা ভাইরাসকে চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভাইরাস হিসেবে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এতে আক্রান্ত হলে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর অবধারিত৷ তাই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা জারি করেছে সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান মার্গারেট চান এবোলাকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি অন্যতম ঘাতক জ্বর হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন যে, আফ্রিকায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে রক্তপ্রদাহজনিত এই জ্বর৷ তাই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/dpa
পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারি
মারাত্মক এবোলা ভাইরাসের আক্রমণে পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১,০০০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭১১৷ গিনিতে গত মার্চে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এবোলা ভাইরাসের প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লাইবেরিয়ায় জরুরি অবস্থা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিসেবে বিশ্বে এই ভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম দেশ লাইবেরিয়ায় বৃহস্পতিবার জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে৷ এতে সরকার বিভিন্ন কঠোর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে৷ প্রাণঘাতী এবোলা ভাইরাস এখন আফ্রিকা থেকে বিশ্বের অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
আক্রান্ত অন্যান্য দেশের নাগরিক
স্পেনের একজন প্রবীণ ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক মারাত্মক অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরে গেছেন৷ তিনি এবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ সৌদি আরবে একজন রোগীর মৃত্যুর কারণও এবোলা বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা৷ নাইজেরিয়াতেও একজন নার্স এবোলার সংক্রমণে মারা গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এবোলা সংক্রমণের লক্ষণ
এবোলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মারাত্মক জ্বর এবং কারও কারও অবিরত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে৷ সঙ্গে থাকে মাথা, পেশী এবং তলপেটে তীব্র ব্যথা৷ রোগীর একদিকে ক্ষুধা কমে যায়, অন্যদিকে শুরু হয় পাতলা পায়খানা৷ সাধারণত শরীর থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন তরল পদার্থের মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আক্রান্ত চিকিৎসক
বলা বাহুল্য, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যাকারীর মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ লাইবেরিয়াতে যেমন এবোলা রোগীদের পরিচর্যাকারী দুই মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর, তাঁদের চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংক্রমণের আশঙ্কা
মূলত কোনো প্রাণী বা মানুষের রক্ত, বীর্য, যোনিরস বা দেহ নির্গত অন্য কোনো তরলের সংস্পর্শে এ রোগ ছড়ায়৷ বলা বাহুল্য, অনিয়ন্ত্রিত এবং অনিরাপদ যৌন মিলনেও এ রোগের সংক্রমণ হয়ে থাকে৷ অর্থাৎ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এইডস রোগের সঙ্গে এবোলার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
উড়ন্ত খ্যাঁকশিয়াল
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পশ্চিম আফ্রিকায় এবোলা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ উড়ন্ত খ্যাঁকশিয়াল৷ এই প্রাণীটি ভাইরাসটি বহন করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে৷ এমনকি সংক্রমিত প্রাণীটি যখন ফলমূল ও অন্যান্য প্রাণী খাচ্ছে, তখন সেসব খাদ্যের অবশিষ্ট অংশ থেকেও ছড়িয়ে পড়ছে এবোলা৷
ছবি: imago
সংক্রমণের ঝুঁকি
তার মানে শুধু মানুষ থেকে মানুষে নয়, মানুষ যখন এবোলায় আক্রান্ত প্রাণীর রক্ত বা মাংসের সংস্পর্শে আসে, তখনও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ বরং সেক্ষেত্রে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে জানান চিকিৎসকরা৷ তাই খ্যাঁকশিয়াল থেকে অন্য প্রাণী বা ফলমূল হয়ে সহজেই মানুষের মধ্যে এবোলা ভাইরাস তার বংশবৃদ্ধি করে৷
ছবি: DW
৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যু
এবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর অবধারিত৷ সেজন্যই তো একে মহামারি বলে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: Reuters
বড় সমস্যা
বলা বাহুল্য, আফ্রিকায় বন্য প্রাণী খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে৷ সব বাজারেই এ সব মাংস পাওয়া যায়৷ গবেষকদের ধারণা, এ ধরনের বন্য প্রাণীর মাংস থেকে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এবোলা৷ তার সঙ্গে অনিরাপদ যৌন মিলন তো রয়েছেই!
ছবি: picture-alliance/dpa
পরীক্ষামূলক ওষুধ এখনই নয়
এবোলা সংক্রমণ নিরাময়ের উপায় এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি৷ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করার সময় এখনো আসেনি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ কারণ মার্কিন দুই স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর ওষুধটি প্রয়োগে তাঁদের উন্নতির ধরণে তারতম্য দেখা গেছে৷
ছবি: LEON NEAL/AFP/Getty Images
12 ছবি1 | 12
বিজ্ঞানীরা একটি ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন যেটা রক্ত থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে আনতে চুম্বক বা ম্যাগনেট ব্যবহার করে৷ অনেকটা আমাদের শরীরের অঙ্গ প্লীহা-র মতো কাজ করা এই ডিভাইসটি মান্নান-বাইন্ডিং লেকটিন বা এমবিএল (এটি একটি জেনেটিক্যালি-ইঞ্জিনিয়ার্ড হিউম্যান ব্লাড প্রোটিন) মেশানো ম্যাগনেটিক ন্যানোবিডস ব্যবহার করে৷ গবেষকরা ডিভাইসটির নাম দিয়েছেন ‘বায়ো-স্প্লিন'৷
গবেষক দলের একজন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডোনাল্ড ইঙ্গবার বার্তা সংস্থা এএফপি-কে বলেছেন, এবোলা (উচ্চারণভেদে ইবোলা) ভাইরাসের সঙ্গে এমবিএল প্রোটিনের সম্পর্ক থাকায় এবোলা প্রতিরোধেও হয়ত এটা কাজে লাগানো যেতে পারে৷
এমবিএল-এর সঙ্গে মারবুর্গ ও এইআইভি ভাইরাসেরও সম্পর্ক থাকতে পারে৷ সেক্ষেত্রে ঐ সব ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায়ও বায়ো-স্প্লিন ব্যবহার করা যেতে পারে৷
তবে গবেষক ইঙ্গবার জানিয়েছেন তাঁদের গবেষণাটি এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ইঁদুরের উপরই করা হয়েছে৷ ভবিষ্যতে এটা আরও বড় কোনো প্রাণী এবং তারপর মানুষের দেহে করা হবে৷ ফলে রোগের চিকিৎসায় বায়ো-স্পিলের ব্যবহার হওয়া পর্যন্ত কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে৷