বাহুতে একটা লম্বা লালচে দাগ, এটাই কী রক্তদূষণ বা সেপসিস-এর লক্ষণ? বিষয়টি এত সহজ নয়৷ কারণ সেপসিস শনাক্তকরণ বেশ কঠিন৷ তার ওপর মাঝে মাঝে এটি ধরা পড়তে অত্যন্ত দেরি হয়ে যায়৷ যার পরণতিতে হতে পারে মৃত্যুও৷
বিজ্ঞাপন
সেপসিস সাথে সাথে ধরা পড়লে বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় ৮০ শতাংশ৷ তবে ছয় ঘণ্টা পর এই সম্ভাবনা কমে ৩০ শতাংশ হয়ে যায়৷ সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মানিতে প্রতিবছর ৬০ হাজার মানুষ মারা যায় রক্তদূষণের কারণে৷ বিশ্বব্যাপী সংখ্যাটা আট মিলিয়নের মতো বলে অনুমান করা হয়৷
ত্বকের কয়েকটি রোগ
চর্মরোগে কম-বেশি সবাই ভোগেন৷ গরমকালেই এ জাতীয় রোগ বেশি দেখা দেয়৷ এছাড়া অপরিষ্কার ও ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস চর্মরোগের একটা অন্যতম কারণ৷ নিয়ম মেনে চললে রোগের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
একজিমা
একজিমা হলো ত্বকের এমন একটি অবস্থা যেখানে ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হয়৷ একেক ধরনের একজিমার লক্ষণ একেক রকম হয়৷ তবে সাধারণভাবে লালচে, প্রদাহযুক্ত ত্বক; শুষ্ক, খসখসে ত্বক; ত্বকে চুলকানি; হাত ও পায়ের ত্বকের মধ্যে ছোট ছোট পানির ফুসকুড়ি ইত্যাদি হলো একজিমার লক্ষণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একজিমার কারণ
ডিটারজেন্ট, সাবান অথবা শ্যাম্পু থেকে একজিমার সংক্রমণ হতে পারে৷ অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে ভেজা আবহাওয়াও একজিমার কারণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সোরিয়াসিস
এটি ত্বকের একটি জটিল রোগ৷ তবে সোরিয়াসিস কেবল ত্বক নয়, আক্রমণ করতে পারে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও৷ সাধারণত ত্বকের কোষস্তর প্রতিনিয়ত মারা যায় এবং নতুন করে তৈরি হয়৷ সোরিয়াসিসে এই কোষ বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে৷ ত্বকের কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার জায়গাজুড়ে এই সমস্যা দেখা দেয়৷
ছবি: Fotolia
আজীবন চিকিৎসা
সোরিয়াসিস রোগ যত পুরোনো হয়, ততই জটিল হতে থাকে৷ তাই দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার আওতায় আসা জরুরি৷ আক্রান্ত ব্যক্তিকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়৷ সোরিয়াসিস বংশগতভাবে হতে পারে৷
ছবি: Fotolia
আর্সেনিকের কারণে চর্মরোগ
আর্সেনিক যুক্ত পানি খেলে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ যেমন ত্বকের গায়ে ছোট ছোট কালো দাগ কিংবা পুরো ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে, হাত ও নখের চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়ে যেতে পারে৷ এছাড়া ত্বকের বিভিন্ন স্থানে সাদা-কালো দাগ দেখা দেয়াসহ হাত ও পায়ের তালুর চামড়ায় শক্ত গুটি বা গুটলি দেখা দিতে পারে৷
ছবি: DW
চরম পর্যায়
আর্সেনিক যুক্ত পানি পানের শেষ পরিণতি হতে পারে কিডনি ও লিভারের কর্মক্ষমতা লোপ পাওয়া; ত্বক, ফুসফুস ও মূত্রথলির ক্যানসার হওয়া; কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া ইত্যাদি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দাদ
শরীরের যে-কোনো স্থান ফাংগাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে একে দাদ বলে৷ এই আক্রমণ মাথার চামড়ায়, হাত-পায়ের আঙুলের ফাঁকে কিংবা কুঁচকিতে হতে পারে৷ এটা ছোয়াঁচে রোগ৷ আক্রান্ত স্থান চাকার মতো গোলাকার হয় এবং চুলকায়৷ মাথায় দাদ দেখতে গোলাকার হয় এবং আক্রান্ত স্থানে চুল কমে যায়৷ প্রতিকার পেতে সাবান ও পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান প্রতিদিন ধুতে হবে৷ এছাড়া আক্রান্ত স্থান শুকনো রাখা জরুরি৷
ছবি: MEHR
পাঁচড়া
শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়৷ পরিষ্কার কাপড়-চোপড় ব্যবহার ও নিয়মিত গোসল করলে খোসপাঁচড়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়৷
ছবি: MEHR
ঘামাচি
গরমের সময় ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা৷ এটি সাধারণত তখনই হয় যখন ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যায়, ঘাম বের হয় না এবং ত্বকের নীচে ঘাম আটকে যায়৷ এর ফলে ত্বকের উপরিভাগে ফুসকুড়ি এবং লাল দানার মতো দেখা যায়৷ কিছু কিছু ঘামাচি খুব চুলকায়৷ ঘামাচি সাধারণত এমনিতেই সেরে যায়৷ তবে ঘামাচি সারানোর জন্য ত্বক সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে এবং ঘাম শুকাতে হবে৷
ছবি: imago stock&people
ব্রণ
সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে এই রোগটি দেখা দেয়৷ তাই একে টিনএজারদের রোগও বলা যেতে পারে৷ ১৮ থেকে ২০ বছরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এ রোগটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে তৈলাক্ত, ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবারসহ চকলেট, আইসক্রিম ও অন্যান্য ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে৷ এছাড়া বেশি করে পানি ও শাক-সবজি খেতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
10 ছবি1 | 10
দুর্বল ইমিউন সিস্টেম ঝুঁকির মুখে
সেপসিস হলো এক ধরনের সংক্রমণ, যাতে রোগ জীবাণু রক্ত প্রবাহে ঢুকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আক্রমণ করে৷ সাধারণত শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারে৷ কিন্তু বয়োবৃদ্ধ ও কঠিন অপারেশনের পর ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যাওয়া মানুষের পক্ষে এই ধকল সামলানো কঠিন৷ এছাড়া ক্যানসারের থেরাপিতে দুর্বল হয়ে যাওয়া রোগীরাও ঝুঁকির মুখে৷
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংক্রমিত হয়৷ যেমন ফুসফুসের সংক্রমণ৷ অ্যান্টিবায়োটিক নিলে কয়েকদিনের ভালো হয়ে যেতে পারে এই সংক্রমণ৷ কিন্তু ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের অবস্থা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারাত্মক হয়ে যায়৷ প্রাথমিক স্থান থেকে জীবাণু অন্য জায়গায় চলে যায়৷ যেমন পায়ের বুড়ো আঙুলের সংক্রমণ থেকে রক্তপ্রবাহে ঢুকে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আক্রমণ করে বিকল করে দিতে পারে জীবাণু৷ এই অবস্থায় প্রায়ই মূল্যবান সময় পার হয়ে যায়৷ তাই সঠিক রোগটি শনাক্ত করতে প্রচুর অভিজ্ঞতার প্রয়োজন৷
মানসিক সমস্যা দেখা দেয়
নিবিড় পর্যবেক্ষণ বিভাগে সেপসিস রোগীকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃত্রিম কোমায় রাখা হয়৷ কোমা থেকে জাগানো হলে প্রায়ই রোগীর মধ্যে প্যানিক অ্যাটাক দেখা দেয়৷ তাঁরা ভোগেন ‘পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার'-এ৷ দেখা দেয় পেশি ও স্নায়ুর দুর্বলতা৷ স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় বলেও লক্ষ্য করা যায় এক্ষেত্রে৷
রোগের নাম ‘চিকুনগুনিয়া জ্বর’
ডেঙ্গু জ্বরের কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি৷ চিকুনগুনিয়া জ্বর অনেকটা তার মতোই৷ নতুন এই রোগ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, কারণ আফ্রিকার এই জ্বর ইতিমধ্যে ঢাকায় ঢুকে পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মশাবাহিত রোগ
এডিস অ্যালবোপিকটাস ও এডিস এজিপটি নামক মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া জ্বর হয়ে থাকে৷ তবে কেবল নারী এডিস মশাই এই জ্বরের জন্য দায়ী৷
ছবি: picture-alliance/AP
লক্ষণ
মশার কামড় খাওয়ার পাঁচ দিন পর থেকে শরীরে এই রোগের লক্ষণ ফুটে ওঠে৷ এক্ষেত্রে মাথাব্যথা, সর্দি, বমি বমি ভাব, হাত ও পায়ের গিঁটে এবং আঙুলের গিঁটে ব্যথা, ফোসকা পড়া ও শরীর বেঁকে যেতে পারে৷ জ্বর উঠতে পারে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত৷ থাকতে পারে ২ থেকে ১২ দিন৷ তবে সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডেঙ্গু নয়
অনেকে চিকুনগুনিয়া জ্বরকে ডেঙ্গু জ্বর মনে করতে পারেন৷ কারণ এদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে৷ তবে ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার মূল পার্থক্য হলো, এই জ্বরে হাড়ের জোড়াগুলো ফুলে যায়, ডেঙ্গু জ্বরে যেটা হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিকিৎসা
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত করা যায়৷ এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি৷ তাই চিকুনগুনিয়া সারাতে সাধারণ জ্বরের চিকিত্সা নিলেই চলবে৷ বিশ্রাম, প্রচুর তরল খাবার ও প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে৷ তবে চিকুনগুনিয়া জ্বর প্রতিরোধে এডিস মশার প্রজনন বন্ধ করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/DW
ঢাকায় চিকুনগুনিয়া
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর গত বছর এই রোগের উপর একটি সমীক্ষা চালায়৷ এ সময় ঢাকার মোট ৬০১ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷ এদের মধ্যে ২০৭ জনই চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত বলে পরীক্ষায় জানা যায়৷ সে হিসেবে ঢাকার প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইতিহাস
১৯৫২-৫৩ সালে আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ায় প্রথম এই রোগের আবির্ভাব ঘটে৷ বাংলাদেশে প্রথম এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ঢাকার দোহার ও কেরানীগঞ্জে৷ পরে ২০১১ সালের নভেম্বরে নতুন করে পাবনার সাঁথিয়ায় আবারও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়৷ আর ঢাকায় প্রথম দেখা দেয় ২০১৩ সালের আগস্টে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
সেপসিস-এর কবল থেকে উদ্ধার পাওয়া রোগী রোল্ফ থিল জানান, ‘‘কোনো বাক্যের অনুসঙ্গ বুঝতে হলে আমার দুই তিনবার পড়তে হয়৷ মস্তিষ্কও আগের মতো কাজ করে না, অনেক দুর্বল মনে হয়৷''
অধিকাংশ দেখা দেয় হাসপাতালে
প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সেপসিস-ই দেখা দেয় হাসপাতালে৷ বড় বড় অপারেশনের পর ক্ষত সারতে অনেকদিন লেগে যায়৷ এটা যেন জীবাণুদের জন্য এক উর্বর স্থান৷ আর দুর্বল ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম হলে তো কথাই নেই৷ রক্তদূষণের পথ খুলে যায়৷ এ কারণে হাসপাতালের স্বাস্থ্যরক্ষার দিকে নজর রাখাটা অত্যন্ত জরুরি৷ এতে করে ২০ শতাংশ সেপসিস প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন ইয়ানা ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের ড. ফ্রাংক মার্টিন ব্রুংকহোর্স্ট৷ এ ব্যাপারে হাসপাতালের কর্মীদের ভালো প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত৷ এছাড়া টিকা দেওয়ার ওপর জোর দিতে হবে, যাতে ফ্লু ও ফুসফুসের সংক্রমণের মতো রোগব্যাধি আদৌ দেখা না দেয়৷ এই পরামর্শ ড. ব্রুংকহোর্স্টের৷